| বুধবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ | প্রিন্ট
ঘটনার সূত্রপাত ২০১০ সালে। মুম্বাইয়ের হামিদ আনসারির সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয়ের পর প্রেম হয়েছিল এক পাকিস্তানি তরুণীর। তবে নিয়তির ফেরে প্রেমের পথে হাঁটতে গিয়ে হামিদের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে ছয়টি বছর। অনলাইনে প্রারম্ভিক প্রেম পর্বের পর যখন তাদের দেখা করা একান্ত জরুরি হয়ে পড়ে, তখনই ঘটে বিপত্তি। আফগান সীমান্তে হামিদকে নকল পরিচয়পত্রের মাশুল গুনতে হয় পাকিস্তান পুলিশের কাছে ধরা দিয়ে।
এরপরের ঘটনাটা বেদনাবিধুর; পেশোয়ারের জেলের অন্ধকারে ২০১২ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ এর ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কারাবাস মেনে নিতে হয়েছে হামিদকে। কেটে গিয়েছে ছয়টি বছর। সাতাশ বছর বয়সে পাকিস্তানে ঢুকেছিলেন আর বের হলেন ৩৩-এ।
নকল পরিচয়পত্র বানিয়ে সীমান্ত পার হওয়ার খেসারত দিতে হয়েছে তাকে। তবে অনেক দেরি হলেও এতদিন বাদে শেষ হল মাশুল গোনার পালা। এবার ঘরে ফিরলেন তিনি।
হামিদের ভালোবাসার মেয়েটি থাকতেন আফগান সীমান্তের খুব কাছাকাছি খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কোহাট শহরে। ২০১২ সালের শেষদিকে মেয়েটি হামিদকে জানান যে, তার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। এদিকে প্রেমের ব্যাপারটিও জানাজানি হয়ে যায় এলাকায়।
আরেক সমস্যা হলো পাখতুনখোয়ার কোহাট এলাকাটি অনার কিলিং এর জন্য কুখ্যাত। তাই উপায়ন্তর না দেখে হামিদ পাকিস্তানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বাড়িতে মা-বাবাকে বলেন, চাকরি হয়েছে কাবুল বিমানবন্দরে। তবে তখনো জানতেন না কী পরিমাণ স্বপ্নভঙ্গ অপেক্ষা করছে তার জন্য।
তবে হামিদ মেয়েটির সঙ্গে একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। কারণ মেয়েটি ততদিনে ফেসবুকও বন্ধ করে দিয়েছে পরিবার পারিপার্শ্বের চাপে।
কাবুল থেকে সত্যিই বেআইনি নথি বানিয়ে হামিদ পাকিস্তানে ঢোকেন। কোহাটের একটি হোটেলে হামজা খালিদ নাম নিয়ে ঘরও বুক করেন। ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর ওই হোটেল থেকেই ধরা পড়েন তিনি। আইএসআই-এর অফিসাররা ধরেই নেন, হামিদ ভারতের গুপ্তচর।
২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে পাক সামরিক আদালতের রায়ে হামিদের তিন বছর কারাদণ্ড হয়। তারপর থেকেই পেশোয়ারের জেলের অন্ধকারে দিন কাটছে তার। বিচারপক্রিয়ার পর তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল পাক আদালত। সেই কারাবাসের মেয়াদ শেষ হয়েছে চারদিন আগেই অর্থাৎ ১৫ ডিসেম্বর। সমস্ত কাগজপত্র প্রস্তুত হওয়ার পর ১৮ ডিসেম্বর তাকে ভারতের হাতে তুলে দেয়া হবে।
গত ১৬ ডিসেম্বর তাকে ওয়াঘা সীমান্ত প্রত্যর্পণ করার তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। কিন্তু হামিদের আইনজীবীর অভিযোগ, পাকিস্তান সরকার হামিদকে ভারতে ফেরানোর জন্য কোনও নথিপত্রই তৈরি করেনি। ফলে ১৬ ডিসেম্বর তাকে প্রত্যার্পণ সম্ভবপর হয়নি। হামিদের আইনজীবী বিষয়টি পাকিস্তান হাইকোর্টে জানানোর পরই পুনরায় উদ্যোগ শুরু হয়। জট কাটিয়ে কাগজপত্র প্রস্তুত হওয়ার পর মঙ্গলবার তাঁকে ভারতে পাঠানো হচ্ছে।
এদিকে হামিদের মা ফৌজিয়ার আবেদনে সাড়া দিয়ে কিছু দিন ধরেই উদ্যোগী হয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। অবশেষে সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) পাক সরকার জানায়, মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) মুক্তি পাবেন হামিদ। মঙ্গলবার মুক্তি পেয়ে ভারতে এসেছেন হামিদ।
ওয়াঘার মাটিতে দীর্ঘ চুম্বনরত হামিদ নেহাল আনসারিকে দেখে মনে হচ্ছিল, জন্মভূমি শব্দটার যাবতীয় ওম শুষে নিচ্ছেন মাটি থেকে। তার পরই জড়িয়ে ধরলেন মাকে। এক সেনা অফিসার নীরবে এগিয়ে দিলেন পানির বোতল। তবে এতকিছুর পরেও প্রেমের মিলন হয়নি। উল্লেখ্য নিরাপত্তার খাতিরে হামিদের পরিবার মেয়েটির পরিচয় গোপন রেখেছেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা
বিডি প্রতিদিন
Posted ১৩:৩৬ | বুধবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain