বুধবার ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ১৬ বছরের সেই শিক্ষার্থীর জামিন

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ০১ আগস্ট ২০২৪ | প্রিন্ট

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ১৬ বছরের সেই শিক্ষার্থীর জামিন

কোটা সংস্কার আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় কলেজছাত্র আলফি শাহরিয়ার মাহিমের (১৬) জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে শিশু আদালত-১ এর বিচারক মোস্তফা কামাল শুনানি শেষে ১০০ টাকার বন্ডে জামিন আদেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মাহিমের আইনজীবী জোবায়দুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মামলাটি মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় ছিল। মাহিম কিশোর হওয়ায় মামলা স্থানান্তর হয়েছে। এর আগে ৪ আগস্ট শুনানির দিন ছিল। কিন্তু আমরা আজ নতুন করে শুনানির জন্য আবেদন করেছি। আদালত শুনানি গ্রহণ করে জামিন মঞ্জুর করেছেন।

এর আগে বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গত ১৯ জুলাই মাহিমকে কারাগারে পাঠান আদালত। তবে মাহিমকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি এতদিন অগোচরেই ছিল।

গতকাল বুধবার (৩১ জুলাই) একমাত্র ছোট ভাইয়ের কোনো খোঁজ না মেলায় মাহিমের বোন সানজানা আখতার স্নেহা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি আলোচনায় আসে। কিশোর শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।

মাহিম গত বছর রংপুর নগরীর আশরতপুর চকবাজার এলাকার সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে। সে বর্তমানে রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবা মোহাম্মদ শাহজালাল চকবাজার এলাকার বাসিন্দা ও পেশায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

৩১ জুলাই বোন সানজানা আখতার স্নেহা ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে লেখেন, গত ১৮ জুলাই তার ভাই কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলে জানতে পারে পরীক্ষা স্থগিত। তখন বন্ধুদের সাথে মিছিলের মাঝে জড়িয়ে পড়ে এবং পুলিশের টিয়ারশেলে বন্ধুদের থেকে আলাদা হয়ে যায়। পরবর্তীতে আমরা ১৮ তারিখ আনুমানিক বিকেল ৪টায় ওর বন্ধুদের থেকে জানতে পারি, তার পায়ে রাবার বুলেট লেগেছে। সেখানকার স্থানীয় লোকজন কোনো হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে।

‌‘রাত ১০টা পর্যন্ত সব হসপিটাল-ক্লিনিক খুঁজেও যখন পাচ্ছিলাম না– তখন বাবার কাছে একটা কল আসে। তারা জানায়, আপনার ছেলে আমাদের হেফাজতে আছে। জানাজানি করবেন না। তাতে ছেলের ক্ষতি হবে। তাকে আগামীকাল (১৯ জুলাই) সকালে ছেড়ে দেয়া হবে। চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু, পরের দিন ১৯ জুলাই সকালে আমরা খোঁজ নিলে তারা অস্বীকার করে বলে, তাদের কাছে এই নামে কেউ নেই। এরপর আনুমানিক বিকেল সাড়ে চারটায় কোর্ট থেকে কল আসে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘আমরা কোর্ট থেকে নথিপত্র নিয়ে জানলাম, তাকে (আলফি) আবু সাইদ ভাইয়ের হত্যা মামলা দেয়া হয়েছে। সেদিন থেকে বার বার কারাগারের দরজা থেকে ফিরে এসেছি। একটাবার দেখা তো দূর; তার কণ্ঠও শুনতে দেয়নি কেউ। মেট্রোপলিটন কোর্ট তার মামলা কিছুতেই শিশু আদালতে (জুভেনাইল কোর্ট) দিতে চায়নি। অনেক চেষ্টা করে গত ৩০ জুলাই শিশু কোর্টে নেওয়া হলে– ডেট দেয় আগামী ৪ আগস্ট। ৪ তারিখ কি রায় দেবে আমার জানা নেই। তবে আমি আমার ভাইকে ফিরে চাই। বেকসুর খালাস দেওয়া হোক এটা চাই।’

সানজানা আখতার বলেছেন, ‘যে ছেলেটা লিগ্যাল ডকুমেন্টস অনুযায়ী শিশু; তাকে তারা কোন হিসাবে এভাবে হ্যারাস (হয়রানি) করাচ্ছে? সব থেকে বড় কথা তার গায়ে কলেজ ড্রেস ছিল। আইডি ছিল। সে পুলিশদের ইনস্টিটিউটেরই ছাত্র। এক্ষেত্রে কি তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, সহপাঠী, আইনজীবী কারও কিছুই করার নাই? আমার ভাইকে কোন লজিকে তারা আটকে রেখেছে, দেখাও করতে দিচ্ছে না!’

মাহিমের বাবা মোহাম্মদ শাহজালালের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, পুলিশ কমিশনার গতকাল আমাকে ডেকেছিলেন। আমার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমার ছেলের সঙ্গে কারাগার থেকে কথা বলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশ কমিশনার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন মাহিমকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

এদিকে রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যু্লীগের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদিন পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ১৭ জুলাই তাজহাট থানায় মামলা করা হয়। মামলার বাদী ওই থানার উপ-পরিদর্শক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতিভূষণ রায়।

মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ‘বেলা ২টা ১৫ মিনিটের দিকে ছাত্র নামধারী সুবিধাভোগী রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলনরত দুর্বৃত্তগণ বিভিন্ন দিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ও তাদের নিকটে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র হতে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশও এপিসি গাড়ির মধ্য হতে কং/ ১১৮৬ সোহেল তার নামীয় সরকারি ইস্যুকৃত শটগান হইতে ১৬৯ রাউন্ড রাবার বুলেট ফায়ার করে। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।’

সাঈদের মৃত্যুর বিষয়ে বলা হয়, ‘বিভিন্ন দিক থেকে আন্দোলনকারীদের ছোড়া গোলাগুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের এক পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থীকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। সহপাঠীরা ধরাধরি করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২ থেকে ৩ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।’

এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় আলফি শাহরিয়ার মাহিমকে। তাকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে আটকের ঘটনা নিয়ে তার বোন সানজানা আখতার স্নেহা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি আলোচনায় আসে।

মাহিমকে যে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে- তার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাজহাট থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ওইদিন (১৭ জুলাই) আমাদের তাজহাট থানায় যখন আগুন দেয়, তখন সে পিকেটিং করছিল। ওই সময় ঘটনাস্থলে আমাদের পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবির টিম ছিল। ওই সময় সে (আলফি) বিজিবির হাতে ধরা পড়ে।’

জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ‘ঘটনার দিন তো পুরো রংপুর উত্তপ্ত। পরে আলফি আমাদের হেফাজতে ছিল। পরদিন সকালে তাকে এই মামলায় আদালতে চালান দেওয়া হয়। কিন্তু পরের দিনেও উত্তপ্ত ছিল রংপুর। এ কারণে ওই সময় তার বয়স যাচাই করা সম্ভব হয়নি। মানে তার সম্পর্কে এত যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু, আইন অনুযায়ী তো তাকে ২৪ ঘণ্টার বেশি আমরা রাখতেও পারি না। এই কারণে তাড়াহুড়ো করে তাকে চালান দেওয়া হয়। যাই হোক আজকে তার বাবা-মাকে পুলিশ কমিশনার স্যার ডেকে আশ্বস্ত করলেন, তার বয়স কম। তার জামিন হয়েছে। তাকে চার্জশিট থেকেও অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলেছেন স্যার।’

এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন (অপরাধ) বলেন, ‘১৮ জুলাই যখন থানায় হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জিনসের প্যান্ট ও স্যান্ডো গেঞ্জি পড়া অবস্থায় আটক হয় মাহিমকে। পরে তাকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু ১৮ এবং ১৯ তারিখে সংঘাত–সংঘর্ষ নিয়ে পুরো ফোর্স ব্যস্ত ছিল, সে কারণে বিষয়টি যাচাই বাছাই করা সম্ভব হয়নি। মূলত ২০ তারিখ থেকে আমরা যাচাই বাছাই সাপেক্ষে গ্রেপ্তার করেছি। বিষয়টি আমাদের নলেজে আসা মাত্রই পুলিশ কমিশনার মহোদয় সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, যেহেতু মাহিম ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না। আন্দোলনে অংশ নিয়ে ছিল মাত্র। জামিনের মাধ্যমে তাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।’

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:০২ | বৃহস্পতিবার, ০১ আগস্ট ২০২৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com