বৃহস্পতিবার ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে এবার সুযোগ বেশি, আসন সংকট হবে না

  |   শনিবার, ২১ জুলাই ২০১৮ | প্রিন্ট

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে এবার সুযোগ বেশি, আসন সংকট হবে না

ডেস্ক রিপোর্ট :  উচ্চ মাধ্যমিকের (এইচএসসি) ফল প্রকাশের পর এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পালা। টানা তিন বছর ধরে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এর সংখ্যা কমতে থাকায় উচ্চ শিক্ষায় ১ম বর্ষ স্নাতক (অনার্স), সরকারি মেডিকেল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার ভর্তির প্রতিযোগিতাও কিছুটা কম হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের উৎকণ্ঠা কিছুটা হলেও লাঘব হবে। জিপিএ-৫ না পেয়েও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে; ভর্তির সুযোগও পাবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে জানা গেছে, উচ্চশিক্ষা স্তরে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির জন্য এইচএসসি উত্তীর্ণদের আসন সংকট হবে না। দেশে বর্তমানে উচ্চশিক্ষায় আসন ১৩ লাখের বেশি। এবার পাস করেছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার শিক্ষার্থী। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি-বেসরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই আসন রয়েছে প্রায় ৭ লাখ।

২০০৩ সালে গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর পর প্রায় প্রতিবছরই পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে গত তিন বছর ধরে এটা কমেছে।

১৯ জুলাই প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই পরীক্ষায় এবার সারাদেশে জিপিএ-৫ (গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ) পেয়েছে ২৯ হাজার ২৬২ জন শিক্ষার্থী। ২০১৭ সালে এই পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৩৭ হাজার ৭২৬ জন এবং ২০১৬ সালে তা ছিল ৫৮ হাজার ২৭৬ জন। এর আগে ২০১৫ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪২ হাজার ৮৯৪ এবং ২০১৪ সালে তা পেয়েছিল ৭০ হাজার ৬০২ জন।

এদিকে গত ৪/৫ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে আলোচনা চলেও সেটি এবারও চূড়ান্ত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ নির্দেশনা দিলেও কবে থেকে তা কার্যকর হবে সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরা নানা অজুহাতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া পিছিয়ে নিচ্ছেন।

রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তরিকতা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনাগ্রহের কারণে গুচ্ছ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে দীর্ঘদিন ধরেই গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি নেয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন অভিভাবক, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা।

১৯ জুলাই এইচএসসি’র ফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘এবার গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে না। তাদের (বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য) নিয়ে বৈঠক করে আমরা প্রায় কাছাকাছি আসছিলাম, তারপরে একটা সময়ে এসে আমরা আর খুব একটা এগোতে পারব সেই আশা রাখি নাই। পরে মাহামান্য রাষ্ট্রপতি নিজেও বলেছেন, উদ্যোগও নেয়া হয়েছে, অনেক বৈঠক হয়েছে। ইউজিসি চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, একটি কমিটি করা হয়েছে, কমিটি কাজ করছে।’

গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ বাদ দিয়ে ইতোমধ্যে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার আলাদা আলাদা সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করেছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সংগঠন ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ’।

এতে করে, এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের এখন অংশ নিতে হবে ভর্তি প্রতিযোগিতায়। বিগত সময়ের মতো এবারও দেশের সবকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথক ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। যে শিক্ষার্থী যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায় তাকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।

এ ব্যাপারে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শেখ একরামুল কবির সংবাদকে বলেন, ‘ইনকাম (উপার্জন) কমে পাওয়ার আশঙ্কায় উপাচার্যরা গুচ্ছ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে রাজি হচ্ছেন না। এটা একান্তই তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের বিষয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে অনেকে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করেন। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি নেয়া হলেও এই ইনকাম কমে যাবে।’

গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি নেয়া হলে শিক্ষার্থীদের একটি মাত্র পরীক্ষা দিতে হতো জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা আলাদা পরীক্ষা দিতে হবে। এটা শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই কষ্টের। এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে আরেক প্রতিষ্ঠানে ছুটতে হয়। পাশাপাশি তাদের কোচিং সেন্টারেও মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হয়।’

অধ্যাপক শেখ ইকরামুল কবির মনে করেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা কমতে থাকায় উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে ভর্তিতে প্রতিযোগিতা কিছুটা কম হবে। সর্বোচ্চ ফল (জিপিএ-৫) না পেয়েও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে। সরকারি মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ আকর্ষণীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে যত আসন থাকে দীর্ঘদিন জিপিএ-৫ পেয়ে আসছিল তার চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী।’

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিদ্যমান ভর্তি পদ্ধতিকে বহুবার ‘ত্রুটিপূর্ণ’ অভিহিত করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ অভিযোগ করেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার কারণে প্রতি বছর কোচিং সেন্টারগুলো ৩২ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য করে। ভর্তি পরীক্ষার কারণে শিক্ষার্থীদের বহু টাকা ব্যয় করতে হয়।’

এবার আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি, মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে আলিম ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি ভোকেশনাল/বিএম/ডিপ্লোমা ইন কমার্স পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫৭ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে মোট উত্তীর্ণ হয়েছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮০১ জন শিক্ষার্থী, গত বছর যা ছিল ৮ লাখ ১ হাজার ৭১১ জন।

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবার সর্বোচ্চ ফল জিপিএ-৫ অর্জন করেছে সারাদেশের ২৯ হাজার ২৬২ জন শিক্ষার্থী। আর ‘জিপিএ-৫ থেকে জিপিএ-৪’ পেয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার ২৭০ জন শিক্ষার্থী।

এদিকে দেশের ৪২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৭ টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ১০১টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার।

এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আসন সংখ্যা ৪৮ হাজার ৩৪৩টি। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ হাজারের মতো, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৫ হাজার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৫ হাজার, বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০টি, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় হাজার হ্জাার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেড় হাজার, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৭০০ আসন রয়েছে। সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতেও আসন রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার। বুয়েটে রয়েছে এক হাজারেরও বেশি।

আর ১০১টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বর্তমানে ৯৫টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এগুলোতে আসন রয়েছে প্রায় ২ লাখ। সবচেয়ে বেশি আসন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে স্নাতক ১ম বর্ষে আসন রয়েছে প্রায় ৪ লাখ। এছাড়া ডিগ্রি পাস কোর্সে আসন রয়েছে এর চেয়েও বেশি।

২০১৭ শিক্ষাবর্ষের হিসেবে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সারাদেশের ৫১৬টি কলেজে (ঢাবি অধিভুক্ত রাজধানীর ৭ সরকারি কলেজ বাদে) অনার্স-মাস্টার্স পাঠদান করা হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ২ শতাধিক কলেজে অনার্সে (স্নাতক) ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে ৩ লাখ ৯৮ হাজার। গত শিক্ষাবর্ষে (২০১৭-১৮) এসব কলেজে অনার্সে ভর্তির জন্য আবেদন করে ৫ লাখ ২২ হাজার শিক্ষার্থী। এর মধ্যে দু’দফা মেধা তালিকা প্রকাশ এবং দু’দফা রিলিজ সিøপে ভর্তির সুযোগ দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত ভর্তি হয় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষার্থী। পছন্দ অনুযায়ী বিষয় না পাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী অনার্সে ভর্তি হয়নি। সংবাদ থেকে নেয়া

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৪:১৩ | শনিবার, ২১ জুলাই ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com