| শনিবার, ১১ মার্চ ২০১৭ | প্রিন্ট
সরকারি সফরে গিয়ে দলীয় জনসভায় আগামী নির্বাচনের জন্য ভোট চাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, ‘পদে থেকে সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এটা কোন আইনে আছে?।
শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম নামে একটি সংগঠনের আলোচনায় খন্দকার মাহবুব এ কথা বলেন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন এবং বাংলাদেশ ই্য়ুথ ফোরামের ১১ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সম্প্রতি বগুড়া সফরে গিয়ে আওয়ামী লীগের এক জনসভায় আগামী সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, আওয়ামী লীগের নৌকায় ভোট দিলে উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে আর বিএনপির ধানের শীষে ভোট দিলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনি কথায় কথায় সংবিধান ও আইনের কথা বলেন। কিন্তু আপনি যে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এটা তো অস্বীকার করতে পারবেন না। অথচ আপনি প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাহলে কোথায় সততা, কোথায় নৈতিকতা। এটা সংবিধানের কোথায় আছে?’।
খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘যদি নির্বাচন করতে হয়, দলের জন্য কাজ করতে হয় তাহলে আপনি (শেখ হাসিনা) প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে আসুন। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে কাজ করুন। তাই সংবিধান আর আইন-আইন না করে বাস্তবে আসুন। বাস্তবতা অনেক কঠিন।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সবকিছু বিশ্বাস করে, কিন্তু তালগাছটা তাদের। তারা কথায় কথায় সংবিধানের কথা বলে। তাহলে ১৯৯৬ সালে সংবিধান কোথায় ছিলো? তখন আওয়ামী লীগ ও জামায়াত মিলে আন্দোলন করেছিলো। পরে বিএনপি জনমতের কথা চিন্তা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন।’
১৯৯৪ সাল থেকে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে যাওয়া আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলে থাকা প্রায় সব কটি দল ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোট বর্জন করে। নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি অগ্রাহ্য করলেও একতরফা নির্বাচন শেষে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়কের অধীনে ভোটের ব্যবস্থা করে বিএনপি। আর শপথ নেয়ার দুই সপ্তাহেরও কম সময়ে ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচন দেয়ায় পর ১২ জুনের ভোটে হেরে যায় তারা।
উচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণার পর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনে আওয়ামী লীগ। কিন্তু তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি ও তার মিত্ররা।
আওয়ামী লীগ বলছে, আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত সরকারের অধীনেই হবে। তবে বিএনপি এখনও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি জানিয়ে যাচ্ছে।
খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘জনগণের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে। দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তাই দয়া করে সংবিধানের কথা বলবেন না। সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য ও জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার বিধান করুন। আর যদি বিধান যদি না করেন তাহলে পরিণতি শুভ হবে না।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘দেশের মানুষের ধৈর্যে্যর বাঁধ ভেঙে গেছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে যে কোনো আন্দোলন সংগ্রামে তারা নামতে চায়।’
বেগম খালেদা জিয়া যখন গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলনের ডাক দেবেন তখন রাজপথ নিশ্চুপ থাকবে না বলেও মন্তব্য করেন খন্দকার মাহবুব। তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীরা ঝিমিয়ে পড়েছে ভাবলে তা ভুল হবে।’ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য দেশে গণঅভ্যুত্থান হলে জনগণ রাজনীতিবিদদের কথা শুনবে না বলেও দাবি করেন এই বিএনপি নেতা।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সারোয়ার, আহসান হাবিব লিঙ্কন, আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে ক্রেস্ট দেয়া হয়।
Posted ০৮:৩২ | শনিবার, ১১ মার্চ ২০১৭
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain