| সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০১৪ | প্রিন্ট
মুফতী খন্দকার হারুনুর রশীদ
শান্তি ও নিরাপত্তার ধর্ম ইসলামের অভ্যুদয় খ্রিস্টীয় ৬১০ সালে। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর জীবন সাধনায় শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম ইসলাম পরিপূর্ণ ও বিকশিত রূপ লাভ করে। অল্পকালের মধ্যেই সমগ্র আরবদেশে ছড়িয়ে পড়ে ইসলামের জোরালো কার্যক্রম। ধর্মীয় অনুপ্রেরণায় উদ্দীপিত ও আতœশক্তিতে বলীয়ান ইসলাম ধর্মের অনুসারী সাহাবাগণ (রা) পৃথিবীর দিকে দিকে সত্য ও সুন্দরের বাণী পৌঁছে দিতে থাকেন। হুদাইবিয়ার সন্ধির পর থেকে বিশ্বনবী (সা) বিশ্বের রাজন্যবর্গের কাছে তার দাওয়াতি পত্রসহ দূত প্রেরণ করেন। আমাদের এই উপমহাদেশ নিয়েও তার নববী দরবারে আলোচনা হয়। তিনি সাথীবর্গকে ভারতে দাওয়াতি প্রোগ্রাম পরিচালনার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। ইসলামের ঊষালগ্ন থেকেই তার পরশ পেয়ে ধন্য হয় ভারতীয় উপমহাদেশ। নবী মুহাম্মদ (সা) এর যুগ থেকেই এদেশে ইসলাম প্রচার শুরু হয়। এ কথা ঐতিহাসিক সূত্রে প্রমাণিত যে, ইসলামের আবির্ভাবের প্রাক্কালে ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গে নৌপথে আরবদের সূদৃঢ় ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিলো। ফলে ইসলামের আবির্ভাবের পূর্ব থেকেই আরব সাগরের উপকূলবর্তী ভারতীয় উপমহাদেশ অঞ্চলে অনেক আরব ঔপনিবেশ গড়ে ওঠে।১
ঐতিহাসিক বর্ণনা মতে সাহাবাদের ব্যবসায়ী ও দাওয়াতি কাফেলা রাসূলুল্লাহ (সা) এর জীবদ্দশায়ই উপমহাদেশে পৌঁছে ছিলো। তাদের হাতে ইসলাম কবুল করে এদেশের অনেকেই ‘তাবেয়ী’ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। ২
প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত সা’দ (রা) এর পিতা হযরত আবু ওয়াক্কাস ইবনে মালিক ইবনে উহায়ব (রা) রাসূল (সা) এর নবুওয়াতের ৫ম বর্ষে হাবাশা তথা বর্তমান আফ্রিকার ইথোওপিয়া ও ইরিত্রিয়ায় হিজরত করেন। সেখান থেকে নবুওয়াতের ৭ম বর্ষে; খ্রিস্টীয় ৬১৭ সালে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে চীন সফর করেন। তখন তার সাথে ছিলেন আরো তিনজন সাহাবী। ১. হযরত হুযায়ফা (রা), ২. হযরত উরওয়া ইবনে আছাছা (রা) ও ৩. হযরত আবু কয়েছ (রা)। তাদের সাথে হাবাশার নওমুসলিম কয়েকজন তাবেয়ীও হাবাশার রাজা আসহামা নাজাশীর দানকৃত নৌযানে চড়ে প্রথমে ভারতের ‘মালেবার’ এ অবতরণ করেন। সেখানে ইসলাম প্রচার করেন। এক পর্যায়ে মালেবারের রাজা ‘পেরুমল’ তাদের দাওয়াতে উদ্বুদ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। সেখান থেকে তারা সমুদ্রতীর হয়ে বাংলায় আগমণ করেন। এখানে বাদশা ‘হর্ষবর্দল’ এর আমলে খ্রিস্টীয় ৬০৬-৬৪৭ সালে দীর্ঘ নয় মাস অবস্থান করেন। তাদের হাতে অনেক বাঙালি তাবেয়ী ইসলাম গ্রহণ করেন। পরে বাঙালি কিছু তাবেয়ীও তাদের সফর সঙ্গী হন। উক্ত দল চীনের ‘ক্যান্টন’ বন্দরে অবতরণ করেন। সেখানে তারা একটি বিরাট মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। অবশেষে সেখানে সাহাবী আবু ওয়াক্কাস (রা) ইন্তেকাল করেন। আজো চীনের ‘ক্যান্টন’ শহরে তার সমাধি বিদ্যমান আছে। কোনো কোনো গবেষকের লেখায় ভারতের মধ্য দিয়ে সাহাবায়ে কেরাম চীনে যাতায়াতের আরো বহু তথ্য বর্ণিত রয়েছে।৩
ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর (রা) এর খেলাফতকালে; ১৩-২৩ হিজরি, ৬৩৩-৬৪৩ খ্রিস্টীব্দে হযরত হাকাম ইবনে আমর তাগলিবীর নেতৃত্বে একদল সৈন্য বর্তমান পাকিস্তানের ‘সিন্ধুনদ’ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন। হযরত হাকাম (রা) খলীফা ওমরের নির্দেশে ‘মুকরান’ তথা সিন্ধু ও তৎপাশ্ববর্তী এলাকায় ১৭ হিজরি, ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে অভিযান শুরু করেন এবং ২৩ হিজরী ৬৪৩ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধুনদ পর্যন্ত অঞ্চল জয় করেন।৪
পরবর্তীতে হযরত মুয়াবিয়া (রা) এর শাসনামলে; ৬৬১-৬৭৩ খ্রিস্টাব্দে প্রবীণ তাবেয়ী হযরত মুহাল্লাব ইবনে আবী সুফরা (রাহ) (৬২৯-৭০২ খ্রিস্টাব্দ) এর নেতৃত্বে বর্তমান পাকিস্তানের লাহোর ও মুলতান পর্যন্ত বিজিত হয়।৫ এক পর্যায়ে মুলতান শহরেও মুসলমানদের স্বাধীন রাজ্য গড়ে ওঠে। যা ৩৪০ হিজরি, ৯৫১ খ্রিস্টাব্দের কিছু পর পর্যন্ত আহলে সুন্নাহদের দখলে ছিলো। এরপর জল্ম ইবনে শায়বানের নেতৃত্বে সেখানে শীয়া অভ্যুত্থান ঘটে। অবশেষে হিজরি ৪র্থ শতাব্দীর পরক্ষণে বিশিষ্ট আলেম জনাব সুলতান মাহমুদ গজনবী (রাহ) ‘মুলতান’ রাজ্য ভারতীয় স্বাধীন সাম্রাজ্যের দখলে নিয়ে আসেন।৬
এছাড়া হযরত ওমর (রা) এর খিলাফতকালে একদল ইসলাম প্রচারক বাংলায় এসেছিলেন। তাদের মধ্যে হযরত মামুন (রাহ) ও হযরত হুমায়ূন (রাহ) নামের দু’জন মনীষী ছিলেন। পরে আরেকটি দল বাংলায় ইসলাম প্রচারের কাজ করেন। যাদের মধ্যে হযরত হামীদুদ্দীন (রাহ), হযরত হুসাইনুদ্দীন (রাহ), হযরত মুরতাজা (রাহ), হযরত আব্দুল্লাহ (রাহ) ও হযরত আবু তালিব (রাহ) নামীয় সাধকবৃন্দও ছিলেন। ওদের পিছু ধরে মিশর ও ইরান থেকে আরো পাঁচটি ইসলাম প্রচারক দল বাংলায় কাজ করেন বলে ঐতিহাসিক তথ্যে পাওয়া যায়। এভাবে একের পর এক দাওয়াতি কাফেলা বাংলায় ইসলামের মহান বাণী প্রচারে আগমন করেন।৭
ইতিহাস অনুসন্ধানে জানা যায়, এই উপমহাদেশ তথা ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে নিছক ধর্ম প্রচারকগণ ছাড়াও নানা সময়ে মুসলিম বণিকদের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের অনেক প্রসার ঘটে। আমার মনে হয়, হতে পারে কৌশলগত কারণেও বিভিন্ন সময়ে এতদ্বঞ্চলে ব্যবসায়ী ছদ্মবেশে দায়ীগণ ইসলামের বাণী পৌঁছিয়েছেন। ড. গোলাম সাকলায়েন লিখেন, খ্রিস্টীয় আট শতক থেকে নৌবাণিজ্যসূত্রে বাংলাদেশের ঢাকা ও চট্টগ্রাম সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাসমূহে ইসলামের বাণী এসে পৌঁছেছিলো।৮
অন্য বিবরণ মতে, সপ্তম শতকে আরব বণিকদের মাধ্যমে ইসলামের সু-মহান বাণী এদেশের মানুষের নিকট পৌঁছতে শুরু করে। তাছাড়া আউলিয়া-দরবেশগণের মাধ্যমেও ইসলাম ধর্ম এদেশের মানুষের কাছে তার কল্যাণবার্তা নিয়ে হাজির হয়েছিলো। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে যেসব সূফী-দরবেশ বাংলাদেশে আগমণ করে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছিলেন, তাদের নেতা ছিলেন হযরত মাহমুদ (রাহ) ও হযরত মোহাইমিন (রাহ) বলে দু’জন অতি উচ্চশ্রেণীর সূফী-দরবেশ।৯
তবে তারা বা তাদের দলের অপর কোনো দরবেশ সিলেট আগমণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। খ্রিস্টীয় সপ্তম বা অষ্টম শতাব্দীতে চট্টগ্রামের সমুদ্র উপকূলে আরবদেশীয় যেসব বণিক উপস্থিত হয়ে ছিলেন, তারা এক দিকে যেমন তাদের ব্যবসায়ের পক্ষে প্রয়োজনীয় স্থানগুলোতে তাদের জাহাজ নোঙর করতেন, তেমনি এদেশীয় সমাজের লোকদের মধ্যে ইসলাম ধর্মও প্রচার করতেন।
জাতীয় অধ্যাপক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ লিখেন, আমাদের ধারণা সিলেটের গাজী বুরহানুদ্দীন (রাহ) আরব দেশীয় বণিকদের বংশধর। কারণ সিলেটের লোকরা যে এককালে সওদাগরি বা ব্যবসা-বাণিজ্যে লিপ্ত ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায়। সিলেট শহরের ব্যবসা-বাণিজ্যের সর্বপ্রধান কেন্দ্রকে এখনো বলা হয় বন্দরবাজার। অপর এক মহল্লাকে বলা হয় চালিবন্দর। সিলেটে এখনো প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে যে, এ বন্দর ছিলো সাগরতীরে অবস্থিত। এতে বড় বড় জাহাজ এসে নোঙর করতো। খুব সম্ভব এসব বড় বড় জাহাজে আগত আরবদেশীয় ব্যবসায়ীগণ চট্টগ্রামের আরব ব্যবসায়ীদের মতোই আগমণ করেছেন। তাদের মধ্যে কোনো কোনো ব্যক্তি সিলেটের টুলটিকরে স্থায়ীভাবে বসবাস করেছেন। তা না হলে অন্য কোনো প্রমাণের অভাবে টুলটিকরে মুসলিমদের উপস্থিতি একটা আচমকা ব্যাপার বলেই মনে হয়। হযরত গাজী বুরহানুদ্দীন (রাহ) বাস্তুহারা ছিলেন না। তার সমাজের লোকেরা পূর্বাপর টুলটিকরেই বাস করেছেন। এখনো তাদের বংশধরগণ সেখানেই বসবাস করছেন। খুবসম্ভব তারা রাজা গোবিন্দের রাজ্যলাভের বহুপূর্বেই সে স্থানের অধিবাসী ছিলেন।১০
প্রাচীন সিলেটের সাগরতীরবর্তী বন্দর নগরী ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হওয়ায় এবং নদী পথে ভিনদেশীয়দের আগমণের কারণে এখানে দূরদূরান্ত থেকে স্থল ও পাহাড়ের লোকেরা নিজেদের উৎপাদিত পণ্য ও শস্য নিয়ে সমবেত হতেন। জৈন্তিয়া রাজ্য থেকে নগরী বন্দরে দূরত্ব-৪০ কিলোমিটার। পদভ্রজে যা অতিক্রম করতে সময় লাগে মাত্র ৭ ঘন্টা। সুতরাং ভোর পাঁচ ঘটিকায় রওয়ানা দিলে দুপুর ১২ ঘটিকায় বন্দরে পৌঁছা যায়। তবে জৈন্তিয়ার সীমান্ত থেকে বন্দরের দূরত্ব একেবারেই কম। লাউড় এবং গৌড়রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার তুলনায় জৈন্তিয়া কিছুটা নিকটবর্তী হওয়ায় এখানকার কৃষাণ-কৃষাণী ও ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যিক প্রয়োজনে সতত সিলেট যাতায়াত করতেন। যা রাজা গোবিন্দের শাসনামলের বহু পূর্বে এবং পরে সমভাবে ছিলো চলমান। প্রাচীন আমলে জৈন্তিয়া রাজ্যের এসব ব্যবসায়ীর নিকট হযরত গাজী বুরহানুদ্দীন (রাহ) এর পূর্বপুরুষগণ অথবা আরব বণিকদের দ্বারা ইসলামের দাওয়াত পৌঁছার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা; জৈন্তিয়া অতি প্রাচীন একটি রাজ্য। খুব সম্ভব এ জৈন্তিয়া রাজ্য খ্রিস্টপূর্ব যুগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। কে বা কারা এ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এখনো তা সম্পূর্ণভাবে আবি®কৃত হয়নি।১১
১২০১ খ্রিস্টাব্দের কথা। সবেমাত্র ইখতিয়ারউদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী বাংলার মসনদ দখল করে ইসলামী হুকুম প্রতিষ্ঠা করেছেন। তখন জৈন্তিয়া রাজ্যের শাসক খাসিয়া রাজা জয়ন্ত রায়। তার শাসনকাল ১১৯০-১২৪০ খ্রিস্টাব্দ। এই জয়ন্ত রায়ের শাসনামলে বর্তমান গোয়াইনঘাট উপজেলার ডৌবাড়ি ইউপিভুক্ত ঐতিহ্যবাহী হাটগ্রামে দু’জন মহাপুরুষের আগমণ ঘটে বলে জানা যায়। কথিত আছে, রাজা জয়ন্তরায়ের কোনো সন্তান ছিলো না। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। একদা জানতে পারলেন যে,বর্তমান সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানাধীন রানাপিং এলাকায় একজন সাধক পুরুষের আবির্ভাব ঘটেছে। রাজ দরবারে তার কাশ্ফ ও কারামতের কথা আলোচিত হয়। রাজা মুগ্ধ হয়ে বলেন, তাহলে তিনি তো ‘দেবতা’ মানুষ। আমি তার সাক্ষাত পাই কীভাবে? পরে সভাসদবর্গের পরামর্শে রানাপিং-এ অবস্থানকারী সাধকপুরুষ হযরত মনুশাহ খন্দকার (রাহ) ও তার সাথীর নিকট রাজার পক্ষে নিমন্ত্রণ জানাতে দূত প্রেরিত হন। রাজার নিমন্ত্রণ পেয়ে রাজদূতের সঙ্গে তারা জৈন্তিয়াপুরে আগমন করেন। রাজা জয়ন্তরায় তাদের সশ্রদ্ধ অভিনন্দন জানান। সন্তান কামনা করে তিনি তাদের আশির্বাদ গ্রহণ করেন। তারা বিদায় নিয়ে হাটগ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেন। মেয়াদান্তে রাজার স্ত্রী একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেন। রাজা তার নাম রাখেন জয়ন্তি। শৈশবে জয়ন্তি হুতুঙ্গা পর্বতে লালিত হন। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর হুতুঙ্গা পুঞ্জির খাসিয়া সরদারের পুত্র লণ্ডবের সঙ্গে তিনি পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। একথা ইতিহাসে পাওয়া যায়। জৈন্তিয়া বুরুঞ্জির বিবরণে জয়ন্তরায়কে পুরোহিত বংশের শেষ রাজা হিসেবে উল্লেখপূর্বক তার নিঃসন্তান হওয়া এবং ‘দেবতা’র কাছে সন্তান কামনার কথা বর্ণিত হয়েছে।
আলোচ্য মনীষীদ্বয়ের মধ্য থেকে ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখা বিশেষতঃ আইনশাস্ত্রে বুৎপত্তির কারণে সমাজে তাদের একজনের পরিচিতি ‘ফকীহ মোল্লা’ নামে ছড়িয়ে পড়ে। যার অর্থ ’ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞ মুসলিম পণ্ডিত’। মূলতঃ এটা তার নাম নয়। তার প্রকৃত নাম উদ্ধার করা যায় নি। অপরজন হযরত ‘মনুশাহ খন্দকার’ নামে পরিচিত ছিলেন। তাদের মাঝে পিতা-পুত্রের সম্পর্ক ছিলো। ফকীহ মোল্লা (রাহ) হযরত মনুশাহ খন্দকার (রাহ) এর পুত্র ছিলেন বলে কথিত আছে। তারা উভয়ে হাটগ্রামে বসতি স্থাপন করেন। এতোদ্বঞ্চলে তখন মানুষের বসবাস ছিলো খুবই কম। গোটা অঞ্চলব্যাপী তারা ইসলামের প্রচারকার্য চালিয়ে যান। বৈবাহিকসূত্রে এখানে তাদের বংশবিস্তার ঘটে। হাটগ্রাম, ফুলাইকান্দি ও পাশ্ববর্তী এলাকায় এখনো তাদের বংশধর রয়েছেন। স্থানীয় লোকদের মুখে মুখে তাদের অসংখ্য অলৌকিক কর্মকাণ্ড এবং কাশফ ও কারামাতের কথা শুনতে পাওয়া যায়। এই মহান সাদকদ্বয়ের হাতে অসংখ্য লোক ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হন। হাটগ্রামে তাদের সমাধি রয়েছে। লামাপাড়ার হাফেজ ইব্রাহীম (রাহ)-এর বাড়ির উত্তর পার্শ্বে পাকা ইটের চারকোনবিশিষ্ট বিধ্বস্ত ক্ষয়ে যাওয়া দেয়ালবেষ্টনীর ভেতর প্রবীণদের বিবরণ অনুযায়ী খ্রিস্টীয় ১৯৯০ সালে সাতটি সমাধির সন্ধান নিশ্চিত হই। তারা রানাপিং-এ কোথা থেকে আগমণ করেছিলেন সে ব্যাপারে নানা মত থাকলেও আসাম থেকে আগমণের কথাটা বেশি যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়েছে। কেননা তাদের পরবর্তী বংশধরদের অনেক সাধকপুরুষ জীবনের শেষ পর্যায়ে মযযুব হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে সংসার ত্যাগ করে আসামের পথে নিরুদ্ধেশ হয়ে যাওয়ার কিংবদন্তি আছে। ছোটকাল থেকেই আমরা মুরুব্বিদের মুখে এসব বিবরণ শুনতে পাই। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০০৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মোট সাত বছর আমি গোলাপগঞ্জে অতিবাহিত করি। পূর্ণ এ সময়টুকুতে সংগৃহীত তথ্যমতে হযরত মনুশাহ খন্দকার (রাহ) ও তার সাথী পুত্র রানাপিং-এ অস্থায়ী বসতি স্থাপন করেছিলেন বলে অনুমিত হয়।
বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার শুরু হয় ১২০১ খ্রিস্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী কর্তৃক বাংলা বিজয়ের পর। তখন বহুসংখ্যক বিদেশি দাওয়াতি কাফেলা বাংলার প্রত্যন্ত এলাকায় ইসলাম প্রচারের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। যার ফলশ্র“তিতে অজোপাড়াগাঁয়েও ইসলামের আহবান বিস্তৃতি লাভ করে। হযরত খিলজী ১২০১ খ্রিস্টাব্দে বাংলার মসনদ দখলের পর বাংলায় ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা করেন।১২
রাজশক্তি অর্জিত হওয়ায় ইসলামের প্রচার-প্রসার আরো সহজসাধ্য হয়। বাংলা উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান মুসলিম অধ্যষিত অঞ্চল হিসেবে সু-খ্যাতি লাভ করে।
অনেক ইতিহাসবেত্তার ধারণা; ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে হযরত শাহজালাল ও ৩৬০ আউলিয়া কর্তৃক গৌড়রাজ্য জয়ের পূর্বে বৃহত্তর জৈন্তিয়ায় কোনো মুসলিমের বাস ছিলোনা। যদিও এ কথাটা কেবলই শ্র“তিনির্ভর ধারণাপ্রসূত। বিজ্ঞানসম্মত কোনো দলীল প্রমাণের ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়; তথাপি এটাই এখন লোকেরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। যা বাস্তবতার অনুকূল নয় বলেই বিশ্বাস জন্মে। যেহেতু সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তৃণমূল পর্যায়ের অনুসন্ধান ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজ এখনো কারো দ্বারা হয়নি। আমি মনে করি হাটগ্রামের আলোচ্য সমাধিস্থলে প্রতœতাত্ত্বিক গবেষণা আবশ্যক। যাতে প্রকৃত তথ্যের সন্ধান বেরিয়ে আসে। দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ লিখেন, সিলেটের বুকে ইসলামের সত্যিকার রূপের পরিচয় সর্বপ্রথম কে দিয়েছিলেন, তা এখনো সঠিকভাবে নির্দিষ্ট হয়নি। তবে সপ্তম শতাব্দীতে হযরত মাহমুদ (রাহ) ও হযরত মোহাইমিনের দ্বারা বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারিত হওয়ার যে তথ্যটি আমরা বর্ণনা করেছি, তার ঢেউ যে সিলেটেও এসে লেগেছিলো, সে সম্বন্ধে অনুমান করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কেননা ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে রাজা গোবিন্দের পতনের পূর্বেও যে সিলেটে মুসলিমদের বাস ছিলো; তার প্রমাণ শাহজালালপূর্ব যুগে সিলেট সদরের টুলটিকর নিবাসী গাজী বুরহানুদ্দীনের বসতি। তার ওপর তরফে কাজী নূরুদ্দীনের বাস। এ’দুটো স্থিতি ব্যতীত পূর্ববর্তী পর্যায়ে আজমুরদান বা আজমিরিগঞ্জ নামক স্থান মুসলিম সুলতান মালিক উজবেক তুঘরল এর হাতে ১২৪৪ খ্রিস্টাব্দে বিজিত হয়েছিলো। শাহজালাল কর্তৃক গৌড়বিজয়ের পূর্বে তদানীন্তন সিলেটের এ অঞ্চলগুলোতে মুসলিমদের বাস ছিলো।১৩
ক্যাপ্টেন ফিশারের মতে বাংলার গভর্ণর মালিক উজবেক তুঘরল ১২৪৪ খ্রিস্টাব্দে আজমুরদান দখলের পর কামরূপকেও রাজ্যভুক্ত করার ইচ্ছা পোষণ করলে মুসলিম সৈন্যরা সিলেটের ভেতর দিয়েই কামরূপ গমণ করেন। এসব ঘটনা থেকে স্বাভাবিক ভাবেই মনে হয়, ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সিলেটের অংশবিশেষ বাংলার সুলতানদের দ্বারা বিজিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইসলামের সৌরভও ছড়িয়ে পড়ে ছিলো।১৪
এদিকে সুলতান আল-তামাশের আমলে (১২১০-১২৩৬ খ্রিস্টাব্দ ) ইয়ামান থেকে হযরত শাহজালাল (রাহ) দিল্লী আগমণ করেন। বহুসংখ্য বাঙালি তখন শায়খ, গাজী, আউলিয়া ও হযরত শাহজালাল মুজাররাদে ইয়ামানী (১১৯৭-১৩০৩ খ্রি.) এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর দিল্লী অবস্থানকালে রাজা গোবিন্দের নির্যাতনের কাহিনী বুরহানুদ্দীনের নিকট থেকে অবগত হয়ে তিনি ৩৬০ আউলিয়াকে সঙ্গে নিয়ে সিলেট জয় করেন। তখন ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দ। বাংলায় পাঠান সম্রাট আলাউদ্দিন খিলজীর রাজত্বকাল।১৫
পুরাকালে লাউড়, গৌড় ও জৈন্তিয়া নিয়ে সিলেট গঠিত ছিলো। লাউড় রাজ্যের প্রাচীন ইহিতাস আলোচনা করলে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার সমুদয় ভূমি (ইছাকলস পরগনার সুনামগঞ্জ জেলার অংশ ব্যতীত) হবিগঞ্জের কুরশা, জনতরি, পাইকুড়া, সতরসতী, সুনাইতা, জলসুকা, বিথঙ্গল, মুড়িকের, বানিয়াচং, জোয়ান শাছতি, (বর্তমানে ময়মনসিংহ জেলায়) লিকসুনাইতা (বর্তমানে বেশিরভাগ সিলেট জেলায়) কৌড়িয়ার অংশ বিশেষ নিয়ে গৌড়রাজ্য গঠিত ছিলো। এ রাজ্যের উত্তরে ছিলো খাসিয়া পাহাড় ও আংশিকভাবে জৈন্তিয়া পাহাড়। সিলেটের অন্তর্গত কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট তহসীলের সবগুলো পরগনা এবং বর্তমান ভারতের অন্তর্গত মেঘালয়ের সঙ্গে যুক্ত জোয়াই মহকুমা নিয়ে জৈন্তিয়া রাজ্য গঠিত ছিলো। জৈন্তিয়ার সমতল ভূমি ব্যতীত পাহাড়ি অঞ্চল সিলেট থেকে বিচ্ছিন্ন করে খাসিয়া পাহাড়ের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। তবে এ বিভাজনের উৎপত্তি কোথা থেকে হয়েছে তা আজো নির্ণীত হয়নি। প্রবাদের আকারেই তা এখনো প্রচলিত আছে। গৌড়রাজ্য জয়ের সঙ্গে সঙ্গেই হযরত শাহজালাল (রাহ) হযরত সিকন্দর খান গাজীকে সিলেটের শাসনকর্তা নিযুক্ত করে তাকে ইসলামী আইনের আলোকে শাসনকার্য পরিচালনা করার জন্য আদেশ করেন। তার পরবর্তী শাসনকর্তার প্রকৃত নাম ছিলো, নুরুল হুদা আবুল কারামাত সাঈদ হুসাইনী (রাহ)। তিনি সর্বসাধারণের নিকট হায়দর গাজী নামে পরিচিত ছিলেন। তারা উভয়েই ইসলামী আইন অনুযায়ী সিলেট শাসন করেন। হযরত শাহজালাল (রাহ) এর জীবনকালে এবং পরবর্তী সময়ে খুব সম্ভব ইসলামী শাসনব্যবস্থা সিলেটে প্রচলিত ছিলো। এক্ষেত্রে সিলেটের রয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য। অন্যান্য স্থানে সূফী, দরবেশ বা আউলিয়ায়ে কেরাম ইসলাম প্রচার করেছেন তবে ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েম করার তেমন কোনো সুযোগ পাননি। কারণ শাসনব্যবস্থা পূর্বাপর স্থানীয় শাসকদের হাতেই ছিলো।১৬
সিলেট বিজয়ের পর হযরত শাহজালাল (রাহ) বিভিন্ন স্থানে ইসলাম প্রচারের জন্য তার সঙ্গী সূফী-সাধকদের প্রেরণ করেন। তাদের ব্যাপক প্রচারের ফলেই সিলেট ও তাৎপাশ্ববর্তী অঞ্চলে ইসলাম দ্রুত বিস্তৃতি লাভ করে। জৈন্তিয়ায়ও ৩৬০ আউলিয়ার কেউ কেউ ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। ইতিহাসবেত্তাগণের কেউ কেউ জৈন্তিয়া রাজ্যে হযরত শাহজালাল (রাহ) এর একজনমাত্র সফরসঙ্গী ইসলাম প্রচার করেছিলেন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। কারো মতে মাত্র দু’জন সূফী-সাধক জৈন্তিয়ায় ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। প্রকৃতপক্ষে জৈন্তিয়া অঞ্চলে ৩৬০ আউলিয়ার মধ্যকার কতোজন মনীষী ইসলাম প্রচারের কাজ চালিয়ে গেছেন? কে কোথায় অবস্থান করেছিলেন এবং পরবর্তীতে কাকে কোথায় সমাহিত করা হয়? এর সঠিক কোনো তথ্য আজো উদ্ধার না হওয়াতে এ মতোবিরোধের সূত্রপাত ঘটে। তবে স্বাভাবিক জনশ্র“তি এবং জৈন্তিয়া অঞ্চলে যেসব আউলিয়ায়ে কেরামের সমাধি রয়েছে, সেগুলোর ওপর অনুসন্ধান চালিয়ে হযরত শাহজালাল (রাহ) এর সঙ্গী ও শিষ্যগণের সংখ্যা সর্বোচ্চ সাতে পৌঁছতে পারে বলে অনুমিত হয়। এখানে আমরা মাত্র তিনজনকে নিয়ে আলোচনা করার প্রয়াস পাবো।
১. হযরত শায়খ তোরাব (রাহ)। তিনি জৈন্তিয়ায় এসে ইসলাম প্রচার করেন বলে জানা যায়। তার আগমণ কতো সালে এবং কোথা থেকে তিনি প্রচারকার্য শুরু করেছিলেন তা এখনো জানা না গেলেও তার সম্পর্কে বিভিন্ন ইতিহাসগ্রন্থে বিচ্ছিন্নরূপে অনেক কথাই লিপিবদ্ধ হয়েছে। শায়খ তোরাবের প্রকৃত নাম, শাহ আবু তোরাব (রাহ)। তিনি হযরত শাহজালাল (রাহ)-এর নির্দেশেই জৈন্তিয়ায় আগমণ করেন। হযরত হযরত শাহজালাল (রাহ) কর্তৃক প্রেরিত এ মহান সাধক জৈন্তিয়ায় আগমণের পর তার কাছ থেকে অনেক কারামাত প্রকাশ পেতে থাকে। তার কাশফ বা দিব্যদৃষ্টি এবং কারামাতের ওসিলায় বহুলোক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নেয়। শাহ আবু তোরাব (রাহ) জৈন্তিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস না করে সিলেটে ফিরে আসেন। বর্তমানে সিলেটের জেলরোডে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শাহ আবু তোরাব মসজিদের নিকটে তার সমাধি বিদ্যমান।
২. হযরত শায়খ সোনা গাজী (রাহ)। যিনি পবিত্র মক্কার অধিবাসী ছিলেন। ইসলাম প্রচারের জন্য জৈন্তিয়ায় প্রেরিত হন। তিনি জৈন্তিয়ার চারিকাটা পরগনায় পদার্পন করেন। কথিত আছে, শাহ আবু তোরাবের প্রত্যবর্তনের পর হযরত শাহজালাল (রাহ) জৈন্তিয়া রাজ্যে ইসলাম প্রচারের জন্য হযরত শায়খ সোনাগাজী (রাহ)কে প্রেরণ করেন। তিনি চারিকাটায় আস্তানা স্থাপন করে ইন্তেকাল অবধি সেখানে বসবাস করেন। ইন্তেকালের পর তাকে সেখানেই সমাহিত করা হয়। জৈন্তিয়ার চারিকাটা পরগণার নয়াখেল (পূর্ব) গ্রামে একটি উঁচু টিলার ওপর তার সমাধি বিদ্যমান। হযরত শায়খ সোনাগাজী (রাহ) এর পরবর্তী ইসলাম প্রচারকদের মাঝে হযরত শাহজালাল (রাহ)-এর অন্যতম অনুসঙ্গী হয়তো মখদুম জাফর গজনবী (রাহ)-এর নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়।
৩. শায়খ মখদুম জাফর গজনবী (রাহ)। তিনি ইরান থেকে হযরত শাহজালাল (রাহ) এর সঙ্গী হন। গোধরাইল পরগণার অন্তর্গত মুহাম্মদপুরে এসে আস্তানা স্থাপন করেন। তার বংশধরগণ এখনো মুহাম্মদপুরে আছেন। জনশ্র“তি রয়েছে এই হযরত গজনবী (রাহ)-এর বংশধরদের মধ্যে এক অতি সু-পুরুষ জৈন্তিয়ায় আগমণ করে রাজপুরের লোকদের কাছে অলৌকিক ক্ষমত বলে অতিশয় প্রিয় হয়ে ওঠেছিলেন। তার অসামান্য রূপলাবন্যে মুগ্ধ হয়ে জৈন্তিয়ার রাজকুমারী তার সঙ্গে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। তখন থেকে জৈন্তিয়ায় মুসলিমগণ ব্যাপকহারে বসতি স্থাপন করতে আরম্ভ করেন। যার ফলে জৈন্তিয়া রাজ্যবাপী দ্রুতবেগে ইসলামের প্রসার হয়।
১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে হযরত শাহজালাল (রাহ) কর্তৃক সিলেট বিজিত হওয়ার পর তার সঙ্গে আগত তিনশত ষাটজন আউলিয়ায়ে কেরামের মধ্যে প্রায় সকলেই বিয়ে-শাদী করে এদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করলে এখানকার অধিবাসীদের রক্তের সঙ্গে এসব ওয়ালী আল্লাহগণের রক্তের মিশ্রণ ঘটে। যেহেতু তাদের মধ্যে সেমেটিক, ইরানী ও তুর্কী রক্তের লোকই অধিক ছিলেন এজন্য বৃহত্তর জৈন্তিয়াসহ সিলেটের মুসলিম অধিবাসীদের রক্তে সেমেটিক ও ইরানী বা তুর্কী রক্তের আধিক্য বিরাজমান। বর্তমানে বৃহত্তর জৈন্তিয়া অঞ্চলে মুসলিমগণই সংখ্যাগরিষ্ট। সারা দেশের মুসলমানদের তুলনায় এখানকার মুসলিমগণ খুবই ধর্মভীরু। এতোদ্বঞ্চলের শিক্ষিত মানুষের মাঝে ওলামায়ে কেরামের সংখ্যাই বেশি। আজ বৃহত্তর জৈন্তিয়ায় যে নিখাঁদ ইসলামী সভ্যতা জনগণ প্রাণবন্ত রেখেছে, তার নজির অন্য কোথাও মেলা ভার।১৭
তথ্যসূত্র:
১. আব্দুল মান্নান তালিব, বাংলাদেশে ইসলাম-পৃ. ২২।
২. আমাদের প্রকাশনী, সিলেট:জমিয়তের ইতিহাস-পৃ. ১৫।
৩. মুহাম্মদ নু’মান, সাহাবায়ে কেরামের চট্টগ্রাম সফর- পৃ. ১৮-২৫।
৪. ড. মুহাম্মদ এছহাক, ইলমে হাদীসে ভারতীয় উপমহাদেশের অবদান- পৃ. ৩-৭।
৫. প্রাগুক্ত-পৃ. ১৮।
৬. আমাদের প্রকাশনী, সিলেট: জমিয়তের ইতিহাস- পৃ. ১৯।
৭. হাদীসুর রহমান: ইসলামের ইতিহাস-পৃ. ১৭৭।
৮. ড. গোলাম সাকলায়েন: বাংলাদেশের সূফী সাধক-পৃ. ৩।
৯. ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ: সীরাত স্মরণিকা-১৪০৪ হি.।
১০. দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ: সিলেটে ইসলাম-পৃ. ৩৬।
১১. The history of jaintia: by-Syed Mortuza Ali.
১২. হাদীসুর রহমান: ইসলামের ইতিহাস-পৃ. ১৭৭।
১৩.. দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ: সিলেটে ইসলাম-পৃ.১১-১২।
১৪.. Captain Fishar’s Article-Published in the same Jornal.
১৫. সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদবী: আদ্দা’ওয়াতুল ইসলামিয়া ফীল হিন্দ, পৃ. ৩-৮।
১৬. দেওয়ান মুহাম্মদ আজরফ: সিলেটে ইসলাম, পৃ: ১১-১২।
১৭. এ.জেড.এম. শামসুল আলম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ: শায়খ জালাল কুনিয়াভী -পৃ. ২০০।
লেখক: মুহাদ্দিস ও মুফতি, জামেয়া মাদানিয়া বিশ্বনাথ, সিলেট।
Posted ০০:০৪ | সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin