ঢাকা: বিয়ের পর প্রতিটি নারী স্বপ্ন দেখেন মা হওয়ার। সেক্ষেত্রে স্ত্রী হয়তো বাচ্চা নিতে আগ্রহী কিন্তু স্বামী নিতে চাচ্ছেন না। কিংবা এই মুহুর্তে বাচ্চা নেয়া ঠিক হবে কিনা সে বিষয় স্ত্রী বুঝতে পারছেন না এমনকি সরাসরি জিজ্ঞেস করতেও পারছেন না। সরাসরি জিজ্ঞেস করার পরিবর্তে স্বামীর আচার-আচরণ ও কিছু বিষয় খেয়াল করলে সহজেই বুঝতে পারবেন বাচ্চা নেয়া ঠিক হবে কিনা?
অর্থনৈতিক অবস্থা
প্রথমেই খেয়াল করতে হবে স্বামীর কর্মক্ষেত্র কেমন? তার চাকরি স্থায়ী কিনা? তিনি বাচ্চার দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত কিনা? তিনি বাচ্চা পালন সম্পর্কে আগ্রহী কিনা? বাচ্চা নেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে স্বামীর অর্থনৈতিক অবস্থা। শিশুদের লালন-পালন করা ব্যয়বহুল একটা ব্যাপার। বাচ্চার লালন পালনে অর্থনৈতিকভাবে স্বামী যখন সামর্থ হবেন তখনই কেবল বাচ্চা নেয়া ঠিক হবে।
শারিরীক ও মানসিক প্রস্তুতি
বাচ্চা নেয়ার জন্য স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই শারিরীকভাবে প্রস্তুত থাকতে হয়। শারিরীক প্রস্তুতির পাশাপাশি মানসিক প্রস্তুতিও থাকতে হবে। বাচ্চা হওয়ার পর বাচ্চার লালন-পালনে দিনের অধিকাংশ সময় কেটে যাবে। সে বিষয়টি মানসিকভাবে প্রস্তুতি থাকা দরকার। এবিষয়ে ব্রাকের হেলথ নিউট্রিশন অ্যান্ড পপুলেশন প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর ডা. মোরশেদা চৌধুরী বাংলামেইলকে বলেন, ‘মেয়েদের ২০ বছর থেকে ৩০ বছরের মধ্যে বাচ্চা নেয়া ভালো। ২০ বছরের নিচে এবং ৩০ বছরের উপরে বয়সে মেয়েরা যদি বাচ্চা নেয় তাকে হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি হিসেবে ধরা হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘ভাবি মায়ের রক্তশূন্যতা, ডায়বেটিক, জন্ডিস, কিডনী সংক্রান্ত জটিলতা আছে কিনা তা আগে পরীক্ষা করে নেয়া উচিৎ। এসব অসুখ ছাড়াও অন্যান্য অসুখ থাকলে মাকে ডাক্তারের নিবিড় পর্যবেক্ষনের ভেতর থাকতে হবে। তাহলে মা ও শিশুর অনেক জটিলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।’
আকাঙ্খা বোধ করা
স্বামী যদি বাচ্চার আকাঙ্খা বোধ করে কিংবা প্রায়ই বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের বাচ্চা নিয়ে কথা বলে। স্বামীর পরিবারও যদি বাচ্চার প্রতি আগ্রহ দেখায়। বাচ্চার নাম কি রাখা হবে কিংবা বাসায় যদি একটা বাচ্চা থাকতো এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে অথবা কারো বাচ্চা দেখলে কোলে নিয়ে আদর করে তাহলে ধরে নিতে পারেন যে স্বামী বাচ্চা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করছে।
পরিকল্পনা করা
বাচ্চা নেয়ার আগে পরিকল্পনাটা খুবই জরুরী। আপনার স্বামীর যদি সন্তানের ভবিষ্যত চিন্তা করে ব্যাংকে টাকা জমানো, গাছ লাগানো কিংবা সুন্দর বাসা নেয়ার পরিকল্পনা থাকে তাহলে বুঝবেন আপনারা বাচ্চা নিতে পারেন। সন্তান নেয়ার শুরুতেই এসব বিষয় পরিষ্কার থাকলে খুবই ভালো। বাচ্চা নেয়ার ক্ষেত্রে এটা জীবনের সবচেয়ে ভালো পরিকল্পনা।
অভিভাবকদের পরামর্শ
বাচ্চা নেয়ার ক্ষেত্রে অভিভাবকের পরামর্শ নেয়াটা খুবই জরুরী। স্বামী যদি তার নিজের বাবা-মায়ের সঙ্গে বাচ্চা নেয়ার ব্যাপারে আলোচনা করে থাকে। তারা যদি বাচ্চা নেয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দেয় তাহলে আপনি বাচ্চা নিতে পারেন। একই ভাবে নিজের বাবা-মা কিংবা নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে এই বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে বাচ্চা নেয়া ভালো।
দক্ষতা অর্জন
স্বামী যদি হঠাৎ করে তার ভাইপো-ভাইজি কিংবা ভাগ্নে-ভাগ্নি লালন পালন করায় দক্ষ হয়ে ওঠে। তাহলে পরিষ্কার বুঝতে পারবেন স্বামী বাচ্চা নিতে আগ্রহী।
সর্বোপরি স্বামী এবং স্ত্রী দুজনে মিলে সন্তানকে লালন পালন করবে। তাই সবার আগে সন্তান বিষয়ে স্বামী-স্ত্রীর ভেতর বোঝাপড়াটা সুদৃঢ় হতে হবে। শুধু সন্তান জন্ম দেয়া নয়, সন্তান জন্মানোর পর তাকে কোন পরিবেশে মানুষ করা হবে এবং সন্তানের মানসিক বিকাশে তার চারপাশের পরিবেশ কি হবে তাও সন্তান জন্ম নেয়া আগেই ভেবে নিতে হবে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই।
Like this:
Like Loading...
Related