| বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০১৪ | প্রিন্ট
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: শহরের আকুয়া চৌরঙ্গী মোড় এলাকার সরকারি শিশু সদনে (বালিকা) বিয়ের জমকালো আয়োজন। কনে এ শিশু সদনের দুই এতিম রিনা আক্তার (১৮) ও মুন্নি আক্তার (১৮)। উৎসবমুখর পরিবেশ গোটা শিশু সদনে। এ আয়োজনের মধ্য দিয়েই দুই এতিম কন্যার জীবনে এলো অনাস্বাদিত আনন্দ-বেদনার বিশেষ মুহূর্ত। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেটকারযোগে দুই এতিম কন্যার বর আসলাম ও মানিক শিশু সদনে এলেন। শিশু সদনে এলে দুর্বা ঘাস ও ধান দিয়ে তাদের বরণ করে নিল শিশু সদন পরিবার। এরপর পিতৃস্নেহে জেলা প্রশাসক মোস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকি নিজেই দুই বরের হাতে পরিয়ে দিলেন হাতঘড়ি। মিষ্টি মুখ শেষে তাদের নিয়ে যাওয়া হলো বিয়ের মঞ্চে।লাল জরির শাড়ি পরে একটু পরেই বধূ সাজে দুই কন্যা মুন্নি ও রিনাকে বসানো হলো বিয়ের মঞ্চে। তাদের হাতে মেহেদী, পায়ে আলতা, মাথায় টিকলি ও দুই হাত ভর্তি লাল-সোনালি চুরি। শুরু হলো বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। এ দুই নব দম্পতিরই দেনমোহর ধরা হয় তিন লাখ টাকা। শত শত লোকের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণে যেন জমজমাট বিয়ে বাড়ি। দেখে মনেই হয়নি এখানে এতিমের বিয়ে হচ্ছে! খানাপিনার আয়োজনও ছিল লক্ষ্যণীয়। কিন্তু জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল হক বর পক্ষের খাবারের সময় অহেতুক বাধ সাধেন। এ নিয়ে কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও পরে বিয়ের আনন্দে সবাই বেমালুম সব ভুলে যান। অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন ওই উপ-পরিচালক।
টানা তিন ঘণ্টার উৎসব আনন্দ ও খানাপিনা শেষে অবশেষে এলো বধূ বিদায়ের করুণ মুহূর্ত। অশ্রুসজল চোখে নিজেদের স্মৃতির জায়গা থেকে রিনা ও মুন্নি বেরিয়ে যান নিজ স্বামীর ঘরে। এসময় জেলা প্রশাসক মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাসসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ময়মনসিংহে দুই জোড়া এতিমের রাজসিক বিয়ে!
ময়মনসিংহ সরকারি শিশু সদন (বালিকা) সূত্র জানায়, মাত্র সাড়ে চার বছর বয়সে সরকারি শিশু সদনে (বালিকা) ঠাঁই হয় মুন্নি আক্তারের। ট্রেন থেকে কুড়িয়ে পেয়ে এক নারী মুন্নিকে শিশু সদনে রেখে যান। একইভাবে মা-বাবা হারা রীনাকে মাত্র চার বছর বয়সে শিশু সদনে রেখে যান তার নানী। দুই জনেই শহরের সানফ্লাওয়ার আইডিয়াল স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণি পাস করেছেন।
জানা গেছে, পদাধিকারবলে এ শিশু সদনের পরিচালনা কমিটির প্রধান জেলা প্রশাসক মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকি। পড়াশুনায় ভালো মুন্নি আক্তারকে তিনি নিজ কার্যালয়েই এমএলএসএস পদে চাকরি দিয়েছেন। তার স্বামী মানিকও একই অফিসে একই পদে চাকরি করেন। জেলা প্রশাসন থেকেই এ নতুন জুটি ঠিক করা হয়। আর রীনার বিয়ে ঠিক করেন তার নানী জমিলা খাতুন ও মামারা। মঙ্গলবার বিয়েতে তারাও উপস্থিত ছিলেন। রিনার স্বামী সদর উপজেলার দাপুনিয়া এলাকার রং মিস্ত্রী আসলাম।
ময়মনসিংহ সরকারি শিশু সদনের (বালিকা) দায়িত্বপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক আসমত জাহান বেগম বলেন, ‘বিয়ের জন্য সরকারি বরাদ্দ অতি নগণ্য থাকলেও সামাজিকভাবে দান-অনুদান সংগ্রহ করেই এ দুই জোড়া এতিমের বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘সোনার গহনা থেকে শুরু করে হাঁড়ি-পাতিলসহ সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুই তাদের সঙ্গে দেয়া হয়েছে।’ দুই জোড়া এতিমের বিয়ে সম্পন্ন শেষে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মোস্তামিক বিল্লাহ ফারুকি তাদের দাম্পত্য জীবনের সফলতা কামনা করেন।
Posted ১৩:৪৯ | বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin