নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট
পবিত্র কোরআনুল কারিমে ও হাদিসে অসংখ্য নির্দেশনা ও উপদেশ রয়েছে দানের ব্যাপারে। তবে সে দান যদি আত্মীয়-স্বজন বা অধিনস্ত আপনজনদের জন্য হয় তাতে দ্বিগুণ সওয়াব হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এ ব্যাপারে দীর্ঘ একটি হাদিস এসেছে।
সেই হাদিসটি, সাদকা বা দান আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। সাদকা সম্পর্কে হাদিসের বর্ণনা হলো মিসকিনকে সাদকাহ করলে নেকি হবে আর আত্মীয়কে সাদকা করলে তা হবে দুটি সাদকা বা নেকি করার সওয়াব। আর তাহলো সাদকা ও আত্মীয়তা রক্ষা। (আত-তারগীব)।
বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত দীর্ঘ এক হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দান সদকার দ্বিগুণ প্রতিদান পাওয়ার বিষয়টি এভাবে ঘোষণা করেন-
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্ত্রী হজরত যাইনাব রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি একবার মসজিদে নববীতে ছিলাম। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম যে, তিনি (নারীদেরকে লক্ষ্য করে) বললেন, ‘তোমরা তোমাদের গহনা থেকে হলেও দান কর। আর যাইনাব তার স্বামী (আবদুল্লাহ) এবং যেসব ইয়াতিম তার প্রতিপালনে ছিল তাদের জন্য খরচ করতেন। একদিন হজরত যাইনাব (তার স্বামী) আবদুল্লাহকে বললেন, আপনি রাসূলুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করুন, আমি যে আপনার এবং যে ইয়াতিম আমার পোষ্য আছে; তাদের জন্য খরচ করছি তা কি দান হিসেবে আমার পক্ষে যথেষ্ট হবে?
তিনি (আবদুল্লাহ) বলেন, তুমি গিয়েই রাসূলুল্লাহকে জিজ্ঞাসা কর। তখন আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে উপস্থিত হলাম এবং (বিশ্বনবীর) দরজার কাছে এক আনসারি নারীকে দেখতে পেলাম। তার প্রয়োজনটাও ছিল আমার প্রয়োজনের মতো। তখন (হজরত) বিল্লাল রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাদের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমরা উভয়ে তাকে বললাম। আপনি রাসূলুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করুন, আমি আমার স্বামী এবং যে ইয়াতিম আমার তত্ত্বাবধানে আছে; তাদের জন্য খরচ করছি, তা কি দান হিসেবে আমার পক্ষে যথেষ্ট হবে?
আমরা (তাকে) আরো বললাম (প্রিয় নবীর কাছে) আমাদের নাম বলবেন না। (হজরত) বিল্লাল নবীর কাছে উপস্থিত হলেন এবং তাঁকে প্রশ্ন করলেন। তিনি বললেন, ওই নারী দু’জন কে? বিল্লাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, যাইনাব। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, কোন যাইনাব? বিল্লাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আবদুল্লাহর স্ত্রী।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হ্যাঁ’! তার দ্বিগুণ সওয়াব হবে। সাদকার সওয়াব এবং আত্মীয়তা রক্ষা করার সওয়াব।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
অন্য হাদিসে হজরত সালমান ইবনে আমের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেছেন, ‘সাধারণ দরিদ্র ব্যক্তিকে সদকা বা দান করেল কেবল সদকার সাওয়াব পাওয়া যায়। কিন্তু রক্তসর্ম্পীয় আত্মীয়কে সদকা বা দান করলে সদকাও হবে, আত্মীয়তাও রক্ষা হবে। (তিরমিজি, ইবনে হাব্বান, ইবনে খুজাইমা, মুসতাদরেকে হাকেম)।
সুতরাং আত্মীয়তার সম্পর্ক বিনষ্ট নয় বরং আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা উত্তম। আপনজনদের সাহায্য-সহযোগিতা করা সুন্নতে নববীর একান্ত দাবি। এতে আত্মীয়দের সম্পর্ক জোরদার হয়।
তাছাড়া আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমেও আত্মীয়তা রক্ষার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তির প্রতি অভিসম্পাত করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ক্ষমতা লাভ করলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতি আল্লাহ তাআলা অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদের বধির ও দৃষ্টি শক্তিহীন করেন।’ (সূরা: মুহাম্মদ, আয়াত: ২২-২৩)।
রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আত্মীয়দের সঙ্গে সুম্পর্ক রাখার তাওফিক দান করুন। গরিব ও অসহায়দের সঙ্গে সঙ্গে নিজের আপনজনদেরকেও সাহায্য-সহযোগিতা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Posted ০৭:৪৫ | বৃহস্পতিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain