শুক্রবার ১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিবাহবিচ্ছেদের পর সন্তান কত বছর পর্যন্ত মায়ের কাছে থাকবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট ২০২৪ | প্রিন্ট

বিবাহবিচ্ছেদের পর সন্তান কত বছর পর্যন্ত মায়ের কাছে থাকবে?

জন্মগতভাবে সন্তান মাতা-পিতা উভয়ের। বংশগত দিক দিয়ে সন্তান পিতার বলে গণ্য হয়ে থাকে। তবে সন্তানের প্রয়োজন ও সুবিধা অনুযায়ী তার দায়িত্বভার মাতা-পিতা উভয়ের ওপরই অর্পিত। মাতা-পিতার বিচ্ছেদ হয়ে গেলে সন্তানের লালন-পালনের ক্ষেত্রে ইসলামি আইন রয়েছে।

 

এক্ষেত্রে শরিয়তের দিকনির্দেশনা হলো—শিশুসন্তানের লালন-পালনের অধিকার মায়ের। আর শিশু যতদিন পর্যন্ত পানাহার, পোশাক পরিধান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মধ্যে মায়ের মুখাপেক্ষী, ততদিন পর্যন্ত মা শিশুকে নিজ জিম্মায় রাখতে পারে। এর পরিমাণ ছেলেশিশুর জন্য সাত বছর, আর মেয়ের ক্ষেত্রে বালেগা হওয়া পর্যন্ত।

ওই সময় শেষ হওয়ার আগে শরিয়ত সমর্থিত কোনো কারণ ছাড়া সন্তানকে তার মা থেকে পৃথক করা বৈধ নয়। ওই সময় পার হলে পিতা শিশুসন্তানকে মায়ের কাছ থেকে নিজ জিম্মায় নিয়ে আসতে পারে। (আদ্দুররুল মুখতার: ৩/৫৬৬)

 

সন্তান যার কাছেই প্রতিপালিত হোক না কেন, তার ভরণপোষণের ব্যয়ভার পিতার ওপরই ন্যস্ত থাকবে। তবে সন্তানের নিজস্ব সম্পত্তি থাকাবস্থায় তার সম্পদ থেকে ব্যয় করা যাবে, যদি পিতার সামর্থ্য না থাকে। (আদ্দুররুল মুখতার: ৩/৫৫৭)

 

যেসব কারণে মা অধিকার হারাবেন
এক. নীতিহীন জীবন যাপন করলে। দুই. যদি এমন কারো সঙ্গে তার বিয়ে হয়, যিনি শিশুটির মাহরাম আত্মীয় নয়, কেননা তখন সে স্বামীর বাড়িতে স্বামীর হক আদায় করতে গিয়ে শিশুর লালন-পালনে ব্যাঘাত হবে। তিন. সন্তানের প্রতি অবহেলা করলে ও দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে। চার. যদি সে ইসলাম ত্যাগ করে অন্যকোনো ধর্ম গ্রহণ করে। পাঁচ. যদি সন্তানের পিতাকে তার জিম্মায় থাকা অবস্থায় দেখতে না দেওয়া হয়। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/৪২)

মা যদি তার নতুন সংসারে সন্তানকে হেফাজতে রাখতে পারে এবং মায়ের পরবর্তী স্বামী এ সন্তানকে লালন-পালনে সন্তুষ্ট থাকে, সেক্ষেত্রে মাকে সন্তানের জিম্মাদারি দিতে কোনো সমস্যা নেই। (ফতোয়ায়ে হক্কানিয়া: ৪/৪২৫)

 

মায়ের অবর্তমানে শিশুর জিম্মাদারি
মায়ের অবর্তমানে শিশুর জিম্মাদারি মায়ের নিকটাত্মীয়দের কাছে চলে যাবে। এক্ষেত্রে নাবালক শিশুর হেফাজতকারী পর্যায়ক্রমে হবেন মায়ের মা (নানি, নানির মা—যত ওপরের দিকে হোক), এরপর পিতার মা (দাদি, দাদির মা—যত ওপরের দিকে হোক), আপন বোন (মা, বাবা একই), বৈপিত্রেয় বোন (মা একই কিন্তু বাবা ভিন্ন), আপন বোনের মেয়ে (যত নিচের দিকে হোক), বৈপিত্রেয় বোনের মেয়ে (যত নিচের দিকে হোক), পূর্ণ খালা (যত ওপরের দিকে হোক), বৈপিত্রেয় খালা (যত ওপরের দিকে হোক), আপন ফুপু (যত ওপরের দিকে হোক)। উল্লেখ্য, আত্মীয়রা ক্রমানুসারে একজনের অবর্তমানে বা অযোগ্যতার কারণে অন্যজন জিম্মাদারিত্বের অধিকারী হবেন।

 

মা অথবা অন্য নারী আত্মীয়দের অবর্তমানে শিশুর জিম্মাদার হতে পারেন যাঁরা তাঁরা হলেন: বাবা, বাবার বাবা (যত ওপরের দিকে হোক), আপন ভাই, রক্তের সম্পর্কের ভাই, আপন ভাইয়ের ছেলে, রক্তের সম্পর্কের ভাইয়ের ছেলে, বাবার আপন ভাইয়ের ছেলে, বাবার রক্তের সম্পর্কের ভাইয়ের ছেলে। স্মর্তব্য যে একজন পুরুষ আত্মীয় একজন নাবালিকার জিম্মাদার শুধু তখনই হতে পারবেন, যখন তিনি ওই নাবালিকার মাহরাম (নিষিদ্ধ স্তরের) আত্মীয় হন। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/৪, রদ্দুল মুহতার: ২/৬৩৮)

 

শিশুসন্তানের সাক্ষাতের অধিকার
সন্তান যার কাছেই প্রতিপালিত হোক, মা-বাবার কোনো একজন যদি সন্তানকে দেখতে চায় অথবা সন্তান মা-বাবাকে দেখতে চায়, তাহলে অবশ্যই সাক্ষাতের সুযোগ দিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার: ২/৬৪৩)

 

এ বিষয়ে আরব-অনারবের সব আলেম একমত। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হলে তা জুলুম ও অন্যায় হিসেবে সাব্যস্ত হবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৮:৫৩ | বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট ২০২৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com