সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৃটেনের কার্ডিফে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী ‘মুজিব বর্ষ’ পালন 

  |   মঙ্গলবার, ০২ আগস্ট ২০২২ | প্রিন্ট

বৃটেনের কার্ডিফে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী ‘মুজিব বর্ষ’ পালন 

লিমন ইসলাম : বৃটেনের ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফ শহরের কার্ডিফ সিটি হলের কাউন্সিল চেম্বারে কার্ডিফের মেম্বার অব সেনেট জুলি মর্গান এবং ল্যান্ডফ নর্থ এর কাউন্সিলার দিলওয়ার আলীর যৌথ উদ্যোগে গত বৃহস্পতিবার ২৮শে জুলাই ২০২২ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২ বছর জন্ম বার্ষিকী তথা মুজিব বর্ষ উদযাপনের মাধ্যমে আরেক নব ইতিহাস সৃষ্টি করেছে ওয়েলস বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন ইউকে। নব প্রজন্মের বাঙালির সন্তান মাসুদাহ আলীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্গেনাইজিং সেক্রেটারী এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ডাইরেক্টর সাবেক ছাত্রনেতা শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।

বিশেষ অতিথি হিসেবে কার্ডিফের লর্ড মেয়র রাইট অনারেবল কাউন্সিলার গ্রাহাম হিনচি এবং লেডি মেয়রেস অ্যান হিনচি, এইচ এম লর্ড লেফটান্যান্ট সাউথ অব গ্লামরগান এম এস মরফর্ড মেরেডিথ, বৃটেনের বাংলাদেশের হাই কমিশনার হ্যার এক্সেলেন্সি সাঈদা মুনা তাসনিম এর পক্ষ থেকে হাইকমিশনের প্রেস মিনিষ্টার জনাব আসেকুন নবী চৌধুরী, কনস্যুলার এসোসিয়েশন (অনারারী রয়েল থাই কনসাল) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট থিও কলিয়ানড্রিস, প্রফেসার মিনা উপাধায়াইয়া (অবিই), প্রফেসর উজো লওবি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ওয়েলস ইন্টারন্যাশনাল অফিস থেকে জো পালে, , কার্ডিফ এন্ড ভেল কলেজ থেকে নিক এইষ্টন সহ অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে কাউন্সিল লিডার কাউন্সিল হো থমাস সহ ক্রস পার্টির কয়েকজন সেনেড মেম্বার ও কাউন্সিলার আসতে না পারায় দু:খ প্রকাশ করে বার্তা পাঠিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বৃটেনের কার্ডিফ ইন্টারন্যাশনাল ম্যাদার ল্যাংগুয়েজ মনুমেন্ট ফাউন্ডার্স ট্রাষ্ট তথা শহীদ মিনার কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আনোয়ার আলী, নিউপোট আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ মোহাম্মদ তাহির উল্লাহ, বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক দেওয়ান ফয়সল, সাবেক কাউন্সিলার সাইফুর রহমান, সোয়ানসী আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি আব্দুর রহমান মনা, কার্ডিফ বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান, গ্রেটার সিলেট কাউন্সিল ইন ইউকের সাউথ ওয়েলসের সাবেক সেক্রেটারি শেখ মোহাম্মদ আনোয়ার, বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী আলহাজ্ব আসাদ মিয়া, নিউপোট যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ শাফি কাদির, সিনিয়র সহ সভাপতি শেখ আব্দুর রুউফ তালুকদার, সোয়ানসী যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ ও সাধারন সম্পাদক ফেরদৌস রহমান সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

উল্লেখ্য যে, অনুষ্ঠানে কার্ডিফ ছাড়া ও ওয়েলসের সোয়ানসী, পোর্ট টালবট, নিউপোর্ট, ও বৃষ্টল থেকে প্রচুর লোকের সমাগম হয়। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে সভার কাজ শুরু হয়। এরপর ব্ড় পর্দায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো তুলে ধরা হলে অতিথিরা মনোযোগ সহকারে তা দেখেন। এরপর পর্দায় দেখানো হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানার লেখা একটি কবিতা (বাংলা এবং ইংরেজীতে লেখা) পাঠ করেন শেখ রেহানার বড় বোন বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ম্যাদার অব ইউমিনিটি দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল সহ সকল বক্তারা সংক্ষেপে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে। তারা বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে পাকিস্তান নামক একটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। যদিও আমরা ছিলাম এক্ই দেশের নাগরিক কিন্তু আমাদের ভাষা ছিলো দুটি, একটি ছিলো বাংলা অপরটি ছিলো উর্দূ। পশ্চিম পাকিস্তার্নে শাসকরা চেয়েছিলো তাদের ভাষা উর্দুকে দেশের রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে চালু করতে। তারা যখন ঘোষণা করলো উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র ভাষা। পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) জনগণ সেটা মেনে নেয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার প্রতিবাদ করে বলেন, না আমরা তা মেনে নিতে পারি না।

আমাদের ভাষা বাংলা -বাংলাই থাকবে। পাকিস্তানী শাসকরা জোর করে আমাদের উপর উর্দু ভাষাকেই চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলো। তারপর শুরু হয় মাতৃভাষার আন্দোলন। ১৯৫২ সালে রফিক, জব্বার, বরকত সহ অজানা ছাত্র জনতা পুলিশের নিহত এবং অত্যাচারিত হয়। সেই সময় থেকেই পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার চিন্তা ভাবনা শুরু হয়। এরপর দেখা যায়, আমাদের দেশের আয়ের টাকা আমাদেরকে না দিয়ে তাদের দেশের রাস্তা ঘাট, অফিস আদালত গড়ে তুলছে অথচ আমাদের পূর্ব পাকিস্তানকে গরীব দেশ বানিয়ে রেখেছে। এছাড়া দেশের বড় বড় উচ্চ পদে চাকুরীতে তাদেরই লোক, আমাদের কোন সুযোগ দেয়া হয় না। এই অবস্থা দেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিটি শহরে বন্দরে গ্রামে গঞ্জে গিয়ে সভা করে আওয়ামী লীগের পক্ষে জনমত গড়ে তুলেন। এর পর থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন পাকিস্তানী শাসকদের চক্ষুশূল।

তারা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সহ বিভিন্ন ধরণের মিথ্যা মামলা দিয়ে চেয়েছিলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘায়েল করতে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হার না মেনে বরং সিংহের মতো গর্জে উঠলেন। অনেক জেল জুলুম অত্যাচার সহ্য করে শেষ পর্য্যন্ত ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ লক্ষ জনতার উপস্থিতিতে এক জনসভায় ভাষণ দানকালে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দেন ”তোমাদের যার যা আছে, তা ই নিয়ে প্রস্তুত থাক, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ।” এ ঘোষণা দেয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধুকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয় পাকিস্তানে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া পর্য্যন্ত তারা তাঁকে আটকে রাখে কারাগারে। বঙ্গবন্ধুর এই ডাকে বাংলাদেশের মানুষ দলমত নির্বিশেষে পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারত এবং বাংলাদেশের যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। সে দিন থেকেই আমরা পেলাম একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র ”বাংলাদেশ” দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ফিরে আসলেন বাংলাদেশে। সেই সময় থেকে বঙ্গবন্ধু নামটি সারা বিশ্বের কাছে মর্য্যাদার সাথে পরিচিতি লাভ করে।

ব্ক্তারা বলেন, আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্ম বার্ষিকীতে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং সেই সাথে দোয়া করি আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসে মেহমানের মর্য্যাদায় স্থান দেন।

অনুষ্ঠান শেষে কেক কাটেন আয়োজকের পক্ষ থেকে জুলি মর্গান এম এস। এরপর উপস্থিত সবাইকে কেক বিতরণ করা হয়। এদিকে বৃটেনের কার্ডিফ ইন্টারন্যাশনাল ম্যাদার ল্যাংগুয়েজ মনুমেন্ট ফাউন্ডার্স ট্রাষ্ট তথা শহীদ মিনার কমিটির সেক্রেটারি ও হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন ইন ইউকের সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক মোহাম্মদ মকিস মনসুর, অসুস্থতার কারণে অনুষ্ঠানে উপস্তিত থাকতে না পারায় মূল আয়োজকদের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে দূঃখ প্রকাশ করে উনার দ্রুত সুস্থতা কামনা সহ বাংলাদেশ থেকে আগত গুরুত্বপূর্ণ প্যাকেট ও কেক মকিস মনসুর এর বাসভবনে পৌঁছে দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য যে, এই জন্মবার্ষিকী ২০২০ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এরপর বিভিন্ন কারণে গত বছরও সম্ভব হয়ে ওঠেনি, তাই এ বছর করা হলো। উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার কাজ শেষ হয়।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৮:২৫ | মঙ্গলবার, ০২ আগস্ট ২০২২

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com