নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট
নাহিদা আহমেদ : সুষম ও নিরাপদ খাবার যেমন মানুষকে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে তেমনি অনিরাপদ খাদ্য মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে এমন একটি ধারণা প্রচলিত যে খাবার খাওয়ার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পেট ভরা। যেন তেন ভাবে পেট ভরলেই তাকে খাবার হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। তারা মনে করে খাবার খেলেই হলো। পুষ্টি কি আর নিরাপদ খাদ্য কি, এই বিষয় নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। খাদ্যের গুনাগুণ তো দূরের কথা সেটি নিরাপদ নাকি তা নিয়ে বেশিরভাগেরই কোনো চিন্তা নেই। আবার অনেকেই মনে করেন নামি দামি খাবার মানে হয়তো অনেক পুষ্টিকর খাবার। স্বল্প দামি খাবারও যে অনেক নামিদামি খাবারের চেয়ে পুষ্টিকর হতে পারে সে সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই অজানা। খাবার কেনার সময় বা গ্রহণ করার সময় সেটি দাম যাচাই না করে গুনাগুণ ও নিরাপদ নাকি সেটা যাচাই করতে হবে। আমাদের বেশিরভাগ মানুষই খাদ্য নিরাপত্তা ও নিরাপদ খাদ্য বিষয় দুটি এক করে ফেলেন। বিষয় দুটি কিন্তু কোনভাবেই এক না।
খাদ্যনিরাপত্তা হলো একটি দেশের মানুষের জন্য যদি খাদ্য সংস্থান করা, কোন সঙ্কটপূর্ণ মুহূর্ত সামাল দেওয়ার মতো খাদ্য মজুত থাকা। আর নিরাপদ খাদ্য হলো মানসম্মত, ভেজাল মুক্ত ও সঠিক গুনাগুণ সম্মত খাবার। বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থা যেভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছে এতে করে খুব শীঘ্রই হয়তো বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তাসম্মত দেশ হিসেবে আখ্যা পাবে। প্রতিটি নাগরিকের দু’বেলা খাদ্য সংস্থান হবে কিন্তু সে খাদ্য কতটুকু নিরাপদ হবে সে সম্পর্কে এখনও নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব নয়, কারণ নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে আমরা এখনও উদাসীন। আমরা অনেকেই সময় বাঁচাতে সহজলভ্য, আকর্ষণীয় ও প্রক্রিয়াজাত খাবারে আসক্ত হয়ে পড়ছে।
আমরা পুষ্টিবিদেরা সর্বদা বলে থাকি দেশীয় মৌসুমি ফলমূল ও শাকসবজি খাদ্যতালিকায় রাখতে। নির্দিষ্ট মৌসুমের ফলমূল ও শাকসবজিতে ক্ষতিকর উপাদানের পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকে। নির্দিষ্ট মৌসুম ছাড়া ও দেশের বাহিরের নামিদামি বিভিন্ন ফলমূল, শাকসবজি সংরক্ষণের জন্য ফরমালিন জাতীয় বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়।
খাবারে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপাদান ও দূষিত পদার্থ মেশানোর ফলে খাবার অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ সকল অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে শরীরে সহজে বার্ধক্য আসছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে, হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে, কিডনির বিকলাঙ্গতা তৈরি হচ্ছে ও শরীরে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হচ্ছে। অনিরাপদ খাদ্য রোগের জন্ম দেয়, অপুষ্টিকর খাদ্যে স্বাস্থ্যহানি ঘটে, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করে, অসুস্থ ও দুর্বল সন্তানের জন্মানোর ঝুঁকি বাড়ানো, শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়। দুর্বল স্বাস্থ্যের জনগোষ্ঠী দিয়ে সুস্থ, সবল ও কর্মঠ জাতি গঠন সম্ভব হয় না। এক কথায় নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে সচেতনতার অভাবে দেশ ও জাতি হুমকির মুখে পড়ছে।
লেখক : পুষ্টিবিদ
সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন
Posted ০৭:২৯ | শনিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২২
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain