| বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
ঢাকা : আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে আকস্মিক কাশিমপুর কারাগার থেকে নম্বরবিহীন গাড়িতে করে তেজগাঁও থানায় রিমান্ডে আনার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক ও আইনজীবী নেতারা। মাহমুদুর রহমান কোনো প্রকার ক্ষতির সম্মুখীন হলে এর পুরো দায়ভার শেখ হাসিনা সরকারকে নিতে হবে বলে তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, বাংলাদেশের বিবদমান পরিস্থিতিতে বিশ্ব সম্প্রদায় আজ উদ্বিগ্ন। মাত্র একদিন আগে মার্কিন রাষ্ট্রদূত তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আমার দেশ পত্রিকা খুলে দেয়ার আহ্বান জানান। সাংবাদিকদেরকে বেআইনীভাবে রিমান্ডে নেয়ার বিষয়ে প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ কামনা করে ওইদিনই সাংবাদিক ও পেশাজীবী নেতারা প্রধান বিচারপতির কাছে একটি স্মারকলিপিও দেন। তার একদিন পরেই সরকার হঠাৎ করে একটি পত্রিকার সম্পাদককে রিমান্ডের নামে আবারও নির্যাতনের অসৎ উদ্দেশ্যে কাশিমপুর কারাগার থেকে একটি নম্বরবিহীন মাইক্রোবাসে করে তেজগাঁও থানায় নিয়ে আসে। আমরা এ ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কেননা সরকার এখন গোটা দেশকে গুমের রাজ্যে পরিণত করেছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবে ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য তুলে ধরেন আমার দেশ-এর নির্বাহী সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ। এরপর বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব শওকত মাহমুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, মাহমুদুর রহমান ও আমার দেশ-এর আইনজীবী ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ও অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার। এ সময় ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম- মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ইঞ্জিনিয়ারদের নেতা রিয়াজুল ইসলাম রিজু, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক এমএ নোমান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ, এমএ নোমান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন আমার দেশ ইউনিটের সভাপতি বাছির জামাল প্রমুখ ।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, “আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সময়ের সাহসী সন্তান। সরকারের অন্যায়, অগণতান্ত্রিক আচরণ, সীমাহীন লুটপাটের তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রকাশ করে আমার দেশ। এর পর থেকেই সরকার মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে একের পর এক মামলা দিতে থাকে। এরই এক পর্যায়ে ‘সততায় পারবেন না প্রধানমন্ত্রী’ শিরোনামে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে মাহমুদুর রহমান একটি নিবন্ধ লিখেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন মাহমুদুর রহমানের ওপর। একজন প্রথিতযশা সম্পাদককে রিমান্ডে নিয়ে বর্বর নির্যাতনের নজীর বিশ্বে আর দ্বিতীয়টি নেই। তিনি বলেন, মাত্র একদিন আগে ঢাকায় নিযুক্ত আমেরিকান রাষ্ট্রদূত মি. মজীনা তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করে আমার দেশ পত্রিকা খুলে দেয়া ও মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি দেয়ার আহবান জানান। আমরা সাংবাদিক ও পেশাজীবী নেতারা প্রধান বিচারপতির কাছে একটি স্মারকলিপি দিই।”
তিনি বলেন, “কোনো অভিযোগ ছাড়াই সাংবাদিকদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের বিষয়ে আমরা প্রধান বিচারপতি হস্তক্ষেপ কামনা করেছি। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো- একদিন পরেই হঠাৎ করে মাহমুদুর রহমানকে এই অবরোধের মধ্য দিয়েই কাশিমপুর কারাগার থেকে তেজগাঁও থানায় এনে রাখা হয়। আমরা জানতে পেরেছি যে, তাকে একটি নম্বরবিহীন গাড়িতে করে ঢাকায় আনা হয়। আমরা মাহমুদুর রহমানের জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন। এরআগেও রিমান্ডে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে তার ওপর বর্বর নির্যাতন চালানো হয়েছে।”
শওকত মাহমুদ বলেন, “এ সরকারের হাতে সাংবাদিক, পেশাজীবী, আইনজীবী নির্বিশেষে দেশের কোনো মানুষই নিরাপদ নয়। কোনো কারণ ছাড়াই সাংবাদিকদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। সরকারের জুলুমের বিরুদ্ধে গোটা দেশ আর অগ্নিগর্ভ। এ সরকারের বিদায়ই হচ্ছে দেশের মানুষের মুক্তির একমাত্র পথ।” তিনি বলেন, “মাহমুদুর রহমানের ওপর কোনো নির্যাতন হলে সাংবাদিক পেশাজীবীরা ঘরে বসে থাকবে না।”
অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, “সত্য প্রকাশের কারণেই মাহমুদুর রহমানের ওপর সরকার অন্যায়ভাবে জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। পুরনো মামলায় সিএমএম আদালত সরকারের তল্পিবাহকের ভূমিকায় থেকে কয়েক মাস আগে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে রিমান্ড মঞ্জুর করে রেখেছেন। এটি আইনের সম্পূর্ণ লংঘন। আমি মাহমুদুর রহমানের নিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে বলতে চাই, তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে- অথচ আমাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে কিছুই জানানো হয়নি। আইন অনুযায়ী সরকার আমাদেরকে এ বিষয়ে জানানোর কথা।”
এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, “ছয় মাস আগে তেজগাঁও থানার একটি মিথ্যা মামলায় সিএমএম আদালত মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে রিমান্ডের আদেশ দেয়। ৬ মাস পরে এসে এ রিমান্ড তামিল করার কোনো আইনগত যুক্তি নেই। রিমান্ডের আদেশ এক সপ্তাহ পর এমনিতেই অকার্যকর হয়ে যায়। অথচ বেআইনীভাবে মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।”
Posted ১৭:০৪ | বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin