| শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০১৪ | প্রিন্ট
ঢাকা, ১৮ জানুয়ারি : ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বেনজীর আহমেদ বলেছেন, একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে রাজনীতির লেবাস দিয়ে অপরাধকে আড়াল করা যাবে না। যারা এ ধরণের কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছে তারা মানুষের চেহারা ধারণকারী পিশাচ। বোমাবাজ, অগ্নিসংযোগকারী ও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের দেখতে চাই না। এ ধরণের গুটি কয়েক সন্ত্রাসী সমাজের জন্য ক্ষতিকর, এরা শিখেছে শুধু ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ। সময় পাল্টে গেছে, জনতাই পুলিশ, পুলিশই জনতা।
শনিবার দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ লাইন প্যারেড মাঠে কমিউনিটি পুলিশ ও নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি মহাসম্মেলন ২০১৪-এ তিনি এসব কথা বলেন।
পুলিশ কমিশনার বলেন, ঢাকা শহরের সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের বাদ দিয়ে আমরা সবাই এক সাথে থাকবো। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাই-বোনদের নিয়ে কাজ করবো। যাতে করে আগামী প্রজন্ম মাদকের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা পেতে পারে। একাত্তরে হানাদার বাহিনীদের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধে বুলেট ছুঁড়েছিলো রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পুলিশ সদস্যরা। আমাদের চেতনায় দেশ ও সমাজের প্রতি যে দায়িত্ববোধ রয়েছে তা নিজ থেকে গড়ে ওঠেনি। একাত্তরের চেতনায় আমরা সমুজ্জ্বল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় পরাজিত হানাদারদের এদেশীয় একটা অংশ রয়ে গিয়েছিলো। তারা ১৯৭১ সালে যা করেছে ২০১৩ সালেও তা করেছে। তারা সাময়িকভাবে রণে ভঙ্গ দিয়েছে। তারা আবার ফিরে আসবে এবং পুলিশ-জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাদের প্রতিহত করবে। এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালের নাশকতামূলক কর্মকান্ডে ১৫ পুলিশ সদস্য নিহত ও দুই হাজার ৮ শ’ জন পুলিশ আহত হয়েছে। অপরাধীদের সাথে কোনো আপোষ নয়। আমরা জনগণের পুলিশ হতে চাই। কমিউনিটি পুলিশ ও নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি কার্যকর ভূমিকা রাখছে। সেই সাথে রয়েছে নগরবাসীর সমর্থন। ফলে নাশকতা ঘটানোর জন্য শত শত কোটি টাকা খরচ করেও কিছুই করতে পারেনি। দুর্নীতি পরায়ণ পুলিশ সদস্যও আমাদের প্রয়োজন নেই। গত বছর দুর্নীতির দায়ে ১১ জন পুলিশ সদস্যকে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে আমরা জিরো টলারেন্সে বিশ্বাসী এটিই তার প্রমাণ।
পুলিশ কমিশনার বলেন, যারা যানবাহনে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করছে, যানবাহন পুড়ে ছাই হয়েছে। তারা কি এসব যানবাহন কিনে দিয়েছে? নাকি যানবাহনগুলো তাদের? ইচ্ছে হলো পুড়িয়ে দিলাম? সন্ত্রাসীদের কোনো দল নেই। তাদেরকে রাজনীতি থেকে আলাদা চোখে দেখতে হবে। কারণ এরা ফৌজদারী অপরাধ করছে।
বেনজীর আহমেদ বাড়ির মালিকদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করুন। বর্তমানে অনেক কম দামে এইসব সরঞ্জামাদী পাওয়া যায়। বাসা ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে, গাড়ি চালক ও কাজের মানুষ রাখলে তা পুলিশকে জানাবেন। এলাকায় নতুন মানুষ দেখলে নজর রাখবেন। মেসে ক্ষেত্র বিশেষে ছাত্ররা থাকেন, তবে বিগত সময়ে দেখা গেছে ঐ সব মেসে ক্ষেত্র বিশেষে বোমা বানানোর কারখানা তৈরি করা হয়েছে। বিদেশীদের কাছে বাড়ি ভাড়া দিলে পুলিশকে তা জানাবেন। কারণ কয়েকটি দেশের নাগরিক বাংলাদেশে এসে তাদের পাসপোর্টটি ছিঁড়ে ফেলে দেয়। এতে করে তারা কোন দেশের নাগরিক তা বোঝা যায় না। তারা এদেশে এসে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত হয়ে পড়ে। কোনো কোনো বিদেশী নাগরিক এদেশে বিয়ে করে অপরাধী চক্র গড়ে তুলে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে।
তিনি বলেন, ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকায় গড়ি কিনতে পারলে কেন ১০ হাজার টাকায় জিপিএস ডিভাইস লাগাতে পারবেন না। এই ডিভাইসতো আপনার গাড়ির নিরাপত্তার জন্যই চালু করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ইব্রাহীম ফাতেমীর সভাপতিত্বে সোয়া ১২টায় এ মহাসম্মেলন শুরু হয়। অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সাহেলি ফেরদৌসীর সঞ্চালনায় প্রথমেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন রাজারবাগ পুলিশ লাইন জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা আল-আমীন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, যুগ্ম কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান। কমিউনিটি পুলিশ ও নাগরিক নিরাপত্তা কমিটির ৮টি অপরাধ বিভাগের পক্ষে ৮ জন প্রতিনিধিও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
এর আগে সকাল ১০টার পর থেকে মেট্রোপলিটন এলাকার ৪৯টি থানার কমিউনিটি পুলিশ ও নাগরিক নিরাপত্তা কমিটির লোকজন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন মাঠে।
Posted ১২:১৫ | শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin