নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান :সাধারণভাবে, ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্তরা ৮০ ভাগ হয় উপসর্গবিহীন অথবা সাধারণ জ্বরের মতো সামান্য উপসর্গ। বাকি ৫ ভাগ মানুষের রোগ হয় আরও জটিল এবং স্বল্প অনুপাতে এটি প্রাণঘাতী হয়। ইনকিউবিশন পিরিয়ড (উপসর্গসমূহের সূত্রপাত থেকে রোগের প্রাথমিক পর্যায়ের মধ্যবর্তী সময়) স্থায়ী হয় ৩-১৪ দিন, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা হয় ৪-৭ দিন। অতএব, আক্রান্ত এলাকাফেরত পর্যটকদের ডেঙ্গু হয় না যদি ঘরে ফেরার ১৪ দিনের বেশি পরে জ্বর ও অন্যান্য উপসর্গ শুরু হয়। বাচ্চাদের প্রায়ই এই উপসর্গগুলো হয় যা সাধারণ সর্দি এবং গ্যাস্ট্রো এন্টারাটাইটিসের (বমি ও ডায়রিয়া) সমান, আর সাধারণত বড়দের চেয়ে উপসর্গের তীব্রতা কম হয়, কিন্তু রোগের জটিলতার শিকার বেশি পরিমাণে হয়। ডেঙ্গুর ভাইরাসবাহী মশা কামড়ানোর ২ থেকে ৭ দিন পর এসব উপসর্গ স্পষ্টভাবে লক্ষণীয় হয়। এ রোগের কিছু সাধারণ উপসর্গ হলো-জ্বরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশ বেড়ে যায়। জ্বর ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। বিরামহীন মাথাব্যথা, হাড়, হাড়ের জোড় ও পেশিতে তীব্র ব্যথা, বমি ভাব/বমি হওয়া, চোখের পিছনে ব্যথা হওয়া ইত্যাদি। ডেঙ্গু যদি প্রথমবার আক্রান্ত করে এবং এটি যদি তরুণ বয়সে/শিশুদের হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোন উপসর্গ থাকে না। জ্বরও থাকে না, এ রকমও হতে পারে। টিপিক্যাল ডেঙ্গু/ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুতে জ্বরের সঙ্গে সর্দি-কাশি থাকতে পারে।
ক্রমণের কোর্স তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত : প্রাথমিক, প্রবল এবং আরোগ্য। প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে অত্যধিক জ্বর, প্রায় ১০৪ ডিগ্রির বেশি, সঙ্গে থাকে সাধারণ ব্যথা ও মাথাব্যথা; এটি সাধারণত দুই থেকে সাতদিন স্থায়ী হয়। এই পর্যায়ে ৫০-৮০% উপসর্গে র্যাশ বেরোয়। এটা উপসর্গের প্রথম বা দ্বিতীয় দিনে লাল ফুসকুঁড়ি হিসেবে দেখা দেয় অথবা পরে অসুখের মধ্যে (দিন ৪-৭) হামের মতো র্যাশ দেখা দেয়। কিছু (ছোট লাল বিন্দু যেগুলো ত্বকে চাপ দিলে অদৃশ্য হয় না, আবির্ভাব হয় ত্বকে চাপ দিলে এবং এর কারণ হচ্ছে ভগ্ন রক্তবাহী নালি) এই জায়গায় আবির্ভূত হতে পারে এবং কারুর মুখ ও নাকের মিউকাস মেমব্রেন থেকে অল্প রক্তপাতও হতে পারে। কিছু লোকের ক্ষেত্রে অসুখটি চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়, যার কারণে প্রবল জ্বর হয় এবং সাধারণত এক থেকে দুদিন স্থায়ী হয়। এই পর্যায়ে প্রচুর পরিমাণে তরল বুক এবং অ্যাবডোমিনাল ক্যাভিটিতে বর্ধিত ক্যাপিলারি শোষণ ও লিকেজের কারণে জমে। ফলে রক্তপ্রবাহে তরলের পরিমাণ কমে এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্ত সরবরাহ হ্রাস পায়। এই পর্যায়ে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকলতা এবং প্রবল রক্তপাত হয়, সাধারণত গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল ট্র্যাক্ট হতে পারে।
ডেঙ্গুর সব ঘটনার ৫%-এরও কম ক্ষেত্রে শক (ডেঙ্গু শক সিনড্রোম) এবং হেমারেজ (ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভার) ঘটে, যাদের আগেই ডেঙ্গু ভাইরাসের অন্যান্য স্টেরিওটাইপের সংক্রমণ ঘটেছে তারা বর্ধিত বিপদের মধ্যে রয়েছেন। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে, যেমন ফুসফুস ও পর্দার মাঝে (প্লুরাল ইফিউশন) কিংবা পেটে সামান্য পরিমাণ পানি জমতে পারে। কিন্তু বেশি প্লাজমা লিকেজ হলে রক্তচাপ কমে যায় ও রোগী শকে চলে যায়। বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত সরবরাহ কমে যেতে পারে ও মাল্টি অর্গান ফেউলিউর হতে পারে। ফুসফুস, কিডনি, হার্ট ইত্যাদি এর ব্যতিক্রম নয়। হার্ট বা কিডনি ফেইলিউর হলে বুকে পানি জমা, অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়া ইত্যাদি জটিলতায় পড়তে পারে রোগী। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে তাই শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা, শ্বাসের গতি বেড়ে যাওয়া অসম্ভব নয়। ফুসফুসের অভ্যন্তরে বায়ু কুঠুরির মাঝের পর্দা ছিঁড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয় ফলশ্রুতিতে তীব্র শ্বাসকষ্ট হয় এবং কাশির সঙ্গে রক্ত এসে একই সঙ্গে দুই ফুসফুসের পর্দায় পানি আসার কারণে শ্বাসকষ্ট হয়। এরপর আরোগ্য পর্যায়ে বেরিয়ে যাওয়া তরল রক্তপ্রবাহে ফেরত আসে। এটি দুই থেকে তিন দিন স্থায়ী হয়। এই উন্নতি হয় চমকে দেওয়ার মতো, কিন্তু এতে প্রচণ্ড চুলকানি এবং হৃদস্পন্দনের গতি ধীর হতে পারে। আরেক রকম র্যাশও বেরোতে পারেম্যাকুলোপাপুলার বা ভাস্কুলাইটিক রূপে, ফলে ত্বকে গুঁটি বেরোয়। এ পর্যায়ে তরলের অতিপ্রবাহ অবস্থা ঘটতে পারে। যদি এতে মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয় তাহলে সচেতনতার মাত্রা হ্রাস অথবা মূর্ছা যাওয়া হতে পারে। এরপর এক ক্লান্তির অনুভূতি অনেক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে।
লেখক : মেডিসিন ও বক্ষ্যব্যাধি বিশেষজ্ঞ
ইসলাম ডায়াগনস্টিক ল্যাব, শ্যামলী, ঢাকা। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন
Posted ০৫:২৯ | শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২২
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain