| বৃহস্পতিবার, ০১ নভেম্বর ২০১৮ | প্রিন্ট
ধারেকাছে মোবাইল টাওয়ার না থাকায় ঘানার একটি গ্রামের বাসিন্দাদের নেটওয়ার্ক পেতে সহায়তা করছে একটি গাছ।
জানা যায়, আঞ্চলিক রাজধানী তামালি থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম বালিসিনিয়া যেতে দুই ঘণ্টা সময় লাগবে, যেখানে পঞ্চাশটি পরিবার বসবাস করে। তাদের বেশিরভাগেরই মোবাইল ফোন আছে। কিন্তু এখানে ফোন কল করা বা গ্রহণ করা খুবই কঠিন।
গ্রামের বাসিন্দা ৪০ বছরের আবুবকর আল হাসান বলছেন, মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের সিগন্যাল পাওয়া এখানে খুবই কঠিন। এখানকার সব মানুষই সিগন্যালের সমস্যায় ভোগে, বিশেষ করে যখন আপনি এখন কোন বন্ধু বা পছন্দের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন, তখন সেটা খুবই কঠিন হয়ে যায়।’
এমনকি যখন কোন অন্তঃসত্ত্বা নারীর প্রসব বেদনা ওঠে বা কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন এমনকি অ্যাম্বুলেন্সের পেতেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না।
তিনি বলছেন, এই নেটওয়ার্ক সমস্যার একটি অভিনব সমাধান খুঁজে বের করেছেন গ্রামবাসীরা। গ্রামের মাঝখানে অবস্থিত একটি বিশাল গাছ তাদের যোগাযোগের পথ খুলে দিয়েছে।
দূর থেকে দেখে গাছটি সাধারণ একটি গাছ বলে মনে হবে, যেখানে গ্রামবাসীরা এসে সামাজিক যোগাযোগে মিলিত হন। কিন্তু কাছাকাছি হলে দেখা যাবে ভিন্ন চিত্র।
সেখানে ঘুরে আসা এক সাংবাদিক জানান, গাছটির নীচে দাঁড়িয়ে অন্তত ২০ জন ব্যক্তি ফোন করছেন বা কথা বলছেন। তাদের অনেকে গাছের ডালের সঙ্গে তাদের ফোন বেঁধে রেখেছেন, আবার কেউ কেউ গাছের মগডালে উঠে গেছেন।
এই গাছটি এখানকার মানুষের মোবাইল যোগাযোগের প্রধান কেন্দ্র। দুপুর তিনটার দিকে মোবাইল নেটওয়ার্ক খোঁজার এই কর্মকাণ্ড শুরু হয়, যেখানে সময় এবং ধৈর্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই সব গ্রামবাসীর কাছেই এই ম্যাজিক মোবাইল গাছ অনেক কিছু।
মোবাইল ফোনের মালিক হলেও, নেটওয়ার্কের সিগন্যাল পাওয়া ঘানার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের জন্য সমস্যা।
গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, এই গাছটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুরো গ্রামটি এর ওপর নির্ভরশীল। কারণ এটাই একমাত্র জায়গা, যেখানে আমরা মোবাইল সিগন্যাল খুঁজে পাই। যেখান থেকে আমরা ফোনকল করতে পারি। তাই আমরা গাছটিরও অনেক যত্ন নেই। এই গাছটি যদি পড়ে যায়, পুরো গ্রামটি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।
একজন নারী বলেন, এই গ্রামে বসে আমরা কোন ফোন কল করতে পারি না। আমরা জানি না, কেন বারবার কল ড্রপ করে যায়। যা এই গ্রামের নারীদের জন্য বড় একটি সমস্যা। এটাই একমাত্র জায়গা, যেখানে বসে আমরা ফোনে কথা বলতে পারি।
রাজধানী আক্রায় টনি হাসান, একজন টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাখ্যা করছিলেন এই গাছটির মোবাইল নেটওয়ার্কের রহস্য।
তিনি বলেন, সেল সাইটগুলো থেকে এরকম জায়গা সাধারণত অনেক দূরে হয়, সুতরাং সেখানকার মানুষজন সিগন্যাল ঠিকমতো পায় না। মোবাইল সিগন্যাল লাইটের আলোর মতো কাজ করে। এর সামনে কিছু পড়লে সেটি প্রতিফলন ঘটায়। যেহেতু জায়গাটি দূরে, সেখানে যা কিছুই সামনে পড়ুক না কেন, তার প্রতিফলিত হবে।
গাছ এজন্য ভালো উদাহরণ, গাছের ডালপালা এই প্রতিফলন ঘটাতে পারে। ফলে সেখানে গাছটির কারণে সিগন্যাল গভীর তৈরি হচ্ছে। হয়তো আশেপাশে এলাকার তুলনায় গাছটি সবচেয়ে বড় বা লম্বা, সুতরাং সেখানে এরকম পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।
দেশটির সরকার বলছে, মোবাইল নেটওয়ার্ক সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। সেটি না হওয়া পর্যন্ত আবুবকরের মতো স্থানীয় বাসিন্দাদের গাছের সাহায্যেই মোবাইল নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকতে হচ্ছে। বাংলাদেশ জার্নাল
Posted ১০:৩৩ | বৃহস্পতিবার, ০১ নভেম্বর ২০১৮
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain