| শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
ঢালিউডে চলতি বছর ডিজিটাল সিনেমার জয়জয়কার। এবার ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর চলচ্চিত্র এসেছে। কম টাকায় ভালো চলচ্চিত্র তৈরি হওয়ার পথ খুঁজে পাওয়া গেছে। এবার হয়তো আমাদের চলচ্চিত্র এগিয়ে যাবে। এ বছর মুক্তি পেয়েছে ৫৩টি ছবি। এর মধ্যে পাঁচটি ছবি ছিল ৩৫ মিলিমিটারে নির্মিত। বাকিগুলো ডিজিটাল। কিন্তু এই ডিজিটাল ছবিগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটি ছিল এতটাই দুর্বল যে এক বা দুই সপ্তাহের বেশি সেগুলো চালানো যায়নি কোনো হলে।
ডিজিটাল যুগের সূচনার মধ্য দিয়ে নতুনরূপে যাত্রা শুরু করে ব্যাপক আশার সঞ্চার হয়েছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে। স্বচ্ছ ছবি, পরিষ্কার শব্দ, নতুন শিল্পীদের চমক- সব মিলিয়ে বড় একটা স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিল চলচ্চিত্র শিল্পের মানুষজন। কিন্তু ডিজিটাল সিনেমার নামে ফাঁকিবাজি, গল্পের অভাব, নির্মাণে অসঙ্গতি, ডিজিটাল প্রেক্ষাগৃহের অভাবে কতিপয় গোষ্ঠীর ছবি মুক্তি প্রদানে স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সব আশা অনেকটাই নিরাশায় পরিণত হয়েছে। একদিকে যেমন ডিজিটাল পদ্ধতিতে অসংখ্য নতুন ছবি শুরু হয়েছে অন্যদিকে প্রেক্ষাগৃহ না পাওয়ার কারণে ছবি মুক্তি দিতে পারছেন না অনেকেই। গত দুই বছরের তুলনায় ২০১৩ ছবি মুক্তির সংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে। ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যা ছিল ৪৮টি। ২০১২ সালে মুক্তি পেয়েছে ৫১টি ছবি। চলতি বছর মুক্তি পেয়েছে মোট ৫৩টি ছবি। মুক্তির তারিখ নির্দিষ্ট করার পরে পিছিয়ে নেয়া না হলে ছবির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াত ৬০-এ। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ‘ভালোবাসার বন্ধন’ মুক্তির মাধ্যমে এ বছরের চলচ্চিত্র যাত্রার শুরু হয়। গত বছরের মতো এ বছরও সর্বাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন মিশা সওদাগর। সর্বাধিক চলচ্চিত্রের নায়ক হিসেবে রয়েছেন শাকিব খান। সর্বাধিক চলচ্চিত্রের নায়িকার খাতায় নাম লিখিয়েছেন মাহিয়া মাহি। চলতি বছর মাহি অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের সংখ্যা ছয়টি। ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫২টি ছবি মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২০টির মতো ছবি আছে যেগুলো হাতেগোনা কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। অনেক ছবিকে এক দুটি প্রেক্ষাগৃহ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। কিছু ছবি এমনভাবে মুক্তি পেয়েছে যার নামটিও অনেকে মনে রাখতে পারেননি। এসব কিছুর ওপর দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে দর্শকরা প্রেক্ষাগৃহে যেতে পারেননি। যারা গেছেন তারাও হতাশ হয়েছেন অধিকাংশ ছবির মান দেখে।
অনেক নির্মাতা মুখে মুখে তাদের ছবিকে হিট সুপারহিট বলে দাবি করলেও সরেজমিন প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখা গেছে দর্শকশূন্যতা। অনেক নির্মাতা সিনেমা নির্মাণের চেয়েও বেশি ব্যস্ত ছিলেন ছবি শেষ করায়। ফলে তারা দর্শকের মন জয় করতে ব্যর্থ হন। অনেক নামিদামী নির্মাতার ছবিও দর্শক গ্রহণ করেননি নানা অসঙ্গতির কারণে। নতুনদের মধ্যে যাদের নিয়ে বেশি আশা ছিল তারাও আশা পূরণে পুরোমাত্রায় সফল হতে পারেননি। ফলে পুরো সিনেমা ব্যবসায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তবে আশার কথা, এখন প্রচুর সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে। অনেক নতুন নতুন নায়ক-নায়িকা আসছে। আসছে চলচ্চিত্র নির্মাণে শিক্ষিত অনেক তরুণ। টেলিভিশন ছবিটি বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে। এদের সঙ্গে প্রযুক্তির সংমিশ্রণে নতুন বছর ২০১৪ চলচ্চিত্রের জন্য ভাল কিছু আনতে পারে।
২০১৩ সালের সব ব্যর্থতা, অসঙ্গতি, জটিলতা দূর করে আশা-নিরাশার মাঝে দোদুল্যমান চলচ্চিত্র শিল্পের নতুন বছর শুভ হোক এমন প্রত্যাশা সবার। মুক্তি পেয়েছে যেসব ছবি ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলো হলো: লাভ ইন জঙ্গল, ভালবাসার বন্ধন, টেলিভিশন, জোর করে ভালবাসা হয় না, দেবদাস, অন্য রকম ভালবাসা, জীবন নদীর তীরে, আত্মঘাতক, পাগল তোর জন্য রে, শিরি ফরহাদ, মাটির পিঞ্জিরা, কাজলের দিনরাত্রি, কষ্ট আমার দুনিয়া, সেই তুমি অনামিকা, দেহরক্ষী, অন্তর্ধান, শিখণ্ডী কথা, জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার, জটিল প্রেম, এই তো ভালবাসা, নিষ্পাপ মুন্না, রোমিও ২০১৩, পোড়ামন, তোমার মাঝে আমি, নিঃস্বার্থ ভালবাসা, ভালবাসা আজকাল, মাই নেম ইজ খান, এর বেশি ভালবাসা যায় না, এক পায়ে নূপুর, ইভটিজিং, ঢাকা টু বোম্বে, মৃত্তিকা মায়া, কিছু আশা কিছু ভালবাসা, মন তোর জন্য পাগল, প্রেম প্রেম পাগলী, রূপগাওয়াল, তবুও ভালবাসি, বাংলার পাগলু, কুমারী মা, ফুল এন্ড ফাইনাল, প্রেমিক নাম্বার ওয়ান, পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী, কি প্রেম দেখাইলা, অনিশ্চিত যাত্রা, একই বৃত্তে, আয়না কাহিনী, উধাও, ইঞ্চি ইঞ্চি প্রেম, তোমার আছি তোমারই থাকবো, ভালবাসা জিন্দাবাদ, সাত ভাই চম্পা ও ৭১-এর গেরিলা। সেরা ১০ ছবি নিঃস্বার্থ ভালবাসা, মাই নেম ইজ খান, পোড়ামন, দেহরক্ষী, ইভটিজিং, ভালবাসা জিন্দাবাদ, প্রেমিক নাম্বার ওয়ান, পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী, জটিল প্রেম, আয়না কাহিনী ব্যবসা সফল ছবি চলতি বছরের ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে এম এ জলিল অনন্তর ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’, জাকির হোসেন রাজুর ‘পোড়ামন’, বদিউল আলম খোকনের ‘মাই নেম ইজ খান’ এবং ‘নিষ্পাপ মুন্না’, ইফতেখার চৌধুরীর ‘দেহরক্ষী’, সাফি উদ্দিন সাফির ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’, শাহিন-সুমনের ‘অন্যরকম ভালোবাসা’, ‘দেবাশীষ বিশ্বাসের ‘ভালোবাসা জিন্দাবাদ’, পি এ কাজলের ‘ভালোবাসা আজকাল’ এবং কাজী হায়াতের ‘ইভ টিজিং’।
১৩ নতুন পরিচালক ২০১৩ সালে ১৩ জন নতুন পরিচালকের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এরা হলেন- এমবি রেজা (ভালবাসার বন্ধন), মনির হোসেন মিঠু (জীবন নদীর তীরে), শাহিন কবির টুটুল (এই তো ভালবাসা), সজল খালেদ (কাজলের দিনরাত্রি), অনন্ত জলিল (নিঃস্বার্থ ভালবাসা), গাজী রাকায়েত (মৃত্তিকা মায়া), পলাশ মাহবুব (আত্মঘাতক), এসএম শাহনেওয়াজ শানু (মাটির পিঞ্জিরা), হাবিবুর রহমান হাবিব (রূপ গাওয়াল), শেখ কামাল (সাত ভাই চম্পা), কিশোর সাহা (বাংলার পাগলু), অমিত আশরাফ (উধাও) এবং মিজানুর রহমান শামীম (’৭১-এর গেরিলা)।
আমাদের দেশে শহর ও গ্রামপর্যায়ে প্রেক্ষাগৃহ আছে ৪৫০ থেকে ৫০০টি। দুই কোটি টাকার বেশি খরচ করে যেসব চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে। সেগুলো হিট হলেও লগ্নিকৃত টাকা উঠিয়ে নিতে কষ্ট হয়েছে প্রযোজক-পরিবেশকদের। কারণ আমাদের দেশে চলচ্চিত্র বাজারটি মোটামুটি দেড় কোটি টাকার। এ বছরের হিট বা মোটামুটি অনেক প্রেক্ষাগৃহে চলেছে। এমন ছবিগুলোর মধ্যে জোর করে ভালোবাসা হয় না ১৪০টি হলে, নিষ্পাপ মুন্না ২০২টি, জটিল প্রেম ২০০টি, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, অন্য রকম ভালোবাসা, দেহরক্ষী ১৭০টি,মাই নেম ইজ খান ১৫০টি, এর বেশী ভালোবাসা যায় না ১১০টি, প্রেম প্রেম পাগলামি ১৩৮টি, পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী ১০৬টি হলে মুক্তি পায়। ৯০ থেকে ২০০ প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনীর পরও কোনো কোনো ছবি পুঁজির পুরোটা তুলে আনতে পারেনি। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভিডিও পাইরেসি ইত্যাদির কারণে দর্শকদের বড় একটা অংশ হলমুখো হয়নি। এ বছর শাকিব খান অভিনীত নয়টি ছবি মুক্তি পায়। নতুন তারকা বাপ্পীর মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যা সাত। অপু বিশ্বাসের তিনটি, মৌসুমীর দুটি, ফেরদৌসের দুটি, মাহির চারটি, ববির তিনটি, নিপুণের তিনটি, আঁচলের তিনটি, সাহারার তিনটি, আমানের চারটি, নিরবের তিনটি এবং ইমনের একটি করে ছবি মুক্তি পায়। আরিফিন শুভর দুটি ছবি মুক্তি পায় এ বছর। তাঁর অভিনয় আলোচনায় ছিল।
Posted ২২:৩৭ | শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin