| বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা : অবিলম্বে আমার দেশ, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, চ্যানেল ওয়ানসহ বন্ধ মিডিয়াগুলো চালু ও আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করেছেন সাংবাদিক নেতারা। একই সঙ্গে তারা দৈনিক সংগ্রামসহ মিডিয়াগুলোর ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, সরকার গণতন্ত্র ও স্বাধীন গণমাধ্যমকে ভয় পায় বলেই মিডিয়া বন্ধের মতো অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মিডিয়ার ওপর বোমা হামলার জন্য সরকারি দলের ক্যাডারদের দায়ী করে তারা বলেন, আন্দোলনকে বিতর্কিত করার জন্যই এ কাজ তারা করেছে, আমার দেশ সম্পাদককে বিনাবিচারে দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটকে রেখে বাক স্বাধীনতার ওপর চরম আঘাত হেনেছে সরকার। সাংবাদিক হত্যা ও মিডিয়া দলনে এ সরকার অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে বলেও অভিযোগ করেন সাংবাদিক নেতারা। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে দুই শীর্ষ নেতার সংলাপের আগেই বন্ধ মিডিয়া খুলে দেয়া ও আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করেন সাংবাদিক নেতারা।
বন্ধ মিডিয়া খুলে দেয়া ও আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে এবং সংগ্রামসহ মিডিয়া ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন যৌথভাবে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশ শেষে সাংবাকিদের একটি বিক্ষোভ মিছিল জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে শুরু করে হাইকোর্ট হয়ে পল্টন মোড় ঘুরে আবার প্রেস ক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব এমএ আজিজ, ডিইউজে’র সহ-সভাপতি আনোয়ারুল কবির বুলু, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, বিএফইউজে’র মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন ও আমিরুল ইসলাম কাগজী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, ডিইউজে’র যুগ্ম সম্পাদক শাহিন হাসনাত, কোষাধ্যক্ষ এমএ নোমান, দৈনিক সংগ্রাম ইউনিট প্রধান শহিদুল ইসলাম, নয়াদিগন্ত ইউনিট প্রধান ইমরান আনসারী, দিগন্ত টিভির বার্তা সম্পাদক জিয়াউল কবির সুমন, ডিইউজে নেতা ইরফানুল হক নাহিদ প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন ডিইউজে আমার দেশ ইউনিট প্রধান বাছির জামাল। এতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।
সমাবেশে রুহুল আমিন গাজী বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর জাতি লগি-বৈঠার নৃশংস ও পৈচাশিক তাণ্ডব দেখেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেদিন সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী নিরীহ নিরস্ত্র লোকদের ওপর হামলে পড়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। তারা মৃত লাশের ওপর পৈচাশিক নৃত্য করেছে। আজকেও আওয়ামী লীগ ও সরকারি বাহিনী যৌথভাবে মানুষকে হত্যা করছে। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে আন্দোলনরত মানুষকে হত্যা করছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বরাবরই বহুদলীয় গণতন্ত্র ও স্বাধীন গণমাধ্যমকে ভয় পায়। এ কারণেই এরা যখনই ক্ষমতায় এসেছে একদলীয় স্বৈরাচারী বাকশালী আচরণ করছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও স্বাধীন গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে।
রুহুল আমিন গাজী আরও বলেন, খুন ও দুর্নীতিসহ আ’লীগ সরকারের অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড এবং বিচার বিভাগের ওপর সরকারের অন্যায় হস্তক্ষেপ নিয়ে তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রকাশ করায় আমার দেশ বন্ধ ও পত্রিকাটির সাহসী সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা দৈনিক সংগ্রামের কার্যালয়ে বোমা হামলা করেছে। এর আগে একাত্তর, চ্যানেল টুয়েন্টিফোরসহ বিভিন্ন মিডিয়ার কার্যালয়ে বোমা হামলা করেছে। এসব হামলা ও মিডিয়া বন্ধ একই সূত্রে গাঁথা।
তিনি বলেন, সরকার মুখে সংলাপের কথা বললেও তারা আবারও একদলীয় বাকশালী কায়দায় ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে চাইছে। সংলাপকে ফলপ্রসূ করে একটি অর্থবহ নির্বাচনের পথ তৈরি করতে হলে সবার আগে বন্ধ মিডিয়াগুলোকে খুলে দিতে হবে।
কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, হাসিনার সরকার আবারও পুরনো বাকশালী শকুনের মতো বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খামচে ধরেছে। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে শেখ হাসিনা তার বাকশালী শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করতে উন্মাদ হয়ে পড়েছেন। শেখ মুজিব যেভাবে গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাংলাদেশের সম্রাট হতে চেয়েছিলেন, শেখ হাসিনাও পিতার পথ অনুসরণ করে বাংলাদেশের সম্রাজ্ঞী হতে চান। আওয়ামী লীগ এবং গণতন্ত্র ও স্বাধীন গণমাধ্যম একসঙ্গে থাকতে পারে না। দেশে আওয়ামী লীগ থাকলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আসবে না। কাজেই গণতন্ত্র, মানুষের মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের স্বার্থেই হাসিনা সরকারের পতন তরান্বিত করা জরুরি। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার যেহেতু অবৈধ ও অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এ কারণেই আমরা এখন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। অবিলম্বে বন্ধ মিডিয়াগুলো খুলে দিন এবং মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি দিন। এটা করতে ব্যর্থ হলে সাংবাদিকরা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেই আন্দোলন শুরু করতে বাধ্য হবে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই সবার মতামত উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ গায়ের জোরেই সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করেছে। তাদের সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ীই এই সরকারের শেষ তিনমাস হচ্ছে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার। সংবিধান অনুযায়ী তিনমাস দেশের নির্বাহী দায়িত্ব পালন করবে নির্বাচন কমিশন। কাজেই আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছেই দাবি জানাচ্ছি—অবিলম্বে আমার দেশসহ বন্ধ মিডিয়াগুলো খুলে দিন। সাহসী সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি দিন। তা না হলে নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি হবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বেকারত্ব দূর করার অঙ্গীকার করে ক্ষমতায় এসে আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভিসহ বেশকিছু মিডিয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এতে শত শত সাংবাদিক বেকার হয়ে পড়েছে। সরকার সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে নিজেরাই দেশে রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি করেছে। এখন সংলাপের নামে টালবাহানা করছে। আমার দেশসহ বন্ধ মিডিয়াগুলো অবিলম্বে খুলে দিয়ে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখার জন্য তিনি জোর দাবি জানান।
এমএ আজিজ বলেন, ভিন্ন মতের মিডিয়া বন্ধ করে সরকার দেশে ফ্যাসিবাদের জন্ম দিয়েছে। সরকারের সন্ত্রাস, দুর্নীতি, লুটপাট, হত্যা, গুম ও খুনের ঘটনায় দেশবাসী উদ্বিগ্ন। বিচার বিভাগে দলীয়করণের মাধ্যমে ন্যায় বিচারের পথ রুদ্ধ করেছে সরকার। সরকারের এহেন অপকর্ম তুলে ধরায় অন্যায়ভাবে আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করা হয়েছে এবং পত্রিকাটির সম্পাদককে বিনাবিচারে কারাগারে আটক রেখেছে। সরকারের অন্যায় ও অগণতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদে সকল পেশাজীবীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নামতে হবে।
Posted ২৩:২৫ | বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin