বুধবার ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যাংকের ‘ছয়-নয়’ খেলায় বিপাকে ব্যবসায়ীরা

  |   বৃহস্পতিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | প্রিন্ট

ব্যাংকের ‘ছয়-নয়’ খেলায় বিপাকে ব্যবসায়ীরা

ডেস্ক রিপোর্ট : ব্যাংকের আমানতে ছয় ও ঋণে হবে ৯ শতাংশ সুদহার। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এ ঘোষণা দেন ব্যাংকের পরিচালক ও ব্যবস্থাপকরা। জুলাই থেকে এটি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। কিন্তু দুই মাস পার হলেও এর সুফল পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। ছয়-নয়ের খেলায় স্বল্প সুদে ঋণ তো পাচ্ছেই না, উল্টো ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছরের জুলাই থেকে সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ দেয়ায় ঘোষণা দিয়েছিল ব্যাংক উদ্যোক্তা পরিচালকদের সংগঠন ‘বিএবি’। কিন্তু ব্যাংকগুলোর মেয়াদি আমানত বেশি সুদে নেয়ায় ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করেনি। আবার অনেক ব্যাংক লোকসান এড়াতে নতুন করে ঋণও দিচ্ছে না। ফলে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর নির্দেশ, ব্যাংক পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) প্রতিশ্রুতি ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে, বাস্তবায়ন চোখে পড়ছে না।

তাই সুদহার নির্ধারণের বিষয় ব্যাংকগুলোর চাপিয়ে দেয়া ঠিক হয়নি। এটি বাজার ব্যবস্থার উপর ছেড়ে দেয়া উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী ও বিকেএমইএর দ্বিতীয় সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, সুদ কমানোর নামে ব্যাংকগুলো এখন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছয়-নয় খেলা করছে। সুদ তো কমনি উল্টো ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে নানা টালবাহানা করছে। ব্যাংকগুলো সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে একটি ব্যাংক আমাকে নোটিস দিয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে কোনো ঋণের কিস্তি তিন বছরে একটিও যদি নির্ধারিত সময়ের পরে পরিশাধ হয় তাহলে সে এ সুবিধা পাবে না। এমন শর্ত দিয়েছে যা পূরণ করে কেউ এ সুবিধা নিতে পারবে না। তারা সুদ না কমিয়ে বিভিন্ন গোপন চার্জ আদায় করছে। এটি আসলে ব্যাংকগুলোর লোভ দেখানোর কৌশল। এতে ব্যবসায়ীরা উপকারের বিপরীতে সময় মতো ঋণ না পেয়ে হয়রানির শিকার বেশি হচ্ছে।

এদিকে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুরের মতে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিনিয়োগ চাঙ্গা রাখতে অবশ্যই ১০ শতাংশের নিচে ঋণের সুদহার থাকা ভালো। তবে কোনো সংস্থা এ সুদহার নির্ধারণ করে দিতে পারে না। আর এটি দেয়া ঠিকও না। ব্যাংকের সুদহার কত হবে তা বাজার ব্যবস্থা নির্ধারণ করবে। এটি চাপিয়ে দেয়ার বিষয় না। কারণ এটি চাপিয়ে দিলে ব্যাংকিং খাতের সুফল আনবে না বরং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে।

এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) নতুন চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ দেয়া শুরু হয়নি এ কথা ঠিক নয়। আমি আমার ব্যাংকে (ঢাকা ব্যাংক) শুরু করেছি। হয় তো শতভাগ বাস্তবায়ন হয়নি। তবে ৩০ শতাংশ ঋণে এ সুবিধা দেয়া হয়েছে। এখানে অনেকেই ৯ থেকে সাড়ে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পেয়েছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে ব্যাংক পরিচালক ও ব্যবস্থাপকরা একমত হয়ে সবাই আমানতে ছয় ও ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার ঘোষণা দেয়। আমাদের সিদ্ধান্তে বলা হয়েছিল ৯ শতাংশে ওইসব গ্রাহকে ঋণ দেব যারা ভালো গ্রাহক ও খেলাপি নয়। খারাপদের কেন এ সুবিধা দেবো? আমরাতো একজন খারাপ গ্রাহককে এ সুবিধা দিতে পারি না। তাই ব্যাংক তার কোন গ্রাহককে ঋণ দেবে তা স্ব স্ব ব্যাংকই নির্ধারণ করবে। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর পর্ষদ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

যারা এখনো নতুন সুদহার বাস্তবায়ন করেনি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু এবিবি কোনো রেগুলেটরি সংস্থা নয়, তাই কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না। এবিবির পক্ষ থেকে ব্যাংকের নির্বাহীদের পরামর্শ দিতে পারে বলে জানান তিনি।

এদিকে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ বিতরণে অনীহা এবং তারল্য সংকটের কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই শেষে বেসরকারি খাতে বিতরণ করা ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ এক হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। আগের মাস জুন শেষে মোট ঋণ ছিল ৯ লাখ সাত হাজার ৫৩১ কোটি টাকা। সেই হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর বেসরকারি খাতে ঋণ কমেছে ছয় হাজার ৬৬ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকগুলো কোন রেটে ঋণ দেবে বা আমনত সংগ্রহ করবে তা তাদের নিজস্ব বিষয়। তবে যেহেতু ব্যাংকগুলো নিজের ইচ্ছায় সিঙ্গেল ডিজিটে সুদহার নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে তাই এটি বাস্তবায়ন করা তাদের নৈতিক দায়িত্ব।

তিনি আরও বলেন, সুদহার নিয়ে ব্যাংকগুলোর স্বচ্ছতা থাকা দরকার। সৎ ইচ্ছা থাকলে কম সুদেই ঋণ দেয়া সম্ভব। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। সুদহার নিয়ে কোনো ব্যবসায়ী যদি হয়রানির শিকার হয়, এ ধরনের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই শেষে ঋণের সুদহার ১০ শতাংশ উপরে নিচ্ছে ৩২টি ব্যাংক। আর ছয় শতাংশের উপরে আমানত সংগ্রহ করছে ২৭টি ব্যাংক। যদিও পহেলা জুলাই থেকে ৯-৬ বাস্তবায়নে ঘোষণা দিয়েছিল ব্যাংকগুলো। সূত্র : জাগো নিউজ

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৪:১১ | বৃহস্পতিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com