তেহরান: জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণার বিষয় নিয়ে শনিবার একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইরানের জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা (আইআরআইবি)’র বিশ্ব কার্যক্রম। ওই বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামীকে এখন ইসলামপন্থী রাজনীতি থেকে সরে এসে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো সেক্যুলার আদর্শ গ্রহণ করতে হবে।
রেডিও তেহরানের পাঠকদের জন্য ফার্সি ভাষায় লিখিত সংবাদ প্রতিবেদনটির হুবহু অনুবাদ তুলে ধরা হলো:
“বাংলাদেশের হাইকোর্ট দেশটির বৃহত্তম ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেছে। এর ফলে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পার্লামেন্ট নির্বাচনে এ দলের কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধের দায়ে কয়েকজন জামায়াত নেতার দণ্ড ঘোষিত হওয়ার পর হাইকোর্টের পক্ষ থেকে এ রায় এলো। হাইকোর্টের বিচারপতি মোয়াজ্জেম হোসেন তার রায়ে বলেছেন, ‘আমি এই দলের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করছি। এ দলের গঠনতন্ত্র দেশের সেক্যুলার সংবিধানের পরিপন্থী।
হাইকোর্টের এ রায় প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের প্রধান আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, এ রায়ের ফলে জামায়াতে ইসলামী আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দিতে পারবে না। তিনি আরো বলেন, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সমন্বয় রেখে তার গঠনতন্ত্র ঠিক করার পর নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হতে পারবে এবং তারপরই কেবল তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
হাইকোর্টের রায়ের ফলে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়নি। দলটিকে সংবিধানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজের গঠনতন্ত্র সংশোধন করতে বলা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, জামায়াতে ইসলামীকে এখন ইসলামপন্থী রাজনীতি থেকে সরে এসে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো সেক্যুলার আদর্শ গ্রহণ করতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী এরইমধ্যে এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছেন।
উল্লেখ করা যায়, চার বছর আগে বাংলাদেশের একদল ইসলামবিদ্বেষী ব্যক্তি আদালতের কাছে এক স্মারকলিপি পেশ করে দাবি করেছিলেন, জামায়াতে ইসলামী সমাজে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করতে চায় বলে নির্বাচনে দলটির অংশগ্রহণ ঠেকাতে হবে। বাংলাদেশে আগামী বছরের গোড়ার দিকে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালের মার্চ মাসে জামায়াতের বর্তমান ও সাবেক নেতাদের বিচার করার জন্য একটি ‘বিতর্কিত’ আদালত প্রতিষ্ঠা করে। এ আদালত এ পর্যন্ত দলটির চারজন নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী অভিযোগ করছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং বিরোধী নেতাদের হয়রানি করতে এ আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
গত ২১ জানুয়ারি এ আদালতের প্রথম রায় ঘোষিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত জামায়াতের সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে প্রায় ১৫০ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এখনো জামায়াতের আট নেতার পাশাপাশি প্রধান বিরোধীদল বিএনপির দুই নেতার বিচার চলছে। ইসলামপন্থীদের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আচরণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত রাজপথে বি
ক্ষোভের সম
য় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী যে মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে তার প্রমাণ তারা পেয়েছেন। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ইসলামপন্থী নেতাদের বিচারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় এ বলপ্রয়োগের ঘটনা ঘটে এবং এসব ঘটনায় অন্তত দেড়শ’ ব্যক্তি নিহত ও দুই হাজার লোক আহত হয়েছে।
‘ব্লাড অন দ্য স্ট্রিটস: দ্য ইউজ অব এক্সেসিভ ফোর্স ডিউরিং বাংলাদেশ প্রোটেস্টস’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এ সব হত্যাকাণ্ড উদ্বেগজনক।’ ঘটনাক্রমে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হওয়ার দিনই হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনটি ভবিষ্যদ্বাণী দিয়েছে, আগামী কয়েক মাসে ইসলামপন্থীদের তৎপরতা আরো সীমিত করার লক্ষ্যে যুদ্ধাপরাধের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে আরো কিছু রায় আসতে পারে। এইচআরডাব্লিউ’র এশিয়া বিষয়ক সমন্বয়কারী ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার যদি ইসলামপন্থীদের মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ না নেয় তাহলে চলতি বছরের শেষ কয়েক মাসে দেশটির রাজপথে আরো রক্তপাতের আশঙ্কা রয়েছে।” সূত্র: রেডিও তেহরান
For News : news@shadindesh.com
Like this:
Like Loading...
Related