বুধবার ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাহিরপুর সীমান্তে কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি : দেখার কেউ নাই

মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া   |   মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪ | প্রিন্ট

তাহিরপুর সীমান্তে কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি : দেখার কেউ নাই

সুনামগঞ্জ : দেশের পর্যটন খ্যাত সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তে প্রতিদিন কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে পাচাঁর করা হচ্ছে বিভিন্ন মালামাল। চোরাচালানের মাধ্যমে অবৈধ ভাবে মালামাল পাচাঁর করতে গিয়ে গত ৫ বছরে শতাধিক শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এব্যাপারে হয়নি কোন মামলা, গ্রেফতার করা হয়নি চোরাকারবারী ও তাদের গডফাদারকে। যার ফলে এই সীমান্তে দীর্ঘদিন যাবত জমজমাট ভাবে চলছে চোরাচালান বাণিজ্য।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো আজ মঙ্গলবার (৯ জুলাই) ভোর থেকে জেলার তাহিরপুর উপজেলার চাঁনপুর সীমান্তের নয়াছড়া, গারো ঘাট, রজনী লাইন, কড়ইগড়া ও বারেকটিলা এলাকা দিয়ে সোর্স রুসমত আলী, নাসির মেম্বার, জামাল মিয়া, নজরুল মিয়া, বুটকুন মিয়াগং মোটর সাইকেল ও ট্রলি দিয়ে কয়েক হাজার মেঃটন কয়লা, বালি ও চুনাপাথরসহ মাদকদ্রব্য ও বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর শুরু করে। অন্যদিকে ভোররাত থেকে চারাগাঁও সীমান্তের কলাগাঁও নদী থেকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে শতাধিক স্টিলবডি ইঞ্জিনের নৌকা দিয়ে বালি, কয়লা, চুনাপাথর, চিনি, পেয়াজ ও মাদকদ্রব্য বোঝাই করে কিশোরগঞ্জ জেলা ভৈরব ও নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা নিয়ে যায় সোর্স পরিচয়ধারী রফ মিয়া, আইনাল মিয়া, সাইফুল মিয়া, রিপন মিয়া ও লেংড়া জামালগং।

অন্যদিকে গডফাদার তোতলা আজাদের নেতৃত্বে সোর্সরা সকাল ৬টায় বীরেন্দ্রনগর সীমান্তের সুন্দরবন, লামাকাটা ও চারাগাঁও সীমান্তে জঙ্গলবাড়ি, মাইজহাটি এলাকা দিয়ে ১০টি স্টিলবডি ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে প্রায় ৩শ মেঃটন কয়লা, পেয়াজ ও চিনিসহ মাদকদ্রব্য পাচাঁর করে নিয়ে যায়। অপরদিকে এই সীমান্তের বাঁশতলা ও লালঘাট এলাকা দিয়ে ৮টি স্টিলবডি ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে প্রায় ২শ মেঃটন কয়লা ও বিপুল পরিমান মদ, গাঁজা, ইয়াবা পাচাঁর করে নিয়ে যায় সোর্স পরিচয়ধারী চোরাকারবারী রুবেল মিয়া, আমির আলী, হারুন মিয়া, বাবুল মিয়া, সোহেল মিয়া, আনোয়ার হোসেন বাবলু ও রফ মিয়া।

এদিকে বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা এলাকা দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারী রতন মহলদার, কামরুল মিয়া, ইয়াবা কালাম, হোসেন আলী, জিয়াউর রহমান জিয়া ও মনির মিয়াগং পৃথক ভাবে ১৫০মেঃটন কয়লা ও বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য পাচাঁর করাসহ টেকেরঘাট সীমান্তের রজনী লাইন, বুরুঙ্গাছড়া, বড়ছড়া এলাকা দিয়ে সোর্স আক্কল আলী, কামাল মিয়া, রফিকুল, মুহিবুর, সাইদুল মিয়াগং চুনাপাথর পাচাঁর করে এবং লাউড়গড় সীমান্তের জাদুকাটা নদী, পুরান লাউড়, দশঘর এলাকা দিয়ে সোর্স বয়েজিদ মিয়া, জসিম মিয়া, রফিক মিয়া, জজ মিয়া ও নুরু মিয়াগং ভারত থেকে কয়লা, পাথর, চিনি, পেয়াজ, গরু, নাসির উদ্দিন বিড়ি, ইয়াবা, মদ ও গাঁজা পাচাঁর শুরু করে। বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এই চোরাচালান ওপেন ভাবে চলে। কিন্তু বিজিবি ও পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে অবৈধ মালামালসহ কাউকে গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়নি।

শুল্কস্টেশনের বৈধ ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে- গডফাদার তোতলা আজাদ সোর্সদের মাধ্যমে পাচাঁরকৃত প্রতিটন চোরাই কয়লা থেকে বিজিবির নামে ৮শত টাকা, থানার নামে ১হাজার টাকাসহ মোট ২৩শ টাকা চাঁদা নেয়। এছাড়া বালির নৌকা থেকে ৭শ টাকা, ১ বস্তা পেয়াজ থেকে ২শ টাকা, ১বস্তা চিনি থেকে ৩শ, প্রতি গরু ৫হাজার, ঘোড়া ৭হাজার টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করে। কিন্তু এই চোরাচালান ও চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য নেওয়া হয়না আইনগত পদক্ষেপ। যার ফলে গডফাদার তোতলা আজাদ ও তার সোর্সরা এখন কোটিপতি।

এব্যাপারে চাঁনপুর বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার আব্বাস বলেন- সীমান্ত চোরাচালানের বিষয়ে আমার জানা নেই, খোঁজ নিয়ে দেখছি। চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্পের ভিআইপির দায়িত্বে থাকা সৈনিক শামীম বলেন- আমার উপরস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশ মতো আমি দায়িত্ব পালন করছি। ওই ক্যাম্পের কমান্ডার নায়েক সুবেদার শফিকুল ইসলাম বলেন- আপনি তথ্য দিয়েন আমি ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব। টেকেরঘাট কোম্পানীর কমান্ডার দীলিপ বলেন- সীমান্ত এলাকা অনেক বড়, তারপরও খোঁজ খবর নিয়ে দেখব।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১২:৫৭ | মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com