রবিবার ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাঁচ গ্রুপের পেটে সোনালী ব্যাংকের ৯৮০ কোটি টাকা

  |   বুধবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | প্রিন্ট

পাঁচ গ্রুপের পেটে সোনালী ব্যাংকের ৯৮০ কোটি টাকা

ডেস্ক রিপোর্ট: নানা অনিয়মের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক থেকে বের হয়ে যাওয়া কোটি কোটি টাকা আদায় হচ্ছে না। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নানা উদ্যোগ নিচ্ছে, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এবার বেসরকারি খাতের পাঁচটি ব্যবসায়িক গ্রুপের পেটে সোনালী ব্যাংকের হাজার কোটি টাকার ঋণ আটকে গেছে। এর মধ্যে অলটেক্স গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠানে ৩৫০ কোটি টাকা, মুন্নু গ্রুপের মুন্নু ফেব্রিক্সের ২৩০ কোটি টাকা, ম্যাক্স গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ১৫০ কোটি টাকা, অ্যাঞ্জেল গ্রুপের কাছে ১৪০ কোটি টাকা এবং আল আসাদের দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ১১০ কোটি টাকা আটকে রয়েছে। পাঁচটি গ্রুপেরই ছয়টি প্রতিষ্ঠান এখন বন্ধ। ঋণ আদায়ে ব্যাংক উদ্যোগ নিয়েও কোনো সাড়া পাচ্ছে না। গ্রাহকরাও ব্যাংকের সঙ্গে করছেন না কোনো যোগাযোগ। এই অবস্থায় ব্যাংক টাকা আদায়ে তাদের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা করেছে।
সোনালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, নানা প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের অনেক টাকা বেরিয়ে গেছে। এখন সেগুলোকে শনাক্ত করা হচ্ছে। যাদেরকে পাওয়া যাচ্ছে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একেকজন গ্রাহকের পেছনে একেকজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু টাকা আদায় হয়েছে। ফলে গত ছয় মাসে সোনালী ব্যাংক অনেক টাকা আদায় করতে সক্ষম হয়েছে।
সূত্র জানায়, পাঁচ গ্রুপের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ে অলটেক্স গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠানের ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে অলটেক্স ইন্ড্রাস্ট্রিজের নেয়া ২২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, অলটেক্স ফ্রেবিক্সের ৪০ কোটি ২৮ লাখ টাকা, অলটেক্স স্পিনিংয়ের ৪৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা খেলাপি হিসেবে রয়েছে। এসব ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের হাতে পর্যাপ্ত জামানত নেই। প্রতিষ্ঠানের তিনটি কারখানাই বর্তমানে বন্ধ। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কোম্পানি সচিব ইতোমধ্যেই চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। মতিঝিল থেকে অফিসে যোগাযোগ করেও মালিক পক্ষের কারো সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্রুপের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৯২ কোটি টাকা। ঋণ শোধ না করায় গত ৩০ জুন পর্যন্ত তা বেড়ে ৩৫০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ঋণ পরিশোধ করছে না। বারবার নবায়নের কথা বলে ঝুলিয়ে রেখেছে। সোনালী ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, কোম্পানির ঋণের বিপরীতে দেয়া জামানত অতিমূল্যায়ন করা হয়েছে। এগুলো এখন সোনালী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে নেই।
এ দিকে, মুন্নু গ্রুপ ছাড়া বাকি সব ক’টি গ্রুপের ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের হাতে পর্যাপ্ত জামানত নেই। টাকা আদায় করার কোনো পথ না পেয়ে ব্যাংক সব গ্রাহকের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে সম্প্রতি মামলা করেছে। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচলক এসব ঋণ আদায়ের জন্য প্রতিটি গ্রাহকের বিরুদ্ধে একজন করে কর্মকর্তা নিয়োগ করেছেন। তারা গ্রাহকের এবং আদালতের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবেন। এদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের জন্য গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে শাখার শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। এতে দেখা যায় দুটি গ্রুপ ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে নবায়ন করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে এর আগেও ব্যাংকের চাপের মুখে তারা ঋণ পরিশোধ করার কথা বলেও করেনি।
মুন্নু গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মুন্নু ফেব্রিক্সের ঋণের পরিমাণ ২২৯ কোটি টাকা। মাকিকগঞ্জের এই কারখানাটি আগে ভালো চললেও গ্যাসসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার কারণে এর উৎপাদন বন্ধ। ফলে তারা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছে না। তারা ঋণটি নবায়ন করতে চাচ্ছে। যার জন্য ২২ কোটি টাকা দিতে হবে। কিন্তু কারখানা চালু করার নিশ্চয়তা না পাওয়ার কারণে তারা এটি নবায়ন করছে না।
সোনালী ব্যাংক সূত্র জানায়, কারখানাটি বেশি দিন বন্ধ থাকলে এর যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাবে। তখন এটি চালু করা কঠিন হবে। তখন ঋণ আদায়ও কঠিন হয়ে পড়বে।
ম্যাক্স গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ১৫০ কোটি টাকা। ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের হাতে জামানত নেই। দুটি প্রতিষ্ঠানই বন্ধ। ফলে এই ঋণ আদায় একেবারেই অনিশ্চিত। গ্রাহকের পক্ষ থেকেও ব্যাংকের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখা হচ্ছে না। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা চেষ্টা করেও গ্রাহকের কোনো হদিস পাচ্ছেন না।
আল আসাদ এগ্রো কোম্পানি লিমিটেডের খেলাপি ঋণ ৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর আল আমরিন আটা ময়দা কোম্পানির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬০ কোটি টাকা। টাকা আদায়ের জন্য অর্থঋণ আদালতে মামলা করা হয়েছে। কোনো টাকা শোধ করেনি। গ্রাহকের কোনো প্রতিষ্ঠানেরই অস্তিত্ব নেই। বাজারে এদের পণ্য থাকার কথা বলা হলেও কোনো পণ্য নেই। ভুয়া জামানত বন্ধক নিয়ে ব্যাংক থেকে এসব টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ শাখায় বড় ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে ২০১৩ সালে। সেখান থেকে প্রায় হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কয়েকটি শিল্প গ্রুপ ও গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানই নিয়েছে ১৪০ কোটি টাকার বেশি। অ্যাঞ্জেল গ্রুপের নামে পণ্য রফতানির নামে ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলে টাকা বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু দেশে কোনো পণ্য আনেনি তারা। এর বিপরীতে কোনো পণ্য রফতানিও হয়নি। ফলে তাদের নেয়া ঋণ আদায় করাও সম্ভব হয়নি। সূত্র: নয়া দিগন্ত

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১২:০৭ | বুধবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com