| শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ | প্রিন্ট
মাহবুব আলী খানশূর:
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সেনা হত্যাকান্ডের নেপথ্যের পরিকল্পনাকারীদের বিচার দাবি করেছেন, বৃটেনে বসবাসরত বাংলাদেশী সাবেক সেনা কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীরা ও আইনজীবীরা। নাগরিক আন্দোলনে বক্তারা বলেন, পিলখানার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র মূলক হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে দেশকে গণতন্ত্রহীন করার পরিকল্পনা শুধু হয়। এতে করে দেশ দিন দিন গভীর সংকট ও নিরাপত্তার হুমকির মুখে পড়ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লন্ডনের ওয়াটার লিলি মিলনায়তনে সিটিজেন মুভমেন্টের বা নাগরিক আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘পিলখানা হত্যাকান্ড: বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে একটি গভীর ষড়যন্ত্র’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে বিশিষ্টজনরা এই দাবী জানানোর পাশাপাশি এইসব কথা বলেন। বক্তরা বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তাকে পঙ্গু করতেই পিলখানায় সুক্ষ্ম কৌশলে সেনা হত্যাকান্ড চালানো হয়। দুনিয়ার কোন যুদ্ধে এক সাথে এত সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার নজির নেই।
অথচ অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় সুপারিকল্পিতভাবে পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে সেনা সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, আক্রান্ত হওয়ার পর বিডিআর ডিজি শাকিল আহমদ ও কর্ণেল গুলজার বিভিন্ন জনকে ফোন করে সাহায্য চেয়েছিলেন। এমনকি সেনা প্রধান এবং সরকার প্রধানের কাছেও তারা ফোন করেছিলেন। তাদের উদ্ধারের জন্য আকুতি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কেন সময় ক্ষেপন করে নিহতের তালিকা দীর্ঘ করা হল এর রহস্য একদিন উদঘাটন করতে হবে। দীর্ঘ ৩৬ ঘন্টা আলোচনার নামে কালক্ষেপন করে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষাকারী দেশ প্রেমিক সেনা কর্মকর্তাদের পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়।
আলোচনা সভায় সেনা হত্যাকান্ডের ওপর নির্মিত একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যবহুল ভিডিও চিত্র প্রদর্শণ করা হয়। অনুষ্ঠানে দর্শক সারিতে বসে সকল বক্তার আলোচনা তিনি মন দিয়ে শুনেছিলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। পরে তিনি সকলের অনুরোধে পাঁচ মিনিটের একটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।
সিটিজেন মুভমেন্টের বা নাগরিক আন্দোলনের আহ্বায়ক এমএ মালেকের সভাপতিত্বে এবং মনোয়ার বদরুদ্দোজার পরিচালনায় বক্তৃতা করেন, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ, সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর অব. সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক, মেজর অব. জহির উদ্দিন, মেজর অব. এবি সিদ্দিক, মেজর অব. আশফাক, মেজর অব. শাহ আলম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইউরোপ ও ইউকের প্রধান প্রতিনিধি ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা, জাস্ট নিউজের সম্পাদক মুসফিকুল ফাইজাল আনসারী, সিনিয়র সাংবাদিক কেএম আবু তাহের, সিটিজেন মুভমেন্টের মিডিয়া কোর্ডিনেটর মুহাম্মদ নূরে আলম বরষণ, আমার দেশ পত্রিকার সাবেক সহ-সম্পাদক মাহবুব আলী খানশূর, সাংবাদিক জাহিদ গাজী, সাংবাদিক আশিক মাহমুদ, টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিলর মাহবুব আলম, সাবেক ছাত্রনেতা পারভেজ মল্লিক, এস এম মাহাবুব রহমান, শিবির নেতা সুয়াইবুর রহমান , হাসিবুল হাসান, শারফরাজ আহমেদ শরফু, আমিনুল ইসলাম , সাবেক ছাত্রনেতা গরীব হোসেন প্রমুখ । দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন মুফতি শাহ সদরুদ্দীন ও কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা শামীম। এছাড়াও যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, আমি শ্রদ্ধার সাথে সরণ করছি পিলখানায় নিহত শহীদ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ অন্যান্য নিহত সৈনিকদের। সেইসাথে গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি নিহত সেনা অফিসারদের পরিবারের স্বজনের প্রতি। তারেক রহমান সেমিনারের ব্যানারে লেখা তিনটি শব্দের বিশ্লেষণ করে বলেন, রাষ্ট্র যখন থাকে তখন জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যতে বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থাকতেই পারেন? দ্বিতীয়টি হলো নিরাপত্তা, কিছু দিন আগে বৃটেনের সরকার তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ সফর করতে নিষেধ করেছে ? এতেই বুঝা যায় বাংলাদেশের নিরাপত্তার কত নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। আর তৃতীয় যেটা হলো সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে আপনারা হয়তো একমত নাও হতে পারে কিন্তু ৭১ সালে জনগণকে সাথে নিয়ে এই সেনারাই ঐক্যবদ্ধ ভাবে সার্বভৌমত্বকে ছিনিয়ে এনেছিলাম। ৫৭ সেনা অফিসারদের হত্যার মাধ্যমে কি মেসেজ দেয়া হয়েছে সেই প্রেক্ষিতে আমি বলতে চাই যে সেনা দেশের সার্বভৌমত্বকে রক্ষার শপথ নিয়েছে তাদেরকেই আবারও এগিয়ে আসতে হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর ড. কামরুল হাসান বলেন, পিলখানা হত্যাকান্ড ছিল পরিকল্পিত। এটা আওয়ামী লীগের নীলনকশার অংশ হিসেবে দেশ ও জাতিকে নিরাপত্তাহীন করে সংকটে পতিত করার এই বর্বর হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। এ ঘটনার মাধ্যমে সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরকে ধ্বংস করা হয়েছে। আমরা দাবী করবো, বিএনপি ক্ষমতায় এলে জড়িতদের চিহ্নিত করে যথাযথ বিচার করা হবে।
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান বলেন, যারা এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে, সুষ্ঠু তদন্ত করে তাদের শাস্তি দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে হবে। পিলখানা হত্যাকান্ডের সাত বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও কেন সেনাবাহিনীর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি?
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইউরোপ ও ইউকের প্রধান প্রতিনিধি ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা বলেন, আমরা প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। বিডিআর হত্যাকান্ডের যে তথ্য প্রমাণ আছে তা দিয়ে আবারও নতুন প্রকৃত খুনীদের বিচারের আওতায় আনা হবে। এই বর্বর হত্যাযজ্ঞের অবশ্যই বিচার আমরা করবো।
জাস্ট নিউজের সম্পাদক মুসফিকুল ফাইজাল আনসারী বলেন, পিলখানা হত্যাকান্ড বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, এটি পরিকল্পিত বড় ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। অবৈধ সরকার সময় ক্ষেপণ করার নামে সেনা অফিসারদের হত্যা করে। বাংলাদেশকে ব্যর্থ ও দুর্বল করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা বিডিআরকে ধ্বংস আর সেনাবাহিনীর সদস্যদের মনোবল ভাঙার জন্য এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। আর সেই ষড়যন্ত্র শুরু হয় ১/১১ থেকে আর পাকা হয় ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে।
সিনিয়র সাংবাদিক কেএম আবু তাহের বলেন, রাজনৈতিক কূটচালের অংশ হিসেবে পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছিল। বিদ্রোহে অংশ নেয়া জওয়ানরা শুধু বিদ্রোহী নয়, তারা আওয়ামী লীগের এজেন্ট হয়ে এই হত্যায় অংশ নেয়।
সেনা হত্যাকান্ডের ওপর নির্মিত একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যবহুল ভিডিও চিত্রে বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ বলেন, আমার বাবা-মা সহ দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা শান্তি পাব না। স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাব না। আমরা সবাই জানি, কে বা কারা এই হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারী এবং কারা জড়িত। দুনিয়ায় কোনদিন এর বিচার না পেলেও আখেরাতে বিচার পাব।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর অব. এবি সিদ্দিক বলেন, কিছু প্রশ্নের জবাব-ই প্রমাণ করে দেয়, পিলখানা হত্যাকান্ডে কে বা কারা জড়িত। সেদিন প্রধানমন্ত্রী ডিএডি তৌহিদের সঙ্গে কেন দীর্ঘ বৈঠক করলেন? কেন তাকে শেরাটন থেকে খাবার এনে খাওয়ালেন? এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হবে। দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর অব. জহির উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের সেনা বাহিনী বহি:শত্রুর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে যেমন ভুমিকা রাখে, তেমনি দেশের ভেতরেও শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভুমিকায় ছিল। পিলখানা হত্যার মাধ্যমে এই দুই অবস্থান থেকেই সেনা বাহিনীকে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। আমরা এই দিবসকে জাতীয় শোক দিবস পালন করতে পারি নাই অজ্ঞাত কারণে। ক্রিকেট খেলা দিয়ে বিডিআর হত্যা দিবসের দিনে সরকার চাইছে মুছে ফেলতে ।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর অব. সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, পিলখানা হত্যাকান্ডের জন্য কেবল বাইরের ষড়যন্ত্রকে দায়ী করলে চলবে না। এই হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী জেনেও কেন তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হলো না – এ প্রশ্ন তোলেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর অব. শাহ আলম বলেন, সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর সেনাবাহিনীর যেসব কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন, তার দায়ভার সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানান তিনি।
মেজর অব. আশফাক বলেন, শেখ হাসিনার একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার পূর্বপরিকল্পনা হিসেবে পিলখানা হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব চিরতরে বিনষ্ট করতে পিলখানা হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। বাংলাদেশের মানুষ আজ তা পুনরুদ্ধারের লড়াই করছে।
সভাপতির বক্তব্যে সিটিজেন মুভমেন্টের আহ্বায়ক এমএ মালেক বলেন, এই বর্বর হত্যা বিচার দাবি করছি । আগামী দিনে আমরা ক্ষমতা গেলে অবশ্যই বিচার করবো।
Posted ০৮:০১ | শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Mahbub