নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ | প্রিন্ট
সাকিব ভাই ও মাহমুদুল্লাহ ভাইয়ের কাছে বাড়তি কিছু চাই না। ওনারা যেভাবে পারফর্ম করছেন, তাদের যার যে ভূমিকাটা আছে, সেটা যদি ওনারা করতে পারেন, তাহলেই দল অনেক উপকৃত হবে।
নাজমুল হোসেন শান্ত
সূর্যডুবির মতো অনেকেই খাদের কিনারায় দাঁড়ানো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ক্যারিয়ারের যতি রেখা টেনে দিয়েছিলেন। এক বছরের ব্যবধানে তারাই আবার দেখেছেন ফিনিক্স পাখির মতো মাহমুদুল্লাহর পুনর্জন্ম। দেখেছেন কীভাবে চাপ সামাল দিয়ে সাবেক অধিনায়ক বাজে সময়কে কফিন চাপা দিয়েছেন। নিঃসন্দেহে দেশের সবচেয়ে সৃজনশীল ক্রিকেটশিল্পী মাহমুদুল্লাহ। বয়স ৩৮ বছর পেরিয়েছে। নিজেকে ফিরে পাওয়ার চ্যালেঞ্জে ফিটনেস ধরে রেখেছেন। আক্রমণাত্মক মেজাজে চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছোঁটান। ক্যারিয়ারের অন্তিম সময়ে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি। তারপরও বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ভরসা মাহমুদুল্লাহ। টি-২০ বিশ্বকাপ খেলতে টাইগাররা এখন যুক্তরাষ্ট্রে। নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে দল পরবর্তী রাউন্ডে খেলবে কি না, তার অনেকটাই নির্ভর করছে সাবেক অধিনায়কের জ্বলে ওঠার ওপর। শুধু মাহমুদুল্লাহ নন, ৩৭ বছর বয়সী সাকিব আল হাসানও টাইগারদের আস্থার প্রতীক। বিশ্বসেরা বাঁ হাতি স্পিনিং অলরাউন্ডারের পারফরম্যান্সও টাইগারদের এগিয়ে নেয় ধাপে ধাপে। ঢাকা ছাড়ার আগে টাইগার অধিনায়ক নাজমুল শান্ত দুই সাবেক অধিনায়কের কাছে নিজের চাওয়া নিয়ে বলেছেন, ‘সাকিব ভাই ও মাহমুদুল্লাহ ভাইয়ের কাছে বাড়তি কিছু চাই না। ওনারা যেভাবে পারফর্ম করছেন, তাদের যার যে ভূমিকাটা আছে, সেটা যদি ওনারা করতে পারেন, তাহলেই দল অনেক উপকৃত হবে।’
২০০৭ সাল থেকে নিয়মিত টি-২০ বিশ্বকাপ খেলছে বাংলাদেশ। এবারের দলটি তারুণ্য নির্ভর। মাহমুদুল্লাহ ও সাকিব ছাড়া সব ক্রিকেটারই তরুণ। ১৫ সদস্যের স্কোয়াডের আবার পাঁচজন প্রথমবারের মতো ২০ ওভারের বিশ্বকাপ খেলবেন। মাহমুদুল্লাহ ও সাকিব টি-২০ বিশ্বকাপ খেলছেন ২০০৭ সাল থেকে। সাকিব টানা ৮টি বিশ্বকাপ খেলেছেন। মাহমুদুল্লাহ সর্বশেষ ২০২২ সালের বিশ্বকাপে সুযোগ পাননি। অথচ ২০২১ সালে ওমান-ইউএই আসরে টাইগারদের অধিনায়ক ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। তার নেতৃত্বে ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজ জিতেছিল। দুবাই বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের কাছে হারের পর মাহমুদুল্লাহর ক্যারিয়ারের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দিয়েছিলেন টিম ম্যানেজমেন্ট। বিশেষ করে কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে তরুণ ক্রিকেটারদের প্রাধান্য দিতে ছুড়ে ফেলেছিলেন মাহমুদুল্লাহকে। কিন্তু পর্বতের মতো দৃঢ়তার অধিকারী মাহমুদুল্লাহ মুখে জবাব দেননি। জবাব দিয়েছেন ব্যাট হাতে। বিপিএল খেলে ছন্দে ফিরেছেন। জাতীয় দলে ফিরে এখন ভরসা হয়ে উঠেছেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ টি-২০ সিরিজে রান করেন যথাক্রমে ৫৪, ৯* ও ২৬*। এতটাই মেজাজি ব্যাটিং করেন, দেখেও চোখে শান্তি মেলে। অবশ্য ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে মুম্বাইয়ের ওয়াংখের স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে যেভাবে ১১১ বলে ১১ চার ও ৪ ছক্কায় ১১১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি, ওয়ানডে বিশ্বকাপের ইতিহাসে শুধু বাংলাদেশ নয়, সব মিলিয়েই অন্যতম সেরা ইনিংস। গুঞ্জন, টি-২০ বিশ্বকাপেই হয়তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘আমার মনে হয় না এখনই মাহমুদুল্লাহ অবসর নেবেন। সে দারুণ ছন্দে রয়েছেন।’ ক্যারিয়ারে ১২৮ টি-২০ ম্যাচে রান করেছেন ২২৬৫। টি-২০ বিশ্বকাপে ৩০ ম্যাচে রান করেছেন ৩৬৩।
ক্যারিয়ারের শেষ সময়ে সাকিব। অবশ্য টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০ তিন ফরম্যাটেই খেলছেন দেশসেরা ক্রিকেটার। ব্যাট ও বল হাতে দেশের সবচেয়ে বড় ম্যাচ উইনার নিঃসন্দেহে সাকিব। এবারের টি-২০ বিশ্বকাপেও দলের ভরসার ‘পোস্টার বয়’ সাকিব। শুধু ব্যাটিং নয়, বোলিংয়েও দলকে জয় দিয়েছেন অগণতি। আগের সব টি-২০ বিশ্বকাপ খেলা সাকিব এবার খেলবেন নবম আসর। ১১৯ ম্যাচে রান করেছেন ২৪০৪ ও উইকেট নিয়েছেন ১৪৫টি। টি-২০ বিশ্বকাপে ৩৬ ম্যাচে ৭৪২ রানের পাশাপাশি উইকেট নিয়েছেন ৪৭। সাকিব এমন ঘরানার ক্রিকেটার, যিনি যে কোনো চাপে আকাশসমান দৃঢ়তায় দলকে টেনে নিয়ে যান। টিম ম্যানেজমেন্টই এবারও তার পারফরম্যান্সের দিকে তাকিয়ে।
মাহমুদুল্লাহকে বলা হয় ‘সাইলেন্ট ফিনিশার’। ঠান্ডা মাথায় জয় উপহার দেন দলকে। এবারও যুক্তরাষ্ট্র-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টি-২০ বিশ্বকাপে দলের ভরসা। সাকিব একজন জেনুইন ম্যাচ উইনার। দুজনের পারফরম্যান্সই দলকে সাহস জোগাচ্ছে।
Posted ০৮:১৭ | শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain