নিজস্ব প্রতিবেদক | শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | প্রিন্ট
রোজার মাসকে কেন্দ্র করে বাজারে মাছ-মাংস-সবজিসহ প্রতিটি পণ্যেই রয়েছে বাড়তি দাম। এর সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছে সাপ্তাহিক ছুটির দিনকে কেন্দ্র করে বাড়তি উত্তাপ। ক্রেতাদের অভিযোগ, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বেশিরভাগ মানুষই শুক্রবার বাজার করে। আর এই চাহিদাকে ঘিরে ব্যবসায়ীরা প্রায় প্রতিটি পণ্যেরই দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।
এদিকে বিক্রেতারাও অকপটে স্বীকার করেছেন সপ্তাহ ব্যবধানে এমন দামের বিষয়ে।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকালে রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা এলাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, যা গতকাল বৃহস্পতিবারও ছিল ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা। টমেটো কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, যা অন্যান্য দিনে ৩০ টাকাতেই পাওয়া যায়। ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি, যা গতকালের বাজারেও ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। শসা যেখানে প্রতিদিন বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা, আজকের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
বাজারে প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা করে। সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পণ্য আলু বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি, তুলনামূলক সবচেয়ে কমদামে বিক্রি হচ্ছে পেঁপে ৪০। এছাড়াও বরবটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, শালগম ৪০, লাউ ৫০-৮০ টাকা প্রতি পিস, শসা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য পণ্যের পাশাপাশি মাছের বাজারেও কিছুটা উত্তাপ দেখা গেছে। বড় চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, রুই মাছ ৩৫০ টাকা, কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি। বড় সাইজের আইড় মাছ বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা কেজি, মলা মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৪০০ টাকা, পাবদা মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চিতল মাছ ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা।
এছাড়াও তেলাপিয়া মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা, পাঙাশ প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চাষের কই প্রতি কেজি ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, শোল ছোট সাইজের প্রতি কেজি ৫০০ টাকা, আর মাঝারি সাইজের ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সরপুঁটি মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি।
বাজার করতে আসা মওদুদ আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে থাকি, শুক্রবারেই সব বাজার করে ফেলার চেষ্টা করি। কিন্তু এখন দেখি যে অন্যান্য দিনের তুলনায় এই দিন বাজার থাকে বেশি চড়া। প্রতিটি জিনিসের দাম ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। অন্যান্য দিনে কম থাকবে, আজকের দিনে বেড়ে যাবে, এটা কেমন কথা? এই দিন কী বাজারে সবজি কম থাকে?
তিনি বলেন, বাজার সব ধরনের সবজিতে ভরপুর। কোনো সংকট নেই। তারপরও ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে দাম বাড়িয়ে দেয়। একদিকে রোজার মাসকে কেন্দ্র করে সবকিছুর দাম বেশি, অন্যদিকে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দাম বেশি। আমরা আসলে যাবো কোথায়? এভাবে একটা দেশ চলতে পারে?
মাসুদুর রহমান একজন গার্মেন্টস কর্মী বলেন, ইদানীং বাজারে এলে মাছ কিনতে পারি না বাড়তি দামের কারণে। বাজারে সবচেয়ে কম দামের মাছও এখন বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। দরদাম করে সবশেষে তেলাপিয়া মাছ কিনলাম তাও ২২০ টাকা কেজি দরে। আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষরা কোনো মাছই এখন সেভাবে কিনতে পারছি না।
এদিকে মাছের দাম প্রসঙ্গে মধ্যবাড্ডা মাছ বাজারের মাছ বিক্রেতা খলিল মিয়া বলেন, এই সপ্তাহের তুলনামূলক মাছের দাম অনেকটাই বেশি। কারণ আমরা বলতে পারব না, আড়তদাররাই ভালো বলতে পারবে। এই সপ্তাহ পুরোটাই মাছের দাম বেশি গেছে। এই সময়ে সাধারণত মাছের দাম কম থাকার কথা, কিন্তু উল্টো দাম অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি।
তিনি বলেন, আমরা কম দামে কিনতে পারি না, বেচব কীভাবে? পাবদা মাছটা কিনাই হলো ৩৮০ টাকা করে, বিক্রি করতে হচ্ছে ৪০০ টাকা করে। খরচ বাদ দিলে তেমন লাভ থাকে না। আমাদেরও তো বিক্রি করতে হবে, ঢাকায় থাকি, স্ত্রী সন্তান আছে, বাসা ভাড়া দিতে হয়, বাকি সব তো কিনেই খেতে হয়। আমরাও যে খুব বেশি ভালো আছি এরকমটা না।
সবজি বিক্রেতা সায়েদুল ইসলাম বলেন, কিছু জিনিসের দাম শুক্রবার এলে এমনিতেই বেড়ে যায়। যেমন, শসা অন্যান্য দিনে ৫০-৬০ টাকা বিক্রি করি, কিন্তু শুক্রবারে ৭০-৮০ টাকা বিক্রি করি। শিমের দামটা একটু বেড়েছে, কারণ কিনেই এনেছি বেশি দামে। বাকি সবজির দাম মোটামুটি ঠিকই থাকে।
Posted ০৬:৩৫ | শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain