| বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
ঢাকা: দেশে যখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, যখন স্বাভাবিকতাকে হার মানিয়ে নতুন নতুন সংকট সৃষ্টি হয়, ঠিক তখনই সেই সংকট নিরসনে এগিয়ে আসে দেশের সুশীল সমাজ। কিন্তু যারা এতদিন দেশের সঙ্কটময় মুহূর্তে এগিয়ে এসেছেন, দিয়েছেন শ্রম ও বুদ্ধি পরামর্শ, তারাই আজ ভুগছেন এক অজানা আতঙ্কে। এমনই আভাস পাওয়া গেলো একমঞ্চে বসা দেশের সুশীল সমাজের মুখে।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টায় প্রবীণ সাংবাদিক এমবিএম মূসার ডাকে সাড়া দিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে একে একে জড়ো হতে থাকেন দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
বৈঠকের শুরুতে অনুষ্ঠান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা আজ এখানে জড়ো হয়েছি মূলত মূসার ভাইয়ের ডাকে। আমরা কথা বলবো না, কথা বলবেন মূসা ভাই।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. পিয়াস করিম, নিউএজের সম্পাদক নুরুল কবির, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া উপদেষ্টা সাংবাদিক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ সাংবাদিক মনির হায়দার, ড. তুহিন মালিক, গোলাম মোর্তুজা, রোবায়েত ফেরদৌস প্রমুখ।
বৈঠকে প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসা বলেন, ‘গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলা লোকদের কেউই এখন আর নিরাপদ নয়। আমিও গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছি। গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইয়ের পথ থেকে যে কোনো সময় আমাকেও গ্রেপ্তার করা হতে পারে।’
এ সময় আসিফ নজরুল, বদিউল আলম মজুমদার, মাহমুদুর রহমান মান্নার মুখেও আতঙ্কের আভাস পাওয়া যায়।
মূসা বলেন, ‘যখন গণতন্ত্র চর্চার পথ মেলে, ঠিক তখনই দেশজুড়ে গণতন্ত্র ধ্বংসের পাঁয়তারা শুরু হয়। তবে বাংলার মাটি শক্ত এবং ঝুরঝুরে। কিন্তু বৃষ্টি হলেই নরম হয়ে যায়। আর এটাই স্বাভাবিক।’
তিনি বলেন, ‘দেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হোক। এটা সরকার ও বিরোধী দল চায়। কিন্তু তারপরও হচ্ছে না কেন?’
প্রবীণ এ সাংবাদিক আরো বলেন, ‘এটা আমাদের শেষ বৈঠক নয়। যদি ভেতরে (কারাগারে) না যাই, তাহলে আরো অনেক বৈঠক হবে। আর ভেতরে গেলে তো আবার বের হবো, তখন গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা রক্ষায় বৈঠক হবে।’
এ সময় ‘টেলিভিশন টক শো: সরকাররের নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে নাগরিক উদ্বেগ’ শিরোনামে একটি লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসা বলেন, ‘স্বাধীন মত প্রকাশে সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার কতৃর্ক বিভিন্ন চ্যানেলের টকশো নিয়ন্ত্রণ অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
লিখিত বক্তব্যে প্রবীণ এ সাংবাদিক আরো বলেন, ‘সরকারের সমালোচনাকারী কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের টক শোতে আমন্ত্রণ না জানানোর জন্য চ্যানেলগুলো প্রভাবিত করা হচ্ছে।’
অতীতের বিভিন্ন প্রসঙ্গ টেনে এবিএম মূসা বলেন, ‘এর আগেও কয়েকজন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ওপর আক্রমণ হয়েছিলো, বর্তমানেও সেটি অব্যাহত রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে বিশিষ্ট এ সাংবাদিক আরো বলেন, ‘চ্যানেলে মুক্ত মতামতের কারণে দেশের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা বিরাগ, বিরক্তি, অসন্তুষ্টি এবং অশোভন আচরণ করেছেন।’
সংবিধানে বাক স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিকভাবে সরকারের কর্তব্য হচ্ছে, জনগণের বাক স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন মৌলিক অধিকার রক্ষা করা। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার, আইনের শাসন এবং নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার স্বার্থে সরকারের সমালোচনার অধিকার সংবিধান আমাদের প্রদান করেছে।’
এ সময় সংবিধান বিষেশজ্ঞ ও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক সংবিধানে নাগরিকের যে বাক স্বাধীনতা রয়েছে, তার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
Posted ১৬:৩৮ | বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin