রবিবার ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পিতা-মাতার খেদমতে সন্তানের করণীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩ | প্রিন্ট

পিতা-মাতার খেদমতে সন্তানের করণীয়

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা তার ইবাদতের পাশাপাশি পিতা-মাতার খেদমতের নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۚ إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا
অর্থ: ‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাকে ছাড়া অন্য কারো এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বলো তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা’। (সূরা: বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৩)

 

পিতা-মাতা সন্তানের জন্য পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ সম্পদ। যাদের বাবা-মা বেঁচে নেই, তারাই দুনিয়তে সবচেয়ে বেশি অসহায়। পিতা-মাতার অভাব কখনো ধন-সম্পদ দিয়ে পূরণ হয় না। এমনকি পিতা-মাতার অভাব পূরণে কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনাও চলে না।

তাই পিতা-মাতা জীবিত থাকলে তাদের খেদমত করা যেমন প্রয়োজন তেমনি তাদের জন্য দোয়া করা আরো বেশি প্রয়োজন। আর এ দুটি কাজই সন্তানের জন্য ইবাদত। সে কারণেই পিতা-মাতার প্রতি রয়েছে সন্তানের করণীয়। কেননা মহান আল্লাহ তাআলা তার ইবাদতের পাশাপাশি বাবা-মায়ের খেদমতের নির্দেশ দিয়েছেন।

পিতা-মাতার খেদমতে সন্তানের করণীয়

দুনিয়ার সবচেয়ে মধুময় শব্দ ‘পিতা-মাতা’। শব্দ দুইটির কোনো পরিমাপ বা তুলনা হয় না। কেননা প্রতিটি পিতা-মাতা সন্তানের জন্য যে অকৃত্রিম ভালো ও শ্রম দেন তা পরিমাপ করার কোনো উপায় নেই। সে কারণে পিতা-মাতার জন্য সন্তানের রয়েছে বেশ কিছু করণীয়। তাহলো-

 

(১) পিতা-মাতার জন্য সাদকা করা: পিতা-মাতা বেঁচে থাকতে সন্তানের যত্ন নিতে গিয়ে কিংবা অন্য কোনো কারণে দান-সাদকা করে যেতে পারেননি অথবা বেঁচে থাকলে হয়তো বেশি বেশি দান-সদকা করতেন। সে জন্য পিতা-মাতার পক্ষ থেকে সন্তানের উচিত বেশি বেশি দান করা। হাদিসে এসেছে-

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! হঠাৎ করে আমার মা মারা গেছেন এবং কোনো অসিয়ত করে যেতে পারেননি। আমার মনে হয়- তিনি যদি কথা বলতে পারতেন তাহলে অসিয়ত করে যেতেন। এখন আমি যদি তার পক্ষ থেকে সাদকা করি তাহলে কি তিনি এর সওয়াব পাবেন? উত্তরে তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’।’ (মুসলিম)

 

(২) রোজা রাখা: পিতা-মাতা জীবিত নেই। যদি তাদের কোনো মানতের বা কাজা রোজা অনাদায় থাকে তবে তাদের পক্ষ থেকে এ রোজা পালন করার নির্দেশ রয়েছে হাদিসে। এতে তাদের মানতের ও কাজা রোজা আদায় হয়ে যাবে। এছাড়াও সন্তান চাইলে মৃত পিতা-মাতার উদ্দেশ্যে যেকোনো দিনে রোজা রাখতে পারেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রোজার কাজা (জিম্মায়) রেখে যদি কোনো ব্যক্তি মারা যায় তবে তার অভিভাবক (রেখে যাওয়া সন্তান বা আপনজন) তার পক্ষ থেকে সওম বা রোজা আদায় করবে’। (বুখারি)

 

(৩) হজ ও ওমরা করা: মা-বাবার পক্ষ থেকে ওমরা ও হজ করা। পিতা-মাতার উদ্দেশ্যে ওমরা ও হজ করলে তা আদায় হয়ে যাবে। হাদিসে এসেছে-

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, জুহাইনা গোত্রের এক নারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, আমার মা হজের মান্নত করেছিলেন; তবে তিনি হজ করার আগেই ইন্তেকাল করেছেন। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ করতে পারি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তার পক্ষ থেকে তুমি হজ আদায় কর। তুমি এ ব্যাপারে কি মনে কর যে, ‘যদি তোমার মায়ের ওপর কোনো ঋণ থাকত, তাহলে কি তুমি তা আদায় করতে না? সুতরাং আল্লাহর হক (হজের মান্নত) আদায় করে দাও। কেননা আল্লাহর হকই সবচেয়ে বেশি আদায়যোগ্য’। (বুখারি)

উল্লেখ্য, পিতা-মাতার পক্ষ থেকে (বদলি) হজ আদায় করার আগে নিজের হজ বা ওমরা আদায় করতে হবে। নিজের হজ-ওমরা আদায়ের পর বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে হজ ও ওমরা আদায় করবে।

(৪) কোরবানি করা: মৃত পিতা-মাতার জন্য সওয়াবের উদ্দেশ্যে সন্তান কোরবানি করতে পারবে। তাতে তারা সওয়াবের অধিকারী হবে। হাদিসে এসেছে-

 

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোরবানি করার জন্য দুই শিং বিশিষ্ট দুম্বা আনতে আদেশ দেন। যেটি কালোর মধ্যে চলাফেরা করতো (সেটির পায়ের গোড়া কালো ছিল)। কালোর মধ্যে শুইতো (পেটের নিম্নাংশ কালো ছিল)। আর কালোর মধ্য দিয়ে দেখতো (চোখের চারদিকে কালো ছিল)। সেটি আনা হলে তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন, ‘ছুরিটি নিয়ে এসো। তারপর বললেন, ওটা পাথরে ধার দাও। আমি (হজরত আয়েশা) ধার দিলাম। পরে তিনি সেটি নিলেন এবং দুম্বাটি ধরে শোয়ালেন। এরপর সেটা জবাই করলেন এবং বললেন-

بِاسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ

অর্থ: ‘আল্লাহর নামে (জবাই করছি)। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ, মুহাম্মাদের পরিবার ও তার উম্মাতের পক্ষ থেকে এটা কবুল করে নাও’।

এরপর এটা কোরবানি করেন। (মুসলিম)

(৫) পিতা-মাতার ওসিয়ত পূরণ করা: পিতা-মাতা যদি ইসলামি শরিয়ত সম্মত কোনো অসিয়ত করে যান তবে তা পূরণ করা সন্তানের ওপর আবশ্যক। হাদিসে এসেছে-

হজরত শারিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, তার মা তাকে তার (মায়ের) পক্ষ থেকে একজন মুমিন দাসী আজাদ করার জন্য অসিয়ত করে যান। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা (তার মৃত্যুর সময়) তার পক্ষ থেকে একজন মুমিন দাসী আজাদ করার জন্য অসিয়ত করে গেছেন। এখন আমার কাছে হাবশের ‘নূবিয়্যা’ অঞ্চলের একজন দাসী আছে। এরপর আগের হাদিসে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে, তাহলো-

 

‘তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে আস। রাবি বলেন, তখন আমি তাকে নিয়ে আসি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করেন- আল্লাহ কোথায়? সে বলে, আসমানে। এরপর তিনি জিজ্ঞাসা করেন- আমি কে? সে বলে, আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তাকে আজাদ করে দাও। সে মুমিন।’ (আবু দাউদ)

(৬) পিতা-মাতার বন্ধু-বান্ধব সম্মান করা: পিতা-মাতার বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা, উত্তম আচরণ করা, সম্মান করা এবং  তাদেরকে দেখতে যাওয়া ও তাদের জন্য হাদিয়া (উপহার) নেওয়া। হাদিসে এসেছে-

 

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, মক্কার এক রাস্তায় আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে এক বেদুঈনের দেখা হলো। আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে সালাম দিলেন এবং তিনি যে গাধার পিঠে আরোহণ করতেন, সে গাধটি তাকে আরোহণের জন্য দিয়ে দিলেন। তিনি তার মাথার পাগড়িটিও তাকে দান করলেন। তখন (উপস্থিত) আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাকে বললেন যে, আমরা তাকে বললাম- ‘আল্লাহ আপনার কল্যাণ করুন। বেদুঈনরা তো অল্পেই সন্তুষ্ট হয়ে যায়। (এতো দেওয়ার প্রয়োজন কী ছিল?) তখন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এ ব্যক্তির (বেদুইনের) বাবা ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর বন্ধু ছিলেন। আর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, ‘কোনো ব্যক্তির সর্বোত্তম নেকির কাজ হচ্ছে তার বাবার বন্ধুর সঙ্গে সহমর্মিতার সম্পর্ক বজায় রাখা’।(মুসলিম)

(৭) আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা: পিতা-মাতার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা সন্তানের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَصِلَ أَبَاهُ فِي قَبْرِهِ،فَلْيَصِلْ إِخْوَانَ أَبِيهِ بَعْدَهُ

অর্থ: ‘যে ব্যক্তি তার পিতার সঙ্গে কবরে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ভালোবাসে, সে যেন পিতার মৃত্যুর পর তার ভাইদের (আত্মীয়দের) সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখে’। (ইবন হিববান)

 

(৮) পিতা-মাতার ঋণ পরিশোধ করা: পিতা-মাতা কোনো ঋণ করার পর তা পরিশোধ করার আগে মারা গেলে সন্তানের জন্য আবশ্যক পিতা-মাতার ঋণ পরিশোধ করা। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঋণ পরিশোধ করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুমিন ব্যক্তির রূহ তার ঋণের কারণে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, যতক্ষণ না তা পরিশোধ করা হয়’। (ইবনে মাজাহ)

 

এমনকি ঋণ পরিশোধ না করার কারণে জান্নাতের যাওয়ার পথও বন্ধ হয়ে যায়; যদি সে আল্লাহর রাস্তায় শহিদও হয়। হাদিসে এসেছে-

অর্থ: ‘যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দার ঋণ পরিশোধ না করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না’। (নাসাঈ, তাবারানি, মুসতাদরাকে হাকেম)

(৯) কাফফারা আদায় করা: কোনো কারণে যদি পিতা-মাতার কাফফারা হয়ে থাকে। আর যদি কাফফারা বাকি থাকে তবে তা আদায় করা সন্তানের জন্য একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গভীর রাত পর্যন্ত দেরি করে (এশার নামাজ পড়ে)। এরপর তার পরিবারের কাছে গিয়ে দেখে যে, বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়েছে। তার স্ত্রী তার খাবার নিয়ে এলে সে সন্তানদের কারণে কসম করলো যে, সে খাবে না। পরে তার ভাবান্তর ঘটলো এবং সে খেয়ে নিল। তারপর সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসে ও তাকে এ ঘটনা বলে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি কোনো বিষয়ে কসম করে, পরে তার বিপরীতটিকে তা থেকে উত্তম মনে করে, সে যেন তা করে ফেলে এবং নিজের কসমের কাফফারা দেয়’। (মুসলিম)

 

কাফফারার এ বিধান জীবিত-মৃত সবার জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। যদি কোনো পিতা-মাতার এ রকম কোনো কাফফারা বাকি থাকে তবে সন্তানের ওপর তা আদায় করা আবশ্যক।

(১০) পিতা-মাতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা: পিতা-মাতার জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা। সন্তান পিতা-মাতার জন্যর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআলা তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, মৃত্যুর পর কোনো বান্দার মর্যাদা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তখন সে বলে- হে আমার রব! আমি তো এতো মর্যাদার আমল করিনি, কীভাবে এ আমল এলো? তখন বলা হবে- তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় এ মর্যাদা তুমি পেয়েছ’। (আদাবুল মুফরাদ)

(১১) গোনাহের কাজ বন্ধ করা: বাবা-মা বেঁচে থাকতে কোনো গুনাহের কাজের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে বা চালু করে গেলে তা বন্ধ করা আবশ্যক। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে লোক সঠিক পথের দিকে ডাকে তার জন্য সে পথের অনুসারীদের প্রতিদানের সমান প্রতিদান রয়েছে। এতে তাদের প্রতিদান থেকে সামান্যও ঘাটতি হবে না। আর যে লোক বিভ্রান্তির দিকে ডাকে তার উপর সে রাস্তার অনুসারীদের পাপের অনুরূপ পাপ বর্তাবে। এতে তাদের পাপরাশি সামান্য হালকা হবে না’।’ (মুসলিম)

(১২) পিতা-মাতার জন্যর কবর জিয়ারত করা: পিতা-মাতার জন্যর কবর জিয়ারত করা সন্তানের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। এর মাধ্যমে সন্তান এবং পিতা-মাতার জন্য উভয়ই উপকৃত হয়। হাদিসে এসেছে-

 

হজরত সুলাইমান ইবনে বুরাইদা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তার বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি তোমাদের কবর জিয়ারাত করতে নিষেধ করেছিলাম। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তার মায়ের কবর জিয়ারত করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা কবর জিয়ারত কর। কেননা, তা পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়’। (তিরমিজি)

(১৩) পিতা-মাতার জন্য দোয়া করা: আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে পিতা-মাতার জন্য বিশেষ ৩টি দোয়া উল্লেখ করেছেন। তারা জীবিত থাকুক আর না থাকুক, তাদের জন্য সব সময় কোরআনে বর্ণিত দোয়াগুলো করা জরুরি। এ সব দোয়ায় নিজেদের জন্য কল্যাণ পাওয়া ঘোষণাও রয়েছে। তাহলো-

১. رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
উচ্চারণ: ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা’।

অর্থ: (হে আমাদের) পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া কর; যেভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছেন’। (সূরা: বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৪)

২. رَبَّنَا ٱغْفِرْ لِى وَلِوَٰلِدَىَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ ٱلْحِسَابُ
উচ্চারণ: ‘রাব্বানাগফিরলি ওয়ালিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিলমুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব’।

অর্থ: ‘হে আমাদের রব! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার বাবা-মাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দেবেন’। (সূরা: ইব্রাহিম, আয়াত: ৪১)

৩. رَّبِّ ٱغْفِرْ لِى وَلِوَٰلِدَىَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيْتِىَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَٱلْمُؤْمِنَٰتِ وَلَا تَزِدِ ٱلظَّٰلِمِينَ إِلَّا تَبَارًۢا
উচ্চারণ: ‘রাব্বিগফিরলি ওয়ালিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিমান দাখালা বাইতিয়া মুমিনাও ওয়া লিলমুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত ওয়া লা তাযিদিজ জ্বালিমিনা ইল্লা তাবারা’।

অর্থ: ‘হে আমার রব! আমাকে, আমার বাবা-মাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন আর আপনি জালিমদের ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না’। (সূরা: নুহ, আয়াত: ২৮)

অল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জীবিত-মৃত পিতা-মাতার  জন্য বেশি বেশি দোয়া করা; বাবা-মার মৃত্যুর পর হাদিসে নির্দেশিত করণীয়গুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।   সূএ: ডেইলি-বাংলাদেশ

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৪:১৪ | সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com