| রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
ঢাকা: শনিবার সন্ধ্যায় পাঠানো এক বিবৃতিতে হাসপাতালে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর বলেন “শেখ হাসিনার অধীনে তথাকথিত নির্বাচনকালীন ‘সর্বদলীয়’ সরকারে অংশগ্রহণ করেছেন হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ। এ ঘটনায় শুধু আমি নই, সমগ্র জাতি হতভম্ব ও স্তম্ভিত”।বিবৃতিতে জাপা ভাঙ্গার সুষ্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন।
কাজী জাফর জাতীয় পার্টির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, ”আপনারা জাতীয় পার্টির মধ্যে থাকা সরকারের অনুগত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী অবস্থান গ্রহণ করুন।”
হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার বিকেলে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সমালোচনা করে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দলীয় সরকারের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর। জবাবে এরশাদের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেয়া হয়। এছাড়া শনিবার বিকেল ৫টার দিকে কাজী জাফরকে দেখতে হাসপাতালে যান দলটির চেয়ারম্যান এরশাদ ও মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার। তবে তাদের কারো সঙ্গেই কথা বলেননি কাজী জাফর।
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলায় কাজী জাফর আহমদকে দল থেকে বহিষ্কারের গুঞ্জন উঠলেও তা নাকচ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।রোববার বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “আমরা তাকে ছাড়তে চাই না। সে (কাজি জাফর) এই বিবৃতি দিলেও আমাদের সঙ্গে আছে, না দিলেও আমাদের সঙ্গে আছে। সবাইকে নিয়েই জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় যেতে চায়।”এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে একসাথে আছি। একসাথে রাজনীতি করছি। জাফর ইজ আওয়ার ফ্যামিলি মেম্বার। সে অভিমান করে থাকতে পারে। যদি অভিমান করে কোনো কাজ করে থাকে, সেটা আমাদের সম্পর্কেও প্রভাব ফেলবে না।
এরশাদ বলেন তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। সে বেশ অসুস্থ, ফুসফুসে পানি এসেছে। বিবৃতিটি আদৌ তার কি না সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। আমি বিশ্বাস করতে চাই জাফর এই বিবৃতি দেয়নি।”
বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে সরকারবিরোধী অবস্থান নিয়ে এরশাদ গত কিছুদিন ধরেই বলে আসছিলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে জাতীয় পার্টিও যাবে না।এরপর গত ১৮ ডিসেম্বর অনেকটা আকষ্মিকভাবেই এরশাদ ঘোষণা দেন- ‘দুর্নীতিবাজ’ আওয়ামী লীগের শাসন থেকে জনগণকে ‘মুক্ত’ করতে এবং দেশে ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে’ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশ নেবে।জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তনেই দৃশ্যত ক্ষুব্ধ প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর
মহাজোটে থেকে কাঙ্ক্ষিত সুবিধা ভোগ করতে না পারায় আরেক দফা ভাঙছে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি! সংগঠনটির বেশকয়েকজন নেতা দলীয় প্রধানের ওপর চরম ক্ষুব্ধ।
শোনা যাচ্ছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমেদের নেতৃত্বে দলীয় এমপিসহ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ এবং ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এক সময় জাতীয় পার্টি এবং সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে ছিলেন। তারা দল থেকে যোগ দেন বিএনপিতে। এরপর দলছুট হন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং প্রয়াত নাজিউর রহমান মঞ্জু। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু জাতীয় পার্টি (জেপি) ও নাজিউর রহমান মঞ্জু বাংলাদেশের জাতীয় পার্টি গঠন করেন। এখন জাতীয় পার্টির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা কাজী জাফর আহমেদের কণ্ঠেও দল ছাড়ার সুর।
কাজী জাফর আহমেদ বর্তমানে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাকে দুই দফা দেখতেও যান। এ সময় এসব বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে কথা হয়েছে। আলোচনার সময় উপস্থিত থাকা এমন একজন সিলেট বিভাগের জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতীয় পার্টি এখন “আত্মীয়-স্বজন পার্টি” হয়ে গেছে। নেতাদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে দলীয় প্রধান সংকীর্ণতার পরিচয় দিচ্ছেন।’
মির্জা আলমগীর-কাজী জাফরের আলোচনার সময় উপস্থিত অপর একজন জাতীয় পার্টির নেতা যিনি কাজী জাফরের অনুসারী হিসেবে খুব পরিচিত। তিনি বলেন, ‘কাজী জাফর আহমেদ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করবেন।’ এখনই এ বিষয়ে কেউ আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি না।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, আন্দোলন সংগ্রামে যে কেউ আসলে তাকে স্বাগত জানানো হবে। কাজী জাফর আহমেদ জাতীয় পার্টি থেকে বের হলে এরশাদ কিছুটা হলেও কাবু হবেন। আর এরশাদ দুর্বল হলে আওয়ামী লীগ বা মহাজোটেও পড়বে এর প্রভাব। অন্যদিকে ভোটের রাজনীতিতে কাজী জাফরপন্থীরা বিএনপির জন্য সহায়ক হবে।
তবে জাতীয় পার্টির দূর্গ বলে পরিচিত রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটে কাজী জাফর দল ছাড়লেও এর প্রভাব পরবে না বলে মনে করছে সেখান স্থানীয় নেতারা। এর প্রভাব কিছুটা সিলেট অঞ্চলেই পড়তে পারে বলে মনে করছে জাপা।
এ প্রসঙ্গে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন কাদেরী বলেন, ‘হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদই দলের সব। দলে কে আসলো কে গেলো এতে দলের কিছু হবে না। কাজী জাফর দল থেকে চলে গেলে তৃণমূলে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।’
কাজী জাফর অনুসারী হবিগঞ্জ-৩ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী জাতীয় পার্টির নেতা আতিকুর রহমান আতিকের কাছে বিরোধী জোটে যাওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার মা অসুস্থ। রাজনীতি কোন দিকে যাচ্ছে আমি খোঁজ-খবর রাখতে পারছি না ভাই।
জাপা সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টিতে নেতার অভাব নেই। অনেকেই এই দলের পদ কিনতে এরশাদের কাছে ধর্না দেন। এমনকি ‘গোপন রাখার শর্ত’ দিয়েও জাতীয় পার্টির পদ দেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। এর মধ্যে একটি টিভি চ্যানেলের চেয়ারম্যান রয়েছেন যিনি জাতীয় পার্টির ‘আন অফিসিয়াল’ প্রেসিডিয়াম সদস্য।
সূত্র আরো জানায়, জাতীয় পার্টির সমর্থন ছাড়া কোনো দলের সরকার গঠন করা সম্ভব নয়। সংগঠনটির যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার একক ক্ষমতা ভোগ করেন এরশাদ। তাই যতোদিন এরশাদ থাকবে ততোদিন জাতীয় পার্টি থাকবে। কেউ গেলে জাতীয় পার্টির অবস্থান নড়বড় হবে না।তবে এরশাদের কৌশলগত ভুলের কারণে জাতীয় পার্টি থেকে বেশ কয়েকজন ‘বাঘা’ ‘বাঘা’ নেতা বেরিয়ে আসছেন। নির্বাচন মানেই জাতীয় পার্টির ‘ভাঙন’ মনে করছে দলের তৃণমূল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর সুস্থ হওয়ার পর পার্টির অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম সদস্য, এমপি, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম-মহাসচিব ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে সাংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কার্যক্রমের দিক নির্দেশনা দেবেন বলে জানিয়েছেন।
Posted ২১:০৯ | রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin