| বৃহস্পতিবার, ০৩ এপ্রিল ২০১৪ | প্রিন্ট
৩ এপ্রিল: পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় যে বরাদ্দ চেয়েছিল শেষ পর্যন্ত তা দিয়েই সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এনইসি বৈঠকে ৫ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে সংশোধিত ৬০ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার জাতীয় নির্বাহী পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি অনুমোদন দেয়া হয়।
গুরুত্ব বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে পরিবহন খাতে। এ খাতে ৯ হাজার হাজার ৪৫০ কোটি ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আর বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বিবেচনায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। খাতটির বরাদ্দকৃত টাকার পরিমাণ ৭ হাজার ৮০৪ কোটি ১১ লাখ। শিক্ষা প্রসার ও গুণগত মান বাড়ানোর জন্য শিক্ষা ও ধর্ম খাতে দেয়া হয়েছে ৭ হাজার ১৮৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। কৃষি খাতে ৩ হাজার ১৮৩ কোটি ৮৪ লাখ, পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে মোট ৬ হাজার ৭০ কোটি ১১ লাখ, পানিসম্পদ খাতে মোট বরাদ্দ ১ হাজার ৬৩২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
এছাড়া শিল্প খাতে মোট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২ হাজার ৭১৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। তৈল, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাতে মোট বরাদ্দ ১ হাজার ৬৪২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা টাকা। যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ ৭৮৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা; ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ ৪ হাজার ৭২৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি খাতে ২৫৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা; স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে বরাদ্দ ৪ হাজার ১০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা; গণসংযোগ খাতে বরাদ্দ ৮১ কোটি ৯০ লাখ টাকা; সমাজকল্যাণ, মহিলা বিষয়ক ও যুব উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ৪৪৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা; জনপ্রশাসন খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৩১০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা; বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ১ হাজার ৫২১ কোটি ৩ লাখ টাকা। শ্রম ও কর্মসংস্থান খাতে ৩৩১ কোটি ৯০ লাখ টাকার মোট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ তথ্য জানিয়েছেন। এ সময় পরিকল্পনা সচিব ভুঁইয়া সফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এসময় বাড়তি ৫ হাজার কোটি টাকা প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘বাড়তি পাঁচ হাজার কোটি টাকা পরবর্তীতে ভালো কাজে বরাদ্দ দেয়া হবে।’
উল্লেখ্য, প্রথমে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সংশোধিত এডিপির আকার ৫৪ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন তা মানতে রাজি হয়নি। সংশোধিত এডিপির জন্য ৬০ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা চায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এই নিয়ে দুই মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী।
এমন অবস্থায় ২০ মার্চ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পরিকল্পনামন্ত্রীকে চিঠি দেন। ওই চিঠিতে তিনি জানান, আরও এক হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে সংশোধিত এডিপির আকার ৫৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে চিঠিতে বলা হয়, প্রথম ছয় মাসের এডিপি বাস্তবায়ন পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় যথেষ্ট নিম্নমানের। প্রকল্প সাহায্যের ব্যবহারও তেমন আশানুরূপ নয়। এছাড়া চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে সম্ভাব্য ঘাটতি ১১ হাজার কোটি টাকা। এসব বিবেচনায় সংশোধিত এডিপির আকার কীভাবে কমানো যায়, সেদিকেই বিশেষ নজর দিতে হবে।
এ সম্পর্কে আ হ ম মুস্তাফা কামাল ক্ষেপে গিয়ে বলেন, ‘উনি (অর্থমন্ত্রী) আমাকে অনুধাবন করতে বলেছেন। আমি তো উনার সহকর্মী, অধীনস্থ না। উনি প্রতিবছর বিশাল বাজেট দেন। হাজার হাজার কথা বলেন। অনেক কিছুই বাস্তবায়ন করতে পারেন না। বাজেট বক্তব্য দিতে দিতে শুয়ে পড়েন। আমি হলে ১৫ পাতায় বাজেট শেষ করে দিতাম।’ তিনি আরো কটাক্ষ করে বলেন, ‘ওনার বয়স হয়েছে। অনেক ভুল-ভাল বলেন। আমরা মাফ করে দেই।’
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) নিয়ে বিদ্রুপ করে লোটাস কামাল বলেন, ‘উনি পিপিপি নাকি কী যেন একটা বানিয়েছেন! পিপিপিতে প্রতিবছর দুই/তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। এটা (পিপিপি) কি গরু, না ছাগল, তা-ও মানুষ বোঝে না। একটা অফিসও নিতে পারেননি।’
বিশ্বব্যাংকের ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর অবস্থান নিয়ে খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে উনি বললেন, বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করবেন। উনি তো নিজেই বিশ্বব্যাংকের পেনশন নেন। আপনারা কি বিশ্বাস করেন, উনি মামলা করবেন? তবে আমি উনার বিরুদ্ধে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘উনি একবার সু-খবর দিলেন- প্রবাসীদের ভোটার করবেন। কিন্তু কোথায়? কোনো প্রবাসী তো ভোটার হলেন না।’
Posted ১২:৪৪ | বৃহস্পতিবার, ০৩ এপ্রিল ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin