রবিবার ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রজব মাসের ফজিলত ও আমল

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট

রজব মাসের ফজিলত ও আমল

রজব’ শব্দের অর্থ সম্মানিত।  আরবি চন্দ্র বছরের সপ্তম মাস হলো রজব। রজব মাস অত্যন্ত সম্মানিত ও ফজিলতপূর্ণ। জাহেলিয়ার যুগে আরবরা এ মাসকে অন্য মাসের তুলনায় বেশি সম্মান করত। এ জন্য তারা এ মাসের নাম রেখেছিল ‘রজব’।

 

ইসলাম আগমনের পর বছরের ১২ মাসের মধ্য থেকে রজবসহ ৪ মাসকে ‘আশহুরে হুরুম’ বা সম্মানিত মাস ঘোষণা করা হয়। এ সম্পর্কে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কাছে গণনায় মাস ১২টি। তার মধ্যে ৪টি (সম্মানিত হওয়ার কারণে) নিষিদ্ধ মাস, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। (তওবা, আয়াত-৩৬)। মর্যাদাপূর্ণ মাস ৪টি হলো- জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব।

 

সম্মানিত মাসগুলোর মধ্যে রজব একটি। হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত। প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যেদিন আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন; সেদিন যেভাবে সময় নির্ধারিত ছিল তা ফিরে এসেছে। ১২ মাসে এক বছর। এর মধ্যে ৪ মাস নিষিদ্ধ ও সম্মানিত। ৩ মাস পরপর জিলকদ, জিলহজ ও মহররম এবং মুজারের মাস রজব, যা জমাদিউস সানি ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস।

 

ইমাম আবু বকর জাসসাস (রহ.) বলেন, ‘এসব মাসে ইবাদতের প্রতি যত্নবান হলে বাকি মাসগুলোয় ইবাদত করা সহজ হয়। আর এ মাসগুলোয় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকলে অন্য মাসেও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়। তাই আশহুরে হুরুমের অন্তর্গত রজব মাসের মর্যাদা রক্ষায় সবাইকে বেশি যত্নবান হতে হবে।

 

রজবের ফজিলত সম্পর্কে একটি সুপ্রসিদ্ধ হাদিস হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘রজব মাস শুরু হলে বিশ্ব নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) এ দোয়া পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রজাবাও ওয়া শাবান ওয়া বাললিগনা ইলা শাহরি রমাদান।’ অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করে দিন। আর আমাদের রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দিন।

 

মুমিন জীবনে মাহে রজবের গুরুত্ব কত অপরিসীম। এ মাসের ২৬ তারিখ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় হাবিব রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে মিরাজের মাধ্যমে তাঁর দিদার দিয়েছেন। তাই এ মাস এত মর্যাদাপূর্ণ। তা ছাড়া হাদিসের কিতাবগুলোয়ও রজব মাসে প্রিয় নবীর (সা.) বেশি নফল ইবাদতের বর্ণনা পাওয়া যায়। এ থেকেও রজব মাসের বিশেষত্ব প্রমাণিত হয়।

 

হজরত আবু বকর (রা.) বলেন, রজব ফসল রোপণের মাস, শাবান ফসলে পানি সেচ দেওয়ার মাস আর রমজান হলো ফসল তোলার মাস। রজব মাস ঠাসা বাতাসের মতো, শাবান মেঘমালার মতো আর রমজান হলো বৃষ্টির মতো।

 

বিশ্ব নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) রজব থেকেই মাহে রমজানের প্রস্তুতি নিতেন। বেশি নফল রোজা ও ইবাদতে কাটাতেন রজব ও শাবান মাসে। তাই আমাদেরও কর্তব্য তার সুন্নাহ অনুসরণ করে রজবের হক আদায় করা। বেশি বেশি নফল নামাজ ও রোজা রাখা।

 

প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রজব হলো আল্লাহর মাস, শাবান হলো আমার (নবীজির) মাস; রমজান হলো আমার উম্মতের মাস। (তিরমিজি)।

 

যে ব্যক্তি রজব মাসে (ইবাদত দ্বারা) ক্ষেত চাষ দিলো না এবং শাবান মাসে (ইবাদতের মাধ্যমে) ক্ষেত আগাছামুক্ত করল না; সে রমজান মাসে (ইবাদতের) ফসল তুলতে পারবে না।

 

রজব ও শাবান মাস হলো রমজান মাসের প্রস্তুতি। এ প্রস্তুতি শারীরিক, মানসিক, আর্থিক অর্থাৎ সার্বিক বা সামগ্রিক। রমজান মাসে যেহেতু ইবাদতের সময়সূচি পরিবর্তন হবে, তাই সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে এবং রমজান মাসের শেষ দশকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ আমল ইতিকাফ রয়েছে, তাই আগে থেকেই তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

 

রজব ও শাবান মাসের নেক আমল ও পাপ বর্জনের মাধ্যমে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। তওবা ও ইস্তিগফার করতে হবে। মোহমুক্তি ও পাপ পরিহার করার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সমাজের একে অন্যকে সৎকাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করতে হবে। রমজান মাসে যেন ইবাদতের পরিবেশ রক্ষা হয়, সে বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। শ্রমিক-কর্মচারিদের কাজের চাপ কমাতে হবে। দান-খয়রাতের পরিমাণ বাড়াতে হবে। রমজানে গরিব মানুষ যেন ভালোভাবে সাহরি ও ইফতার করতে পারে, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে। এসব বিষয়ে পরিকল্পনা রজব শাবান মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল।

 

তবে এ মাসের জন্য নির্ধারিত বিশেষ কোনো নামাজ, রোজা ও বিশেষ পদ্ধতির কোনো আমলের হুকুম দেওয়া হয়নি। তাই মনগড়া আমল করে এ মাসের ফজিলত ও বরকত লাভ করা যাবে না। রজব মাসের বরকত ও ফজিলত হাসিল করার জন্য অন্য মাসে পালনীয় ফরজ ইবাদতগুলো যথাযথ পালন করতে হবে এবং বেশি বেশি নফল ইবাদত করতে হবে।

 

রজব মাসের বিশেষ আমলসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো- বেশি বেশি নফল রোজা পালন করা। মাসজুড়ে প্রিয় নবীর (সা.) নিয়মিত আমল-প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা পালন করা। এ ছাড়া শুক্রবারসহ এ মাসেও আইয়ামে বিজের রোজা অর্থাৎ চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ নফল রোজা পালন করা। রোজা রাখার পাশাপাশি মাসজুড়ে নফল নামাজ বেশি বেশি আদায় করা। বিশেষ করে তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত-দোহা, জাওয়াল, আওয়াবিন, তাহিয়াতুল মসজিদ, দুখুলুল মসজিদ ইত্যাদি নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া খুবই জরুরি। সব সময় প্রিয় নবীর (সা.) শেখানো দোয়াটি পড়া আমাদের জন্য একান্ত কর্তব্য।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৭:৪৪ | মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com