| শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
আব্দুল বাছিত বাদশা
২৫শে নভেম্বর সোমবার দশম জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার সাথে সাথে বি এন পি এর নেত্রীত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট কতৃক সড়ক পথ, রেল পথ এবং নৌ পথ অবরোধ শুরু হয়। দীঘর্ এক মাসের অবরোধে সমস্ত দেশ অচল হয়ে পড়েছে। রাজধানী ঢাকা থেকে বিচ্চিন্ন হয়ে গেছে প্রত্যেকটি জেলা এবং উপজেলা। ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কমর্ী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং সাধারণ মানুষ সহ প্রাণহানী গঠেছে প্রায় চার শত। ১৮ দলের হাজার হাজার নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গাড়ি কত হাজার পুড়েছে তার হিসাব পাওয়া খুবই কঠিন। অবরোধে সাধারণ মানুষের কষ্ট হলেও, অবরোধে সমর্থন ছিল সবার। অবরোধ চলাকালে বেগম জিয়া রাস্তায় নেমে আসছেন, এমন খবর কয়েক দফা শুনা গেলেও বেগম খালেদা জিয়া রাস্তায় নেমে এসে স্বশরীরে অবরোধে যোগ দেন নাই।
অবশেষে ২০সে ডিসেম্বর শুক্রবারে শুনা গেল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২৪সে ডিসেম্বর মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করছেন। এতেই আওয়ামীলিগের ১ নম্বর থেকে সবার মাথা ব্যথ্যা শুরু হয়ে গেল। ২৪ তারিখে দেশনেত্রী সংবাদ সম্মেলন করবেন। কিন্তু দেশের জনগণ, এমনকি আওয়ামীলিগের নেতৃবৃন্দ যে ভাবে অধীর আগ্রহ নিয়ে বেগম জিয়ার বক্তব্য শুনার জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তা দেখে মনে হচ্ছিল দেশনেত্রী জাতির উদ্দেশে্য ভাষণ দিবেন। সোমবার মধ্যান্যে বেগম জিয়ার সংবাদ সম্মেলন শুরু হল। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, আওয়ামীলিগের সাজানো নিবর্াচন, নিবর্াচন কমিশন এসব নিয়ে কথা বললেন। পাকিস্তান পার্লামেন্টে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন ব্যাপার নিয়ে আলোচনার সমালোচনা করলেন। সব শেষে বিজয়ের মাসে ২৯সে ডিসেম্বর রোববার লাল-সবুজের পতাকা হাতে দেশের সমস্ত জনগণকে ঢাকা অভিমুখে আসার জন্য (March For Democracy) আহব্বান জানান।
দেশনেত্রীর বেগম খালেদা জিয়ার March For Democracy ঘোষণার সাথে সাথে সবর্ সাধরণের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখে মনে হল, দেশের মানুষ এমন একটি কর্মসূচির অপেক্ষায় ছিল। দেশের সর্বস্তরের মানুষ বেগম জিয়ার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলন শেষ হতে না হতেই আওয়ামীলিগ নেতৃবৃন্দের পাগলামী শুরু হয়ে যায়। সংবাদ সম্মেলন শেষ হবার সাথে সাথে আওয়ামীলিগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু প্রেস বি্রফিং এ বেগম খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে, আওয়ামীলিগের পুরাতন গান আবার বাজালেন। বললেন বেগম খালেদা জিয়া নাকি পাকিস্তানের পক্ষে, যুদ্ধ অপরাধীদের বাচাবার জন্য কর্মসূচি দিয়েছেন।
কথা হল, যে আমু সাহেব মুক্তি যুদ্ধের সময় ভারতে মদ এবং নারী নিয়ে আমোদ-ফুর্তিতে ব্যস্ত ছিলেন। যে আমু সাহেবদের কু-কমর্ ঢাকার জন্য মুজিব সরকারের সময়ে ১৯৭২ সালে সাংবাদিক জহির রায়হাকে গোম করা হয়। সেই আমু এখন মুক্তি যুদ্ধ নিয়ে রড় বড় কথা বলছেন। আওয়ামীলিগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বললেন, বিজয়ের মাসে বাংলাদেশের পতাকাকে বেগম জিয়া নাকি রাজাকারের হাতে তুলে দিচ্ছে। যে হানিফ গত পাঁচ বৎসরে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, সেই হানিফের কথা শুনে মনে হয় বাংলাদেশের ১৬ কুটি মানুষ রাজাকার, শুধু আওয়ামীলিগই এক মাত্র মুক্তি যোদ্ধা এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আওয়ামীলিগের বাপ-দাদার স্তাবর সম্পত্তি।
আমু এবং হানিফ ছাড়া ও কাল বিড়াল সুরন্জিত সেন গুপ্ত, কামরুল, নাসিম সহ অনেকেই পাগলের প্রলাপ বকছেন, উনাদের কথা আজ আর লিখলাম না। ২৫সে নভেম্বরে ১৮ দলের অবরোধ শুরু হবার পর থেকে ঢাকা শহরকে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে। এ কথা পুলিশ, রেব এবং সরকারের মন্ত্রীরা অনেক বার সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন। ২৪সে ডিসেম্বর মঙ্গলবার সন্ধা ৬ঘটিকায় ১৮ দলের অবরোধ কমর্সূচি শেষ হয়ে যায়। বেগম খালেদা জিয়ার March For Democracy ঘোষণার পর পর আওয়ামীলিগের নেতৃবৃন্দের ঘুম হারাম হয়ে যায়।
২৯ ডিসেম্বরের বি এন পির কর্মসূকে বানচাল করার লক্ষে্য, বি এন পির কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দকে ২৯ তারিখের কর্মসূচি থেকে সরিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে, আওয়ামীলিগের কেন্দ্রিয় নতারা তাদের দলীয় সন্ত্রাসী দিয়ে ২৪সে ডিসেম্বর রাতে ঢাকার বাংলা মটরের পাশর্ে পুলিশ বাহী গাড়িতে আগুন দিয়ে এক জন পুলিশকে পুড়িয়ে মেরেছে। আওয়ামীলিগ তাদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পুলিশের গাড়ি পুড়নো জন্য বি এন পির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দের উপর মিথ্যা মামলা করেছে। এদিকে গাড়ি পুড়িয়ে পুলিশ হত্যার পর পরই মঙ্গলবার রাত ২ ঘটিকায় বেগম খালেদা জিয়ার বাস ভবণকে পুলিশ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। ২
৫সে ডিসেম্বর বুধবারে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবন ও কার্যালয়ের সামনে থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রবীণ রাজনীতিবিদ আরএ গনি, সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তার, সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবীদ আউয়াল মিন্টুকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এছাড়া বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনকে অফিসে ঢুকতে দেয়া হয়নি। তাকে আটক করার চেষ্টা করা হয়।
বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমানকেও অফিসে ঢুকতে দেয়া হয়নি। অবশ্য আরএ গনিকে পরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। অনেকের ধারণা, বেগম খালেদা জিয়াকে হয়তো গ্রেফতার করা হতে পারে। দেশেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে যদি গ্রেফতার করা হয়, তবে দেশে আরেকটি ৭ই নভেম্বরের জন্ম হবে এটি শত ভাগ সত্য।
Posted ০১:৪৩ | শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin