| বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
বাছির জামাল
বিশ্ব বিশ্রুত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিশিষ্ট সমর তাত্ত্বিক ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর রাজনীতির সংকটের মূলসূত্র নির্দেশ করেছেন এভাবে: In developing countries politics tends to be war without bar. On the other hand, politics tends to be a game played under some rules and regulations in developed nations. Problem of political development essentially hinges on the question of how to transfer this politics of war into a politics of game” অর্থাৎ উন্নয়নশীল দেশগুলোর রাজনীতির প্রবণতা হচ্ছে বাধাহীনভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া। অন্যদিকে উন্নত দেশে কতকগুলো বাধা নিষেধ ও নিয়মনীতির আওতায় রাজনীতি খেলা বিশেষ হিসেবে নিয়ন্ত্রিত হয়। রাজনৈতিক উন্নয়নের মূলসূত্র হচ্ছে: কীভাবে ‘যুদ্ধের রাজনীতি’কে ‘খেলার রাজনীতি’তে রূপান্তর করা যায়।১
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নবীন, কিন্তু সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী ‘রাজনৈতিক কারক(Political actor) বিএনপি’র নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান২ তারেক রহমানের রাজনীতির পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির একজন বিদগ্ধ পর্যবেক্ষক তালুকদার মনিরুজ্জামানের উপর্যুক্ত উপতত্ত্বের কথাই মনে পড়লো। অন্যসব উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মতই বাংলাদেশের রাজনীতির মূল সংকট ওই ‘যুদ্ধের রাজনীতি’কে কীভাবে ‘খেলার রাজনীতি’তে রূপান্তর করা যায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র এবং উপরন্তু দীর্ঘদিন ধরে সংবাদপত্রে রাজনৈতিক প্রতিবেদক হিসেবে দেশের রাজনীতির ঘটনা প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করেছি। দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে সারাদেশ সফরের সময় তারেক রহমানের সঙ্গী হয়েছি। দেশের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াদি নিয়ে তার সঙ্গে মতবিনিময় হয়েছে। তার রাজনীতির সংক্ষিপ্ত সময়কালে (’৮৮-২০০৭) রাজনীতি নিয়ে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এসব বিষয় বিচার-বিশ্লেষণ করে এটা প্রতীয়মান হয়েছে যে, বাংলাদেশে যে ‘যুদ্ধের রাজনীতি’ চলছে, তাকে ‘খেলার রাজনীতি’তে রূপান্তরের উদ্যোগ নেন তারেক। এখানে বলে রাখা ভাল, তারেকের এ রাজনীতি নতুন কিছু নয়। পিতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদ জিয়ার কাছ থেকেই উত্তরাধিকার সূত্রে এই রাজনৈতিক দর্শন পেয়েছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতি এখন দুই ধারায় বিভক্ত। এই দুই ধারা সৃষ্টির পেছনে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত একটি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে। এর এক পক্ষে রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে(secularism) বিশ¡াসী দলগুলো। এই ধারার রাজনীতিটি মূলত ভারতমুখী (Pro-indian)। তারা দেশের উন্নয়নে ভারতের সাহায্য ও বন্ধুত্বের প্রত্যাশী। অন্যপক্ষটি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ¡াসী দলগুলোকে নিয়ে গঠিত। বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন এই ধারাটি মূলত ভারত বিরোধী (Anti-indian) হিসেবে পরিচিত। তারা মনে করে, ভারত বন্ধুত্বের নামে আমাদের ওপর পরিবেশগত, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালাচ্ছে। তালুকদার মনিরুজ্জামান বাংলাদেশের রাজনীতির এই দুই ধারাকে ‘মহাবিভক্ত দুই পক্ষ’ বলে অভিহিত করেছেন।
গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার চিরায়ত সৌন্দর্যই হলো রাজনীতির পক্ষ-প্রতিপক্ষের প্রতিযোগিতা। নির্বাচকমন্ডলীকে আস্থায় নেয়ার জন্য এই প্রতিযোগিতা বহুত্ববাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটায়। এতে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা সংহত হয়। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার হাত বদল হওয়াই গণতন্ত্রের রীতি। এটাই রাজনীতির চিরায়ত ‘রুলস অব গেম’। কিন্তু বৈরিতার ঘন অন্ধকারে যদি রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, তখন তা রাজনীতি থাকে না। তা হয়ে ওঠে নিরঙ্কুশ শত্রুতার বৃহত্তর অঙ্গন। গত শতাব্দির বিশ শতকের দিকে স্বাধীনতা লাভকারী বিশে¡র বহু নতুন জাতির মতো ‘ভিন্ন ভাষা ও অসমগোত্রীয়’ না হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের রাজনীতি তাদের মতো দ্বন্দ্ব-সংঘাতের খুরে খুরে খাচ্ছে।
তারেক রহমান এই ‘দ্বন্দ্ব-সংঘাত’-এর ব্যবধান কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি মহাবিভক্ত দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের বাধাহীন যুদ্ধকে প্রতিযোগিতাময় খেলার রাজনীতিতে রূপান্তরের চেষ্টা করেছিলেন। চারদলীয় জোট সরকারের (২০০১-২০০৬) আমলের মাঝামাঝি সময় তখনকার বিরোধী দলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় যখন তার নবপরিণিতা বিদেশী বধূকে নিয়ে দেশে আসেন, তখন তার এই আগমনকে অভিনন্দন জানিয়ে পত্র দেন তারেক রহমান। তিনি তার দেয়া পত্রে জয়কে একটি সমন¦য়ধর্মী রাজনীতি অর্থাৎ নিজ নিজ অবস্থানে থেকে মানুষের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করে যাওয়ার আহবান জানান।
তিনি তার ওই চিঠিতে লিখেন, ‘প্রিয় জয়, আমার শুভেচ্ছা নিবেন। বাংলাদেশে আপনার আসার কথা শুনে খুশি হয়েছি। দেশের রাজনীতিতে আপনি যোগ দিতে যাচ্ছেন শুনেও আমি উৎসাহিত হয়েছি। আমি আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমাদের আগের প্রজন্ম বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে। এখন সেই স্বাধীনতাকে জনগণের জন্য অর্থবহ করা, এই রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করা ও নতুন সহস্রাব্দের চাহিদা অনুযায়ী মানুষের প্রত্যাশা পূরণে আমাদেরকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে কাজ করতে হবে। আমাদের প্রজন্মের কাছে এটাই দেশ ও দেশের মানুষের দাবি। স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান ও আমি আপনার এবং আপনার স্ত্রীর কল্যাণ কামনা করছি। শুভেচ্ছাসহ তারেক রহমান।’
তারেক রহমানের এই অভিনন্দন বার্তাটি বাংলাদেশের ‘অসহিষ্ণু রাজনৈতিক সংস্কৃতি’র (Parocial Political Culture) কল্যাণে (!) পৌঁছতে পারেনি জয়-এর কাছে। তখনকার বিরোধী দলীয় নেত্রী জয় -এর মা শেখ হাসিনার সহকারি প্রেস সচিব নজিব হোসেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের তখনকার সচিবালয় হাওয়া ভবনের প্রতিনিধি দলকে উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘এখান থেকে চলে যান। নাটক করবেন না। এটা নাটকের জায়গা নয়। এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপি নেতা ৮ম সংসদের সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন। তিনি তখন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘আমি তাকে (নজিব) বলেছি যে, এটা একটা সৌজন্য। আমাদের দেশের রাজনীতিতে এটা তো প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এমন ধরনের স্বাভাবিক সৌজন্য আমাদের প্রজš§ থেকে আবার শুরু হোক। এই প্রত্যাশা নিয়েই বিএনপি নেতা তারেকর হমানের অভিনন্দন বার্তা পৌঁছে দিতে এসেছি। এ কথা বলার পরও নজিব হোসেন আমাদের ঢুকতে দেয়নি। চিঠিও নেননি। বরং প্রচন্ড দুর্ব্যবহার করেছেন। এর আগেও তারেক রহমান ঈদ কার্ড, নববর্ষের কার্ডসহ বিভিন্ন উৎসবে সুধা সদনে (জয়ে-এর পিতা এম ওয়াজেদ মিয়া সুধা’র ধানমন্ডির বাসভবন) পাঠিয়েছেন।
দেশে যখন এক রাজনৈতিক দলের নেতা ভিন্ন মহাদর্শী রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলা তো দূরের কথা, মুখ দেখাদেখি করতেও ভয় পান, তারেক রহমান তখন ওই অভিনন্দন বার্তাটি পাঠান। তিনি চেয়েছিলেন, রাজনীতির হিমালয় পর্বতে ‘মনান্তরে’ যে বরফ জমা পড়েছে, তা গলতে শুরু করুক। হয়তবা অদূর ভবিষ্যতে মনান্তরের এই বরফ গলে গলে বহতা নদীর স্বচ্ছ পানির মতই একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশের সৃষ্টি হবে। যেখানে ‘মতান্তরের’ কারণে ‘মনান্তর’ ঘটবে না। রাজনীতির চোরাবালিতে হারিয়ে যাবে না সুন্দর সামাজিক সম্পর্ক।
অভিনন্দন বার্তাটি পাঠানোর পর প্রতিপক্ষ থেকে যে ধাক্কা পেলেন, তাতেও দমে যাননি তারেক। পিছপা হননি দেশে একটি সুষ্ঠু ও সুস্থ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা গড়ে তোলার উদ্যোগ থেকে। তা না হলে তারেক তার অভিনন্দন বার্তাটি ফেরত দেয়ার প্রায় এক বছরের মাথায় টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মাজার জিয়ারত করতেন না। ২০০৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির ঘটনা এটি। সৌভাগ্যক্রমে লেখকও তারেকের সফরসঙ্গী ছিলেন। গোপালগঞ্জে বিএনপি প্রতিনিধি সভা শেষে ঢাকা ফেরার পথে আকস্মিকভাবেই টুঙ্গিপাড়ায় যান তিনি। রাত ৮টা ২৪ মিনিট থেকে ৮টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত প্রায় ১১ মিনিট মাজারে অবস্থান করে দোয়া দরুদ পড়েন। জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের তারেক রহমান জানান, ‘শ্রদ্ধেয় নেতা হিসেবে তাকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। দেশের জন্য তার অনেক অবদান রয়েছে। এর আগে তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করেন।
কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পিতার মাজার জিয়ারত করার কী নির্মম প্রতিউত্তরই না দিলেন সংসদে। নবম সংসদের চতুর্থ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজার নিয়ে কটুক্তি করে বলেন, ‘ওই খানে একটি বাক্স এনে কবর দেয়া হয়েছিল। ওই বাক্সে জিয়াউর রহমানের লাশ ছিল না। কেউ এই লাশ সনাক্ত করতে পারেনি। এর আগেও একান্নব্বই সালের নির্বাচনের পূর্বে শেখ হাসিনা জিয়াউর রহমানকে ‘অখ্যাত মেজর’ বলেছিলেন।
স্বাধীনতার ঘোষক সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের মতো একজন জাতীয় নেতার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হয়ে শেখ হাসিনার এমন বক্তব্য রাজনীতির যে ‘রুলস অব গেম’ রয়েছে, তার বিরোধী। পৃথিবীর যেসব জাতি তাদের জাতীয় নেতা ও বীরদের বিতর্কিত করেনি, তারা জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হতে পেরেছে। শক্তিশালী ও সম্পদশালী হতে পেরেছে। মার্কিনীরা জর্জ ওয়াশিংটন ও জেফারসনকে বিতর্কিত করেনি। ভারতীয়রা গান্ধী ও নেহরুকে অহেতুক বিতর্কিত করেনি। কিন্তু বাংলাদেশীরা এই দুর্ভাগা জাতি।
এ প্রসঙ্গে তালুকদার মনিরুজ্জামানের একটি পর্যবেক্ষণ প্রনিধানযোগ্য। তিনি ইউরোপ-আমেরিকায় শীর্ষ রাজনীতিবিদদের কেমন শ্রদ্ধা করা হয় তার নজির তুলে ধেরেছেন এভাবে, ‘আমেরিকায় একটি কথা প্রচলিত আছে যে, অল পলিটিশিয়ানস আর ব্যাড, বাট প্রেসিডেন্ট ইজ গুড। সব রাজনীতিক খারাপ হতে পারেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট তা নন। রোম সাম্রাজ্যের সময় থেকে একটি কথা প্রচলিত আছে যৈ, সিজারস ওয়াইফ ইজ এভাব সাসপিশন্স। সিজার অর্থাৎ রাজার স্ত্রী সন্দেহের ঊর্ধ্বে। এসব কথার অন্তর্নিহিত অর্থ হচ্ছে শীর্ষ পদের একটি বিশেষ মর্যাদা আছে। কিন্তু আমাদের এ রকম কোনো ঐতিহ্য নেই। আসলে প্রতিপক্ষ যাই ভাবুক না কেন শেখ হাসিনা প্রতিপক্ষকে শত্রু জ্ঞান করেন।. . . ফলে প্রতিযোগিতার পরিবর্তে সমগ্র রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সঞ্চিত হয়েছে বৈরিতার ঘন আস্তরণ।
এই সংকট থেকে বাঁচার পথ হচ্ছে রাজনীতির সকল মহলকেই সহিষ্ণু হতে হবে। সহিষ্ণু রাজনৈতিক আচরণ প্রতিষ্ঠার জন্য তারেক রহমান প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের মোকাবেলায় এলাকার উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা বলেছেন। নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের ভিন্ন দুটি ইউনিয়ন প্রতিনিধি সভায় বক্তব্য রাখাকালে বলেন, উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি দিয়ে বিশৃঙ্খল রাজনীতির মোকাবেলা করতে হবে। জাতীয় ঐক্য সমঝোতা ছাড়া কোনো দেশ বেশি দূর এগুতে পারে না। বিএনপি জাতীয় ঐক্য ও সমঝোতায় জোর দিয়েছে। এ জন্য রাজনীতিতে ‘রুলস অব গেম’ চালু করার কথাও বলেন তিনি।
রাজনীতির অন্যতম রুলস অব গেম হচ্ছে নির্বাচনের ফল মেনে নেয়া। তা না হলে এই নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, তার বৈধতা থাকে না। সরকার বৈধতা না পেলে, রাজনৈতিক ব্যবস্থা অস্থির হয়ে ওঠে। এই জন্যই কি-না জানি না, বিএনপি ২০০৮ সালের নির্বাচনী ফল মেনে না নিলেও মহাজোট-এর সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ¡াস দেয়, সংসদে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এ ছাড়াও বিএনপিসহ অন্য বিরোধী দলগুলো রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। এমন নজির এর আগে দেখা যায়নি।
বিএনপি এর কারণও ব্যাখ্যা দিয়েছে। দলটি বলেছে, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি ড. ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে যে অনির্বাচিত সরকার জগদ্দল পাথরের মতো জনগণের কাঁধে বসেছিল, তাকে সরানোর জন্য ভোট কারচুপির মাধ্যমে গঠিত তথাকথিত নির্বাচিত সরকার ঢের ভাল। নির্বাচনী ফল মেনে না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে আবার শেখ হাসিনার মহাজোট-এর সরকারকে দেশ পরিচালনার সুযোগ দেয়ার যে সিদ্ধান্ত বিএনপি নিয়েছে, তার পেছনে তারেক রহমান প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছেন। সরকার গঠনের পর বিগত এক বছর আন্দোলনের কোনো কর্মসূচিও দেয়নি দলটি। তারেক রহমান চান, দেশে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরে আসুক।
এর আগেও এমন হয়েছে। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের ৭ম সংসদ নির্বাচনের কারচুপির অভিযোগ করেছিলেন বেগম খালেদা জি য়া। এই নির্বাচনের ফল মেনে নিতেও অস্বীকার করেন। তবে দেশের মধ্যে ভয়াবহ সংকট সৃষ্টির আশংকায় শেষে তার মতও পরিবর্তন করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ রাজনীতির এই ‘রুলস অব গেম’ মানেনি। দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের চোখে একান্নব্বইয়ের নির্বাচন অবাধ হলেও তারা অভিযোগ করে ‘সূক্ষ্ম কারচুপি’র। এজন্য এই দলের নেত্রী ও তখনকার বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি সরকারকে একদিনও শান্তিতে না থাকতে দেয়ার কথা ঘোষণা করেন। তাই বিএনপি’র এই সরকারের শেষ আড়াই বছর ছিল রাজনৈতিক সংঘর্ষে জর্জরিত। এমনকি তখন আওয়ামী লীগ ‘জনতার মঞ্চ’ গঠন করে তাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশ করতে বাধ্য করে। এর মাধ্যমে প্রশাসন ‘পলিটিসাইজ’ হয়। এখন প্রশাসনে এর মাশুল দেয়া শুরু হয়েছে। ২০০১ সালের নির্বাচনও শেখ হাসিনা মেনে নেননি। বলেছেন, স্থূল কারচুপি হয়েছে।৩১
তারেক রহমানের রাজনীতির আরো একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তিনি মনে করেন, যিনি রাজনীতিতে অংশ নিবেন, তার নির্দিষ্ট পেশা থাকতে হবে, বৈধ উপার্জনের পথ থাকতে হবে।৩২ পাবনা-সিরাজগঞ্জ জেলার তৃণমূল সভায় এক তৃণমূল নেতা বলেছিলেন, ‘কিছুই করি না, বিএনপি করি।’ এই বক্তব্যের জবাবে তারেক বলেছিলেন, ‘কিছু করি না, বিএনপি করিÑ তা বললে চলবে না। নির্দিষ্ট পেশা থাকতে হবে। বৈধ উপার্জনের পথ থাকতে হবে। অন্যদেরও কর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
রাজনৈতিক মাঠকে সুষ্ঠ করার কাজের পাশাপাশ তারেক রহমান বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক সংগঠন জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) একটি ‘প্লাটফরম ধর্মী দল’ থেকে ‘রাজনৈতিক দল’ এর রূপান্তরের কাজে ব্রতী হন। এ জন্য ক্যাডারভিত্তিক দল কমিউনিস্ট পার্টি ও জামায়অতে ইসলামির মতো৩৩ দলীয় পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করে সংগঠনের আদর্শ নিষ্ঠ কর্মীবাহিনী তৈরির কাজেও হাত দিয়েছিলেন। অবশ্য প্রতিষ্ঠার পরই বিএনপিকে একটি রাজনৈতিক দল-এ রূপান্তরের জন্য প্রশিক্ষন কর্মসূচি প্রণয়ন করেছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। এ জন্য তিনি একটি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।৩৪ তিনি বলতেন, প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনীই রাজনৈতিক দলের প্রাণ।৩৫ এরপর খালেদা জিয়া দলের দায়িত্ব নেন।৩৬ তিনি দীর্ঘ নয় বছর স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। এ সময় বিএনপি’র বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখেন, দেশে গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দেন তিনি। এ প্রসঙ্গে এম. সাইফুর রহমান বলেন, দলের মধ্যে গড়ে ওঠা নেতৃত্বের কোন্দল নিরসন, নেতাকর্মীদের সংগঠিত করা এবং সেই সাথে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন পরিচালনা করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করা করার ব্যাপারে বেগম খালেদা জিয়ার অনমনীয় ও দৃঢ় ভূমিকা বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অবিষ্মরণীয় হয়ে থাকবে।৩৭ এসব কারণে তার সময়ে দলের প্রশিক্ষণের কাজটি করা যায়নি।
তারেক রহমান প্রশিক্ষণের দিকে নজর দেন। তিনি প্রশিক্ষণের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে বলতেন, বিশাল সংগঠনের প্রয়োজন নেই। ‘সলিড সাচ্চা’ লোক চাই।৩৮ চারদলীয় জোট সরকারের একেবারে শেষ দিকে ‘একটি সরকার কীভাবে চলে’, তা শেখানোর জন্য ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালার ছক করে রেখেছিলেন। সময়াভাবে তা করতে পারেননি। এ সম্পর্কে তিনি জানান, দেশের আগামী দিনের কর্ণধার হিসেবে ছাত্রদলের নেতাদের রাষ্ট্র, দেশ ও সরকার সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেয়ার জন্যই এই কর্মসূচির প্রয়োজন।৩৯
রাজনৈতিক নেতাদের প্রশিক্ষণ যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তা তারেক রহমান বুঝতে পেরেছিলেন এই জন্য যে, যেমন ‘রাজনীতি বিজ্ঞানের গুরু প্লেটো রাজনীতিকে কলা (Art) মনে করতেন। এ জন্য, তিনি বলতেন, অন্যান্য কলা’র মতো রাজনীতিতেও জ্ঞান থাকা আবশ্যক। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আঁকড়গ্রন্থ ‘রিপাবলিক’-এর মূল আলোচ্য বিষয়ই হচ্ছে এই যে, যে কোনো কলাবিদের ন্যায় রাষ্ট্রবিদেরও তার পেশা সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান থাকা উচিত।৪০ আধুনিক যমানার রাষ্ট্রচিন্তাবিদ অধ্যাপক হ্যারল্ড জে লাসকী’র পর্যবেক্ষন হচ্ছে, জনসাধঅরণকে যদি রাজনীতি এবং অন্যান্য গঠনমূলক কাজে আÍনিয়োগ করতে হয়, তাহলে রাজনৈতিক জটিলতা ও দেশের আইন-কানুন সম্পর্কে তাদের জ্ঞান থাকতে হবে। সে জন্য তাদেরকে উপযুক্ত শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করতে হবে।৪১
আমাদের রাজনীতিবিদরা শিক্ষিত, সন্দেহ নেই। কিন্তু তাদের ক’জন দেশের আইন-কানুন সম্পর্কে জানেন! একটি রাষ্ট্র কীভাবে চলেÑ তা জিজ্ঞেস করলে রাজনৈতিক দলের সভ্যদের মধ্যে ক’জন তার উত্তর দিতে পারবে! একমাত্র কমিউনিস্ট পার্টি, জামায়াতে ইসলামী কিংবা আরো কয়েকটি দল বাদে বাংলাদেশের যে দুটি দল চক্রাকারে ক্ষমতায় আসে সেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে রাষ্ট্রসহ রাজনীতি বিষয়ে সাংগঠনিকভাবে হাতে-কলমে শেখানোর-জানানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। জিয়াউর রহমানের পর বিএনপিতে এই কাজটি শুরু করেন তারেক রহমান। কেননা, তিনি মনে করেন, ‘রাষ্ট্রীয় শাসন ক্ষমতা অজ্ঞদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে যতক্ষণ না দার্শনিক বা জ্ঞানরি হাতে ন্যস্ত হবে, ততক্ষণ মানুষের মুক্তি নেই।’৪২
তথ্যসূত্র
১) ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশের রাজনীতি সংকট ও বিশ্লেষণ, শুভ প্রকাশন, ফেব্রুয়ারি ২০০৩, পৃষ্ঠা-১০১
২) ২০০৯ সালের ৮ ডিসে¤¦র অনুষ্ঠিত বিএনপির ৫ম জাতীয় কাউন্সিলের রুদ্ধদার অধিবেশনে কাউন্সিলরদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে তারেক রহমান দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি পদাধিকার বলে দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য। বিদেশ অবস্থানকালে কিংবা অসুস্থতাজনিত কারণে অনুপস্থিতির জন্য দলীয় চেয়ারপার্সনের দায়িত্বও পালন করবেন। (আমার দেশ, ৯ ডিসে¤¦র ২০০৯)
৩) ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা-১০১।
৪) তারেক রহমান রাজনীতি শুরু করেন ১৯৮৮ সালে তার নিজ জেলা বগুড়ার গাবতলী থানার কমিটির প্রাথমিক সদস্যপদ নেয়ার মাধ্যমে। ২০০২ সালের ২২ জুন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হন। ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তিনি গ্রেফতার হন। এখন লন্ডনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
৫) ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা-৯৬।
৬) ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা-৯৬
৭) ড.তালুকদার মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশ রাজনীতির ভবিষ্যৎ, অন্যদিগন্ত, দৈনিক নয়াদিগন্ত-এর মাসিক প্রকাশনা, জানুয়ারি ২০০৯, পৃষ্ঠা-১১।
৮) ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশের রাজনীতি সংকট ও বিশ্লেষণ, শুভ প্রকাশন, ফেব্রুয়ারি ২০০৩, পৃষ্ঠা-২২
৯) ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ : রাজনীতির গতিধারা, ঝিনুক প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি ২০০২, পৃষ্ঠা-১০৬
১০) ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশ রাজনীতির ভবিষ্যৎ, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা-১০
১১) আমার দেশ, ২৩ ডিসে¤¦র ২০০৪
১২) ঐ
১৩) ঐ
১৪) ঐ
১৫) আমার দেশ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৫
১৬) ঐ
১৭) আমার দেশ ২১ জানুয়ারি ২০১০
১৮) মাহমুদ শফিক, বাংলাদেশের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয়, বর্ণবীনা, মে ১৯৯৩, পৃষ্ঠা-১৫১
১৯) ড. মাহবুব উল্লাহ, সংসদে জিয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, আমার দেশ ২৩ জানুয়ারি ২০১০
২০) ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশের রাজনীতি সংকট ও বিশ্লেষণ, শুভ প্রকাশন, ফেব্রুয়ারি ২০০৩, পৃষ্ঠা-৪৯-৫০
২১) ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ রাজনীতির চালচিত্র।
২২) ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশের রাজনীতি সংকট ও বিশ্লেষণ, শুভ প্রকাশন, ফেব্রুয়ারি ২০০৩, পৃষ্ঠা-১২০
২৩) ইত্তেফাক, ৬ মার্চ ২০০৫
২৪) আমার দেশ, ৩০ মার্চ ২০০৫
২৫) আমার দেশ, ৩১ ডিসে¤¦র ২০০৮
২৬) প্রথম আলো ১৬ জানুয়ারি ২০০৯
২৭) আমার দেশ, ২ জানুয়ারি ২০০৯
২৮) মাহমুদ শফিক, খালেদা জিয়ার উত্থান, সূচিপত্র, জানুয়ারি ২০০২ পৃষ্ঠা ৫১
২৯) এম. সাইফুর রহমান, কিছু কথা কিছু স্মৃতি, হাক্কানী পাবলিশার্স, ফেব্রুয়ারি ২০০৯, পৃষ্ঠা ২৭৪
৩০) মাহমুদ শফিক, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা-৫০
৩১) এম. সাইফুর রহমান, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-২৮৩
৩২) প্রথম আলো, ২১ মার্চ ২০০৫
৩৩) Talukder Maniruzzaman, Politics and Security Of Bangladesh, UPL 1994, P-24
৩৪) জিয়াউর রহমান, আমার রাজনীতির রূপরেখা, ২০ মার্চ ১৯৯১, পরিবেশক : স্টুডেন্ট ওয়েজ, পৃষ্ঠা-৪০
৩৫) ওই, পৃষ্ঠা-২
৩৬) খালেদা জিয়া ছিলেন শ্রেফ গৃহিনী। স্বামী জিয়াউর রহমান শাহাদাৎ বরণ করার পর ’৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হন। ’৮৩ সালের মার্চে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। একই বছরের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় প্রথম ভাষণ দেন। এরপরই তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে নির্বাচিত চেয়ারম্যান হন। (বিএনপি’র সংগ্রাম ও গৌরবের ৩১ বছর, পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষে বিএনপির প্রকাশনা, ডিসে¤¦র ২০০৯, পৃষ্ঠা-৪৪)
৩৭) এম. সাইফুর রহমান, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-২৭০
৩৮) যুগান্তর, ৯ নভে¤¦র ২০০৪
৩৯) আমার দেশ, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৫
৪০) মোহাম্মদ দরবেশ আলী খান, প্লেটো ও এরিস্টটলের রাজনৈতিক চিন্তা, দীপ প্রকাশন, কলকাতা, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬, পৃষ্ঠা-৮২
৪১) হ্যারল্ড জে. লাসকী, রাজনীতির গোড়ার কথা (অ্যা গ্রামার অব পলিটিক্স) এম এ ওদুদ ভূঁইয়া অনূদিত, বাংলা একাডেমী, ১৯৭৬, পৃষ্ঠা-৬৫
৪২) প্লেটোর রিপাবলিক, সরদার ফজলুল করিম, ঢাকা বিশ¡বিদ্যালয়, ডিসে¤¦র ১৯৮২, ভূমিকা, ৩৩।
লেখক : বাছির জামাল
সিনিয়র রাজনৈতিক প্রতিবেদক
দৈনিক আমার দেশ
উল্লেখ্য, লেখকের ‘সিন্ধু পারের দেশে’ শিরোনামের তার একটি ভ্রমণ কাহিনী সম্পর্কিত গ্রন্থ রয়েছে।
Posted ১৯:২৪ | বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin