| বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০১৪ | প্রিন্ট
স্টাফ রিপোর্টার : প্রবীণ সাংবাদিক এ বি এম মূসার স্মরণ সভায় বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, সর্ব অবস্থায় সত্য কথা বলতেন বলেই মুক্তিযোদ্ধা ও একজন সাবেক সংসদ সদস্য হওয়ার পরেও সাংবাদিক জগতের বিংবদন্তী প্রবীণ সাংবাদিক এ বি এম মূসাকে যথাযথ রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদান ও সংসদ প্লাজায় জানাজা করা হয়নি। কিন্তু শাসক গোষ্ঠী তাকে যথাযথ মূল্যয়ন না করলেও সাংবাদিক জগতে তিনি দিকপাল হিসেবেই আজীবন বেঁচে থাকবেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে আয়োজিত প্রবীণ সাংবাদিক এ বি এম মূসার স্মরণ সভায় বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের সাংবাদিকতাকে তিনি উচ্চ মাত্রায় নিয়ে গেছেন উল্লেখ করে সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য প্রেস ক্লাবের আজীবন এই সদস্যের নামে জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা ও স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের দাবি জানান বক্তারা।
জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, নিউজ টুডে’র সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি শওকত মাহমুদ ও মঞ্জুরুল ইসলাম বুলবুল, সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার ও কুদ্দুস আফ্রাদ, বিএফইউজের মহাসচিব এম এ আজিজ ও আবদুল জলিল ভুইয়া, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ও জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, সাবেক সভাপতি শাহজাহান মিয়া ও আবদুস শহিদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মিজানুর রহমান শেলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. রোবায়েদ ফেরদৌস, প্রবীণ সাংবাদিক আবদুর রহিম, কেজি মোস্তফা, মো. কামরুজ্জামান, শামসুদ্দীন পিয়ারা, বিএফইউজের সহ-সভাপতি এম আবদুল্লাহ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও এ বি এম মূসার মেয়ে পারভীন সুলতানা মূসা ঝুমা প্রমুখ।
স্মরণ সভা সঞ্চালনা করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের নির্বাহী কমিটির সদস্য কবি হাসান হাফিজ। স্মরণ সভায় অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, সব বিষয়ে সব সময় নিরপক্ষভাবে কথা বলতেন এমন একজন মানুষের নাম এ বি এম মূসা। তিনি সিজেনাল প্রতিবাদের মানুষ ছিলেন না, বরং অধিকার নিয়েই তিনি অধিকারের কথা বলতেন। তাকে সরকার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না দিলেও দেশের মানুষ ঠিকই মর্যাদা দিয়েছে।
শওকত মাহমুদ বলেন, তাকে (এ বি এম মূসা) স্মরণ একটা বেদনাদায়ক ব্যাপার। তাকে স্মরণের পেছনে আমাদের অনেক কান্না আছে। মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সংসদ সদস্য হয়েও তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হয়নি। এর জন্য আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, এ বি এম মূসা রাজনীতি বিশ্বাস করতেন। কিন্তু এমন রাজনীতি তিনি বিশ্বাস করতেন না, যে রাজনীতি জনকল্যাণে নয়। তিনি জনগণের কথা সব সময়ই তুলে ধরতেন। রাজনীতিতে সর্বদা সত্য কথা বলার জন্য একজন সাবেক সংসদ সদস্য হয়েও তার জানাজা সংসদে হয়নি। তিনি বলেন, এটা একটা কালো ঘটনা। এ ঘটনা আজীবন ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। তার আদর্শে আমরা যদি নিজেদেরকে আত্মত্যাগ করতে পারি তাহলেই এ বি এম মূসার আত্মা শান্তি পাবে।
স্মরণ সভায় অন্য বক্তারা বলেন, কিংবদন্তী সাংবাদিক এবিএম মূসা সর্ব অবস্থায় সত্য কথা বলতেন। এটা ক্ষমতাসীনরা কোনোভাবেই গ্রহণ করতে পারেনি। এজন্যই মুক্তিযোদ্ধা ও একজন সাবেক সংসদ সদস্য হওয়ার পরেও সাংবাদিক জগতের বিংবদন্তী প্রবীণ সাংবাদিক এ বি এম মূসাকে যথাযথ রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদান ও সংসদ প্লাজায় জানাজা করা হয়নি। কিন্তু সঠিক সমালোচনা করায় শাসক গোষ্ঠী তাকে যথাযথ মূল্যয়ন না করলেও সাংবাদিক জগতে তিনি দিকপাল হিসেবেই আজীবন বেঁচে থাকবেন।
তারা বলেন, এবিএম মূসা প্রকৃত মানবতাবাদী ছিলেন। তিনি একটি রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী হলেও সত্য বলায় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে তিনি কঠোর ছিলেন। তিনি কারো দালালি করেননি।
বাংলাদেশের সাংবাদিকতাকে তিনি উচ্চমাত্রায় নিয়ে গেছেন উল্লেখ করে সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য প্রেস ক্লাবের আজীবন এই সদস্যের নামে জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা ও স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের দাবি জানান বক্তারা।
স্মরণ সভার সূচনা বক্তব্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ প্রয়াত এবিএম মূসার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, তিনি ছিলেন সাংবাদিক জগতের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রজ্ঞা, একনিষ্ঠতা, দৃঢ় অঙ্গীকারের ফলে তিনি সাংবাদিকতাকে মর্যাদা সম্পন্ন একটি পেশায় পরিণত করতে পেরেছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে শুধু জাতীয় প্রেস ক্লাব কিংবা সাংবাদিকতা জগতই নয়, সারা দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতি অপূরণীয়।
এ বি এম মূসার মেয়ে পারভীন সুলতানা মূসা ঝুমা বলেন, আমার বাবা শুধুই একজন সাংবাদিক ও পেশাদার মানুষ ছিলেন না। তিনি বাবা হিসেবে পরিবারের যেমন দায়িত্ব পালন করতেন ঠিক তেমনি দেশের প্রতিও ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ।
Posted ১৮:৫১ | বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin