| মঙ্গলবার, ২১ আগস্ট ২০১৮ | প্রিন্ট
ডেস্ক রিপোর্ট : কোরবানির মৌসুমে ১৮ থেকে ২০ শতাংশ কাঁচা চামড়া অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে প্রাণিসম্পদ খাতে দেশ প্রতি বছর ৩৬৫ কোটি টাকার ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে। পশু জবাইয়ের পর আনাড়ি হাতে শরীর থেকে চামড়া ছাড়াতে গিয়েই এ দশা হয়। এছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে চামড়ার পরিবহনে রয়েছে চরম অব্যবস্থাপনা।
সঠিক সময়ে পরিমাণমতো লবণ দেয়ায় রয়েছে কার্পণ্যভাব ও উদাসীনতা। এছাড়া সঠিক তাপমাত্রায় লবণজাত চামড়ার রক্ষণাবেক্ষণেও থাকে নানা ঘাটতি। এসব কারণে কোরবানির মৌসুমে সংগৃহীত বিপুল পরিমাণ চামড়া নানাভাবে তার গুণাগুণ হারাচ্ছে। ফলে প্রক্রিয়াজাত পর্যায়ে তা ফেটে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
চামড়াবিষয়ক বিভিন্ন গবেষণায় এজন্য সংশ্লিষ্টদের আনাড়িপনাকেই দায়ী করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, এর দায় সরকার, চামড়াসংশ্লিষ্ট সংগঠন ও বিশেষজ্ঞরাও এড়াতে পারেন না। লেদার ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড টেকনোলজি সোসাইটি, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনও দেশে চামড়া সংগ্রহের বিভিন্ন স্তরে দারুণভাবে অবহেলা লক্ষিত হচ্ছে।
এ কারণে প্রতি বছর কোরবানির মৌসুমে পাওয়া চামড়ার ১৮ থেকে ২০ শতাংশই অকেজো হয়ে পড়ছে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রতি বছর দেশে সরকারিভাবে কোরবানির হাট ও জবাইয়ের স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে।
এ নিয়ে যতটা প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে, ঠিক ততটাই অবহেলিত থাকছে পশু জবাইয়ের পর শরীরের চামড়া আলাদা করার সঠিক পদ্ধতি প্রয়োগ, প্রশিক্ষণ প্রচারণার কাজটি। ফলে অপরিকল্পিতভাবে ও অনভিজ্ঞ লোক দ্বারাই সংগ্রহ করা হয় কোরবানির পশুর চামড়া।
সম্প্রতি বিষয়টি আমলে নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি সমীক্ষা করেছে। সেখানে প্রতি বছর কোরবানির মৌসুমে জবাই হওয়া পশুর শরীর থেকে আনাড়ি হাতে চামড়া ছাড়াতে গিয়ে ৩৬৫ কোটি টাকার ক্ষতির তথ্য রয়েছে। তবে এ ক্ষতি এড়াতে দেশব্যাপী তৃণমূল পর্যায়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এ লক্ষ্যে কোরবানি সামনে রেখে পশুর শরীর থেকে চামড়া ছাড়ানোর পদ্ধতি বিষয়ে ২ মিনিটের একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করা হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ আনুষ্ঠানিকভাবে এ ডকুমেন্টারি প্রচারণার ভিডিও মোড়ক উন্মুক্ত করেন। কোরবানির দু-একদিন আগে থেকে বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারসহ দেশের বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে তা প্রচার হওয়ার কথা রয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রতি বছর ৩৬৫ কোটি টাকার চামড়া আনাড়িপনার মাধ্যমে নষ্ট হওয়াটা উদ্বেগের। আমরা সচেতন হলেই এ ক্ষতি রোধ করতে পারি।
এজন্য কোরবানির পশুর শরীর থেকে চামড়া ছাড়ানোর কাজে যারা সংশ্লিষ্ট হবেন, তাদের প্রয়োজনীয় নিয়ম-কানুন ও আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকা চাই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তৈরি হওয়া এ ডকুমেন্টারি প্রচারিত হলে এর থেকে সংশ্লিষ্ট সবাই চামড়া নষ্ট হওয়ার মতো অসাবধানতা পরিহার করতে সক্ষম হবেন।
সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর তথ্যমতে, দেশীয় গরু থেকে যে চামড়া পাওয়া যায় তার গড় আয়তন প্রায় ২৪ বর্গফুট। এছাড়া ছাগল-ভেড়ার চামড়ার গড় আয়তন সাড়ে ৫ বর্গফুট। কোরবানিসহ চলতি বছরজুড়ে ৩৩ কোটি বর্গফুট চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
এর ৬০ শতাংশই পাওয়া যাবে কোরবানির মৌসুমে। ফলে চামড়া ছাড়ানোর ক্ষেত্রে দেশের সর্বত্র সঠিক পদ্ধতির প্রয়োগ ও সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত ধারণা থাকলে ক্ষতির পরিমাণ বহুলাংশে কমে যাবে এবং চামড়ার প্রকৃত প্রাপ্যতা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, চামড়া ছাড়ানোর পর ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার মধ্যেই কাঁচা চামড়ায় লবণ দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে গরুর চামড়া হলে ৩৫ শতাংশ ও অন্যান্য পশুর পাতলা চামড়া হলে ৪০ শতাংশ বিশুদ্ধ লবণ প্রয়োগ করতে হয়।
একই সঙ্গে লবণজাত চামড়া ৪ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণে রাখতে হয়। কিন্তু পরিবহনে দীর্ঘসূত্রতা, অতিমুনাফা প্রবণতার কারণে পরিমাণমতো লবণ প্রয়োগ হয় না চামড়ায়। আবার লবণের সঙ্গে চামড়ায় সঠিকমাত্রায় ব্যাকট্রি এসিডও ব্যবহার হয় না।
পশু জবাইয়ের পর যদি ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চামড়ায় লবণ দেয়া না হয়, তবে ওই চামড়ার ১৫ শতাংশও কাজে আসে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ট্যানারি শিল্প। সরকার বঞ্চিত হয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ওবায়দুল আযম জানান, মাঠপর্যায়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগই পারে এ ক্ষতি থেকে দেশকে রক্ষা করতে। এজন্যই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় উদ্যোগী হয়ে চামড়া ও মাংস ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে এ বিষয়ক কিছু পদক্ষেপ নেয়। আশা করছি, তার সুফল পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান হাজী দেলোয়ার হোসেন বলেন, সারা দেশের মাংস ব্যবসায়ীরা এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। চামড়া ছাড়ানোর ব্যাপারে মাংস ব্যবসায়ীরা এবং তাদের নিযুক্ত কর্মচারীরা অভিজ্ঞ হলে চামড়া নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, যে মাংস ব্যবসায়ীর চামড়া ভুল পদ্ধতিতে ছাড়ানো হয়েছে, কাট, লেচকাট হয়েছে- তাকে জরিমানা অথবা নোটিশ দিয়ে সংশোধন করতে হবে।
জনসচেতনতার জন্য এ বিষয়ে টিভি ও রেডিওতে বিজ্ঞাপন এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য নাটিকার মাধ্যমে চামড়া ছাড়ানোর পদ্ধতি বুঝিয়ে দিতে হবে। জবাইখানাগুলোতে কর্মরত ব্যবসায়ী ও কর্মচারী সঠিক পদ্ধতিতে চামড়া ছাড়াচ্ছেন কিনা তা তদারকির জন্য মনিটরিং করতে হবে।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, শুধু অনভিজ্ঞতাই এককভাবে দায়ী নয়। এর পাশাপাশি গবাদিপশুর সুষ্ঠু লালন-পালন না করায় পশু রোগাক্রান্তের হার বাড়ছে। পশুর শরীরে মশা, মাছি ও আঠালি পোকায় খেয়ে চামড়ার ক্ষত সৃষ্টি করায়ও নষ্ট হচ্ছে চামড়া। যুগান্তর
Posted ১৩:১৬ | মঙ্গলবার, ২১ আগস্ট ২০১৮
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain