নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ২২ মে ২০২৩ | প্রিন্ট
বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলে কিংবা মেয়ের সম্মতি অপরিহার্য। ইসলামের দৃষ্টিতে জোর করে বিয়ে দেওয়া অভিভাবকের জন্য নাজায়েজ এবং আল্লাহর নাফরমানির শামিল। কেননা, এর কারণে দাম্পত্যজীবনের মূল নিয়ামক শক্তি প্রেম-ভালোবাসা নষ্ট হয়। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্প্রীতি। অনেক সময় বড় দুর্ঘটনাও ঘটে যায়। এজন্য রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, لاَ تُنْكَحُ الْبِكْرُ حَتَّى تُسْتَأْذَنَ وَلاَ الثَّيِّبُ حَتَّى تُسْتَأْمَرَ فَقِيلَ يَا رَسُولَ اللهِ كَيْفَ إِذْنُهَا قَالَ إِذَا سَكَتَتْ ‘কুমারী নারী বিয়ে দেওয়া যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার অনুমতি গ্রহণ করা হবে। আর বিধবা নারী বিয়ে দেওয়া যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার মত গ্রহণ করা হবে। প্রশ্ন করা হলো- হে আল্লাহর রাসুল! তার অনুমতি কেমন করে? তিনি বললেন, যখন সে নীরব থাকে।’ (বুখারি: ৬৯৬৮)
তাছাড়া জোর করে বিয়ে দেওয়া একটি অনৈতিক কাজ। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, মেয়ে তার ব্যক্তিগত বিষয়ে অভিভাবকের চেয়ে অধিক হকদার। (মুয়াত্তা মালিক: ৮৮৮, সহিহ মুসলিম: ১৪২১, মুসনাদে আহমদ: ১৮৮৮, আবু দাউদ: ২০৯৮, তিরমিজি: ১১০৮, নাসায়ি: ৩২৬০, সহিহ ইবনে হিব্বান: ৪০৮৪)
সালামা বিনতে আব্দুর রহমান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা এক মেয়ে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে এল। এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা কতইনা উত্তম পিতা! আমার চাচাত ভাই আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল আর তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। আর এমন এক ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছেন যাকে আমি অপছন্দ করি। এ ব্যাপারে রাসুল (স.) তার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলে পিতা বলে, মেয়েটি সত্যই বলেছে। আমি তাকে এমন পাত্রের সাথে বিয়ে দিচ্ছি যার পরিবার ভালো নয়। তখন রাসুল (স.) মেয়েটিকে বললেন, ‘এ বিয়ে হবে না, তুমি যাও, যাকে ইচ্ছে বিয়ে করে নাও।’ (মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: ১০৩০৪, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ১৫৯৫৩)
বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক মহিলা নবী (স.)-এর কাছে এসে বলল, আমার পিতা আমাকে তার ভাতিজার কাছে বিয়ে দিয়েছে, যাতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। রাবী বলেন, তখন রাসুল (স.) বিষয়টি মেয়ের এখতিয়ারের ওপর ন্যস্ত করেন, (অর্থাৎ ইচ্ছে করলে বিয়ে রাখতেও পারবে, ইচ্ছে করলে ভেঙ্গেও দিতে পারবে) তখন মহিলাটি বললেন, আমার পিতা যা করেছেন, তা আমি মেনে নিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল- মেয়েরা যেন জেনে নেয় যে বিয়ের ব্যাপারে পিতাদের মতের অধিকার নেই।’ (ইবনে মাজাহ: ১৮৭৪, দারা কুতনি: ৩৫৫৫)
তবে হ্যাঁ কুমারী মেয়ে মন থেকে রাজি না থাকার পরও সম্মতি দিলে বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যায়। (রদ্দুল মুহতার: ৪/৮৭ বাদায়ে: ২/৬০২)
কেননা হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ثَلاثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ : النِّكَاحُ ، وَالطَّلاقُ ، وَالرَّجْعَةُ ‘তিনটি বিষয় এমন রয়েছে যা গোস্বায় হোক বা হাসি ঠাট্টায় হোক সর্বাবস্থায় কার্যকর হয়ে থাকে। বিবাহ, তালাক ও রজয়াত।’ (আবু দাউদ: ২১৯৪ তিরমিজি: ১১৮৪)
আবার মেয়ের বিয়ের ক্ষেত্রে জরুরি একটি বিষয় হলো অভিভাবকের অনুমতি। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিবাহ করবে তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল।’ (তিরমিজি: ১০২১, হাদিসটি সহিহ)
অতএব কুমারী মেয়ের অবগতি ও সম্মতি ছাড়া অভিভাবক কেবল নিজের পছন্দমতো কোথাও বিয়ে দিতে পারবে না। একইভাবে কোনো অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করলেও সহিহ হবে না। কেননা মেয়ের বিয়ের দায়িত্ব আল্লাহ তাআলা অভিভাবককে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যে অবিবাহিত নারী-পুরুষদের বিয়ে দাও।’ (সুরা নুর:৩২)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর নারী-পুরুষ সবাইকে বিয়েসহ প্রত্যেক বিষয়ে নবীজির সুন্নত অনুসরণের তাওফিক দান করুন। আমিন।
সূএ : ঢাকা মেইল ডটকম
Posted ০৭:১৫ | সোমবার, ২২ মে ২০২৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain