| সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় প্রেস ক্লাবে সরকার দলীয় ক্যাডারদের হামলার ঘটনাকে বাংলাদেশের ইতিহাসে ন্যক্কারজনক ও নজিরবিহীন উল্লেখ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও বন্ধ গণমাধ্যম চালু না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন তারা। একই সঙ্গে জাতীয় এ প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় ঢাকা পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর কঠোর সমালোচনা করেন তারা। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় একই স্থানে সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সরকার দলীয় ক্যাডারদের হামলার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা এ ঘোষণা দেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদক ইউনিয়ন (ডিইউজে) যৌথভাবে এ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে সভাপতির বক্তৃতায় বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, প্রেস ক্লাবে যে ন্যাক্কারজনক ও বর্বর হামলা হয়েছে তার প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। এটা আওয়ামী লীগের পুরনো ইতিহাস। এর আগেও তারা গণমাধ্যম বন্ধ, হামলা ও সাংবাদিক নির্যাতন করেছে। তিনি বলেন, আমার দেশ, দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি চালু, সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি, সাগর-রুনি হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিকদের লাগাতার আন্দোলন চলবে। প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আর এ প্রতিবাদ জানানো যদি রাজনৈতিক কর্মসূচি ও অপরাধ হয় তাহলে সাংবাদিকরা সে অপরাধ আজীবন করেই যাবে।
‘প্রেস ক্লাবে বহিরাগতদের নিয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালালে হামলার সুযোগ সৃষ্টি হয়’ প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর এমন মন্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ইকবাল সোবহান নিজেই একজন বহিরাগত। হামলার সময় তিনি বহিরাগতদের নিয়ে কেন মিছিল করছিলেন এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সাগর-রুনির রক্তের সঙ্গে বেঈমানী করে তিনি তথ্য উপদেষ্টা হয়েছেন, মিডিয়ার লাইসেন্স নিয়েছেন। সময় আসলে সাংবাদিকরা এর সমুচিত জবাব দেবে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে বিএফইউজের মহাসচিব শওকত মাহমুদ বলেন, আমরা বন্ধ গণমাধ্যম চালুর দাবিতে সমাবেশ করছিলাম, সেখানে আওয়ামী লীগ নেতা, পুলিশ ও কিছু সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে হামলা চালানো হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে এ সরকার এবং ওইসব দালাল সাংবাদিকরা এসব বন্ধ গণমাধ্যম খুলে যাক এটা চায় না। তারা প্রকারান্তরে আরও মিডিয়া বন্ধ করতে চায়। ইকবাল সোবহান চৌধুরীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রেস ক্লাবে তার সদস্যপদও নেই। তিনি এখন সাংবাদিক নন, সরকারি কর্মকর্তা।
ডিইউজে সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, সাগর-রুনির রক্তের সঙ্গে বেঈমানী করে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা হয়ে ইকবাল সোবহান এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফেরি করে বিক্রি করছেন। তার মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা শোভা পায় না। কারণ তিনি তখন পাকিস্তান সরকারের পাকিস্তান অবজারভারে চাকরি করতেন। ‘প্রেস ক্লাবে জাতীয় চোরেরা থাকে’ পুলিশের রমনা জোনের এসি শিবলী নোমানের এমন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে এ বিরূপ মন্তব্যের জন্য তাকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান। এছাড়া ‘প্রেস ক্লাবে জঙ্গিরা মিটিং করে’ পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশে ভারতের দালালদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। ভারতের এসব দালাদের প্রতিরোধে সারা দেশে কমিটি গঠন করতে হবে।
বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব এমএ আজিজ বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও গণমাধ্যম বর্তমানে কঠিন সঙ্কটের সম্মুখীন। সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। একটি অংশ সব সময় সাংবাদিকদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করেছে উল্লেখ করে ডিইউজের সাবেক সভাপতি আবদুস শহিদ বলেন, গণমাধ্যম বন্ধ, সাংবাদিক নির্যাতনের পক্ষে এই অংশটি সব সময় সরকারকে সমর্থন দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। তিনি বলেন, একপক্ষকে বের হতে দেয়া হবে না, আর আরেক পক্ষ লাঠি-হকিস্টিক নিয়ে পুলিশ প্রহরায় মহড়া দেবে, একটি সভ্য দেশে এটি চলতে পারে না। ডিইউজের সাবেক সভাপতি এলাহী নেওয়াজ খান সাজু বলেন, প্রেস ক্লাব সব দল ও মতের মানুষের মিলনস্থল। এখানে সরকার দলীয়দের হামলা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রেস ক্লাবে সব দল-মতের মানুষের মিলনস্থলে পরিণত হয়েছে। সেখানে সরকার দলীয় লাঠিয়াল বাহিনীর এ হামলা কলঙ্কজনক। জনগণকে আগ্রাসী এ ফ্যাসিবাদীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, স্বৈরাচারের চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে সরকার যে আচরণ করে এখন সেটাই চলছে। এরা দেশের মানুষের গণদুশমন। বিএফইউজের সহকারী মহাসচিব এম আবদুল্লাহ বলেন, সরকারি পদ-পদবি ও ফ্ল্যাট পেয়ে যারা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন সময় আসলে তাদের সমুচিত জবাব দেয়া হবে।
ডিইউজের যুগ্ম সম্পাদক শাহীন হাসনাতের পরিচালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব সৈয়দ জাফর, সহ-সভাপতি নুরুল আমিন রোকন ও আমিরুল ইসলাম কাগজী, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ আকন, ডিইউজের সহ-সভাপতি খন্দকার হাসনাত পিন্টু, সাবেক সহ-সভাপতি ছড়াকার আবু সালেহ ও খায়রুল বাশার, আমার দেশ ইউনিট প্রধান বাছির জামাল, বিএফইউজের কোষাধ্যক্ষ মোদাব্বের হোসেন, প্রচার সম্পাদক আবু ইউসুফ, ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিক মোহাম্মদ, কোষাধ্যক্ষ এমএ নোমান, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়শনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আহম্মেদ মীরু, ডিইউজে সংগ্রাম ইউনিট প্রধান শহিদুল ইসলাম, বাসসের আবুল কালাম মানিক, ইনকিলাবের ওমর ফারুক আল হাদী, দিগন্ত টিভির ইমরান আনসারী, দিনকালের ডেপুটি ইউনিট প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান বিপ্লব, ঢাবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এম এম জসিম, খুলনা প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি এহতেশামুল হক শাওন, সাংবাদিক নেতা খুরশীদ আলম, হাফিজ, দিদারুল আলম প্রমুখ।
Posted ১৫:০৬ | সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin