| শনিবার, ১৩ অক্টোবর ২০১৮ | প্রিন্ট
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শ্রেণিকক্ষের দেওয়ালে লাল, নীলসহ হরেক রকমের রঙ দিয়ে লেখা থাকবে বাংলা-ইংরেজি বর্ণমালা। শিশুদের কল্পনার রাজ্যে নিয়ে যেতে দেওয়ালে থাকবে তাদের প্রিয় মীনা, মিতু ও রাজুর ছবি। রঙ দিয়ে লেখা থাকবে গাণিতিক চিহ্ন। আঁকানো থাকবে দেশবরেণ্য লেখক ও মনীষীর ছবিও।
এছাড়া সংস্কার করা হবে পুরাতন ভবন। নতুন ভবন ও প্রাচীর তৈরিসহ অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিশাল এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করতে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রথমে ঢাকা মহানগরের ৩৪২টি সরকারি বিদ্যালয়কে নতুনভাবে সাজানো হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রায় ৬৪ হাজার বিদ্যালয়কে ঢেলে সাজানো হবে। চলতি মাসে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য তোলা হবে।
এক হাজার ১৪৩ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি শুরু করা হবে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে। ৫ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে রাজধানী ঢাকার ৩৪২টি বিদ্যালয়কে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো হবে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকার সব বিদ্যালয় সংস্কার করা হবে। এছাড়া ঢাকার ১২টি সরকারি বিদ্যালয়কে একাধিক স্থানে স্থানান্তর করা হবে। সেখানে খেলার মাঠ ও মানসম্মত ভবন তৈরি করে এসব বিদ্যালয়কে একত্রিত করার মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রূপ দেওয়া হবে।
জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে রাজধানীর সরকারি স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির হার কয়েকগুণ কমেছে বলে এক জরিপে দেখতে পেয়েছে মন্ত্রণালয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কিন্ডার গার্টেনসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্তানদের ভর্তি করাতে চান অভিভাবকরা। কেবল নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে। ৩৭ শতাংশের বেশি স্কুলের ভবন ব্যবহারের অনুপযুক্ত বলেও ওই জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে। আর তাই সব স্তরের শিক্ষার্থী টানতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নতুন রূপে ঢেলে সাজাতে প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
দেশে সরকারি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে ৬৪ হাজার ১১২টি যার মধ্যে ঢাকা মহানগরে রয়েছে ৩৪২টি। সারাদেশে মোট ৩৭ শতাংশের বেশি স্কুলের ভবন ব্যবহারের অনুপযুক্ত। এসব স্কুল পাকা ও সেমিপাকা উল্লেখ করে জরিপের প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদন দেখা গেছে, ২০১৩ সালের আগের সরকারি প্রাথমিকের পাকা স্কুলগুলোর অবকাঠামো মাত্র ৪৭ শতাংশ ভালো পর্যায়ে রয়েছে। মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছে ২৩ শতাংশ স্কুল। আর খারাপ পর্যায়ে রয়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। তবে ২৩ শতাংশ স্কুলের অবস্থা একেবারেই নাজুক। সেমিপাকা স্কুলগুলোর মধ্যে মাত্র ৮ শতাংশ ভবন ভালোমানের রয়েছে। প্রায় ১৮ শতাংশ স্কুলের অবকাঠামো মাঝামাঝি। খারাপ পর্যায়ে রয়েছে ২১ শতাংশ স্কুলের ভবন। আর সেমিপাকা ৫৪ শতাংশ স্কুল একেবারেই ব্যবহার অযোগ্য।
রাজধানী ঢাকার ৩৪২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া পুরনো ঢাকাসহ পাশের এলাকায় ১২টি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র ৩০ জন করে। একটি রুমের মধ্যে চলছে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম।
প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর এমন নাজুক অবস্থার কারণেই অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের এসব স্কুলে পড়াতে আগ্রহী হচ্ছে না বলেই উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। আর এ কারণেই সারাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।
জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে আরও দৃষ্টিনন্দন করতে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। স্কুলে নতুনভাবে ভবন নির্মাণ, সংস্কার ও অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। প্রথম পর্যায়ে রাজধানী ঢাকার ৩৪২টি স্কুলে নতুনভাবে সংস্কারকাজ করা হবে। চলতি মাসে এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য তোলা হবে।’
বাংলা ট্রিবিউন
Posted ১৩:১০ | শনিবার, ১৩ অক্টোবর ২০১৮
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain