নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ২৮ নভেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট
ন্যূনতম বেতন ২০ হাজার টাকা করাসহ ১০ দফা দাবিতে ডাকা অনির্দিষ্টকালের নৌযান ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন।
সোমবার (২৮ নভেম্বর) শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন তারা।
এ দিন গ্যাজেট প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত এক হাজার টন ধারণ ক্ষমতার কম ১২শ’ এবং এর বেশি ধারণ ক্ষমতার নৌযান শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৫শ’ টাকা করার ঘোষণা দেন প্রতিমন্ত্রী।
নতুন এই ঘোষণার আগে এক হাজার টন ধারণ ক্ষমতার কম নৌযান শ্রমিকরা এক হাজার এবং এর বেশি ধারণ ক্ষমতার শ্রমিকরা এক হাজারের কিছু বেশি টাকা দৈনিক মজুরি পেতেন।
এর আগে সোমবার বিজয়নগরের শ্রম ভবনের সম্মেলন কক্ষে নৌ পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার এবং এ সেক্টরের উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে সরকার, মালিক- শ্রমিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক হয়। পরে নৌ পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এ ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
বৈঠকে সভাপতির বক্তৃতায় শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি খাতের অভ্যন্তরীণ নৌ-যানে নিয়োজিত শ্রমিকের জন্য নতুন মজুরি কাঠামো পুনর্নির্ধারণে সরকার, মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধি সমন্বয়ে প্রস্তাবনা প্রণয়ন কমিটি গঠন করে দিয়েছি। আগামী এক মাসের মধ্যে এই প্রস্তাবনা কমিটি নতুন মজুরি কাঠামো প্রণয়নে সুপারিশ করবে। চলতি মাস থেকে নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য নতুন নির্ধারণ করা বেতন পাবেন শ্রমিকরা।
এ সময় নৌ পরিবহন শ্রমিকদের অন্যান্য সমস্যা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সমাধান করা হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। পরে তিনি নৌ পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার আহবান জানান।
সোমবারের এই সভায় অন্যদের মধ্যে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তৌফিকুল আরিফ, শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী, আভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার সভাপতি মাহবুব উদ্দিন (বীর বিক্রম), বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহা আলম, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম, বাংলাদেশ নৌ পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম ব্যাপারী এবং বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. ওমর ফারুকসহ শ্রম মন্ত্রণালয়, সরকারের বিভিন্ন দফতর-সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, নৌ পরিবহন খাতের অন্যান্য মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২৬ নভেম্বর দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে বরিশাল নদীবন্দর এলাকায় সব ধরনের নৌযান নোঙর করে রেখেছিলেন নৌযান শ্রমিকরা। পরে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরসহ সব নৌপথেই ধর্মঘট শুরু হয়।
শ্রমিকদের দাবি হলো- নৌযান শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক প্রদানসহ শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ, খাদ্য ভাতা ও সমুদ্র ভাতার সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠন করা, দুর্ঘটনা ও কর্মস্থলে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা, চট্টগ্রাম থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহে দেশের স্বার্থবিরোধী অপরিণামদর্শী প্রকল্প বাস্তবায়নে চলমান কার্যক্রম বন্ধ করা।
এছাড়াও শ্রমিকদের অন্য দাবিগুলো হলো- বালুবাহী বাল্কহেড ও ড্রেজারের রাত্রিকালীন চলাচলের উপরে ঢালাও নিষেধাজ্ঞা শিথিল, নৌপথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ডাকাতি বন্ধ, ভারতগামী শ্রমিকদের লান্ডিং পাস প্রদানসহ ভারতীয় সীমানায় সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করা, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন নীতিমালা শতভাগ কার্যকর করে সকল লাইটারিং জাহাজকে সিরিয়াল মোতাবেক চলাচলে বাধ্য করা, চরপাড়া ঘাটে ইজারা বাতিল ও নৌ-পরিবহন অধিদফতরের সব ধরনের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা বন্ধ করা।
Posted ১৫:০৩ | সোমবার, ২৮ নভেম্বর ২০২২
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain