শনিবার ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দৃশ্যপটে হঠাৎ এরশাদ : পথ হারাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী

  |   শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট

শাহ আহমদ রেজা

Reza

নিবন্ধের শুরুতে ‘ডিগবাজির’ জন্য কুখ্যাত হয়ে ওঠা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে টেনে আনার কোনো ইচ্ছা বা চিন্তাই ছিল না। কিন্তু ওই যে, সময়ের দাবি বলেও তো একটা কথা রয়েছে! সত্যিই আবারও ‘ডিগবাজি’ দিয়েছেন কিনা সেটা একটি প্রশ্ন বটে, তবে অনস্বীকার্য সত্য হলো, ঝামেলা ভালোই বাঁধিয়েছেন সাবেক এই স্বৈরশাসক। কে জানে, আসলেও তিনি সে ‘অ্যাটাক’ই করে বসেছেন কিনা, যার কথা এরশাদ চলতি বছরের জানুয়ারিতে বলেছিলেন। পাঠকদেরও মনে পড়তে পারে, সে সময় লালমনিরহাটের এক জনসমাবেশে এরশাদ বলেছিলেন, ‘যথাসময়ে অ্যাটাক’ করবেন তিনি। পাছে ক্যু বা সামরিক অভ্যুত্থান ধরনের ‘অন্য রকম’ অর্থ করা হয় সে চিন্তা থেকে কথাটার ব্যখ্যা দিয়ে এরশাদ বলেছিলেন, মহাজোট থেকে তিনি বেরিয়ে যাবেন এবং আগামী নির্বাচনে তার দল এককভাবে তিনশ’ আসনে প্রার্থী দেবে। এরশাদ বোঝাতে চেয়েছিলেন, জাতীয় পার্টি একাই সরকার গঠন করতে পারবে। কথাটাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য নিজের বুকের ওপর আঙুল ঠেকিয়ে তিনি বলেছিলেন, তাকে ছাড়া নাকি জনগণের উপায় নেই! কীভাবে ক্ষমতায় আসবেন সে সম্পর্কে জানাতে গিয়েই ‘যথাসময়ে অ্যাটাক’ করার কথা বলেছিলেন এরশাদ।

এরশাদের এই ‘অ্যাটাক’বিষয়ক কথাগুলোকে সে সময় অবশ্য মোটেই গুরুত্ব দেয়া হয়নি। বরং বলা হয়েছিল, বেছে বেছে এমন এক সময়ে তিনি ‘অ্যাটাক’-এর হুমকি দিতে মাঠে নেমেছিলেন যখন বিএনপি ও জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোর রোডমার্চ ও বিভিন্ন মহাসমাবেশে লাখ লাখ মানুষ অংশ নিচ্ছিল; যখন নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও নরসিংদীর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের লজ্জাকর পরাজয় ঘটেছিল এবং যখন জনমত জরিপে সরকারের জনসমর্থন এমনকি ৩০/৩৫ শতাংশে নেমে এসেছিল। অমন অবস্থার সম্ভাব্য পরিণতি হিসেবে ততদিনে একথা অন্তত পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে, সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী মহাজোটের পক্ষে ক্ষমতায় ফিরে আসা সম্ভব হবে না। আর ঠিক সেজন্যই কৌশল হিসেবে আগেভাগে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এরশাদ। তাই বলে উদ্দেশ্যও আবার সরকারকে সত্যি সত্যি ‘অ্যাটাক’ করা ছিল না, তিনি আসলে মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিলেন। এজন্যই পুরো এক বছরেও এরশাদকে তার সে ‘অ্যাটাক’টি করতে দেখা যায়নি। মাঝে-মধ্যে তিনি অবশ্য এদিক-সেদিক করতে চেয়েছেন। যেমন মাত্র ক’দিন আগে, নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্তও বলে বেড়িয়েছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে তিনি এমনকি বেহেশতেও যাবেন না এবং বিএনপি না এলে একতরফা নির্বাচনে অংশ নেবেন না।

এ ধরনের চটকদার ও বাহারি কথাবার্তা এবং ঘোষণার কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনের লাইমলাইটেও চলে এসেছিলেন এরশাদ। তিনিই আবার রাতারাতি ভোল পাল্টে সোজা ঢুকে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘সর্বদলীয়’ সরকারে। ১৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী যে আটজনকে মন্ত্রিসভায় নিয়েছেন তাদের মধ্যে এরশাদ একাই পেয়েছেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পাঁচটি পদ। বৃদ্ধ বয়সে শেখ হাসিনার অধীনে মন্ত্রী হয়েছেন এরশাদ আমলের আলোচিত ‘ফার্স্টলেডি’ রওশন এরশাদ। যে একজনকে মাত্র উপদেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রী তিনিও গেছেন জাতীয় পার্টি থেকেই (পরে অবশ্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জুও উপদেষ্টার পদ পেয়েছেন)। এরশাদের ভাই জি এম কাদেরও মন্ত্রীর পদে বহাল থেকেছেন। ফলে বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, কত বেশিজনকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী করা হবে তা নিয়েই এতদিন দর কষাকষি করেছেন এরশাদ। শেখ হাসিনাও যথেষ্ট লম্বা মুলাই ঝুলিয়েছেন তার সামনে। সেজন্যই বেহেশতের কথা ভুলে বঙ্গভবনে গিয়ে হাজির হয়েছেন এরশাদ। নাটকীয়তাও তিনি কম করেননি। হঠাত্ করে সেদিন সকালেই এরশাদ আওয়ামী মহাজোট থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছেন—যাতে বোঝানো যায়, আসলেও এটা ‘সর্বদলীয়’ সরকার! এরশাদ অবশ্য সেখান থেকেও সরে এসেছেন। দলের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বলেছেন পদত্যাগ করতে। ৬ ডিসেম্বর দুপুরে এই নিবন্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা এরশাদের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিলেও জাতীয় পার্টিকে ফিরিয়ে আনার জন্য জোর চেষ্টা চলছিল। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, যে কোনো কিছুই ঘটতে পারে। কারণ, যাকে নিয়ে এত আলোচনা—নাম তার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ— যিনি সকালে এক কথা বলেন তো বিকেলে বলেন আরেক কথা। এরশাদও স্বীকার করেছেন, কখন ঠিক কি বলবেন তা নাকি তিনি নিজেও জানেন না! একই কারণে তার নতুন ‘খেলা’র শেষ দেখার জন্য অন্তত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরশাদের এই ‘খেলা’টা নতুন পর্যায়ের আরও একটি ‘ডিগবাজি’ হলেও অর্থাত্ জাতীয় পার্টিকে নিয়ে তিনি নির্বাচনে অংশ নিলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

এদিকে এরশাদকে নিয়ে হঠাত্ হৈচৈ উঠলেও দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট কিন্তু এরই মধ্যে বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ঘটনাপ্রবাহে বেশি নিন্দিত হয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ ও তার সহকর্মী অন্য কমিশনাররা। কারণ, বিএনপির মতো দেশের প্রধান ও সবচেয়ে জনপ্রিয় দলসহ ১৮ দলীয় জোট না আসা সত্ত্বেও তারা ঘোষণা করেছেন, ঘোষিত তফসিল পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। কথাও রেখেছেন তারা। সে অনুযায়ী গত ২ ডিসেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র দাখিল করার শেষদিন। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো দলের প্রার্থীই মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। এদের মধ্যে এরশাদ আবার সরে দাঁড়ানোরও ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে এতদিন যাকে একতরফা মনে করা হচ্ছিল সে নির্বাচন এখন হতে যাচ্ছে একদলীয়। তারপরও রীতিমতো গোঁ ধরে বসে আছেন সিইসি ও তার সহকর্মীরা—৫ জানুয়ারি তারা নির্বাচন করবেনই। কারণ, সেবাদাসের ভূমিকা পালন করছেন বলে তাদের পক্ষে সরকারের ইচ্ছার বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না, হুকুম এসেছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। আর সরকার বলতে তারা যেহেতু শেখ হাসিনাকেই বোঝেন সেহেতু সিইসিরাও প্রধানমন্ত্রীর সুরেই সংবিধানের দোহাই দিয়েছেন। এখানে এসেই সিইসি কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ সম্রাট নিরোর সেই বাঁশি বাজানোর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। যদিও ঘটনা দুটির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কারণ, ইতিহাসের ওই ঘটনায় রাজধানী রোমই শুধু পুড়েছিল। অন্যদিকে এই সময়ে পুড়ছে সমগ্র বাংলাদেশ। আক্ষরিক অর্থে না পুড়লেও অবরোধে অচল হয়ে পড়েছে সারাদেশ। গ্রামাঞ্চলে পর্যন্ত সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে, প্রতিদিন মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটছে অসংখ্য মানুষের। অনেক জেলায় মনোনয়নপত্রসহ নির্বাচনের কাগজপত্র পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। বহু এলাকায় নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জনগণের ধাওয়ার মুখে রয়েছেন। আগ্রহী প্রার্থীদের অধিকাংশই যে নিজেদের এলাকায় যেতে পারছেন না সে কথা জানা গেছে ‘সর্বদলীয়’ সরকারের দ্বিতীয় প্রধান শরিক দল জাতীয় পার্টির বক্তব্যে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাই, মন্ত্রী জি এম কাদেরের দিকে লালমনিরহাটে জুতা পর্যন্ত ছুঁড়েছে সাধারণ মানুষ। মূলত সে কারণেই দলটি মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিল। কে জানে সে কারণেই এরশাদও আগেভাগে সরে দাঁড়িয়েছেন কিনা!
এদিকে এত গভীর ও মারাত্মক সঙ্কটের মধ্যেও দেশপ্রেমিক প্রধান জাতীয় নেত্রীর ভূমিকা পালন করতে আরো একবার এগিয়ে এসেছেন ১৮ দলীয় জোটের নেত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ২ ডিসেম্বর রাতে দেয়া এক বিবৃতিতে আন্দোলনরত নেতা-কর্মী ও জনগণের পাশাপাশি সরকার, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে যার যার ভূমিকা পালন করার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সরকারকে বলেছেন উত্পীড়ন ও নির্মূল অভিযান এবং চক্রান্ত ও অন্তর্ঘাতের পথ ছেড়ে সমঝোতার মাধ্যমে শান্তি ফিরিয়ে আনার পথে এগিয়ে আসার জন্য। নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে বলেছেন, বিশেষ দলের ক্রীড়নক হওয়ার পরিবর্তে একতরফা নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল স্থগিত করতে। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বলেছেন দেশপ্রেমিক অবস্থান নিয়ে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে। আর আন্দোলনরত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, সরকারের গুণ্ডা-সন্ত্রাসীরা পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসাত্মক নানা কর্মকাণ্ডে তত্পর রয়েছে বলেই তাদের লক্ষ্য রাখতে হবে—যাতে একজন নিরীহ মানুষও কোনো হামলার শিকার না হয় এবং কোথাও যাতে সাধারণ মানুষের কোনো সম্পদের ক্ষতি না হয়। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে ও জনগণের প্রতি সে আন্দোলনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতির শেষাংশে বেগম খালেদা জিয়া ঘোষণা করেছেন, ‘ইনশাল্লাহ, বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত ও অতি নিকটবর্তী।’
বলার অপেক্ষা রাখে না, সকল বিচারেই বেগম খালেদা জিয়ার এই আহ্বান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োচিত। কারণ, কোনো একটি প্রসঙ্গেই তিনি যুক্তি ও তথ্য ছাড়া কিছু বলেননি। যেমন সরকারের অপকৌশল ও কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ১৮ দলীয় জোটসহ বিরোধী দলগুলো যখন দেশ এবং দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য আন্দোলন করছে তখন মিথ্যা মামলা দায়ের ও গ্রেফতার করার এবং দমন-নির্যাতন চালানোর পাশাপাশি সরকার নিয়েছে জনগণ এবং আন্তর্জাতিক জনমতকে বিভ্রান্ত করার কৌশল। তিনি যুক্তি ও ব্যাখ্যাসহ অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগের গুণ্ডা-সন্ত্রাসীরাই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রছায়ায় সুপরিকল্পিতভাবে অগ্নিসংযোগ ও মানুষ হত্যার নৃশংস কর্মকাণ্ড চালিয়ে বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ দুর্বৃত্তরাই চলন্ত যানবাহনে পেট্রোল ঢেলে ও আগুন জ্বালিয়ে পৈশাচিকভাবে নারী শিশু ও বৃদ্ধসহ মানুষ পুড়িয়ে মারছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার মধ্যে নিরাপদে থেকে ক্ষমতাসীন নেতারা সব দোষ চাপাতে চাচ্ছেন আন্দোলনকারী নেতা-কর্মীদের ওপর। তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করছেন।

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, বেগম খালেদা জিয়ার কথাগুলোর মধ্যে অনস্বীকার্য যুক্তি রয়েছে। বিশেষ করে চলন্ত যানবাহনে পেট্রোল ঢেলে ও দগ্ধ করে মানুষ হত্যার ব্যাপারে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে তিনি যে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন তার পেছনে চারদলীয় জোট সরকারের সময় শেরাটন হোটেলের সামনে বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার মতো ‘ঐতিহাসিক’ সত্যতা রয়েছে। তাছাড়া দুটি প্রশ্নের উত্তরও লক্ষ্য করা দরকার। প্রথম প্রশ্নটি হলো, আন্দোলনরত বিরোধী দল কেন এমন নৃশংস কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়বে—যার কারণে জনমত তাদের বিপক্ষে চলে যাবে? দ্বিতীয় প্রশ্নটি হলো, ক্ষমতাসীনরা পুড়িয়ে মানুষ হত্যার অভিযোগ তুললেও আজও পর্যন্ত কেন বিরোধী দলের একজন কথিত দুর্বৃত্তকেও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়নি বা হচ্ছে না? প্রশ্ন দুটি খুবই তাত্পর্যপূর্ণ এ কারণে যে, বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যথেষ্ট যোগ্য ও সক্ষম। সুযোগ দেয়া হলে দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করা তাদের জন্য কয়েক মিনিটের বিষয় হওয়ার কথা। তা সত্ত্বেও একদিকে কোনো একজন প্রকৃত দুর্বৃত্তকেই গ্রেফতার করা হচ্ছে না এবং অন্যদিকে বিএনপির শীর্ষ ও বয়সে প্রবীণ নেতাদের বোমা হামলা, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার অভিযোগে কারাগারে ঢোকানো হচ্ছে বলেই বেগম খালেদা জিয়া প্রশ্ন দুটি না তুলে পারেননি। পর্যালোচনায় কিন্তু তার অভিযোগের সত্যতাই প্রমাণিত হবে। আসলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি দলীয় গুণ্ডা-সন্ত্রাসীদের দিয়ে হত্যার পৈশাচিক অভিযান সরকারই চালাচ্ছে। উদ্দেশ্য সম্পর্কেও বেগম খালেদা জিয়া যথার্থই বলেছেন। ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপাতে এবং জনগণকে নিজেদের পক্ষে টানতে চাচ্ছেন। কিন্তু সুচিন্তিত হলেও ক্ষমতাসীনদের এই ষড়যন্ত্র হালে পানি পায়নি বরং তাদের নোংরা উদ্দেশ্যই ধরা পড়ে গেছে। সাধারণ মানুষও বুঝে ফেলেছে, র্যাব পুলিশ ও গোয়েন্দাদের চোখের সামনে যানবাহনে আগুন আসলে কারা দিচ্ছে এবং কারা মানুষ পুড়িয়ে মারছে।

সমগ্র এ প্রেক্ষাপটেই ক্ষমতাসীনদের উচিত বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে মানুষ হত্যার পৈশাচিক অভিযান বন্ধ করা এবং প্রকৃত দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। এ ব্যাপারে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উচিত দেশপ্রেমিক অবস্থান নিয়ে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করা। তারা সততার সঙ্গে তত্পর হলেই দুর্বৃত্তরা ধরা পড়বে বলে জনগণ বিশ্বাস করে। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকেও প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা থেকে সরে আসতে হবে। কারণ, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের কর্তব্য সব দলের অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করা, দলবিশেষকে ক্ষমতায় আনার সিঁড়ি নির্মাণ করা নয়। কমিশনের তাই সরকারের ক্রীড়নক হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার পরিবর্তে বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানে সাড়া দেয়া এবং প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশে ঘোষিত তফসিল স্থগিত করা উচিত। সেটাই কমিশনের কর্তব্যও বটে। বেগম খালেদা জিয়া সরকারের জন্যও সময় ও সুযোগ দিয়েছেন। আওয়ামী মহাজোটের দ্বিতীয় প্রধান শরিক দল জাতীয় পার্টি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়ার ফলে সরকারের সামনে সব পথই বন্ধ হয়ে গেছে। ইনু-মেনন ও দিলীপ বড়ুয়ার মতো দু-চারজন মাত্র জনসমর্থনহীন নেতাকে সঙ্গে নিয়ে কোনো নির্বাচন করলে তার ফলাফল প্রত্যাখ্যাত হবে তাত্ক্ষণিকভাবে। সুতরাং ক্ষমতাসীনদের উচিত জনগণের ভাষা ও পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করা এবং সঙ্কীর্ণ রাজনীতির পথে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা ছেড়ে গণতন্ত্রসম্মত পথে ফিরে আসা— যার আহ্বান বেগম খালেদা জিয়া জানিয়েছেন। একথাও বুঝতে হবে যে, সীমা ছাড়ানো দুর্নীতি, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার, রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ন্যক্কারজনক দলীয়করণ, পুলিশ ও র্যাবকে দিয়ে বিরোধী দলের ওপর নিষ্ঠুর দমন-নির্যাতন, দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে গুম-খুন, গণমাধ্যমের টুঁটি টিপে ধরা এবং ভারতের স্বার্থ উদ্ধার করার মতো বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের অভিযোগে আওয়ামী লীগের জনসমর্থন এতটাই নিচে নেমে এসেছে যে, নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলেও শেখ হাসিনা আর ক্ষমতায় আসতে পারবেন না। তাছাড়া বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন এবং এরই মধ্যে একথা পরিষ্কারও হয়ে গেছে যে, নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে বিরোধী দল নিশ্চিতভাবেই বিজয় অর্জন করবে। সুতরাং বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর উচিত বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানে সাড়া দেয়া। না হলে সবে তো এরশাদকে খুইয়েছেন, এরপর তিনি পথও হারিয়ে ফেলবেন।

লেখক : সাংবাদিক ও ইতিহাস গবেষক
shahahmadreza@yahoo.com

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৪:৪০ | শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০১৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

তোমার পথও চেয়ে !!
(3870 বার পঠিত)
নবীজির উম্মত
(2251 বার পঠিত)
তর্জনী
(1180 বার পঠিত)
google5e999233a8e2dbce
(765 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com