| শনিবার, ০৭ জুন ২০১৪ | প্রিন্ট
স্টাফ রিপোর্টার : বিনা বিচারে দীর্ঘদিন ধরে কারারুদ্ধ দৈনিক আমার দেশ এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে সরকার তিলে তিলে নির্যাতন করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ও আমার দেশ পরিবার। এমতাবস্থায় মাহমুদুর রহমান, দৈনিক আমার দেশ ও এর ৫ শতাধিক সাংবাদিক-কর্মচারীর পরিবারকে বাচাঁতে সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীসহ বিশ¡ সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা। একই সঙ্গে বিনা বিচারে একজন সম্পাদককে হত্যার ষড়যন্ত্র ও পত্রিকা বন্ধের প্রতিবাদে এখনই সোচ্চার না হলে ভবিষ্যতে গণমাধ্যমকে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক বাণী উচ্চারণ করে বক্তারা অবিল¤ে¦ আমার দেশ চালু ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবি জানান।
গতকাল শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স রুমে মাহমুদুর রহমানের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তার আইনজীবী ও আমার দেশ পরিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাড. খন্দকার মাহবুব হোসেন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী, ঢাকা সংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি ও আমার দেশ এর সিনিয়র সহকারী সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকাদার, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব এম এ আজিজ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও আমার দেশ এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও এ্যাড. তাজুল ইসলাম, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, বিএফইউজের সহ-সভাপতি নুরুল আমিন রোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কারারুদ্ধ আমার দেশ সম্পাদককে বাঁচাতে বিশ¡ বিবেককে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, মাহমুদর রহমানকে পৃথিবী থেকে বিদায় করার পাঁয়তারা করছে সরকার। সরকারের এ ষড়যন্ত্র থেকে তাকে বাঁচাতে বিশ¡ সম্প্রদায়সহ মানবাধিকার সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কারাবন্দি মাহমুদুর রহমানকে সুচিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। আসলে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ¡াস করে না। তাই এ সরকারকে বিদায় করে মাহমুদুর রহমানকে বের করে নিয়ে আনতে হবে।
মাহমুদুর রহমানকে একজন নির্ভীক সাংবাদিক হিসেবে উল্লেখ করে খন্দকার মাহবুব বলেন, সত্য লেখার কারণে তিনি আদালতে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চান নি। এজন্য সরকার তার বিরুদ্ধে ৬৮টি মামলা দায়ের করেছে। আমার দেশ এর প্রেস সিলগালা করে রাখা হয়েছে। অবৈধ এ সরকারের কাছে এসব কিছুই স্বাভাবিক। এর বিরুদ্ধে বাদিকদেরকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা এখনও বাইরে থেকে তামাশা দেখছেন তাদের সবাইকে ভবিষ্যতে একই পরিণতি ভোগ করতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগ সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ¡াস করে না।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, মাহমুদুর রহমানের কারাবন্দির আজ এক বছর তিন মাস প–র্ণ হচ্ছে। মিথ্যা ও ভিত্তিহীন ৬৮টি মামলায় বিনা বিচারে, বিনা চিকিৎসায় তার মতো একজন সম্পাদক ও লেখকের এতো দীর্ঘ দিনের কারাবাসের ঘটনা অকল্পনীয়।
তিনি বলেন, বহুল আলোচিত স্কাইপ কেলেঙ্কারী প্রকাশ করে কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের যে কুৎসিত চেহারা তিনি জাতির সামনে উšে§াচন করেছেন তার বিনিময়ে পুরস্কার তো পাননি বরং পেয়েছেন অন্ধকার কারাবাস এবং প্রিয় পত্রিকা আমার দেশ এর প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়ার বিপদ। তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল আইসিটি আইনে দায়ের করা মামলার সুত্র ধরে পুলিশ আমার দেশ এর প্রেস সিলগালা করে দেয় যা আজ অবধি বন্ধ আছে। আমার কর্তৃপক্ষ বিকল্প প্রেসে পত্রিকা ছাপার আইনগত সকল অধিকার থাকা সত্বেও সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে পুলিশ সেখান থেকে আমার দেশ ছাপাতে বাধা দেয় এবং পত্রিকার কপিগুলো জব্দ করে নেয়। সেই থেকে জনসাধারণের প্রিয় এই পত্রিকাটি আজ অবধি বন্ধ রয়েছে। বিকল্প প্রেসে পত্রিকা ছাপর বিষয়ে হাইকোর্টের একটি রিট বিচারাধীন থাকলেও সরকার পক্ষের অব্যাহত অসহযোগিতা ও কুটকৌশলের কারণে তার শুনানী অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।
তাজুল ইসলাম বলেন, এদিকে দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ থাকায় এর ৫ শতাধিক সাংবাদিক-কর্মচারী কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে এবং আমার দেশ কর্তৃপক্ষ নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে পত্রিকার একজন সাংবাদিক পরিবার চালাতে না পেলে আÍহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। বাক স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অমৃতবাক্য সংবিধানে থাকলেও আমার দেশের ক্ষেত্রে তা যেন অর্থহীন এবং উপহাস মাত্র। পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের রায় বহাল থাকায় সরকার আমার দেশ বন্ধ করার সরাসরি কোনো আদেশ না দিয়ে ক–টকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে।
মাহমুদুর রহমানের এই আইনজীবী বলেন, কারাগারে মাহমুদুর রহমান মারাÍক অসুস্থ থাকা সত্বেও সব ধরণের চিকিৎসা সুবিধা থেকে তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তার ঘাড়, কোমর ও পিঠে অসহ্য ব্যাথা থাকায় তাকে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ফিজিও থ্যারাপী দেয়ার কথা থাকলেও তাকে আজ অবধি তা দেয়া হচ্ছে না। এ ব্যাপারে গত ১৬ এপ্রিল আদালতের একটি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কারা কর্তৃপক্ষ অসুস্থ মাহমুদুর রহমানকে কোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করেননি, বরং গত ১৯ এপ্রিল পিজি হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে হাসপাতালের পরিচালক এব একজন চিকিৎসক (ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর মাইনুজ্জামান) তার সাথে দূর্ব্যবহার করেন এবং তার রোগের জন্য কোনরুপ পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে তাকে কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়। এর পর আজ অবধি তার কোনো চিকিৎসা দেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
লিখিত বক্তব্যে তাজুল ইসলাম বলেন, সরকার এভাবে বিনা চিকিৎসায় তিলে তিলে নির্যাতন করে মাহমুদুর রহমানকে হত্যা করতে চায়। এজন্য তাকে বাঁচাতে দেশের জনগণ, মানবাধিকার সংগঠনসমূহ ও বিশ¡ সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান এবং অবিলম্বে মাহমুদুর রহমানকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে তার জীবন রক্ষার্থে মুক্তি প্রদান ও আমার দেশ পত্রিকার প্রেস খুলে দেওয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানান তিনি। মাহমুদুর রহমানের মুক্তির জন্য দেশের জনগণ, মানবাধিকার সংগঠনসহ বিশ¡ সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তার আইনজীবী।
মাহমুদুর রহমানকে তিলে তিলে ধংস করা হলে সাংবাদিক জগতের চরম ক্ষতি হবে উল্লেখ করে রুহুল আমিন গাজী বলেন, তল্পিবাহক মিডিয়া দিয়ে জাতির কোনো কল্যাণ আসবে না। তাই আসুন গণমাধ্যম বিরোধী কর্মকান্ডের প্রতিবাদে আমরা সোচ্চার ও ঐক্যবদ্ধ হই, প্রতিরোধ গড়ে তুলি।
দীর্ঘদিন ধরে আমার দেশ বন্ধ থাকায় পত্রিকাটির ৫ শতাধিক সাংবাদিক-কর্মচারির মানবেতর জীবন-যাপনের চিত্র তুলে ধরে কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, নিস্ব ও বেকার এসব পবিবার চরম অবহেলায় দিনাতিপাত করছে। এরই মধ্যে একজন আÍহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে। তিনি মাহমুদুর, আমার দেশ ও সাংবাদিক-কর্মচারীর জীবন বাঁচাতে অবিল¤ে¦ আমার দেশ খুলে দেয়ার আহ্বান জানান।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ২০১০ সালের ১জুন প্রথম দফায় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ৪৭ দিন বন্ধ থাকার পর আদালতের নির্দেশে আমার দেশ পুন:প্রকাশিত হলেও প্রায় ১০ মাস কারাভোগ শেষে মুক্তি পান মাহমুদুর রহমান। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল আমার দেশ কার্যালয় থেকে দ্বিতীয় দফায় ফিল্মি স্টাইলে মজলুম এই সম্পাদককে গ্রেফতার ও আমার দেশ এর ছাপাখানা বন্ধ করে দেয়ায় দ্বিতীয় বারের মতো বন্ধ হয়ে যায় জনপ্রিয় এই পত্রিকাটি।
Posted ১২:০৬ | শনিবার, ০৭ জুন ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin