নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট
আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ার দরে কারচুপি এবং আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ উঠতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ইঙ্গিত দিয়ে আক্রমণ শুরু করেছে বিরোধীরা।
শনিবার কংগ্রেস প্রশ্ন তোলে যে, আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলোর শেয়ার দর মুখ থুবড়ে পড়ায় এলআইসি এবং স্টেট ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান ৭৮,০০০ কোটি রুপির বেশি শেয়ার মূল্য খোয়ালেও অর্থমন্ত্রী নীরব কেন? কেনই বা তদন্তকারী সংস্থাগুলো কিছু বলছে না?
সেইসঙ্গে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার প্রশ্ন, হিন্ডেনবার্গ আদানিদের সম্পর্কে এত গুরুতর অভিযোগ প্রকাশ্যে আনার পরেও এলআইসি এবং এসবিআই ওই সংস্থাগুলোতে লগ্নি বহাল রেখেছে কেন?
বিএসপি নেত্রী মায়াবতী বলেন, হিন্ডেনবার্গের নেতিবাচক রিপোর্টে ধাক্কা খাচ্ছে শেয়ার বাজার। জড়িয়ে গেছে দেশের কোটি কোটি মানুষের অতি কষ্টে আয় করা রুপি। অথচ সরকার চুপ। অবিলম্বে সরকারি বিবৃতি জারি করে বিষয়টির ব্যাখ্যা দাবি করেছেন তিনি।
সুরজেওয়ালার দাবি করেছেন, অভিযোগ ওঠার পরে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে জীবনবিমা সংস্থাটির লগ্নি মূল্য ৭৭,০০০ কোটি রুপি থেকে কমে হয়েছে ৫৩,০০০ কোটি। এই অভিঘাতে নিজেদের শেয়ারের দাম কমার কারণেও ২২,৪৪২ কোটি রুপি হারিয়েছে তারা। তবু এলআইসি আদানিদের সংস্থায় আরও ৩০০ কোটি ঢালছে কেন! ওই গোষ্ঠীকে ৮১,২০০ কোটি রুপি ঋণ দেওয়ায় স্টেট ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকও ঝুঁকির মুখে। ফলে স্টেট ব্যাংকের শেয়ার মূল্য ৫৪,৬১৮ কোটি রুপি কমেছে। তার পরেও আদানিদের সংস্থায় ফের ২২৫ কোটি রুপি লগ্নি করছে এসবিআই এমপ্লয়িজ, পেনশন ফান্ড এবং এসবিআই লাইফ। এর কারণ কী? তার দাবি, এই অর্থ তো সাধারণ মানুষের।
উল্লেখ্য, মার্কিন বিনিয়োগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ সম্প্রতি তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে আদানির ব্যবসার নানা জালিয়াতি ও প্রতারণামূলক দিক তুলে ধরেছে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, আদানির আঙুল ফুলে মাত্র তিন বছরে হয়েছে কলাগাছ। আর সেই পথে শেয়ার বাজারকে হাতিয়ার বানিয়েছেন আদানি। কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে নিজের সম্পদ বাড়িয়েছেন তিনি।
এই রিপোর্ট আদানির সাফল্য গাঁথায় বড় আঘাত হেনেছে। যে রিপোর্টে আদানির বিরুদ্ধে আনা হয়েছে বিস্তর অভিযোগ। বিশেষ করে তার ব্যবসায়িক কৌশল প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনের পর। ধস নেমেছে আদানি গ্রুপের শেয়ারে। চারদিকে টালমাটাল দশা।
সেইসাথে তার ব্যবসায়িক ক্যারিয়ারও পড়েছে বড় চ্যালেঞ্জে মুখে। মাত্র এক সপ্তাহেই আদানি গ্রুপের সম্পদের পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার কোটি ডলার কমেছে।
ফোর্বসের ধনীর তালিকাতেও বেশ অবনমন হয়েছে আদানির। এক লাফে সম্পদ খুইয়ে তিনি ৩ থেকে নেমে গেছেন ৭ নম্বরে।
সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, খনি, ভোজ্যতেল, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেন আদানি। গণমাধ্যম ও সিমেন্ট খাতেও তার বিনিয়োগ আছে।
ফোর্বসের তালিকায় বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি হয়ে যাওয়া আদানির মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ১২৭ বিলিয়ন বা ১২ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারে। বাংলাদেশি টাকায় যা ১২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
৬০ বছর বয়সী আদানি খুব একটা পরিচিত ছিলে না কয়েক বছর আগেও। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে সেই বিষয়টিও পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে। তারা জানিয়েছে, আদানি গ্রুপ এর কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর কৃত্রিমভাবে বাড়িয়েছে। গৌতম আদানির ১৩ হাজার কোটি ডলার সম্পদের ১০ হাজার কোটি ডলারই অর্জিত হয়েছে গত ৩ বছরে স্টক জালিয়াতির মাধ্যমে। এই ৩ বছরে তার গড়ে তার সম্পদ বেড়েছে ৮১৯ শতাংশ।
আদানির বিরুদ্ধে আছে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে ব্যবসায়িক ফায়দা লোটার অভিযোগ। আদানি নিজেও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার কথা স্বীকার করেছেন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, বিবিসি, রয়টার্স, আলজাজিরা, ফোর্বস
Posted ০৬:৩১ | রবিবার, ২৯ জানুয়ারি ২০২৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain