| বুধবার, ১১ জুন ২০১৪ | প্রিন্ট
মুহাম্মদ রুহুল আমীন নগরী
মুফতি আব্দুল জলিল মনাইকান্দি হুজুর একজন সমাজ সচেতন আলেম,সুসাহিত্যিক ও স্বভাব কবি ছিলেন। পুর্বসিলেটের জামেয়া ইসলামিয়া হোসাইনিয়া মনাইকান্দি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম মুফতি আব্দুল জলিল পৃথিবীতে আজ নেই । তিনি গত ১৮ জুন ২০১২ ঈসায়ী মোতাবেক ৪ ঠা আষাঢ় ১৪১৯ বাংলা, ২৭ রজব ১৪৩৩ হিজরী রোজ সোমবার সকাল সোয়া ৯ টায় ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাইহি রাজিউন।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৪ ছেলে, ৭ মেয়ে সহ অসংখ্য ছাত্র, ভক্ত অনুরক্ত রেখে যান। মনাইকান্দি মাদ্রাসা প্রাঙ্গনেই তাকে সমাহিত করা হয়। মরহুম মাওলানা মুফতি আব্দুল জলিল ১৯২৩ ঈসায়ী মোতাবেক ১৫ ই অগ্রহায়ন ১৩৩০ বাংলা রোজ শুক্রবার সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলাধীন ভাদেশ্বর নালিউরা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।
তার পিতার নাম মাষ্টার আব্দুর রহিম, পিতামহ মো. কলিমুল্লাহ। মরহুম মুফতি আব্দুল জলিল (র.) গোলাপগঞ্জে জন্মগ্রহন করলেও তিনি কর্মজীবন থেকে জীবনের শেষ মুর্হুত পর্যন্ত কাটিয়েছেন পুর্বসিলেটের গোয়াইনঘাটে। পারিবারিক সুত্রে জানাগেছে, মুফতি আব্দুল জলিল (র.) বিশ্ববিখ্যাত বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করেন।
দীর্ঘ ৬ বছর দেওবন্দে অবস্থানের পর দাওরায়ে হাদীস ও ইফতা কোর্স সমাপ্ত শেষে ১৯৫৩ সালে স্বদেশে প্রত্যাবর্ত্তন করেন। কর্মজীবন শুরু করেন গোলাপগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামেয়া হুসাইনিয়া আরাবিয়া রানাপিং মাদ্রাসা থেকে। দেওবন্দ থেকে শিক্ষা সমাপ্তকরে এসে রানাপিং মাদ্রাসায় ২ বছর শিক্ষকতা করে চলে যান পুর্বসিলেটের গোয়াইন ঘাটে। সেখানে গিয়ে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় সীমান্তবর্তী জাফলংএলাকায় ১৩৬৫ বাংলায় জামেয়া ইসলামিয়া হোসাইনিয়া মনাইকান্দি মাদ্রাসার ভিত্তিস্থাপন করেন। ১৯৬০ সাল থেকে ইন্তেকালের পুর্বপর্যন্ত তিনি উক্ত মাদ্রাসার মুহতামিম ছিলেন।
আধ্যাত্মিক ময়দানে মুফতি আব্দুল জলিল (র.) কুতবুল আলম শায়খুল ইসলাম সায়্যিদ হোসাইন আহমদ মাদানী (র.) এর নিকট বায়আত ছিলেন। পরবর্তীতে স্বীয় মুর্শিদের খাছ খলিফা হযরত মাওলানা আব্দুল করিম শায়খে কৌড়িয়া (র)এর এর নিকট থেকে খেলাফত প্রাপ্তহন। রাজনৈতিক জীবনে মরহুম মুফতি আব্দুল জলিল স্বীয় আকাবিরদের আদর্শ অনুস্বরণে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
তিনি যে, জমিয়তের একনিষ্ট শুভাকাংখি ছিলেন তারঁ প্রমান পাওয়া যায় জমিয়তের শ্লোগান সম্বলিত তারঁ স্বহস্তে লিখিত প্রায় অর্ধশত প্লের্কাড। দেশ ও জাতির বহুমুখি কল্যানে তিনি ১৯৭৪ সালে আন্জুমানে এশায়াতুল ইসলাম নামে একটি সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। প্রচার বিমুখ এই আলেম ইসলামী শিক্ষাবিস্তারে যে অবদান রেখেগেছেন তা আমাদের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে।
২০০০সালে তিনি পবিত্র হজ্ব পালন করেন। তিনি একজন নিভৃতচারী আলেম গবেষক ও স্বভাব কবি ছিলেন। সওগাতে রমজান ও ইসলামী তারানা নামে তারঁ একটি পুস্তিকা প্রকাশিত হয়। এছাড়া অপ্রকাশিত পান্ডুলিপির মধ্যে রয়েছে (১) মানব ও ক্রোআন (২) প্রশ্নোত্তরে নামাজ রোজা ও (৩) প্রশ্নোত্তরে মাসয়ালা মাসায়েল ইত্যাদি ।
রমজানের অর্ভ্যথনা কবিতার শুরুটা এভাবে-
পবিত্র রমজান এসেছে আদেশে খোদার,
গ্রহণ কর ভক্তি ভরা সালাম আমার।
স্বাগতম ধন্য মোরা র্দশনে তোমার ,
মাবুদের কাছে বহু মর্যাদা তোমার।
তুহফা নিয়ে আসিয়াছ দয়াময় আল্লার,
যাহার বদলে হবে দিদার মৌলার।
রমজানের সর্তক বাণী কবিতার শুরুর অংশ বিশেষ-
‘জাগ উঠ মুসলমান আল্লাহর প্রেমের আশিকান,
রমজানের সম্মান কর হয়ে সাবধান।
রোজা রাখ নামাজ পড় পাক কোরআন তেলাওয়াত কর,
মুমিন ভাইকে রোজা রাখাও পাবে পরিত্রান।
গ্রামে গঞ্জে বাজার হাটে আপন আপন পরিবারে ,
রোজা যেন নাহি ভাংগে কোন মুসলমান।’
Posted ১০:০২ | বুধবার, ১১ জুন ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin