| শুক্রবার, ০২ মে ২০১৪ | প্রিন্ট
সালাহউদ্দিন আহমেদ,নিউইয়র্ক : যুক্তরাষ্ট্র সফররত দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম) বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত ‘রাজনৈতিক শয়তায়’। তারা দেশ আর দেশের মানুষ নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, ৫৮ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ আর দেশের ১৭ কোটি মানুষ নিয়ে দেশে-বিদেশে নানা ষড়যন্ত্র-মিথ্যাচার চলছে। যা মহামারীর আকার ধারণ করেছে। দেশের প্রকৃতিক দূর্যোগ ভূমিকম্প-জলোচ্ছাসের চেয়ে রাজনৈতিক দূর্যোগ বেশী। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এই রাজনৈতিক দূর্যোগকে ভয়ঙ্কর করে তুলেছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী মায়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার এই দূর্যোগ মোকাবেলার শক্তি রাখে এবং দলীয় নেতা-কর্মীদেরকে ঐক্যবদ্ধ থেকে তাদের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা হবে।
মহান মে দিবস উপলক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় শ্রমিক লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী উপরোক্ত কথা বলেন। গত ১ মে বৃহস্প্রতিবার রাতে (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল) সিটির জ্যাকসন হাইটস্থ পালকী পার্টি সেন্টারে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের সভাপতি কাজী আজিজুল হক খোকন। সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের সমন্বয়কারী আব্দুর রহিম বাদশা, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সহ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল ও সাইফুদ্দিন নাসের, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নজমুল ইসলাম ও লুৎফুল করীম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, উপ প্রচার সম্পাদক তৈয়বুর রহমান টনি, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ চৌধুরী ও যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাখাওয়াত বিশ্বাস। সভা পরিচালনা করেন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহমেদ।
সভায় অতিথিবৃন্দ ছাড়াও আরো বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম উপদেষ্টা তোফায়েল আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবি সিদ্দিক, এডভোকেট মজিবুর রহমান, নিউইয়র্ক সিটি আওয়ামী লীগ নেতা হোসেন সোহেল রানা ও আবুল কাশেম ভূঁইয়া, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় শ্রমিক লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সিরাজউদ্দিন আহমেদ সোহাগ, সাবেক সদস্য সচিব মাস্টার আবু তাহের, ব্রুকলীন আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল ইসলাম নজরুল, যুক্তরাষ্ট্র কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একে চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান, শ্রমিক লীগ নেতা খান শওকত, টি মোল্লা, মইনুর রহমান লস্কর, মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত এবং ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও রানা প্লাজা ট্যাজেডীতে নিহত শ্রমিকসহ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের আতœার শান্তি/মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন শ্রমিক লীগ নেতা মাওলানা বজলুর রহমান। এরপর এক মিনিট নিরবতা পালন শেষে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শ্রমিক লীগ নেতা অধ্যক্ষ বসির আহমেদ।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় শ্রমিক লীগের পক্ষ থেকে মন্ত্রী মায়াসহ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ ও সাবেক সহ সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ফরাসত আলীকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। শ্রমিক লীগ নেতা সিরাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের নেতৃবৃন্দ মন্ত্রী মায়ার হাতে আর মন্ত্রী মায়া আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতে ক্রেস্টগুলো তুলে দেন। আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার ফরাসত আলীর পক্ষে ক্রেস্টটি গ্রহণ করেন সিরাজউদ্দিন আহমেদ সোহাগ।
সভায় মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ‘সজিব ওয়াজেদ জয় ও তারেক রহমান’-এর কথা তুলে ধরে বলেন, তার দু’জনই এখন প্রবাসী। একজন (জয়) সত্যের পূঁজারী আরেকজন মিথ্যার পূঁজারী। তাদের দু’জনের কাজ ও কথায় দিন-রাত পার্থক্য। তিনি বলেন, দেশের প্রকৃতিক দূর্যোগ নিয়ে আমি চিন্তিত নই, আমি চিন্তিত যুদ্ধাপরাধীদের বাচাঁতে বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র নিয়ে। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী দলের চেয়ারম্যান থেকে এখন আমীরের ভূমিকায় নেমে নানা হুমকী দিচ্ছে। বিএনপি-কে ‘বয়োজেষ্ঠ্য’ দল আখ্যায়িত করে মন্ত্রী বলেন, বিএনপি’র মাঝা ভেঙে গেছে। বয়োজেষ্ঠ্যদের মাঝা ভেঙে গেলে তিনজনেও তাকে টেনে তুলতে পারে না, তাই বিএনপিও আর দাঁড়াতে পারবে না।
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বলেন, দেশে বিদ্যুৎ সঙ্কট নেই, মঙ্গা নেই, স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিনা পয়সার আর বিনামূল্যে বই পেয়ে লেখাপড়া করছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মাঝে-মধ্যে খারাপ হলেও কঠোর হাতে তা মোকাবেলা করা হচ্ছে। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের হত্যার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, কেউ নির্বাচনে না আসলে তো নির্বাচন কমিশন বসে থাকতে পারে না। নির্বাচন কমিশনের অবাধ, সুষ্ঠূ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এসেছে। জাতীয় সংসদ রাজাকারমুক্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সহ উপজেলা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শতকরা ৮০ ভাগ চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মেয়র পদে জয়লাভ করেছে। সরকারেও আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশ এগিয়ে যাবে। তাই তিনি প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আর নয় বিদেশ, এবার চলো স্বদেশ’।
প্রসঙ্গত: মন্ত্রী মায়া বলেন, সজিব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সকল কর্মকান্ডের খবর রাখেন। যেমন দলীয় নেতা-কর্মীদের খবর রাখেন বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জয় সব সময় সত্য কথা বলেন, জয় তার মায়ের স্বভাব পেয়েছেন। আমরাও প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে শিখছি। তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে ড. সিদ্দিক-সাজ্জাদের নেতৃত্ব ও কর্মকান্ডে আমি মুগ্ধ। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কর্মকান্ড দেখে আমার মনে হয়েছে ঢাকার মতো এই প্রবাসেও আওয়ামী লীগের শক্তিশালী সংগঠন রয়েছে। আর প্রবাসী ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মতো নিবেদিত প্রাণ রয়েছে বলেই আওয়ামী লীগ বেঁচে রয়েছে।
সভায় যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের সভাপতি কাজী আজিজুল হক খোকনের ‘প্রবাসী বাংলাদেশীদের মরদেহ বিনা খরচে বাংলাদেশে নেয়ার’, মুক্তিযোদ্ধা এবি সিদ্দিকের ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা’ আর আওয়ামী লীগ নেতা ড. সিদ্দিকুর রহমান বগুড়া, লুৎফুল করীম সন্দ্বীপ ও হোসেন সোহেল রানা নীলফামারীতে যেকোন দূর্যোগে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী সাহায্য করার জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানালে মন্ত্রী মায়া এসব দাবীর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাার সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন।
সভায় বক্তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তড়ান্বিত করার দাবী জানিয়ে বলেন, ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রবাসী নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।
উল্লেখ্য, রাত সোয়া ৯টার দিকে সভার কাজ শুরুর পর মন্ত্রী মায়া জানান, ‘আপনারা যতক্ষন চান আমি সভায় থাকবো, আপনাদের কথা শুনবো। আমি তো আর প্রতিদিন আপনাদের সাথে থাকতে পারবো না’। প্রয়োজনে রাত ১২টা পর্যন্ত থাকবো। মন্ত্রীর এই কথায় আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক লীগ সহ দলীয় নেতা-কর্মীরা উৎসাহ ও প্রেরণা বোধ করার পাশাপাশি নিজেদেরকে সম্মানিত মনে করে তাদের বক্তব্যে বলেন, ‘মায়া ভাই’ জননেতা বলেই নেতা-কর্মীদের মূলায়ন করলেন, সময় দিলেন। ইতিপূর্বে অনেক নেতা-মন্ত্রী নিয়ে এই হলে সভা করলে তারা (ঢাকা থেকে আগত নেতা-মন্ত্রীরা) সময় কম বলে সভা সংক্ষেপে শেষ করার কথা বলেন, বক্তৃতা দিয়ে তারাতাড়ি চলে যেতে চান। কিন্ত্র এই প্রথম মন্ত্রী মায়া নিজ থেকেই সভায় সময় দেন এবং রাত ১২টার দিকে সভা শেষ হওয়া পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক লীগসহ দলীয় নেতা-কর্মীদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়।
Posted ১৫:৫৬ | শুক্রবার, ০২ মে ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin