| রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০১৪ | প্রিন্ট
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দাবি, ‘এবারই প্রথম একটি নির্বাচিত সরকার আরেকটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। এর মাধ্যমে আমরা গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পেরেছি। ভবিষ্যতেও এটা অব্যাহত রাখব।’ রবিবার বিকেলে গণভবনে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৩৬ জন প্রার্থী বাছাই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য আটশ’র বেশি আবেদন পেয়ে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বললেন, দেশে নারী জাগরণ ঘটে গেছে। গত ১৫ থেকে ১৭ জানুয়ারি সংরক্ষিত আসনের মহিলা প্রার্থী মনোনয়নে ২৫ হাজার টাকায় আবেদন ফরম বিতরণ করে আওয়ামী লীগ। এতে যে ৮২২ জন আবেদনপত্র কিনেছেন, তাদের গতকাল সাক্ষাত্কারের জন্য ডাকা হয় গণভবনে।
বিকাল ৪টা ৭ মিনিটে গণভবনের দক্ষিণ দিকের লনে অনুষ্ঠানস্থলে এসে ভিড় দেখেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে ওঠেন, ‘ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোট সে তরী/ আমারই সোনার ধানে গিয়াছে ভরি।’
এরপর সহাস্যে বলেন, ‘এটা আবৃতি করে অনুষ্ঠান শুরু করা ছাড়া উপায় ছিল না। কারণ আমাদের ভাগে ৩৬টি সিট। আবেদন পেয়েছি ৮২২টি। আমি খুব আনন্দিত। এত উত্সাহ-উদ্দীপনা এটাই বড় কথা। নারী জাগরণ বলতে যা বোঝায় এখানে তা-ই ঘটে গেছে। গণভবনের মাঠ সত্যিই ধন্য হয়ে গেছে। সবাইকে খুশি করতে পারব না। এই যে নারী জাগরণ এতে আমি আনন্দিত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন তিনি প্রথম দফায় সরকার গঠন করেছিলেন, তখন দায়িত্বশীল পদে নারীর অবস্থান ছিল না বললেই চলে। প্রথম ডিসি, এসপি, সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, সহকারী জজ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাম্বাসেডর, ওসি, ইউএনও—প্রতিটি জায়গায় যেন মহিলারা পদ করে নিতে পারে তা আমরা করে দিয়েছিলাম। মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করেছিলাম।
গত সংসদে দেশের প্রথম নারী স্পিকারের দায়িত্ব নেয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একে একে সব জায়গায় যেন আমাদের বোনদের স্থান থাকে, সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বাংলাদেশ ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে— স্পিকার, বিরোধী দলের নেতা, সংসদ উপনেতা সবাই মহিলা। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্তদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করেছি।
যে নারীরা বাধা অতিক্রম করে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে গত ৫ জানুয়ারি ভোট দিয়েছেন, তাদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পেরেছি। এই প্রথমবারের মতো একটি নির্বাচিত সরকার আরেকটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। ভবিষ্যতেও এটা অব্যাহত রাখব।
সংরক্ষিত আসনে মহিলা সংসদ সদস্য নির্বাচনে মাত্র ৩৬ জনকে বেছে নিতে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতি একদিনে শেষ হয়ে যায় না। সবাইকে যার যার এলাকায় গিয়ে কাজ করতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন শুধু মুখে বললে হবে না, এটা অর্জন করে নিতে হবে। আলাদাভাবে না ডেকে সবাইকে একসঙ্গে ডাকা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণত একজন একজন করে ইন্টারভিউ নেয়ার নিয়ম। কিন্তু প্রার্থী ৮২২ জন। এক মিনিট করে সাক্ষাত্কার নিলেও… তাই গার্ডেন পার্টি দিলাম। পরে প্রধানমন্ত্রী আলাদা আলাদাভাবে জেলার নাম ঘোষণা করলে প্রার্থীরা উঠে দাঁড়ান। নিজের জেলা গোপালগঞ্জের নাম উচ্চারণ করেই হাসতে হাসতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গোপালিরা হয় কপালি, বাকিরা হয় গোলাপি।’
পরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জেলা বগুড়ার নাম এলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাহ! অনেকেই তো এসেছেন।’ সবশেষে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাইকে নমিনেশন দিতে পারব না। তবে শীতের পিঠা খাওয়াতে পারব।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, সবাই যোগ্য ও অভিজ্ঞ। সবাই পার্লামেন্টের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। তবে প্রার্থী অনেক, তাই সবাই সুযোগ পাবেন না। হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। উপজেলা নির্বাচন সামনে আছে। এছাড়া পৌরসভা, সিটি করপোরেশনে আপনারা সুযোগ পাবেন। তিনি আশ্বাস দেন, আবেগের বশবর্তী না হয়ে বা ব্যক্তিগত পছন্দকে গুরুত্ব না দিয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতেই প্রার্থী নির্বাচন করা হবে। যাদের মনোনয়ন দেয়া হবে তারা সবাই নির্বাচনে জয়লাভ করবেন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘নেত্রী সমস্ত প্রগতিশীল চিন্তায় খুবই অগ্রসর।… বাড়িতেও তো বউ আছে, কিছু বলে যাই। সিট তো ৫০ করেছেন, আরো কিছু বাড়ান।’
দলের নেতাদের মধ্যে সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, কাজী জাফরউল্লাহ, গওহর বিজভী, এইচ টি ইমাম, দীপু মনি, নূহ-উল আলম লেলিন ও আবদুস সোবহান গোলাপ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
Posted ১৬:২৪ | রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin