শনিবার ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও আমাদের ভবিষ্যৎ!

  |   বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও আমাদের ভবিষ্যৎ!

একটা সময় ছিল বাংলাদেশ যখন হেরে যেত তখন হারাটাও আমাদের আনন্দ দিত কারন নব্য ও গরিব দেশ হিসেবে মেনে নিত দেশবাসি। কিন্ত এখন প্রেক্ষাপট অন্যরকম বাংলাদেশ আইসিসির ৫ম ধনী দেশ এবং তিন যুগের ও বয়স বেশি। এখন কম রানে জিতলেও জাতিভাবে আরেকটু বেশি রানে জিতলে ভাল লাগত। দলের কাছে দেশের আকাঙ্ক্ষা বেড়ে গেছে। আর এটা স্বাভাবিক ও আশা করতেই পারে তারা কারন তাদের ট্যাক্সের টাকায় যে পেট ভরে ক্রিকেটারদের ও বোর্ডের।

ক্রিকেট খেলোয়ার দেশ হিসেবে যে ১০টি দেশ আছে প্রত্যেকে দেশেরই ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান, কোচ, ম্যনাজার বা পরিচালক ক্রিকেটের সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু বাংলাদেশে ভিন্ন।এদিকে দেশের দিনদিন খেলার মান কমছে এর কারন কি? হিসেবে মিলছে না কিছুই তবে সারা বিশ্বে ক্রিকেট পাগল বাংলাদেশীরা ভাবছে অনেক কিছু। কেউ কেউ ভাবছে অদক্ষ বোর্ড বা যাদের ক্রিকেটের সাথে কোন সম্পর্ক ছিল না তারা বোর্ড চালাচ্ছেন আবার কেউ ভাবছেন বোর্ড ও খেলোয়ারদের মধ্যে চলছে ক্লেশ।

যেহেতু বোর্ড পরিচালক একজন রাজনীতিবিদ ও সরকার দলীয় সংসদ সদস্য তাই তার কাছে সবাই জিম্মি! আর যার পরনাই উনার হিসেবেই চলছে বিসিব।

আবার কেউ ভাবছেন অন্যকথা, যে রাজনৈতিক ও ব্যাক্তি বিবেচনায় বা ক্ষমতার অপব্যবহার করে দলে খেলোয়ার ডুকানো হচ্ছে আর মেধাবি ও পরিক্ষিতদের দলে জায়গা দেয়া হচ্ছেনা।এছাড়াও খেলোয়ারদের অন্তর্দন্ধ রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে যার ফলশ্রুতিতে খেলায় ভারসাম্য রাখতে পারছেন না অনেকেই।

তবে আম জনতার প্রশ্ন ৯০০ কোটি টাকা থাকার পরেও কেন একজন ৩য় শ্রেনীর ক্রিকেটারকে দলের কোচ কেন করা হল? নাকি এখানে ও কমিশন কাজ করছে? এটা তলিয়ে দেখার সময় এসেছে বলে মনে করছেন ক্রিকেট প্রেমিরা। সবশেষে এই বিশ্বকাপে নির্লজ্জভাবে পরাজয় ও ভারসাম্যহীনতার অভিযোগে আংগুল তুলছেন বোর্ডের দিকেই।

ক্রিকেট উন্নয়নে অন্যান্য দেশের আর বাংলাদেশের পার্থক্যটা কোথায় এ প্রশ্নের উত্তর খোজতে কিছু তথ্য বের হল যার বিবরন নিম্নে দেয়া হল।
একনজরে দেখে নিন ১০টি দেশের ক্রিকেট বোর্ড কারা চালায় ও তাদের পরিচিতি।

প্রথমে দেখি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড কারা চালায়:
প্রেসিডেন্ট- সৌরভ গাঙ্গুলি (সাবেক সফল অধিনায়ক)
মেন্টর- এম এস ধোনি (সাবেক সফল অধিনায়ক)
কোচ- রাহুল দ্রাবিড় (অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সফল কোচ ও সাবেক সফল অধিনায়ক)

পাকিস্থান: চেয়ারপার্সন,সাবেক ক্রিকেটার রমিজ রাজা
কোচঃ সাকলায়েন মুস্তাক সাবেক ক্রিকেটার।
আফগানিস্তান : একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশেও চেয়ারপার্সন, আব্দুল্লাহ ফাজিল সাবেক ক্রিকেটার।
কোচ: বিশ্ব বরন্যে ক্রিকেটার ল্যান্স ক্লোজনার।
শ্রীলংকা : চীফ অফ ডাইরেক্টর অস্ট্রেলিয়ান সাবেক ক্রিকেটার থমাস মুডি।
কোচ: সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার জন মাইক্যাল আর্থার।

সাউথ আফ্রিকা : ডাইরেক্টর সাবেক ক্রিকেটার গ্রায়েম স্মিথ। কোচ: বিশ্ব ক্রিকেটের সুপরিচিত নাম মার্ক বাউচার।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ : প্রেসিডেন্ট রিকি স্কেরিট ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ।
কোচ: ফিলিফ সাইমন সাবেক উইন্ডিজ অল রাউন্ডার।
নিউজিল্যান্ড : প্রেসিডেন্ট, সাবেক অলরাউন্ডার লুতফুল্লাহ স্টানিকজাই ডেবোরাহ।
কোচ: নিজ দেশের সাবেক ক্রিকেট খেলোয়ার গেরি স্টিড।

অস্ট্রেলিয়া : সিইও সাবেক ক্রিকেটার ক্যাভিন রবার্টস।
কোচ: সাবেক পরিচিত ক্রিকেটার জাস্টিন ল্যাংগার।
ইংল্যান্ড : বোর্ড প্রধান সাবেক ক্রিকেটার টম হ্যারিসন।
কোচ: স্বদেশী সাবেক ক্রিকেটার ক্রিস সিলভারউড।

এবার দেখি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড : প্রেসিডেন্ট- নাজমুল হাসান পাপন (কখনো ক্রিকেট খেলেননি, একজন রাজনীতিবিদ, এমপি, সরকার দ্বারা নিয়োগকৃত সর্বপ্রথম প্রেসিডেন্ট) মেন্টর- নাজমুল হাসান পাপন (উপরের সবগুলা + বেক্সিমকো গ্রুপের ডিরেক্টর+ শাইনপুকুর সিরামিক গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর+ আবাহনী ক্লাবের প্রেসিডেন্ট)
কোচ- রাসেল ডোমিঙ্গো (কখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেননি, ২০০৯-১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্লাব ওয়ারিয়র্সকে টি20 ও ওয়ানডে ডমেস্টিক লীগ জিতিয়েছেন)

বাংলাদেশের ক্রিকেট ফ্যানদের দাবী একজন ক্রীড়াপ্রেমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট অনতি বিলম্বে ক্রিকেট বোর্ডের সংস্কার করে একটা ক্রিকেটার ও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ দিয়ে বোর্ড সাজিয়ে ক্রিকেটকে এগিয়ে নিবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার হাত ধরে বিশ্বে বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক নতুন পরিচয় ও সুনাম এসেছে যার অর্জন আপনাকেই ধরে রাখতে হবে। তিলে তিলে গড়া এই সুনামকে অক্ষুন্ন রাখতেই হবে নতুবা একদিন এর দায়ভার সবাইকে নিতে হবে।

খেলোয়ারদের কারনেই আজ বোর্ডের একাউন্টে ৯০০ কোটি টাকা। বোর্ডের কারনে নয়। শুধু টাকা থাকলেই হবে না! সেটা ক্রিকেটের কাজে ব্যয় করে ক্রিকেটের মান উন্নয়ন করতে হবে। নতুবা তারা নিজেদের সুবিধার্থে দলের সাথে ট্যুর দিবে আর অযোগ্য লোকদের উচ্চতর পদে বসিয়ে মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিবে।

যতদিন এসব জায়গায় সাবেক সফল ক্রিকেটাররা না আসবে, ততদিন স্কটল্যান্ড, হংকংয়ের মত তরুণ ও উজ্জীবিত দল এসে হারিয়ে দিয়ে যাবে, যাদের অধিকাংশ খেলোয়াড় হয়তো প্রফেশনাল না, যারা চাকুরির ফাঁকে ফাঁকে ক্রিকেট খেলে তাদের সাথে।

একটা টেস্ট স্টেটাস পাওয়া দেশ যখন আন্তর্জাতিক স্টেটাস পাওয়ার লড়াইয়ে আসা অপরিপক্ষ দেশের সাথে নির্লজ্জভাবে হারে তখন ঠিকই মনে দাগ কাটে যে ক্রিকেট উন্নয়ন হচ্ছে নাকি পকেট উন্নয়ন!

লেখক : জিয়া তালুকদার, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০২:৪২ | বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com