শনিবার ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিয়ের অনুষ্ঠানের ৯ সুন্নত

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪ | প্রিন্ট

বিয়ের অনুষ্ঠানের ৯ সুন্নত

ধর্ম ডেস্ক : বিয়ে চরিত্র রক্ষার হাতিয়ার। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে অসংখ্য ফেতনা, ক্ষয়-ক্ষতি, নানা অসুখ-বিসুখ ও সমস্যা থেকেও মুক্তি দান করেন বিয়ের কারণে। তাই সক্ষমতা থাকলে দ্রুত বিয়ে করা আবশ্যক।

 

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ ‘হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিবাহ করে নেয়। কারণ, বিবাহ চক্ষুকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। আর যে ব্যক্তি তাতে অক্ষম, সে যেন রোজা রাখে, কেনা তা যৌন শক্তিকে হ্রাস করে।’ (বুখারি: ৫০৬৬; মুসলিম: ১৪০০, মেশকাত: ৩০৮০)

 

মুসলিম পরিবারে বিয়ে হবে ইসলামি শরিয়তের রীতিনীতি মেনে। অন্যথায় দাম্পত্য জীবনে আল্লাহর রহমত ও বরকতের আশা করা অর্থহীন। বিয়েতে পালনীয় ৯ সুন্নত এখানে তুলে ধরা হলো। যেগুলো পালন করলে বিয়ে হবে শরিয়ত মোতাবেক এবং এতে মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জন হবে ইনশাআল্লাহ।

 

১. সৎ ও খােদাভীরু পাত্র-পাত্রী নির্বাচন করা
পাত্র-পাত্রীর দ্বীনদারি ও চরিত্র যাচাই করে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া। যদি তাতে কোনো ত্রুটি না থাকে, তাহলে বিয়ে দিয়ে দিতে আর কোনোকিছু দেখার প্রয়োজন নেই। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের কাছে যদি এমন পাত্র বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে- যার দ্বীনদারি ও চরিত্র তোমাদের কাছে পছন্দনীয়; তবে তার সঙ্গে তোমাদের কন্যাদের বিয়ে দিয়ে দাও। তা না করলে পৃথিবীতে ফিতনা-ফ্যাসাদ ও বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়বে। সাহাবিগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, কিছু (ত্রুটি) তার মাঝে থাকলেও কি? তিনি বলেন, ‘তোমাদের কাছে যে লোকের ধর্মভীরুতা ও নৈতিক চরিত্র পছন্দ হয় সে লোক তোমাদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব করলে তবে তার সঙ্গে বিয়ে দাও।’ (বর্ণনাকারী বলেন) এ কথা তিনি তিনবার বলেন। (তিরমিজি: ১০৮৫)

 

২. পাত্র-পাত্র পরস্পরকে দেখে নেওয়া
পাত্র-পাত্র পরস্পরকে সম্ভব হলে দেখে নেয়া মোস্তাহাব। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটা করে পাত্রী দেখানাের যে প্রথা আমাদের সমাজে প্রচলিত, তা সুন্নাতের পরিপন্থী ও পরিত্যাজ্য। পাত্রী দেখার সময় পাত্রের পক্ষের কোনো পুরুষ, যেমন—বাপ-ভাই, বন্ধুবান্ধব প্রমুখ কেউ থাকতে পারবে না। তাদের পাত্রী দেখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও কবিরা গুনাহ। দুই) পাত্র-পাত্রী একে অন্যের সঙ্গে কথা বলতে পারবে। কিন্তু একে অন্যকে স্পর্শ করতে পারবে না। তিন) পাত্রীর শুধু কবজি পর্যন্ত হাত, টাখনু পর্যন্ত পা ও মুখমণ্ডল দেখা পাত্রের জন্য বৈধ। এছাড়া শরীরের অন্য কোনো অঙ্গ আবরণ ছাড়া দেখতে পারবে না। চার) নির্জনে পাত্র-পাত্রীর একত্র হওয়া বৈধ নয়। পাত্রের প্রকৃত পিতার জন্যও বিয়ের আগে তার হবু পুত্রবধূকে দেখা বৈধ নয়। (সুরা নিসা: ২৩, তাফসিরে মাজহারি: ২/২৫৪)

 

৩. প্রস্তাব, মোহরানা ইত্যাদি সহজ হওয়া
বিয়ের প্রস্তাব, মোহরানা ইত্যাদি সহজ হওয়া বরকতের আলামত। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন: ‘কনের বরকতের আলামত হচ্ছে- বিয়ের প্রস্তাবনা সহজ হওয়া, মোহরানা সহজসাধ্য হওয়া এবং গর্ভধারণ সহজ হওয়া।’ (সহিহুল জামে: ২২৩৫)

 

আরেক হাদিস ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, ‘সাবধান, তোমরা নারীদের মোহরানা নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না। যদি মোহরানা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা দুনিয়াতে সম্মানের বিষয় হত কিংবা আল্লাহর কাছে তাকওয়া হত তাহলে তোমাদের নবী তা করতেন। (সুনানে তিরমিজি, ১১৪)

 

৪. অনাড়ম্বর বিয়ে
বিয়ে হবে অনাড়ম্বর। অযথা খরচ, অপব্যয় থাকবে না। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘সর্বাধিক বরকতপূর্ণ বিয়ে হচ্ছে, যার খরচ যত সহজ ও স্বাভাবিক হয়।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৪৫২৯) এছাড়া অপব্যয় ও অপচয় নিন্দনীয় কাজ। পবিত্র কোরআনে অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমাদের অর্থ-সম্পদ অপ্রয়োজনীয় কাজে খরচ করবে না। জেনে রেখো, যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই।’ (বনি ইসরাঈল: ২৬-২৭)

 

৫. বিজাতীয় সংস্কৃতি পরিহার
মুসলিম সমাজে ইদানীং অধিকাংশ বিয়ে হয় সুন্নাহর নির্দেশনা না মেনে। অধিকন্তু বেপর্দা, বিজাতীয় সংস্কৃতি, গানবাদ্য, ভিডিও-অডিও, রং মাখামাখি ইত্যাদি বিজাতীয় রসম ঢুকে পড়েছে মুসলিম সমাজে। এ থেকে বিরত থাকা জরুরি। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৪০৩১)

 

৬. প্রচার করে বিয়ে করা
ব্যাপকভাবে প্রচার করে বিয়ে করা এবং বিয়ের পরে আকদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত লােকদের মাঝে খেজুর বন্টন করা। (সহিহ বুখারি: ৫১৪৭)

 

৭. সম্ভব হলে জুমার দিন ও শাওয়াল মাসে বিয়ে করা
সম্ভব হলে শাওয়াল মাসে এবং জুমার দিন বিয়ে সম্পাদন করা। তবে, সকল মাসের যেকোনো দিন বিয়ে করা জায়েজ আছে। (মুসলিম: ১৪২৩; বায়হাকি: ১৪৬৯৯)

 

৮. বর-কনেকে অভিনন্দন জানানো ও তাদের জন্য দোয়া করা
রাসুলুল্লাহ (স.)-এর শেখানো অভিনন্দনের মাধ্যমে বর-কনে পরস্পরকে অভিনন্দন জানানো। আবু হুরায়রা (রা.) করেছেন, যখন কেউ বিয়ে করত তখন নবীজি (স.) শুভেচ্ছা জানাতেন ও তাদের জন্য এই বলে দোয়া করতেন-بَارَكَ اللَّهُ لَكَ ، وَبَارَكَ عَلَيْكَ ، وَجَمَعَ بَيْنَكُمَا فِي خَيْرٍ
অর্থ: ‘আল্লাহ তোমাকে বরকত দিন, তোমার ওপর বরকত ঢেলে দিন এবং তোমাদের দুইজনকে কল্যাণের ওপর একত্রিত করুন।’ (আবু দাউদ ২১৩০)

 

৯. অলিমা করা
বাসর রাতের পরদিন বা পরবর্তী সময়ে ছেলের পক্ষে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও গরিব-মিসকিনদের সাধ্যমতো আপ্যায়ন করাকে অলিমা বলা হয়। তিন দিনের মধ্যে করা উত্তম। এক দিন অলিমা করা সুন্নত, দুই দিন অলিমা করা মুস্তাহাব, তিন দিন অলিমা করা জায়েজ। (মুসলিম: ১৪২৭) মহানবী (স.) জয়নব বিনতে জাহাশ (রা.)-কে বিয়ে করার পরদিন অলিমা অনুষ্ঠান করেছিলেন। (বুখারি: ৫১৭০)। আর তিনি সাফিয়াহ (রা.)-কে বিয়ের পর তিন দিন পর্যন্ত অলিমা খাইয়েছিলেন। (মুসনাদে আবু ইয়ালা: ৩৮৩৪)

 

ওয়ালিমায় অতিরিক্ত ব্যয় করা জরুরী নয়। বরং সামর্থ্যানুযায়ী খরচ করাই সুন্নত আদায়ের জন্য যথেষ্ট। যে ওয়ালিমা শুধু ধনী ও দুনিয়াদার লোকদের দাওয়াত করা হয়,দ্বীনদার ও গরীব-মিসকিনদের দাওয়াত করা হয় না, সে ওয়ালিমাকে হাদীসে নিকৃষ্টতম ওয়ালিমা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং এ ধরনের নিকৃষ্ট ওয়ালিমার আয়োজন থেকে বিরত থাকা উচিত। (আবু দাউদ: ৩৭৫৪)

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৯:৩৮ | রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com