| বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০১৪ | প্রিন্ট
উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ওই দিন সকালেই ছাপা হবে। ভবিষ্যতে যাতে প্রশ্নপত্র আর ফাঁস না হয়, এ জন্য এমন সুপারিশ করতে যাচ্ছে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে গঠিত তদন্ত কমিটি।
সুপারিশ করা হবে, পরীক্ষায় একটি বিষয়ের জন্য ২০টির বেশি সেট প্রশ্নপত্র করা হবে। এসব প্রশ্ন একটি সিডি বা অন্য কোনো প্রযুক্তির মাধ্যমে একজনের কাছে রাখা হবে। পরীক্ষার দিন সকালে কোন সেটে পরীক্ষা হবে, তা ঠিক করে ওই দিন সকালেই তা ছাপা হবে।
এবার ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসির ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠায় পরীক্ষাটি স্থগিত করা হয়। গত ১০ এপ্রিল এই পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অভিযোগ ওঠার পর পরীক্ষার আগের দিন, অর্থাত্ ৯ এপ্রিল রাতে তা স্থগিত করা হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ১০ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ড আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। দুটি কমিটিকেই ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। মন্ত্রণালয়ের কমিটি আরও ১৫ কর্মদিবস সময় বৃদ্ধি করে।
তদন্ত কমিটি ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ পেলেও কোথা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে তার উত্স খুঁজে বের করতে পারেনি। জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ওই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সোহরাব হোসাইন গত বুধবার বলেন, ‘আশা করছি, আগামী সপ্তাহেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া যাবে। এখনো আমরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের উত্স বের করতে না পারলেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে বেশ কিছু সুপারিশ করতে যাচ্ছি।’
তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, তদন্তকাজ প্রায় শেষ করে এখন সুপারিশ ও প্রতিবেদন লেখার কাজ চলছে। নাম প্রকাশ না করে তদন্ত কমিটির একজন সদস্য বলেন, তাঁরা ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ পেয়েছেন। কারণ যে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল, সেটি মূল প্রশ্নের সঙ্গে মিলেছে। আরেকজন সদস্য জানান, কোথা থেকে ফাঁস হলো তার প্রকৃত তথ্য তাঁরা পাননি। এটা বের করাও কঠিন। তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের উত্স বের করার চেষ্টা চলছে।
এদিকে এই কমিটির তদন্ত চলার সময় এইচএসসি পরীক্ষায় আরও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে সরকার সেগুলো আর স্বীকার করছে না। সুপারিশ
ভবিষ্যতে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কমিটি একগুচ্ছ সুপারিশ করতে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ঠিক করা এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে একটি বিষয়ের জন্য ২০টিরও বেশি সেট প্রশ্নপত্র করা এবং এসব প্রশ্ন একটি সিডি বা অন্য কোনো প্রযুক্তির মাধ্যমে একজনের দায়িত্বে রাখা। এটি থাকবে নির্ধারিত একটি ওয়েবে।
পরীক্ষার দিন সকালে কোন সেটে পরীক্ষা হবে, সেটি ঠিক করে ওই সেটের নির্ধারিত পাসওয়ার্ড জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বা কেন্দ্রের দায়িত্বরত ব্যক্তিকে জানিয়ে দেওয়া হবে এবং ওই দিন সকালেই এ কাজের জন্য নির্ধারিত প্রিন্টারের মাধ্যমে তা প্রিন্ট করে পরীক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হবে। এ কাজের জন্য বিদ্যুত্, ইন্টারনেট ও দ্রুতগতির প্রিন্টার অতি প্রয়োজন। কমিটি মনে করে, বর্তমানে এটা সম্ভব। এ কাজের জন্য কী পরিমাণ টাকা প্রয়োজন এবং বর্তমানে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন থেকে শুরু করে বিতরণ পর্যন্ত কী পরিমাণ টাকা খরচ হবে, এর একটি তুলনামূলক চিত্র থাকছে প্রতিবেদনে।
এ বিষয়ে কমিটির একজন দায়িত্বশীল সদস্য বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রথমে কেউ কেউ হাসাহাসিও করতে পারেন। কিন্তু প্রযুক্তির মাধ্যমে এটি সম্ভব এবং এ ছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা কঠিন হবে।
এ ছাড়া প্রশ্নপত্র তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার সরকারি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নিরাপত্তা ছাড় নেওয়া (বর্তমানে এটি করা হয় না), প্রশ্নপত্রের প্যাকেট ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করা, প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলার দায়িত্বরত ব্যক্তি ছাড়া প্রতিনিধির মাধ্যমে তা না খোলা (অনিবার্য কারণ ছাড়া), যেসব জায়গা থেকে প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হয়, সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট রাখার সুপারিশ থাকছে প্রতিবেদনে।
বর্তমানে সারা দেশে সৃজনশীল প্রশ্নপত্র একই হয়। এতে এক জায়গায় প্রশ্ন ফাঁস হলে সার দেশে তা ছড়িয়ে পড়ে। তাই কমিটি সৃজনশীল প্রশ্নপত্রও সব বোর্ডে অভিন্ন না করার সুপারিশ করছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে নৈতিকতা ও আদর্শবোধ জাগ্রত করার সুপারিশও থাকছে প্রতিবেদনে।
Posted ১০:১২ | বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin