মো. মাহাবুবুর রহমান | বুধবার, ০৬ এপ্রিল ২০২২ | প্রিন্ট
আজ থেকে ইউকে-তে বাস্তবায়ন হচ্ছে নতুন ডিভোর্স আইন। নতুন আইন অনুযায়ী কোনো সম্পত্তি একত্রে থাকতে না চাইলে যৌথভাবে তারা ডিভোর্স আবেদন করতে পারবেন। পারস্পরিক কোনো প্রকার দোষারোপের পুরোনো রীতি ব্যতিরেকেই আলাদা হয়ে যেতে পারবে দম্পত্তিরা। পুরোনো আইনে ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলসে ডিভোর্স করতে হলে আবেদনকারী মোট পাঁচটির যে কোন একটি বা একাধিক কারণের ওপর নির্ভর করতে পারেন। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কারন বা গ্রাউন্ডসটি হলো অযৌক্তিক আচরণ। এছাড়া ব্যভিচার / তৃতীয় কারো সাথে সম্পর্ক, ইচ্ছাকৃত পরিত্যাগ, দম্পতি দুই বছর পৃথক থাকা এবং পাঁচ বছর আলাদা থাকার প্রমাণ দিতে পারলে ডিভোর্স হতে পারে। এই পাঁচটি কারণের মধ্যে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় – অযৌক্তিক আচরণ গ্রাউন্ডসেই ডিভোর্স হচ্ছে। কেননা দু’জন মানুষ একসাথে থাকলে কিছু অসামঞ্জস্য ও অযৌক্তিক আচরণ তাদের মধ্যে ঘটে। আর যখন তা বড় আকার ধারণ করে তখন এই গ্রাউন্ডসটি প্রমাণ করা সহজ হয়। ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের প্রমাণ থাকলে এটা একদমই সহজ হয়ে যায়।
অন্য গ্রাউন্ডস্ যেমন – ভ্যাবিচার বা তৃতীয় ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক প্রমাণ করা একটু কঠিন। তেমনি অন্য তিনটি গ্রাউন্ডসও সময় সাপেক্ষ। এজন্য গত দেড় বছরে কোভিড মাহমারীর সময় অযৌক্তিক আচরণের গ্রাউন্ডসে অসংখ্য মানুষ ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলসে ডিভোর্স আবেদন করেছে। এজন্যই চলমান সংকটে ডিভোর্স কোর্টও অসম্ভব ব্যস্ত অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে। এরই মধ্যে আইনজীবী হিসেবে কিংবা কমিউিনিটিতে কিছুটা সংযুক্তির কারনে গত দুই বছরে সুযোগ হয়েছে বেশ কিছু পরিবারের সংকট সমাধানের এবং তারা দিব্যি সন্তান-পরিবার নিয়ে সুখে দিন কাটাচ্ছে। এসব অভিজ্ঞতায় আমার মনে হয়েছে – কমিউনিটিতে যারা যতো বেশী ভাল সামাজিক কাজে জড়িত, তাদের জন্য পরিবার টিকিয়ে রাখার সুযোগটা ততো বেশী। আবার, অনেকে সামাজিকতা ও সন্তানদের ভোগান্তির কথা বিবেচনায় বৈষম্য-নির্যাতন সহ্য করেও পরিবার টিকিয়ে রাখছেন অহরহ। এসবের বিরুদ্ধে অনেক সংগঠন সোচ্চার রয়েছে বৃটেনসহ বিশ্বজুড়ে। এসব সংগঠনের প্রচারণার ফসল হিসেবে ইতোমধ্যে পাশ হয়েছে ডিভোর্স, ডিসলিউশন এন্ড সেপারেশন বিল ২০২০। এই বিল আজ ৬ এপ্রিল ২০২২ থেকে বাস্তবায়ন শুরু হলো।
এই নতুন আইন অনুযায়ী আবেদনকারী ডিভোর্স চাইলে বর্তমানে প্রচলিত কোনো গ্রান্ডস্ প্রমাণ করতে হবে না। এই বিল চালু হওয়ার কথা ছিল গত সেপ্টেম্বরে। কিন্তু সরকার এটি পিছিয়েছিল এবং আজ থেকে চালু হলো। বিলটি নি:সন্দেহে একটি বৈষম্য ও নিপিড়নহীন এবং যৌক্তিক পরিবার গঠনে সহায়ক হতে পারে। কিন্তু সমস্যাটা হলো তাদের জন্য, যারা এই আইনের স্পিরিট বুঝতে অক্ষম হবেন এবং মিসইউজ করবেন।
এই আইন অনুযায়ী, একটি পক্ষকে দোষারোপ করার পরিবর্তে, একটি দম্পতি বিবাহবিচ্ছেদ পেতে চাওয়ার একমাত্র কারণ হিসাবে পারস্পরিকভাবে ‘অপ্রতিরোধ্য ভাঙ্গন’ উল্লেখ করতে পারবেন। এটি একটি যৌথ বিবৃতিতে বা একজন ব্যক্তির দ্বারা করা যেতে পারে। শুধু আবেদনকারী যদি উল্লেখ করেন যে, অপরপক্ষের অযৌক্তিক আচরণের কারণে তাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে – কোনো প্রকার প্রমাণ প্রদান না করেই ডিভোর্স সম্পন্ন করা যাবে।
ডিভোর্সের আবেদন অনলাইনে করা যাবে। এখানে ডিফেন্সের সুযোগ নেই, যেহেতু কোনো প্রকার অভিযোগ ছাড়াই ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে। সন্তান কিংবা সম্পত্তি বিষয়ে লিটিগেশনের দরকার হলে তারা পৃথক আবদেন করেবন। একবার আবেদন করা হয়ে গেলে, আবেদনকারীকে শর্তসাপেক্ষ আদেশের জন্য আবেদন করার জন্য উত্তরদাতাকে আবেদনের সাথে পরিবেশন করা থেকে ২০ সপ্তাহ অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এই সময়কাল উভয় পক্ষকে তাদের বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্তের প্রতিফলন ঘটানোর অনুমতি দেবে। শর্তসাপেক্ষ আদেশের তারিখ থেকে ছয় সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পরে আবেদনকারী বিবাহবিচ্ছেদ বা বিলুপ্তির চূড়ান্ত আদেশের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ডিভোর্সের এই নতুন নিয়ম চালুর বিষয়টি বাংলাদেশী কমিউিনিটিতে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, আগ্রহী অনেকেই যেন এই ‘এপ্রিল ডেডলাইন’ এর অপেক্ষায় ছিল। নতুন এই আইনের স্পিরিট নিয়ে কমিউনিটিতে ব্যাপক সচেতনতা জরুরী, নইলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ইংল্যান্ড এই ওয়েলসের বাংলা কমিউনিটিতে। বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত কম সচেতন পরিবারগুলোতে ঝুঁকির মাত্রা বাড়বে, আর এ ঝুঁকিতে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে ইউরোপ থেকে এসে এখানে বসবাসরত বাংলাদেশী কিংবা এশিয়ান পরিবারগুলো। একমাত্র সচেতনতামূলক প্রচারণাই পারে এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে কমিউনিটিকে রক্ষা করতে।
লেখক: সাংবাদিক ও আইনজীবী।
Posted ২১:১৬ | বুধবার, ০৬ এপ্রিল ২০২২
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Mahbub