| মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা : শেখ হাসিনার পতন ছাড়া বন্ধ গণমাধ্যমের মুক্তি মিলবে না উল্লেখ করে অবৈধ এ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিক ও পেশাজীবী নেতারা ঘরে ফিরে যাবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন। তারা বলেছেন, শেখ হাসিনা ১৬ কোটি মানুষের রক্ত নিয়ে হলি খেলছে। আর কত রক্ত ঝরলে তিনি ক্ষমতা ছাড়বেন সেটাই দেশবাসীর প্রশ্ন।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গনে বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেয়ার দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ-সমাবেশে সাংবাদিক ও পেশাজীবী নেতারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করে। গতকাল সাংবাদিকদের এ কর্মসূচিতে আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা এতে সংহতি প্রকাশ করেন।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি প্রেস ক্লাব থেকে শুরু হয়ে হাইকোর্ট মোড় হয়ে পল্টন ঘুরে প্রেস ক্রাবে এসে শেষ হয়। এসময় সাংবাদিক-পেশাজীবীদের স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে আশ-পাশের এলাকা। পরে প্রধান বিচার মো. মোজাম্মেল হকের সাথে সাক্ষাত করে তাকে একটি স্মারকলিপি দেন সাংবাদিকরা।
বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমীন গাজীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃব্য রাখেন, সংগঠনটির মহাসচিব শওকত মাহমুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কবি আবদুর হাই শিকদার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টর্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, বিএফইউজের সহ-সভাপতি নুরুল আমিন রোকন, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, বিএফইউজের কোষাধ্যক্ষ মোদাব্বের হোসেন, ডিইউজের কোষাধ্যক্ষ এম এ নোমান, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক দিদারুল আলম, ডিইউজের সংগ্রাম ইউনিট প্রধান শহিদুল ইসলাম, ডিইউজের নির্বাহী সদস্য প্রত্যয় চৌধুরী, কবি কামার ফরিদ, শাহজাহান সাজু, ইরফানুল হক নাহিদ, সাংবাদিক নেতা মহিউদ্দিন খান মোহন, জাহানারা খাতুন প্রমুখ।
সাংবাদিকদের সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বক্তৃব্য রাখেন, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ মিয়া আলম, ঢাকা বিশ¡বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মামুন আহমেদ, ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) যুগ্ন মহাসচিব ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, প্রকৌশলী নেতা রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ইউনিভার্সিটি টিসার্চ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) মহাসচিব অধ্যাপিকা তাহমিনা আক্তার টফি, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক প্রকৌশলী মো. হানিফ, মহিলা নেত্রী খালেদা ইয়াসমিন, বিপ্লব উজ্জামান বিপ্লব প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের আমার দেশ ইউনিট প্রধান বাছির জামাল।
সভাপতির বক্তৃতায় রুহুল আমিন গাজী বলেন, সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমার দেশ, দিগন্ত ও ইসলামিক টিভিসহ বন্ধ ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে বিনা বিচারে কারারুদ্ধ করে রেখেছে। শেখ হাসিনার পতন ছাড়া এসব বন্ধ গণমাধ্যমের মুক্তি মিলবে না। অবৈধ এ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিকরা ঘরে ফিরে যাবে না হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ১৬ কোটি মানুষের রক্ত নিয়ে হলি খেলছে। আর কত রক্ত ঝরলে তিনি ক্ষমতা ছাড়বেন সেটাই দেশবাসীর প্রশ্ন। ৭১ সালে ইয়াহিয়া ও আইয়ুব খান পারেন নি। স্বৈরাচার এরশাদও এ খেলা খেলে পারেন নি। শেখ হাসিনাও পারবেন না, তাকেও ওইসব স্বৈরশাসকের পরিণতি ভোগ করতে হবে। এসময় তিনি আজ বুধবার প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিতব্য পেশাজীবীদের সমাবেশে সবাইকে অংশগ্রহনের আহ্বান জানান।
আগামী ১৬ ডিসে¤¦রের আগেই বন্ধ গণমাধ্যম খুলে যাবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দিতে সরকারের বিরুদ্ধে এমন আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে যাতে সরকারের ঘুম হারাম হয়ে যায়। শেখ হাসিনার সরকারের কাছে সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চাওয়া চরম বোকামী উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারকে গদি থেকে নামিয়েই তাকে মুক্ত করা হবে। বিচারকদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যেসব বিচারক বর্তমান সরকারের দু:শাসনের পক্ষে কাজ দাঁড়াচ্ছেন তাদেরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। তাদেরকেও একদিন চল্লিশ দিনের রিমান্ডে নেয়া হবে।
সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ শেখ হাসিনাকে রংহেডেড বলে অভিহিত করেছিল, আর সেদিন ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে এক রোগী সেই শেখ হাসিনার সরকারকে অসুস্থ উল্লেখ করে বলেছেন, আমরা এমন অসুস্থ সরকার চাই না। সরকার দেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব ধংসের চক্রান্ত করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন আর আমাদের বসে থাকার সুযোগ নেই। যে যার অবস্থান থেকে রাজপথে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়তে হবে।
এ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া তার বক্তৃতায় অবৈধ এ সরকারকে হটাতে সবাইকে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার পতনের মাধ্যমেই বন্ধ গণমাধ্যম ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে মুক্ত করা হবে। অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ বলেন, এ সরকারের আমলে গণমাধ্যম, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ সবাই নির্যাতনের শিকার। সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্যই জনগণের ওপর এসব নির্যাতন চালাচ্ছেন।
ইলিয়াস খান বলেন, সারা দেশের কোথাও আর এই সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। সারা দেশ থেকে রাজধানী ঢাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ফ্যাসিস্ট সরকার পাকিস্তানের মতো ঢাকাকে সর্বশক্তি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাতেও এ সরকরের শেষ রক্ষা হবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করে কাদের গণি চৌধুরী বলেন, ৩০ লাখ রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন এই দেশ মৃত্যু উপত্যাকায় পরিণত হতে পারে না। এ সরকার মানুষের রক্ত নিয়ে হলি খেলছে। আজকেও সারা দেশে পুলিশের গুলিতে ৮জন নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যথায় আপনি পালাবার পথ খুজে পাবেন না।
আজ প্রেস ক্লাবে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সমাবেশ : এদিকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান ও বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেয়ার দাবিতে আজ বুধবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশে দেশের বিশিষ্টজন, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা উপস্থিত থাকবেন। #
Posted ১২:৪১ | মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin