| শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
বাসস : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনীর যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও আধুনিকায়ণ হয়েছে তা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই হয়েছে। আওয়ামী লীগ সশস্ত্র বাহিনীকে কখনো নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেনি। বরং সশস্ত্র বাহিনীকে একটি দক্ষ, শক্তিশালী এবং আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে যা যা দরকার তা দৃঢ়তার সাথে করেছে।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভাস্বর সশস্ত্র বাহিনী আমাদের জাতীয় অহংকার। সশস্ত্র বাহিনী তাদের নানাবিধ জনসেবামূলক কর্মকা-ের জন্য জনগণের বিশ্বস্ততা অর্জন করতে পেরেছে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলাসহ উদ্ধার তৎপরতা ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সংকট নিরসনে সশস্ত্র বাহিনী দেশপ্রেমের এক অনন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ বিশ্বে নির্ভরযোগ্য হিসাবে প্রশংসিত হয়েছে। শান্তিরক্ষা মিশনে অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করে তারা বিশ্ববাসীর কাছে শুধু দেশের ভাবমূর্তিকেই উজ্জ্বল করেনি বরং জাতিসংঘের ভাবমূর্তিকেও উজ্জ্বলতর করেছে।
অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পীকার শিরিন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন, মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধানগণ, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, কূটনীতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট নাগরিক এবং তাদের পরিবারবর্গ যোগ দেন।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে এই বাহিনীর সকল সদস্যকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে আজকের এই দিনটি এক বিশেষ গৌরবময় স্থান দখল করে আছে। বিজয়কে ত্বরান্বিত করতে ১৯৭১ সালের এই দিনে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা সম্মিলিতভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের সূচনা করে। সেই ঐক্যবদ্ধ আক্রমণের মুখে দখলদার বাহিনী আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনীর সার্বিক উন্নতিকল্পে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ভিশন-২০২১ অনুযায়ী সেনাবাহিনীর অপারেশনাল ক্ষমতা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে প্রথমবারের মত অত্যাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জামাদি ৪র্থ প্রজন্ম ট্যাংক এমবিটি-২০০০, আর্মড রিকভারী ভেহিকেল, গোলন্দাজ বহরের জন্য প্রথমবারের মত সেলফ প্রপেল্ড গান কামানসহ বিভিন্ন ধরণের রাডার, পদাতিক বাহিনীর জন্য এপিসি ও অন্যান্য আধুনিক সরঞ্জাম, আর্মি এভিয়েশনের জন্য আধুনিক হেলিকপ্টারসহ বিভিন্ন সমরাস্ত্র ক্রয় করা হয়েছে।
তিনি বলেন, হযরত শাহ জালাল (রহঃ) এর পূণ্যভূমি সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে নিরাপত্তা ও তদারকীর জন্য ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড এর পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শুভ সূচনা করা হয়েছে। বান্দরবান জেলার রুমায় নতুন সেনানিবাস স্থাপন ও নোয়াখালী জেলার হাতিয়ায় চর এলাকার সমুদয় খাস জমি সেনাবাহিনীর অনুকূলে দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ক্যারিং চর প্রদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে । প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আধুনিকায়নেও বিভিন্ন উন্নয়নমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের চিকিৎসা সেবা বৃদ্ধি ও উন্নত করা হয়েছে। অন্যান্য সরকারি চাকরীজীবীদের মত সশস্ত্র বাহিনীর চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সামরিক সদস্যদের আবাসন সুবিধা প্রদানে সামরিক বাহিনীর অফিসারদের ব্যক্তিগত অর্থায়নে জলসিঁড়ি আবাসন প্রকল্প, সাভার ও যশোর ডিওএইচএস, সেনা সদস্যদের জন্য বরিশাল ও পটুয়াখালীতে সেনাপল্লী প্লট এবং সাভারে সেনাপল্লী আবাসন ফ্ল্যাট প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দক্ষতা, উৎকর্ষ, মনোবল, কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি করতে বীরত্ব ও সাহসিকতার জন্য পদক, এককালীন অনুদান ও ভাতা প্রচলন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর জন্য নতুন ডিজিটাল পে সিস্টেম প্রবর্তন, নৌ ও বিমান বাহিনীর সাথে সামঞ্জস্য রেখে রেশন স্কেল উন্নীতকরণ করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী অতিথি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এসময় তিনি বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথেও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী
বাসস : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকলের প্রতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে করে ভবিষ্যত প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গর্ববোধ এবং মর্যাদার সঙ্গে বাস করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে- আমরা কঠোর আত্মত্যাগ এবং ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কাজেই আমাদের সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী গতকাল সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০১৩ উপলক্ষে স্বাধীনতাযুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠগণের উত্তরাধিকারী ও অন্যান্য খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের উত্তরাধিকারীদের দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাষণ দিচ্ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম এবং তিন বাহিনীর প্রধানগণও এসময় উপস্থিত ছিলেন। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মাদ শফিউল হক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে কয়েকজন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে উপহার হিসেবে চেক, মোবাইল সেট ও শাল বিতরণ করেন। পরে তিনি কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের নবনির্মিত ভবন এবং ঢাকা সেনানিবাসে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর গেটের পূর্বদিকে স্বাধীনতা টাওয়ার উদ্বোধন করেন।
শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ
বাসস : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন উপলক্ষে স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মত্যাগকারী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিকেলে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে তিনি শহীদ বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এ সময় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল সালাম প্রদান করে এবং বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী শিখা অনির্বাণে পরিদর্শক বইয়ে স্বাক্ষর করেন। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব পালন করছেন।
পুষ্পস্তবক প্রদান অনুষ্ঠানের পরে তিন বাহিনী প্রধানগণ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শিখা অনির্বাণে এসে পৌঁছালে তিন বাহিনী প্রধানগণ এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান।
গলফ ক্লাব হাউজ কমপ্লেক্স এবং স্বাধীনতা টাওয়ার উদ্বোধন
বাসস : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের নবনির্মিত ক্লাব হাউজ কমপ্লেক্স উদ্বোধন করেন।
কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের সভাপতি ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল এম ফরিদ হাবিব, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারী, কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের সাবেক সভাপতি, সদস্যবৃন্দ এবং তিন বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীকে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের আজীবন সদস্য পদ প্রদান করা হলে তিনি তা গ্রহণ করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা সেনানিবাসস্থ শহীদ জাহাঙ্গীর গেট সংলগ্ন এলাকায় সেনাপরিবার কল্যাণ সমিতির আওতাধীন নব নির্মিত ‘স্বাধীনতা টাওয়ার’ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এসময় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়াসহ উর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাগণ সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন।
সেনা পরিবার কল্যাণ সমিতির আওতাধীন ‘স্বাধীনতা টাওয়ার’ ভবনটির নির্মাণ কাজ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আগ্রহ ও উৎসাহে ট্রাস্ট ব্যাংক লিঃ-এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে শুরু হয়। অত্যাধুনিক ১৪ তলা বিশিষ্ট বহুতল এই বাণিজ্যিক ভবনটি সেনা পরিবারবর্গের কল্যাণের স্বার্থে নির্মিত হচ্ছে।
Posted ০১:০৭ | শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin