| সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
শফিক রেহমান
বিরোধী দলগুলোর ডাকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি চলছে। রাজধানী ঢাকা কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে। টিভি টক শোতে সাহসী কিছু বক্তা বিদ্রূপ করে বলেছেন, শেখ হাসিনা এখন আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি ঢাকা শহরের প্রধানমন্ত্রী। তাদের কথা আংশিক সত্যি। তাদের বলা উচিত ছিল— শেখ হাসিনা এখন শুধু তার বাসভবন গণভবন এবং তার অফিস, প্রাইম মিনিস্টার্স অফিস বা সংক্ষেপে পিএমও’র প্রধানমন্ত্রী। কারণ এখন শুধু এই দুটি স্থানের ভেতরে শেখ হাসিনা মুক্তভাবে চলাফেরা করতে পারেন।
মুক্তভাবে, তবে নির্ভয়ে নয়।
গুজব ছড়িয়ে আছে, ঘুমোনোর আগে শেখ হাসিনা নিজে চেক করে দেখেন তার দরজা-জানালা ঠিকমতো বন্ধ আছে কিনা। রেড টেলিফোনে ডায়ালিং টোন আছে কিনা। মোবাইল সেটে ফেভারিট ক্যাটেগরিতে বিশেষ কয়েকটি নাম্বার ডিসপ্লে হচ্ছে কিনা।
এই দুটি স্থানের চারপাশে বিভিন্ন ইউনিফর্মধারী নিরাপত্তাকর্মীরা রাইফেল হাতে সার্বক্ষণিক পাহারায় নিয়োজিত। মোহাম্মদপুরে গণভবনের বাইরে মিরপুর রোডে বিকেলের পর সাধারন মানুষের চলাচল করে দেয়া হয় সংকুচিত। রোড ডিভাইডারের দুই পাশে যানবাহন ও মানুষ চলাচলের বদলে তখন ডিভাইডারের পশ্চিম লেইনে চলাচল করতে দেয়া হয়। ডিভাইডারের পূর্ব লেইনে চলাচল নিষিদ্ধ হয়। পূর্ব লেইনে গণভবনের সামনে টহলরত এবং আড্ডারত ওই নিরাপত্তাকর্মীরা কারা? এই প্রশ্ন ধ্বনিত হতে থাকে পশ্চিম লেইনে জ্যামে আটকে পড়া ক্ষুব্ধ বিরক্ত বাস, সিএনজি ও যাত্রীদের মুখে। ওরা কি পুলিশ? র্যাব? নাকি ইনডিয়াতে ট্রেইনিং পাওয়া ছাত্রলীগের সদস্য?
২৪ নভেম্বর কলকাতার ইংরেজি দৈনিক দি টেলিগ্রাফে প্রকাশিত দেবদ্বীপ পুরোহিতের নেয়া সজীব ওয়াজেদ জয়ের ইন্টারভিউতে এই প্রশ্নের উত্তরটা অনুমান করা যায়।
জয় বলেন, ক্যু কিভাবে হয় সেটা বুঝতে হবে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে এমন কোনো জেনারেল বা সেনা অফিসার নেই যার বা যাদের ক্যু-র ইচ্ছা আছে। সফল ক্যু করতে হলে শেখ হাসিনার কাছে পৌছাতে হবে, যেন তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেন। শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবন পাহারা দিচ্ছে তার প্রতি বিশ্বস্তরা। ওই গার্ডরা কাউকে গণভবনে ঢুকতে দেবে না। তাছাড়া যে কোনো ক্যু প্রচেষ্টায় বহু রক্ত ঝরবে। আমি মনে করি না অফিসারদের কোনো গ্রুপ সেই ঝুকি নেবে। আমি আপনাকে বলে দিচ্ছি, শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়বেন না। সেটা হতে পারে শুধু আমাদের লাশের ওপর দিয়ে।
একই অবস্থা বিরাজ করছে তেজগাওয়ে এয়ারপোর্ট রোডে প্রাইম মিনিস্টার্স অফিসের সামনে। সেখানেও বিকেলের পর গার্ডদের সংখ্যা যায় বেড়ে। রাইফেল নিয়ে অলস ভঙ্গিতে দাড়িয়ে থাকে গার্ডরা। কেউ কেউ দেয়ালে হেলান দিয়ে ঘাসের ওপর বসে থাকে।
লাল কাপড়ে শাদা অক্ষরে সংবাদপত্র ব্যানার ঝোলানো সিএনজিতে চড়ে অফিসে যাবার সময়ে ওদের দেখে শামীমের মনে পড়ছিল লন্ডনে রানীর বিভিন্ন ভবন ও প্রাসাদ পাহারায় নিয়োজিত গার্ডদের কথা, যারা রোদ বৃষ্টি ঝড় ও বরফপাত উপেক্ষা করে সটান দাড়িয়ে থাকে। সেই মনোবল শেখ হাসিনার এইসব গার্ডদের আছে কি? সেই দেহবল যে নেই সেটা বলা বাহুল্য। সম্ভবত সেই অস্ত্র পারদর্শিতাও এদের নেই।
তাহলে শেখ হাসিনা কতোখানি নিরাপদ? গণভবন এবং পিএমও-র বাইরে শেখ হাসিনার চলাচল হয়ে গিয়েছে সীমিত। সম্প্রতি টঙ্গিতে ইজতেমায় তিনি অংশ নেননি। সেদিন গণভবনে থেকে মোনাজাত পড়েছেন। সরকারি আনুষ্ঠানিকতা ও দলীয় সমাবেশে তার উপস্থিতি হচ্ছে অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থার অধীনে।
টানা অবরোধের জন্য পথে যান চলাচল ছিল কম। শামীম ভাবছিল বডি গার্ড ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আসলেই কতোখানি নিরাপদ?
আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য সাউথ কোরিয়ান প্রেসিডেন্ট পার্ক চাং হি ১৯৭২-এ সংবিধান সংশোধন করেছিলেন। এই সংবিধানে বিচার বিভাগে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, বিরোধীদের পাইকারিভাবে গ্রেফতার, জরুরি আইনের শাসন চালু এবং সংসদের এক-তৃতীয়াংশ আসনে নিজের পছন্দের মানুষকে সরাসরি নির্বাচিত ঘোষণা, প্রভৃতির বিধান হয়। এই সংবিধানের নাম হয়েছিল ইউশিন (ণঁংযরহ) সংবিধান।
পরিবর্তিত সংবিধানের আওতায় ১৯৭৮-এ একটি সাজানো নির্বাচনের পরে প্রেসিডেন্ট পার্ক বিরোধী দমন নীতি আরো উগ্রভাবে প্রয়োগ করেন। আগস্ট ১৯৭৯-এ ২০০০ পুলিশের হামলায় বিরোধীদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় তছনছ হয়ে যায়। বিরোধী নেতা ও কর্মীরা আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হন।
দুই মাস পরে ২৬ অক্টোবর ১৯৭৯-তে রাত পৌনে আটটায় প্রেসিডেন্ট পার্ক চাং হি একটি ডিনারে নিমন্ত্রিত হয়েছিলেন কোরিয়ান সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী, কোরিয়ান সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সি বা কেসিআইএ (কঈওঅ)-র একটি নিরাপদ ভবনে। সেখানে ডিনারের সময়ে কেসিআই ডিরেক্টর কিম জায়ে-কিউ ওয়ালথার পিপিকে পিস্তলের গুলিতে হত্যা করেন প্রেসিডেন্ট পার্ক-কে, যিনি প্রায় ১৮ বছর যাবত্ ক্ষমতায় ছিলেন। প্রেসিডেন্ট পার্ক নিহত হবার পরে সাউথ কোরিয়াতে প্রকৃত গণতন্ত্র ফিরে আসার পথ খুলে যায়। বিচারের সময়ে কিম বলেন, আমি ইউশিন সংবিধান নামে জানোয়ারটার হার্টে গুলি করেছিলাম। এই দেশের গণতন্ত্রের জন্য আমি সেটা করেছিলাম। এর বেশি কিছু নয়, এর কম কিছু নয়। (I shot by the heart of Yushin like a beast. I did that for democracy of this country. Nothing more, nothing less.)
প্রেসিডেন্ট পার্ক নিহত হবার পাচ বছর পাচ দিন পরে ৩১ অক্টোবর ১৯৮৪-তে সকাল নটা বিশে ইনডিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি তার বাসভবনের বাগানে তারই দুই শিখ বডি গার্ড, সতওয়ান্ত সিং এবং বিয়ন্ত সিংয়ের গুলিতে নিহত হন।
প্রেসিডেন্ট পার্ক নিহত হয়েছিলেন রাজনৈতিক কারণে। তিনি সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে নিজেকে ক্ষমতায় চিরস্থায়ী করতে গিয়েছিলেন। গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আর ইন্দিরা গান্ধি নিহত হয়ছিলেন ধর্মীয় কারণে। তত্কালীন কংগ্রেসের সরকারের নির্দেশে শিখদের পবিত্রতম স্থান অমৃতসরে স্বর্ণমন্দিরে ইনডিয়ান নিরাপত্তা বাহিনী হামলা চালিয়ে বহু শিখকে হত্যা করেছিল। পরিণতিতে বিক্ষুব্ধ শিখরা ইন্দিরা গান্ধিকে হত্যা করতে বদ্ধপরিকর হয়েছিল।
এই দুটি ঘটনায় বোঝা যায় রাজনৈতিক আবেগ এবং ধর্মীয় উন্মাদনা মানুষকে রূপান্তরিত করতে পারে। তখন অতি বিশ্বস্ত মানুষও হতে পারে অবিশ্বস্ত। সুতরাং এ রকম পরিস্থিতি থেকে কোনো শাসককে রক্ষা করতে হলে রাজনৈতিক আবেগ ও ধর্মীয় উন্মাদনার কারণগুলো অঙ্কুরেই বিনাশ করতে হবে। সেটাই হবে শাসকের প্রকৃত নিরাপত্তা।
অতীতে বাংলাদেশে দুই শাসক, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং প্রেসিডেন্ট এরশাদকে এত কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেন নিতে হয়নি, সেটাও ভেবে দেখতে পারেন বর্তমান শাসক শেখ হাসিনা। তিনি ভেবে দেখতে পারেন কেন তাকে এবং তার ছেলেকে বার বার সেনা হস্তক্ষেপের কথা টেনে আনতে হচ্ছে? তাদের অবশ্যই বোঝা উচিত এর ফলে
এক. সেনাবাহিনী বিব্রতকর ও অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে যাচ্ছে, কারণ এতে শাসক ও সেনাদের পরস্পরের মধ্যে অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতার ইংগিত ফুটে উঠছে। এটা কারোই কাম্য নয়।
দুই. সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে এমন আভাস দেয়া হচ্ছে এবং এটাও কারো কাম্য নয়।
তিন. শেখ হাসিনা ও জয়ের এই ধরনের প্রকাশ্য উক্তির পরে বিষয়টির সম্ভাবনা নিয়ে প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য আলোচনার যৌক্তিক কারণ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার একাধিক উপদেষ্টা ছিলেন এবং এখনো আছেন। আশা করা যায় অন্ততপক্ষে তাদের একজন সাহসী হয়ে তাকে উপদেশ দেবেন যে, ক্যু চিন্তা একটি কুচিন্তা যার বহিঃপ্রকাশ সাধারন মানুষকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়। তখন তারা বাধ্য হয় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে।
নিউজ রুমে ঢুকতেই শামীম খাবারের গন্ধ পেল। দেখল একটা টেবিলে বড় বার্থডে কেক। আনন্দ মুখরিত রুমে অন্যান্য সেকশনেরও অনেকে উপস্থিত। সিলিং থেকে কিছু লাল নীল সবুজ বেলুন ঝুলছে।
সে ভুলে গিয়েছিল আজ নিউজ এডিটর মেরির জন্মদিন।
এই বিস্মৃতির জন্য মেরিকে সে কি বলবে?
সাধারনত মেরি থৃপিস পরে অফিসে আসে। সেদিন সে পরেছিল ফিরোজা রংয়ের শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং ডিপ ব্লু ব্লাউজ। কপালে নীল টিপ। চমত্কার লাগছিল হাসিখুশি মেরিকে দেখতে। অপরাধ বোধটা লুকিয়ে রেখে শামীম এগিয়ে গেল। উচু স্বরে বলল—
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ মেরি।
আপনি দেরি করে ফেলেছেন। আপনার জন্য আমরা সবাই অপেক্ষা করছিলাম। মোবাইলেও পাচ্ছিলাম না। মেরি বলল।
সরি। ওটা সাইলেন্ট মোডে ছিল। শামীম মোবাইলটা অন করে বলল।
খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। আসুন শামীমভাই। কেক কাটতে হবে। চিফ রিপোর্টার ফয়েজ আনসারি ডাকল।
খাবার? কি খাবার? শামীম জানতে চাইল।
শেখ হাসিনা যাকে বিলাসী খাবার গণ্য করেন সেই খাবার। ফয়েজ রহস্য করল।
মানে?
গরম সুপ আর মুরগির রোস্ট। সেদিন তিনি বলেছেন অবরোধ ডেকে খালেদা জিয়া আয়েশি জীবন কাটাচ্ছেন আর গরম সুপ খাচ্ছেন। মুরগির রোস্ট চিবাচ্ছেন। সম্ভবত তার ধারনায় এই দুটিই হচ্ছে আয়েশি জীবনে সবচেয়ে বিলাসী খাবার। সাংবাদিকদের জীবন আয়েশি নয়। অবরোধ, হরতাল হলেও আমাদের কাজ করতে হয়। কিন্তু মেরির বার্থডেতে একটু বিলাসিতা করার জন্য আমরা চায়নিজ রেস্টুরেন্ট থেকে গরম টম ইয়াম সুপ আনিয়েছি। মুরগির রোস্টের বদলে কেএফসির চিকেন আনিয়েছি। চিবিয়ে খাবেন শামীমভাই। ফয়েজ চিবিয়ে শব্দটার ওপর জোর দিয়ে বলল।
শেখ হাসিনার শব্দ সম্ভার কম। তাই তিনি এভাবে বলতে অভ্যস্ত। আয়েশ, খায়েশ, রক্ত, লাশ, খুন, খেলা প্রভৃতি শব্দে সীমাবদ্ধতা তার রুচির সংকীর্নতাকে প্রকট করে তোলে। সর্বশেষ যোগ হয়েছে চিবানো। হাসিনার এসব শব্দ চয়নে তাকে সমর্থনকারী বঙ্গসংস্কৃতিসেবীরা লজ্জিত হন। কিন্তু তোমরা নিজগুনে তার এই হীনতাকে ক্ষমা করে দাও। শামীম হাসল।
ইনডিয়ান পররাষ্ট্র সচিব মিজ সুজাতা সিংকে এরশাদ বলেছেন, শেখ হাসিনা অনেক ভালো কাজ করেছেন। ইনডিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করেছেন। কিন্তু রাজনীতি ঠিক করেননি তিনি। সব খাতকে হত্যা করেছেন উনি। দেশের মানুষ ওনার পক্ষে নেই আজ। আপনি রাস্তায় যান। একশ লোককে জিজ্ঞাসা করেন। একটা মানুষও শেখ হাসিনার পক্ষে কথা বলবেন না। এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে দেশে আজ। এরশাদ শালীনভাবে বলেছেন। হাসিনার ভাষায় তিনি বলতে পারতেন, দেশের মানুষ এখন তাকে চিবিয়ে খেতে চাচ্ছে। হরতাল-অবরোধে মানুষের জীবন অসহ্য হয়ে গিয়েছে। আওয়ামী সমর্থক মিডিয়া, বিশেষত টিভিগুলো হাসিনাকে বাচানোর লক্ষ্যে হরতাল-অবরোধের বীভত্স ও ভয়ংকর ছবিগুলো দেখাচ্ছে। কিন্তু তারা বলছে না হরতাল-অবরোধ কেন হচ্ছে। তারা মৌলিক ইসুকে বাদ দিয়ে যাচ্ছে। তারা বলছে না শেখ হাসিনার পদত্যাগ এই সংকট সমাধানের প্রাথমিক পদক্ষেপ হতে পারে। ফয়েজ বলল।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে হতাহতদের ছবি দেখিয়ে পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা হয়নি। যুদ্ধ বন্ধ করার চেষ্টা হয়নি। বরং বলা হতো কেন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। এখন সারা বাংলাদেশ জুড়ে যুদ্ধ শুরু হয়েছে এক স্বৈরিনীর কবলমুক্ত হবার লক্ষ্যে। এই যুদ্ধে যারা হতাহত হচ্ছেন তাদের প্রতি দায়দায়িত্ব আছে ভবিষ্যত্ সরকারের। এটা মনে রাখতে হবে এবং বর্তমানে ক্ষয়ক্ষতি কম রাখার চেষ্টা করতে হবে। এসো মেরি। কেক কাটা যাক। শামীম বলল। ইতিমধ্যে আরো স্টাফ ওই রুমে জড়ো হয়েছিল।
এক রিপোর্টার ছুটে এসে কেকের ওপর বসানো একটি মোমবাতি ম্যাচ দিয়ে জ্বালিয়ে দিল। মেরি ফু দিয়ে মোমটা নিভিয়ে দিল। সবাই হাততালি দিল। প্লাস্টিকের ছুরি দিয়ে শামীম কেক কেটে এক পিস খাইয়ে দিল মেরিকে। সবাই গাইতে থাকল—হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।
প্লাস্টিক কাপে সুপ আর কেএফসি চিকেন খেতে খেতে সবাই শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক কিছু উক্তি নিয়ে মন্তব্য করছিল।
বৃহস্পতিবার ৬ ডিসেম্বর ২০১৩-তে সাউথ আফৃকার সংগ্রামী নেতা নেলসন ম্যানডেলা ৯৫ বছর বয়সে মারা গিয়েছেন। তার মৃত্যুতে শুক্র, শনি ও রোববার—এই তিন দিনে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হবে। এই ঘোষণার পরে শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়ার উচিত হবে ম্যানডেলার প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশের জন্য অবরোধ-হরতাল তুলে নেয়া। শেখ হাসিনা ভুলে গিয়েছেন ম্যানডেলার প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে খালেদা জিয়াই সাউথ আফৃকাতে বাংলাদেশের প্রথম দূতাবাস খোলার ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই দেশে প্রথম বাংলাদেশি হাই কমিশনার হয়েছিলেন সাবেক মন্ত্রী হাবিবুল্লাহ খান (রানু)। তার মেয়াদ শেষ হবার এক বছর আগে বাংলাদেশে সরকার বদলে যায়। নতুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য মোতাবেক হাবিবুল্লাহ খানকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেন। তার স্থানে কাজ চালিয়ে নেয়ার জন্য সাবেক রক্ষীবাহিনীর এক অদক্ষ কর্নেলকে নিয়োগ করেন শেখ হাসিনা। ওই কর্নেল প্রায় নয় মাস সেখানে থেকে বাংলাদেশের ইমেজ নষ্ট করেন। এখন শেখ হাসিনা যদি আন্তরিকভাবে ম্যানডেলার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চান তাহলে ম্যানডেলার মতোই ক্ষমতা ছেড়ে দিতে পারেন। ফয়েজ বলল।
ঠিক। ঠিক। সবাই সায় দিল।
শেখ হাসিনা বলেছেন, ওসামা বিন লাদেনের মতো বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমদ গোপন স্থানে থেকে বিএনপির কর্মসূচি ভিডিও রেকর্ড করছেন এবং আপলোড করছেন। এটা বলে শেখ হাসিনা চেষ্টা করেছেন সালাহউদ্দিন তথা বিএনপিকে তালেবান বা উগ্র মুসলিম মৌলবাদীরূপে চিহ্নিত করতে। এখানে হাসিনা ভুল করেছেন। মুসলিমদের কাছে লাদেন যুগপত্ প্রশংসিত এবং সমালোচিত ব্যক্তি। তিনি প্রশংসিত, কারণ তিনি আমেরিকার ইহুদিপন্থী মতবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। তিনি সমালোচিত এই জন্য যে, নিউ ইয়র্কে টুইন টাওয়ারে প্লেন অ্যাটাকের পর সারা বিশ্বে মুসলিমরা নজরদারিতে পড়ে যায় এবং জীবনের বহু ক্ষেত্রে তারা প্রচণ্ড অসুবিধায় পড়ে। কিন্তু সালাহউদ্দিন ওসামা বিন লাদেন নন এবং বিএনপিও তালেবান নয়। বরং এই দেশে আফগানিস্তানের মতো যুদ্ধ এবং অশান্তি সৃষ্টি করেছেন শেখ হাসিনা। এর আগে এমনটা কখনো হয়নি। শেখ হাসিনার এই অযৌক্তিক মন্তব্যের পরে ইসলামবিদ্বেষীরূপে আওয়ামী লীগ আরো বেশি চিহ্নিত হবে এবং আগামী নির্বাচনে মুসলিমদের ভোট আরো কম পাবে। ফয়েজ বলল।
তাছাড়া আরেকটি কথা। আওয়ামী সরকার যখন একজনের পর একজন বিএনপি নেতাদের, যেমন—এম কে আনোয়ার, মওদুদ আহমদ, রফিকুল ইসলাম মিয়া, আবদুল আউয়াল মিন্টু, হান্নান শাহ, রুহুল কবির রিজভী, শিমুল বিশ্বাস, সাদেক হোসেন খোকা প্রমুখকে জেলে পুরছে, বিএনপির অন্যান্য নেতাদের যেমন— সেক্রেটারি জেনারেল মির্জা ফখরুল আলমগীর, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রমুখকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে, যার ফলে আমন্ত্রিত হওয়া সত্ত্বেও জাতিসংঘের দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো-র সঙ্গে দেখা করতে পারলেন না ফখরুল আলমগীর এবং বিএনপির শত শত নেতা-কর্মী জেলবন্দি হয়েছেন অথবা ফেরারি হতে বাধ্য হয়েছেন, তখন বিএনপির বর্তমান মুখপাত্র সালাহউদ্দিন কোন যুক্তিতে প্রকাশ্যে বিবৃতি দেবেন? শেখ হাসিনার গোপালিশদের হাতে নির্যাতিত হবার জন্য? শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য?
রিজভী তো প্রকাশ্যেই তার বক্তব্য দিচ্ছিলেন। মাহমুদুর রহমান তো প্রকাশ্যেই লিখছিলেন। তাদের জেলে নেয়া হয়েছে অত্যন্ত অসভ্যভাবে। গভীর রাতে গোপালিশরা পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মই বেয়ে গৃল কেটে ঢুকে রিজভীকে নিয়ে যায়। ভোর সকালে কমান্ডো স্টাইলে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা অফিসে হামলা চালিয়ে মাহমুুদুর রহমানকে নিয়ে যায়।
সুতরাং আন্দোলন চলমান রাখতে অতি সঙ্গত কারণে বিরোধী নেতা-কর্মীদের আত্মগোপনে বা আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকতে হচ্ছে এবং থাকতে হবে চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত। আওয়ামী লীগ থেকে মাঝে মাঝে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়ার চরিত্র হননের জন্য প্রচার করা হয়, তিনি নাকি বলেছিলেন, আই শ্যাল মেক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট। জিয়া আদৌ এটা বলেছিলেন কিনা তার সত্যতা প্রমাণিত হয়নি। তবে এখন এটা সত্য যে, শেখ হাসিনা হ্যাজ মেইড পলিটিক্স ভায়োলেন্ট অ্যান্ড হ্যাজ ডৃভেন পলিটিশিয়ানস টু আন্ডারগ্রাউন্ড (ঝযবরশয ঐধংরহধ যধং সধফব ঢ়ড়ষরঃরপং ারড়ষবহঃ ধহফ যধং ফত্রাবহ
ঢ়ড়ষরঃরপরধহং ঃড় ঁহফবত্মত্ড়ঁহফ)। সত্যই শেখ হাসিনা রাজনীতিকে করেছেন হিংস্র এবং পলিটিশিয়ানদের পাঠিয়েছেন আন্ডারগ্রাউন্ডে। সত্যই শেখ হাসিনা সফল হয়েছেন জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি এবং এমনকি জাতীয় পার্টির প্রেসিডেন্টকেও আন্ডারগ্রাউন্ডে পাঠাতে। এই বয়সেও অন্তত এক রাতের জন্য হলেও এরশাদকে আত্মগোপন করতে হয়েছে। শামীম বলল।
শেখ হাসিনার আরেকটি উক্তি হচ্ছে, যদি বিএনপি নেতাদের গাড়ির নাম্বার টুকে রেখে পরে সেইসব গাড়িতে আগুন দেয়া হয়, তাহলে কি হবে? তার এই প্রশ্নের উত্তর হলো, গাড়ির মালিক যেসব বিএনপি নেতা আছেন, তাদের সব গাড়ি পুড়বে। তবে শেখ হাসিনাকে বিবেচনা করতে হবে এই ধরনের প্রতিশোধমূলক উক্তি বর্তমান সহিংস পরিস্থিতিতে মানায় না। প্রতিশোধের পাল্টাশোধ নিতে চাইলে তখন আওয়ামী নেতাদের গাড়ি ও বাড়ি দুই-ই পুড়তে পারে, এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তি নিশ্চয়ই কোনো বিএনপি নেতা করবেন না। ফয়েজ বলল।
তবে শেখ হাসিনার সবচেয়ে বেশি অমার্জিত উক্তিটি শোনা গেছে যুবলীগের ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে। বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে হাসিনা বলেন… রাস্তায় নামুন। দেখি কেমন আন্দোলন করতে পারেন। খালেদা জিয়া বলতে পারতেন, আমি তো রাস্তাতেই আছি। আমার মতো আপনি একা আসুন, পুলিশ, র্যাব, এসএসএফ ছাড়া। তারপর আমরা দুজনা ডাক দেব আন্দোলনে নিরস্ত্রভাবে এগিয়ে আসতে। দেখা যাবে, কার পক্ষে কতো মানুষ আসে। কিন্তু খালেদা জিয়া ভদ্রমহিলা। সভ্য মহিলা। তিনি কোনো উত্তর দেননি। শামীম বলল।
হঠাত্ ঠাস করে একটা শব্দ হলো। সবাই চমকে উঠল। একটা বেলুন ফুটেছিল।
বেলুনটা চুপসে গেল।
সবার আনন্দও হঠাত্ কমে গেল।
একটা গভীর অমঙ্গলের চিন্তা সবাইকে আচ্ছন্ন করল।
ডিপ্লম্যাটিক করেসপনডেন্ট খসরু সালামকে আসতে বলে শামীম নিজের রুমে গেল।
কিছুক্ষণ পরে খসরু তার ল্যাপটপটা নিয়ে শামীমের রুমে উপস্থিত হলো।
ইনডিয়ান ফরেন সেক্রেটারি মিজ সুজাতা সিংয়ের এক দিনের সফরের একটা মূল্যায়ন করতে বলেছিলাম। সেই রিপোর্টটা লিখেছ? শামীম জানতে চাইল।
হ্যা, শামীমভাই।
সারমর্মটা বলো।
ইনডিয়ার পররাষ্ট্র সচিব মিজ সুজাতা সিং ইনডিয়ান এয়ার ফোর্সের প্লেনে ঢাকায় আসেন বুধবার ৪ ডিসেম্বর ২০১৩ সকাল দশটা পচিশে। তিনি প্রায় সাড়ে একুশ ঘণ্টা ঢাকায় ছিলেন। ঢাকায় পৌছে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে সৌজন্য দেখা করেন। এর পরে পিএমও-তে দুপুর সাড়ে বারোটায় তিনি দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব ও অন্যান্য সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে। বিশ মিনিট পরে এরা রুম থেকে চলে যান। এর পর শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্তে ত্রিশ মিনিট কথা বলেন সুজাতা সিং। সম্ভবত তখনই ঠিক হয়ে যায় বাংলাদেশে আগামী দিনগুলোর ঘটনাপ্রবাহ।
পিএমও অফিস থেকে সুজাতা যান গুলশানে ইনডিয়ান হাই কমিশনার পঙ্কজ শরণের বাড়িতে লাঞ্চে। সেখান থেকে কাছেই বারিধারায় জাতীয় পার্টির নেতা এরশাদের ফ্ল্যাটে যান সুজাতা। বিকেল চারটা তখন। এরশাদ-সুজাতার একান্ত আলোচনা চলে প্রায় এক ঘণ্টা। বিকেল পাচটায় এরশাদ এক বৃফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমি ইনডিয়ার পররাষ্ট্র সচিবকে বলেছি, দেশের যে অবস্থা, তাতে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামে-গঞ্জে। আমি নিজেই নিজের নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারছি না। কোনো প্রার্থী এলাকায় যেতে পারবেন না। এই অবস্থায় নির্বাচন করা কঠিন হবে। সম্ভব হবে না।
এরশাদ বলেন, তখন সুজাতা সিং তাকে বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে না গেলে অন্য কোনো দল যদি জয়ী হয়, তাহলে জামায়াতে ইসলামীর উত্থান হবে।
এরশাদ এর উত্তরে বলেন, যদি জামায়াতের উত্থান হয়ও, তার জন্য দায়ী হবে বর্তমান সরকার। এখন দেশের যে অবস্থা, তাতে নির্বাচন করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।
….ওনাদের ইচ্ছা, নির্বাচন হোক। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হোক। সে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে সরকার আসবে, তাদের মানবেন। আমি বলেছি, সে সুযোগ আর নেই। সেটা সম্ভব না।
সুজাতার সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে পরে এরশাদ প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি ইন্টারভিউতে আরো জানান, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ইনডিয়া যদি আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেয়, তাহলে সেটা ইনডিয়ার জাতীয় স্বার্থের অনুকূল হবে না। উপরন্তু শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিলে দেশের মানুষ অহেতুক ইনডিয়াবিরোধী হতে পারে।
বারিধারা থেকে সুজাতা সিং যান গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবনে। ট্রাফিক না থাকলে পাচ মিনিটের পথ। সুজাতা পৌছে যান সেখানে। এই বৈঠকে খালেদার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রিয়াজ রহমান, শমসের মবিন চৌধুরী ও সাবিহউদ্দিন আহমেদ।
এই সাক্ষাত্কার বিষয়ে ৫ ডিসেম্বরে ডেইলি স্টার ফ্রন্ট ফেইজে একটি অসত্য রিপোর্টে লিখেছিল, সুজাতা সিংয়ের সঙ্গে ওয়ান-টু-ওয়ান (একান্তে) বৈঠকে হাসিনা ও এরশাদ রাজি হলেও, ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠকের প্রস্তাব খালেদা আগেই নাকচ করে দিয়েছিলেন।
ডেইলি স্টারের এই অসত্য রিপোর্টের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে শমসের মবিন চৌধুরীর বিবৃতি পত্রিকাটি ছাপে ৬ ডিসেম্বর ফ্রন্ট পেইজে। তবে স্টার তার ভুল স্বীকার করে নি। কোনো ক্ষমাও চায় নি। বলা বাহুল্য, স্টার ওই রিপোর্টের মাধ্যমে চেয়েছিল ইনডিয়াবিদ্বেষীরূপে খালেদাকে প্রতিষ্ঠিত করতে। ইনডিয়ার সঙ্গে পারস্পরিক সমমর্যাদার ভিত্তিতে সু-সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় খালেদা বহু আগেই তার উদার হাত বাড়িয়েছেন। এখন সবচেয়ে কৃটিকাল মুহূর্তে সেই হাত যে তিনি গুটিয়ে নেবেন না, নিতে পারেন না, এই সহজ গণনাটি স্টারের ডিপ্লম্যাটিক করেসপনডেন্ট করতে পারেন নি। সো স্যাড!
এরপর গুলশান থেকে সুজাতা সিং যান প্যান প্যাসিফিক সোনারগাও হোটেলে। সেখানে তিনি সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হলে আপনাকে একটা নির্বাচন করতেই হবে। আর যে কোনো নির্বাচনে সর্বোচ্চ সংখ্যক দলের অংশগ্রহণ থাকাটা বাঞ্ছনীয়।
পরদিন সকাল আটটায় সুজাতা সিং ঢাকা ছেড়ে যান। লক্ষণীয় যে, তিনি সর্বদলীয় নির্বাচনের কথা বলেন নি। আরো লক্ষণীয় যে, তিনি হাসিনা ও এরশাদের সঙ্গে ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠক করলেও খালেদার সঙ্গে করেন নি। অর্থাত্, ইনডিয়াবান্ধব দুই নেতাকে তিনি একান্তে ইনডিয়ান সরকারের মেসেজ পৌঁছে দিতে ঢাকায় এসেছিলেন। যেহেতু হাসিনা ও এরশাদের সঙ্গে তার দেখা করা অতি জরুরি ছিল, সেহেতু লোকদেখানো ব্যালান্সিং অ্যাক্ট রূপে তিনি খালেদার সঙ্গেও দেখা করেন।
সুজাতা হয়তো ভেবেছিলেন, নইলে লোকে কি বলতো? কিছুই বলতো না। বাংলাদেশের লোক জানে শুধু হাসিনা ও এরশাদই ইনডিয়ার বিশ্বস্ত। তবে হাসিনা বেশি নির্ভরযোগ্য, এরশাদ কম নির্ভরযোগ্য। এই মুহূর্তে এটুকুই তফাত্।
সর্বোচ্চ সংখ্যক দলের অংশগ্রহণ বলতে সুজাতা এখন কি বোঝাচ্ছেন? এরশাদের জাতীয় পার্টি নির্বাচন বয়কটের পর এখন শুধু রয়েছে আওয়ামী লীগ। অর্থাত্ সর্বদলীয় নয়, বহু দলীয় নয়, সর্বোচ্চ সংখ্যক দলীয় নয় — ৫ জানুয়ারির এই নির্বাচন কার্যত হতে চলেছে একদলীয়। শামীম বলল।
কিন্তু ইনডিয়ান মিডিয়া একে চালিয়ে দেবে বহুদলীয় অথবা সুজাতার ভাষায় সর্বোচ্চ সংখ্যক দলীয় নির্বাচনরূপে। বাংলাদেশের ইনডিয়ান সমর্থনপুষ্ট এবং আওয়ামী পৃষ্ঠপোষিত মিডিয়াগুলোও সেটাই বলবে। খসরু বিমর্ষভাবে বলল।
হতে পারে। শেখ হাসিনাকে রক্ষার জন্য বাংলাদেশে মিডিয়ার একটি বড় অংশ সব খবরই টুইস্ট করতে পারে। একটা গল্প আমার মনে পড়ছে।
কমিউনিস্ট শাসন আমলে মস্কোতে সভিয়েট প্রেসিডেন্ট ব্রেজনেভ এবং আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নিক্সনের মধ্যে দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়েছিল। মাত্র দুই প্রতিযোগীর এই দৌড়ে ফিনিশিং লাইন প্রথমে অতিক্রম করেন নিক্সন। ব্রেজনেভ হন দ্বিতীয়।
পরদিন সভিয়েট সংবাদ সংস্থা টাস রিপোর্ট করে : গতকাল মস্কোতে একটি দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে কমরেড ব্রেজনেভ হন সেকেন্ড। আর নিক্সন হন সেকেন্ড লাস্ট — বা পেছনের দিক থেকে দ্বিতীয়।
গল্পটা বলে শামীম হাসল। তারপর গম্ভীর মুখে বলল, তবুও তো মস্কোতে দুজন প্রতিযোগী ছিল। ইনডিয়ানদের গুরুতর সমস্যা হলো বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনে প্রতিযোগী মাত্র একটি দল। সর্বোচ্চ সংখ্যা যখন এক, তখন ইনডিয়ান মিডিয়া, আমলা ও পলিটিশিয়ানরা এটাকে কিভাবে সামাল দেবে?
Posted ২৩:২৮ | সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin